Press "Enter" to skip to content

আধুনিক বিজ্ঞানে মে’রাজ – ৩

অনুবাদ: মোহাম্মাদ মুনীর হোসাইন খান
দৈহিক ও শারীরিকভাবে মে’রাজ সংঘটিত হওয়ার দলিল-প্রমাণ
মহানবী (সা.)-এর দৈহিক মে’রাজ সংক্রান্ত অগণিত দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান। আলোচনা নাতিদীর্ঘ করার লক্ষ্যে এখানে কেবল কয়েকটি দলিল আমরা উল্লেখ করব :
১. سبحان الذی أسری بعبده … সেই সত্তা পবিত্র, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতে সম্মানিত মসজিদ হতে দূরতম মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন’- এ আয়াতে বিদ্যমান أسری بعبده (স্বীয় বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছিলেন) বাক্যাংশটিতে মহানবী (সা.)-এর দৈহিক মে’রাজের কথা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। কারণ, ‘আব্দ'(عبد) শব্দটি দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে গঠিত মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
(তাফসিরে নামূনেহ, খ ১২, পৃ ৯)
 তাই এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মহানবীর এ সফর জাগ্রত অবস্থায় এবং দৈহিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল। ‘অমুক ব্যক্তিকে অমুক স্থানে নিয়ে গেলাম’- এ বাক্যের অর্থ হচ্ছে তাকে তার দেহ ও আত্মাসমেতই উক্ত নির্ধারিত স্থানে নিয়ে গেছি, কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় অর্থাৎ স্বপ্নে উক্ত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এ স্থলে যদি ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা স্বপ্নে কোন স্থানে নিয়ে যাওয়ার নিদর্শন (ক্বারীনাহ্) বাক্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে তা হবে ভিন্ন কথা। আয়াতুল্লাহ্ জাফর সুবহানী মহানবী (সা.)-এর মে’রাজ যে সশরীরে হয়েছিল তার সমর্থনে বলেছেন :
‘কুরাইশরা মহানবী (সা.)-এর মে’রাজ অর্থাৎ পবিত্র মসজিদুল আসা গমন এবং সেখান থেকে আকাশসমূহে উড্ডয়নের সংবাদ শুনে খুবই অসন্তুষ্ট হলো এবং তা অস্বীকার করল। মহানবী (সা.)-এর মে’রাজের ঘটনা কুরাইশদের বিভিন্ন মহলে দৈনন্দিন বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়। মহানবী (সা.)-এর এ ভ্রমণ যদি কেবলই স্বপ্নে হয়ে থাকত তাহলে কুরাইশদের তা অস্বীকার এবং এ ব্যাপারে হট্টগোল করার কোন অর্থই হয় না। কারণ, ‘আমি এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় এমন স্বপ্ন দেখলাম’- এ ধরনের কথায় কখনো বাকবিতণ্ডা ও হৈচৈ দেখা দেবে না। যেহেতু কুরাইশরা এ বিষয়টি নিয়ে তুমুল হট্টগোল করে সেহেতু স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মহানবী (সা.)-এর মে’রাজ সশরীরে হয়েছিল এবং মে’রাজ যে সশরীরেই হয়েছিল সেটা তিনি নিজেও দাবী করেছিলেন।
( ফুরুগে আবাদিয়াত, খ. ১, পৃ. ৩৮৬)
২. (সেই পবিত্র সত্তা যিনি) এ বাক্যাংশ যা সূরা ইসরার শুরুতেই এসেছে তা গুরুত্বপূর্ণ এ ঘটনাটি যে অলৌকিক তা স্পষ্ট করে ব্যস্ত করে। অর্থাৎ উক্ত আয়াত থেকে বোধগম্য হয় যে, মানুষ যাতে এ মেরাজের ঘটনা অসম্ভব বলে মনে না করে সেজন্য মহান আল্লাহ্ সকল ধরনের ত্রুটি ও অক্ষমতা থেকে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। আর তা না হলে দেহবিহীন আত্মা যা পার্থিব (জড়) জগতের সকল সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত সেই আত্মার এ ধরনের সফর ও ঊর্ধ্বলোক গমনের ঘটনা ব্যক্ত করার জন্য এ ধরনের ভাষাশৈলীরও কোন প্রয়োজন নেই।
৩. সূরা নাজম-এর ১৭ ও ১৮ আয়াতে ‘দর্শন’ অর্থাৎ প্রত্যক্ষকরণ (رویت)) ধাতু ব্যবহার করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :
ما زاغ البصر و ما طغى لقد رأى من آيات ربه الكبرى ‘মহানবী (সা.)-এর দূরতম ও বিচ্যুতি হয় নি। তিনি মহান আল্লাহর সুমহান নিদর্শনাদি প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
এ দুই আয়াত থেকে ভালোভাবে বোধগম্য হয় যে, এ দর্শন আসলে ঘুমন্ত অবস্থায় ও আত্মিকভাবে সংঘটিত হয় নি; বরং মহানবী (সা.)-এর জাগ্রত অবস্থায় সশরীরেই হয়েছিল।
৪. আল্লামা যামাশারী স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যার একটি অংশে বর্ণিত হয়েছে :
و قد عرج به إلى السماء في تلك الليلة … و انه لقى الانبياء و بلغ البيت المعمور وسدرة المنتهى
ঐ রাতে ডাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল…. তিনি নবীদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং বায়তুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গিয়েছিলেন….(আল কাশশাফ, খ ২, পৃ ৬৪৭) । এ হাদীসে عرج به (তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল)- এ বাক্যটি মহানবী (সা.)-এর সশরীরে মে’রাজকেই ইঙ্গিত করে। অতএব, এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যে সব রেওয়ায়াতে আত্মিক মে’রাজের কথা উল্লিখিত হয়েছে সেগুলো পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহের বাহ্য অর্থের পরিপন্থী বিধায় বিশ্বাসযোগ্য নয়।
মে’রাজ সংক্রান্ত কিছু সংশয়ের জবাব
১. নিঃসন্দেহে মে’রাজ কোন স্বাভাবিক ও সাদামাটা বিষয় নয়; বরং এটা হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর অন্যতম মোজেযা। আর যেহেতু মোজেযা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসম্ভব বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় না, তাই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মে’রাজ সম্ভব এবং তা অসম্ভব কোন কিছু নয়। আর তা আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞানেরও পরিপন্থী নয়। কারণ, বর্তমান মানুষ যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এমন সব যানবাহন তৈরী করার সামর্থ্য অর্জন করেছে যা পণ্য ও পদার্থকে দ্রুত স্থানান্তর করতে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বলয় ভেদ করে মহাশূন্যে যেতে সক্ষম, তাহলে মহান আল্লাহর পক্ষে কি ভ্রমণের সাথে সংগতিপূর্ণ দ্রুতগামী মহাকাশযান তাঁর নবী (সা.)-এর হাতে অর্পণ করা সম্ভব নয় যা তাঁকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য সব ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় (ও মহাকাশীয়) বিপদ থেকে রক্ষা করবে?
২. মহানবী (সা.)-এর মে’রাজ সর্বপ্রথম কোন অতিপ্রাকৃতিক বা অলৌকিক বিষয় ছিল না; বরং পূর্ববর্তী নবীদের মধ্যেও এর নজির বিদ্যমান। যেমন মূলায়মান (আ.)-এর এখতিয়ারে বাতাস বশীভূত করে দেয়া হয়েছিল যার ফলে তা তাঁকে দ্রুত কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে যেত। হযরত ঈসা মসীহ (আ.)-কে মহান আল্লাহর কাছে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল । পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে
.. وما قتلوه و ما صلبوه و لكن شبه لهم و إن الذين اختلفوا فيه لفی شك منه مالم به من علم إلا اتباع الظن و ما قتلوه يقينا بل رفعه الله إليه
* অথচ তারা তাকে হত্যা করে নি, ক্রুশবিদ্ধও করে নি; কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, নিশ্চয় তারা এ বিষয়ে সন্দেহে ছিল। এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞান ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করে নি; বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন ” ( সূরা নিসা: ১৫৭-১৫৮)
সুতরাং পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে আসমানসমূহে হযরত ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া, দূরবর্তী স্থানসমূহে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাতাসের মাধ্যমে হযরত সুলায়মান (আ.)-এর গমনাগমন ইত্যাদি যখন অকাট্য ও সন্দেহাতীত বিষয় বলে গণ্য হয়েছে তখন বিবেক-বুদ্ধি (আল.) এ বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম যে, (বিহারুল আনওয়ার, খ. ১৮, পৃ. ২৮৫)
 মহানবী (সা.)-এর নৈশ ভ্রমণ ও মে’রাজ ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এবং উপলব্ধিযোগ্য বিষয় হবে। আর তা কারো পক্ষে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়।
 ৩. ইসলামের দৃষ্টিতে অস্তিত্বজগতে বহু রহস্য ও আশ্চর্যজনক বিষয় সম্ভব বিদ্যমান। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে মানুষ সবেমাত্র অস্তিত্বজগতের এ সব রহস্যের অতি সামান্য অংশ উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আকাশসমূহে জীব বা প্রাণীকূলের অস্তিত্ব যার প্রতি ১৪০০ বছর পূর্বে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন রেওয়ায়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অথচ মানুষ সম্প্রতি এ ব্যাপারে ধারণা ও জ্ঞান লাভ করেছে। যেমন : ‘মহাশূন্য’ ম্যাগাজিনের ৬ষ্ঠ সংখ্যায় (১৫/১/১৩৫১ ফার্সী সাল) ‘পালোমার অবজারভেটরী’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রবন্ধে লেখা হয়েছিল : পালোমার অবজারভেটরীর (মানমন্দির) টেলিস্কোপ (দূরবীণ) প্রস্তুতের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের দেখা মহাবিশ্বের আয়তন ৫০০ আলোক বর্ষের বেশি ছিল না। তবে এ দূরবীণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের আয়তন একহাজার মিলিয়ন (১০০ কোটি) আলোকবর্ষ পর্যন্ত পৌঁছেছে ও সম্প্রসারিত হয়েছে এবং এর ফলে মিলিয়ন-মিলিয়ন নতুন গ্যালাক্সি আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলোর কোনটি এ পৃথিবী থেকে একশ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এই একশ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বের পরে এক ভয়ঙ্কর নিকষ কালো অসীম মহাশূন্য রয়েছে যার মাঝে কোন বস্তু বা পদার্থই দৃষ্টিগোচর হয় না। অর্থাৎ কোন আলোই উক্ত আঁধার (অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাশূন্য) অতিক্রম করতে সক্ষম নয়। আর এর ফলে পালোমোর অবজারভেটরীর দূরবীণ-ক্যামেরার ফটোগ্রাফিক প্লেটে কোন চিত্রই আর ধরা পড়ে না। নিঃসন্দেহে উক্ত ভয়ঙ্কর ও অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাশূন্যে শত শত মিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে এবং যে বিশ্ব আমাদের দিকে রয়েছে তা গ্যালাক্সিসমূহের পারস্পরিক আকর্ষণ শক্তির দ্বারা সংরক্ষিত হচ্ছে। এ বিশাল জগৎ যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে এবং যাতে শত শত বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে আসলে এগুলো সামগ্রিকভাবে এর চেয়েও আরো বিশাল বিশ্বের একটি অতি সামান্য অংশ ব্যতীত আর কিছুই নয়। এখনও আমরা সুনিশ্চত হতে পারি নি যে, উক্ত দ্বিতীয় বিশ্বের পরে আরেকটি বিশ্ব বিদ্যমান নেই।
(তাফসীরে নানেহ, খ. ১, পৃ. ১৬৯)
 আমাদের এই সৌরতন্ত্র যে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত সেই গ্যালাক্সিও ঊর্ধ্বতন জগতের হাজার হাজার গ্যালাক্সির মধ্যে একটি। আর এই গ্যালাক্সিতেও শত শত মিলিয়ন সূর্য ও উজ্জ্বল নক্ষত্র আছে যেগুলোর মধ্যে বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে মিলিয়ন মিলিয়ন বসবাসযোগ্য গ্রহ রয়েছে যেগুলোয় বিলিয়ন বিলিয়ন জীব বিদ্যমান আছে ও বসবাস করছে।”
(আলী দাওয়ানী শুরু থেকে হিজরত পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাস, পৃ. ২২)
এটা হচ্ছে আজকের মানবজাতির আধুনিক মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্বীকারোক্তিসমূহের একটি নমুনামাত্র। তাতে বলাহয়েছে যে, উর্ধ্ব জগতের কতিপয় গ্রহে প্রাণী আছে। কিন্তু ১৪ শতাব্দী আগে অর্থাৎ মহাশূন্য বিজ্ঞান এবং পৃথিবীর বৃহত্তম মানমন্দিরসমূহ কতিপয় গ্রহে জীবের অস্তিত্ব সম্পর্কে কথা বলার আগেই পবিত্র কোরআনে এ বাস্তবতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
وَاللهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِنْ داية وَالْمَلائِكة ‘
আসমানসমূহ ও পৃথিবীতে যত প্রাণী ও জীব আছে সেগুলো সব এবং ফেরেশতারা একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যেই সিজদা কর।( সূরা নাহল : ৪৯)
(وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَتُ فِيهِمَا مِنْ دَائف )
“তাঁর (মহান আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার) নিদর্শনসমূহের অন্যতম হচ্ছে আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতদুভয়ে যে সব জীব ও প্রাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো। ( সূরা শূরা: ২৯)
ইমাম আলী (আ.) বলেন: এ নক্ষত্ররাজি যা আকাশে আছে সেগুলোয় পৃথিবীর শহর ও নগরসমূহের মত শহর ও নগর রয়েছে।
(শেখ আলী নামাজি শাহরুদ্দী, মুসতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খ. ১, পৃ. ২০০)
থেকে অসম্ভব বলে গণ্য হবে না এবং তা আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক সূত্র নীতিমালার সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যশীল হবে।
৫. মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে অনেক বাধা ও অসুবিধা রয়েছে যেগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ :
ক. পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি : এ শক্তির প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ঘণ্টায় কমপক্ষে ৪০০০০ কি.মি. বেগের প্রয়োজন;
খ. পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের মহাশূন্যে বাতাসের অনুপস্থিতি : অথচ এ বাতাস ব্যতীত মানুষের বেঁচে থাকতে পারে না;
গ. পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে বিদ্যমান বিপজ্জনক ও মারাত্মক ক্ষতিকর রশ্মিসমূহ, যেমন মহাজাগতিক (cosmic) রশ্মি, অতি বেগুনী (ultra- violet) রশ্মি এবং এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি। যখনই মানব দেহ, এমনকি সামান্য পরিমাণে হলেও এসব তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণের শিকার হবে তখনই মানব দেহের ক্ষতিসাধন হবে।
এ সব সমস্যা ও অসুবিধা সত্ত্বেও অবশেষে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারা এ সব বাধা দূর করে আসমানসমূহের গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে সফর করার সামর্থ্য অর্জন করেছে। আর এ বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর মে’রাজ যে সম্ভব, তা প্রমাণ করেছে।
৬. যদিও মহানবী (সা.)-এর মে’রাজ অতীতে অসম্ভব ও অবাস্তব বলে মনে হত, তবে বর্তমানকালে মানবজাতি চিন্তাশক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারা প্রমাণ করেছে যে, মে’রাজ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসম্ভব নয়। কারণ, মানুষ মহাকাশযান নির্মাণ করে উচ্চ গতিবেগ সহকারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে যেতে সক্ষম হয়েছে এবং বিশেষ ধরনের পোশাক (নভোচারীর পোশাক) তৈরী করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রশ্মিসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। আজকের মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে এমন সব মহাকাশযান নির্মাণ করেছে যেগুলো এক ঘণ্টা দশ মিনিটের মধ্যেই পৃথিবীর চারপাশ একবার প্রদক্ষিণ করছে। অথচ একশ বছর পূর্বে যদি কেউ দাবী করত যে, একদিন এ ধরনের কাজ করা সম্ভব হবে, তাহলে জনগণ তাকে পাগল ভারত এবং সম্ভবত তাকে গ্যালিলিও এর মত ফাঁসীকাষ্ঠে ঝুলাত অথবা কারারুদ্ধ কর। উল্লেখ্য, পৃথিবী যে গোলাকার, তা গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছিলেন (আর এটাই ছিল তাঁর অপরাধ)।
যখন মানুষ তার সীমিত শক্তি ও ক্ষমতা ব্যবহার করে বাহ্যত অসম্ভব কোন কিছুকে সম্ভবে রূপান্তরিত করতে সক্ষম তখন কি মহানবী (সা.) আল্লাহ্র অনুমতি নিয়ে এ ধরনের কাজ (মে’রাজ) করতে সক্ষম হবেন না? নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্র ক্ষমতা অসীম এবং তার সঙ্গে মানুষের ক্ষমতার কোন তুলনাই হয় না। যেভাবে মহান আল্লাহ্ হযরত মূসা (আ.)-এর লাঠিকে এক বিশাল সাপে পরিণত করেছিলেন, অথচ তা ঐ যুগের মানুষের কাছে অসম্ভব বলে গণ্য ছিল, সেভাবে তিনি মানুষের জন্য অসম্ভব যে কোন অলৌকিক কাজ বাস্তবে সম্ভব করে দিতে পারেন।
৭. সকল ধর্ম ও সম্প্রদায় যখন অস্তিত্বজগতে শয়তানের অস্তিত্ব এবং সকল মানুষের অন্তরে তার প্ররোচনা ও কুমন্ত্রণা দানের বিষয় মেনে নিয়েছে তখন বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এ নির্দেশ দেয় যে, মহান আল্লাহর সান্নিধ্য হতে বিতাড়িত শয়তানের অকল্পনীয় গতিশক্তি যদি মানুষের কাছে একটি গৃহীত ও স্বীকৃত বিষয় বলে গণ্য হতে পারে তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, যিনি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তাঁর মে’রাজের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করা অনুচিত। (বিহারুল আনওয়ার, খ. ১৮, পৃ.২৮৫)
ফলাফল
বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোকে মে’রাজ সংঘটিত হওয়ার বিষয় মোটেও অসম্ভব নয় যদিও অতীতকালে তা দুঃসাধ্য ও অসম্ভব বলে গণ্য ছিল। সুতরাং যখনই অকাট্য দলিল-প্রমাণাদি দিয়ে মে’রাজ সংঘটিত হওয়া প্রমাণিত হবে তখন সবাই তা মেনেও নেবে। সৌভাগ্যবশত ইসলামী উৎসসমূহে (পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহয়) মে’রাজ সংঘটিত হওয়া সংক্রান্ত অকাট্য দলিল-প্রমাণাদি মুতাওয়াতির সূত্রে বিদ্যমান আছে যে, মহান আল্লাহ্ মে’রাজের রাতে মহানবী (সা.)-কে দ্রুতগামী বাহনে করে আসমানসমূহে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে (মহাকাশ ও মহাশূন্যের বিদ্যমান) যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রেখেছিলেন।
অধিক অধ্যয়নের জন্য নিম্নোক্ত গ্রন্থাদি দ্রষ্টব্য:
১. সাইয়্যেদ হাশেম রাসূলী মাহান্নাতী প্রণীত হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনী।
২. শেইখুর রাঈস ইবনে সিনা প্রণীত মে’রাজনামা, রাত, ১৩৫২ (ফার্সী সাল)।
৩. আলী দাওয়ানী প্রণীত ইসলামের ইতিহাস (মহানবী (সা.)-এর জন্মলগ্ন থেকে হিজরী পর্যন্ত)।
তথ্যসূত্র:
মোজতামায়ে আমুজেশে আলিয়ে ফেক্বহ্।