এস, এ, এ
ইমাম মাহদী (আ.)র ৩১৩ জন সাহাবীদের মধ্যে মহীলারাও থাকবে। তবে তাদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যেমন: মুফাযযযাল বিন উমর ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) হতে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম মাহদী (আ.)র সাথে ১৩জন মহীলা সাহাবী থাকবে। তাদের দ্বায়িত্ব হবে আহতদের চিকিৎসা ও সেবিকার ভূমিকা পালন করবে।
কোন কোন রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৩ জন আবার কোন রেওয়ায়েতে ৫০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক রেওয়ায়েতে আবার তাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে যা আমরা নিন্মে আলোচনা করব।
অন্যান্য রেওয়ায়েতে আরো বেশী মহীলা সাহাবীদের উপস্থিতির কথা বর্ণিত হয়েছে।
তবে যে রেওয়ায়েতগুলোতে ইমাম মাহদী (আ.)র ১৩ জন ঐ সকল মহীলা সাহাবীর কথা বর্ণিত হয়েছে যারা বিপ্লবী আন্দোলনের পরে ইমাম মাহদী (আ.)র সাথে থাকবে।
ইমাম মাহদী (আ.)র ৫০জন নারী সাহাবী থাকবে যে সম্পর্কে ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন: আল্লাহর শপথ ইমাম মাহদী (আ.)র ৩১৩জন সাহাবী থাকবে তন্মধ্যে ৫০জন হবেন নারী। তারা মক্কার আশেপাশে একত্রিত হবে। অথবা রাসুল (সা.) বর্ণনা অনুযায়ি আসমানী নারী যেমন: হযরত ঈসা (আ.) ৮০০জন পুরুষ এবং ৪০০জন নারীদেরকে সাথে নিয়ে দুনিয়ার বুকে প্রত্যাবর্তন করবেন।
অনুরূপভাবে তৃতীয় দল যারা রাজআত করবেন। যাদেরকে আল্লাহ ইমাম মাহদী (আ.)র আবির্ভাবের বরকতের কারণে তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তারা পুণরায় দুনিয়ার বুকে ফিরে আসবে। যাদের ১৩জনের নাম রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যাদেরকে ইমাম মাহদী (আ.)র আবির্ভাবের পরে জীবিত করা হবে। তারা ইমাম মাহদী (আ.)র আহত ও অসুস্থ সাহাবীদের সেবা করবে।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) ঐ ১৩জন নারীদের নাম উল্লেখ করেছেন যারা ইমাম মাহদী (আ.)র আবির্ভাবের পূর্বে মারা যাবেন। কিন্তু পুণরায় ইমাম মাহদী (আ.)র আহত ও অসুস্থ সাহাবীদের সেবা করার জন্য আসবেন যেমন:
১. কেনওয়াউ বিনতু রুশাইদ:
কেনওয়াউ ছিলেন রুশাইদ হিজরীর কন্যা। তিনি ইমাম আলী (আ.)’র শিয়া এবং ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)’র বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি ইমাম আলী (আ.)কে ভালাবাসার কারনে হৃদয় বিদারক ভাবে শাহাদত বরণ করেছিলেন। শেখ মুফিদ (রহ.) বলেন: কেনওয়াউ যখন তার পিতার সাথে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের দরবারে উপস্থিত হয় এবং সেখানে তিনি নিজের পিতার দুই হাত এবং দুই পা কেটে ফেলার হৃদয় বিদারক দৃশ্যকে অবলোকন করেন এমতাবস্থায় তিনি অন্যদের সাহায্যে নিয়ে তার পিতার আধা মরা দেহকে প্রাসাদ থেকে বাহির করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়।
২. উম্মে আয়মান:
উম্মে আয়মান একজন পরহেজগার এবং রাসুল (সা.)র একজন খেমতকারী ছিলেন। রাসুল (সা.) তাকে মা বলে আখ্যায়িত করে বলেন: এই নারী আমার বংশের একজন। তিনি মুজাহিদ নারীদের সাথে মুসলমান আহত সৈন্যদের সেবা করতেন। উম্মে আয়মান ইমামতের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। বাগে ফেদাকের ঘটনার সাক্ষি স্বরূপ হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তাকে উপস্থিত করেন। তিনি রাসুল (সা.)র ওফাতের পাঁচ থেকে ছয় বছর জীবিত ছিলেন।
৩. হাবাবাতুল ওয়ালিবিইয়া:
হাবাবাতুল ওয়ালিবিইয়া একজন মর্যাদাশীল নারী ছিলেন। তিনি তার জীবনে আটজন মাসুম ইমামকে দেখেছেন। তিনি ইমামদের একজন প্রিয় পাত্র ছিলেন। তিনি ইমাম জয়নুল আবেদীন অথবা ইমাম রেযা (আ.)’র কারামতের কারণে একবার অথবা দুইবার তার যৌবন পুণরায় ফিরে পেয়েছিলেন। তিনি একবার ইমাম আলী (আ.)কে ইমামতের স্বপক্ষে দলিল চাইলে ইমাম আলী (আ.) একটি পাথর তুলে নেন এবং তাতে নিজের মোহরের লাগিয়ে দেন এবং পাথরটিতে মোহরের ছাপ স্থাপিত হয়ে যায়। তারপরে ইমাম আলী (আ.) বলেন: আমার পরে কেউ যদি এই পাথরে নিজের মোহরের প্রতিচ্ছবি স্থাপিত করতে পারে মনে করবে যে সে হচ্ছে ইমাম। ইমাম আলী (আ.)’র মৃত্যুর পরে সে প্রত্যেকটি ইমামের কাছে যায় এবং ইমাম (আ.)গণ সেই পাথরের উক্ত স্থানেই নিজেদের মোহরের প্রতিচ্ছবি স্থাপিত করে। আর এভাবে যখন তিনি ইমাম রেযা (আ.)’র কাছে পৌছায় তখন ইমাম রেযা (আ.)ও নিজের মোহরের মাধ্যমে তার প্রতিচ্ছবি সেই পাথরের উক্ত স্থানে স্থাপিত করেন। ইমাম রেযা (আ.)’র শাহাদতের নয় মাস পরে হাবাবাতুল ওয়ালিবিইয়া মৃত্যুবরণ করেন।
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন হাবাবাতুল ওয়ালিবিইয়া ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)’র সমীপে উপস্থিত হয় তখন তার বয়স ছিল ১১৩ বছর। ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) নিজের তর্জনী দিয়ে হাবাবাতুল ওয়ালিবিইয়ার প্রতি ইশারা করলে তিনি পুণরায় যৌবন ফিরে পান।
৪. সুমাইয়া ‘আম্মার ইবনে ইয়াসীরের মা’:
তিনি ইসলাম আনায়নকারী সপ্তম ব্যাক্তি ছিলেন এবং শত্রুদের রোষ নলে পতিত হন এবং সে ও তার স্বামী আবু জেহেলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। তাকে বাধ্য করা হয় যেন সে রাসুল (সা.)কে গালি দেয় কিন্তু তারা রাজি হয় না। তখন সুমাইয়া ও ইয়াসীরকে লোহার বর্ম পরিধান করিয়ে তপ্ত রোদে বেঁধে রাখা হয়। যখন রাসুল (সা.) তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশে দেয় এবং বলে: হে ইয়াসীরের পরিবার ধৈর্য ধারণ কর কেননা তোমাদের বাসস্থান হবে বেহেশত। অবশেষে আবু জেহেল তাদেরকে আঘাত করে এবং তারা ইহলোক ত্যাগ করে।
সুমাইয়ার ইসলামের জন্য ধৈর্য ধারণ করেন এবং শত্রুদের কষ্ট সহ্য করে আল্লাহ তায়ালা তার এই কর্মের বিনিময়ে তাকে ইমাম মাহদী (আ.)র আবির্ভাবের পরে পুণরায় জীবিত করবেন এবং সে আল্লাহর কৃত ওয়াদা পূর্ণ হতে দেখবে এবং তিনি হযরত মাহদী (আ.)র খেদমত করবেন।
৫. যুবাইদা:
ধারণা করা হয় যে, যুবাইদা হারুনর রশিদের স্ত্রী ছিলেন। শেখ সাদুক্ব (রহ.) তার সম্পর্কে বলেছেন: তিনি আহলে বাইত (আ.)র অনুসারী ছিলেন। হারুনর রশিদ যখন জানতে পারে তখন সে কসম খায় যে যুবাইদাকে তালাক্ব দিবে। যুবাইদা একজন পরোকারী নারী ছিলেন। তিনি আরাফাতে উপস্থিত হাজীদের পানি পৌছে দেওয়ার কাজ করতেন। যুবাইদার ১০০জন দাসী ছিল যারা কোরআনের মুখস্ত করাতো এবং তাঁর বাড়ি থেকে সর্বদা কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ ভেসে আসতো। যুবাইদা ২১৬ হিজরীতে ইহলোক ত্যাগ করেন।
৬. সুবানাতুল মাশিতাত:
তিনি ইমাম মাহদী (আ.)র আবির্ভাবের পরে পুণরায় দুনিয়ার বুকে ফিরে আসবেন। তাঁর স্বামীর নাম হাযক্বিল যিনি ফেরাউনের চাচাতো ভাই যার পেশা ছিল ফেরাউনের কন্যার সাজ সজ্জা করা। তিনিও তাঁর স্বামীর ন্যায় হযরত মূসা (আ.)র ঈমান এনেছিলেন এবং তা গোপন করে রেখেছিলেন। একদা তিনি ফেরাউনের কন্যার সাজ সজ্জার কাজে ব্যাস্ত ছিলেন এমতাবস্থায় তার হাত থেকে চিরুনি পড়ে যায় এবং নিজের অজান্তেই তিনি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করেন। ফেরাউনের কন্য তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কি আমার পিতার নাম উচ্চারণ করলে? সে বলে না বরং আমি এমন সত্তার নাম উচ্চারণ করলাম যিনি আপনার পিতাকে সৃষ্টি করেছেন। সে তার পিতা ফেরাউনের কাছে উপস্থাপন করে। ফেরাউন সায়ানাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে: তুমি কি আমার খোদার প্রতি বিশ্বাস কর না?
সে বলে: না আমি আমার খোদা ব্যাতিত তোমার প্রতি ঈমান রাখতে পারব না। ফেরাউন তামার তন্দুর জ্বালানোর নির্দেশ দেয় এবং তাতে ঐ নারীর সম্মুখে তার সকল বাচ্চাকে জ্বালিয়ে হত্যা করে। যখন তার দুধের বাচ্চাকে পুড়িয়ে ফেলতে চায় তখন সে ঈমানকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বলে আমি দ্বীনে মূসা থেকে ফিরে আসব। তখন বাচ্চাটি বলে উঠে হে মা আপনি ধৈর্য ধারণ করুন কেননা আপনি হক্ব পথে রয়েছেন! ফেরাউন ঐ নারী ও তার বাচ্চাকে আগুনে নিক্ষেপ করে। আল্লাহ তায়ালা ঐ মহীলার ধৈর্য ধারণের কারণে তাকে ইমাম মাহদী (আ.)র যুগে জীবিত করবেন যেন সে ইমাম মাহদী (আ.)এর কিয়ামের কাজে সহায়তা করতে পারে এবং ফেরাউনের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে।
৭. উম্মে খালিদিল জুহান্নিয়া:
রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি উম্মে খালিদ নামের দুইজন নারী ছিলেন উম্মে খালিদ আহমাসিয়া এবং উম্মে খালিদ জুহান্নিয়া। এখানে হয়তো উম্মে খালিদ ‘মাক্বতুয়াতুল ইয়াদ’ (হাত কাটা)কে বুঝানো হয়েছে। যায়দ বিন আলী’র শাহাদতের পরে তাকে শিয়া হওয়ার কারণে তার হাতদ্বয়কে কেটে দেওয়া হয়। রেজালে কাশশি নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, আবু বাসির বলেন একদা আমি ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)’র সমীপে উপস্থিত ছিলাম তখন উম্মে খালিদ ‘মাক্বতুউল ইয়াদ’ সেখান থেকে হেটে যাচ্ছিল। ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: হে আবু বাসির তুমি কি উম্মে খালিদের কাছ থেকে কিছু শুনতে চাও?
আমি বললাম: হ্যাঁ। তখন উম্মে খালিদ ইমাম (আ.)’র কাছে উপস্থিত হয়। দেখলাম উম্মে খালিদ তিনি অলঙ্কারপূর্ণ এবং সুস্পষ্টভাবে কথা বললেন। অতঃপর ইমাম (আ.) তার সাথে বেলায়াত এবং শত্রুদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে কথা বললেন।
৮. উম্মে খালিদ আহমাসিইয়া:
৯. উম্মে সায়িদিল হানাফিয়া।
মহীলাদের একটি দল যারা সেই যুগে মক্কায় পৌছাবে এবং ইমাম মাহদী (আ.)’র সাথে সম্পৃক্ত হবে। এই সম্পর্কে দুইটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে:
১. উম্মে সালামা (রা.) তিনি ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাব সম্পর্কে রাসুল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন: সেই সময়, একটি দল শরণার্থী আল্লাহর গৃহে আশ্রয় নিবে এবং ৩১৩জন লোক পাখির ঝাঁকের ন্যায় ইমাম মাহদী (আ.)’র কাছে ভিড় জমাবে। তাদের মধ্যে কিছুজন নারী থাকবে। তারা সকল অত্যাচারীর উপরে বিজয় অর্জন করবে। ২
২. জাবির বিন ইয়াযিদ জোওফি ইমাম বাকির (আ.) হতে ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাবের নিদর্শন সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর শপথ ৩১৩ জন তন্মধ্যে ৫০জন নারী থাকবে যারা পূর্ব কোন চুক্তি ব্যাতিত মক্কায় একত্রিত হবে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে: যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ১৪৮)
আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে ইমাম মাহদী (আ.)’র ৩১৩ জন সঙ্গীদের মধ্যে থাকার তৌফিক দান করেন।
তথ্যসূত্র:
১. কামাল উদ্দিন, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৭৬।
২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১৫।
৩. মোজামে হাদীসে ইমাম মাহদী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫০০।
৪. আল গ্বীবা, পৃষ্ঠা ২৭৯।
৫. দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ২৫৯।
৬. ইসবাতুল হুদা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৭৫।
৭. আল ফেতান, পৃষ্ঠা ১৫১।
৮. আলামুল ওয়ারা. খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৯।
৯. আল খারায়েজ ওয়াল জারায়েহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৮।
১০. জেলওয়েহায়ে এজাযে মাসুমিন, পৃষ্ঠা ১৮২।
১১. কাশফুল গুম্মা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৩।
১২. রেজালে বারক্বি, পৃষ্ঠা ৬২।
১৩. রেজালে কাশশি, খন্ড আল ফেহরেস্ত, পৃষ্ঠা ১১৬।
১৪. রেজালে তুসী, পৃষ্ঠা ৩২৭।