এস, এ, এ
মারিয়া কিবতি শামউনের কন্যা এবং রাসুল (সা.)র স্ত্রীদের মধ্যে হতে একজন ছিলেন যার গর্ভ থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মিসরের শাসক মুকাওকিস রাসুল (সা.)র পত্রের জবাবে লিখেন এবং মারিয়াকে উপহার স্বরূপ প্রেরণ করেন। উম্মুল মুমিনিনদের মধ্যে হযরত খাদিজা (রা.)র পরে শুধুমাত্র মারিয়া কিবতি রাসুল (সা.)র সন্তানের মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
রাসুল (সা.)র সাথে বিবাহের পূর্বে:
শামউনের কন্যা মারিয়া মিশরের ইনসানা’র হানাফ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।৭ম হিজরীতে রাসুল (সা.) হাতেব বিন আবি বালতাআ’র কাছে ইসলামের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি দিয়ে মিশরের শাষক মুকাওকিস ইসকান্দারীয়ার কাছে প্রেরণ করেন। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৭)
মুকাওকিসতাঁর চিঠির উত্তর হিসেবে মারিয়া তার বোন শিরিন এবং অনেক উপহার সামগ্রি এবং চিঠিও প্রেরণ করেন। (তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ৬১৭, ইনসাবুল আশরাফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৪৯)
চিঠির কিছু বিষয়বস্তু ছিল এরূপ: আমি আপনার বার্তা বাহকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছি এবং আপনার জন্য দুজন গুণবতী দাসীকে প্রেরণ করলাম। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২০০)
হাতেব বিন আবি বালতাআ ঐ দুই জনেকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা ইসলাম কবুল করে এবং মুসলমান হয়ে যায়। (ইনসাবুল আশরাফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৪৯)
রাসুল (সা.)’র সাথে বিবাহ:
মারিয়া যখন মদীনায় প্রবেশ করে তখন রাসুল (সা.) তাকে বিবাহের জন্য নির্বাচন করেন এবং শিরিনকে হেসান বিন সাবিতকে উপহার স্বরূপ দান করেন। (তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ৬১৭)
তবে উম্মুল মুমিনিন মারিয়া এক বছর হারেস বিন নোমানের বাড়িতে ছিল। মারিয়ার প্রতি রাসুল (সা.)র বিশেষ দৃষ্টি অন্যান্য স্ত্রীদের হিংসার কারণ হয়ে দাড়ায়। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৭১)
হযরত আয়েশার বর্ণনা অনুযায়ি মারিয়া কিবতি একজন সুন্দরী নারী ছিলেন। তার চুলগুলো কোঁকড়ানো ছিল। যখন রাসুল (সা.) মারিয়াকে আনার পরে হারিস বিন নোমানের বাড়িতে রাখেন। সে আমাদের প্রতিবেশি ছিল। রাসুল (সা.) দিন রাতের বেশীরভাগ সময় তার কাছে অতিবাহিত করতেন। একদা আমি অভিযোগ করলে তিনি তাকে মদীনা থেকে দূরে রেখে আসেন যেন মনমালিন্যতা কম হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও তার কাছে রাসুলের যাতায়াত কম হয় না এবং বিষয়টি আমার কাছে অসহনীয় ছিল।
মারিয়া রাসুল (সা.)র একজন ধর্মভীরু, পবিত্র, পূণ্যবতি, সৎ এবং সুযোগ্য স্ত্রী ছিলেন। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৭৪)
ঐতিহাসিক ও সীরাত লেখকগণ তাকে একজন ধুর্মীক নারী হিসেবে প্রসংশা করেছেন। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৭)
রাসুল (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলেন: যখন তোমরা মিশরকে জয় করবে তখন তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার করবে কেননা আমি তাদের জামাই হবো। (মোজামুল বোলদান, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৩৮)
সূরা তাহরিমের কিছু আয়াত নাযিল:
হযরত হাফসার যেদিন রাসুল (সা.)এর কাছে থাকার পালা ছিল সেদিন তিনি রাসুল (সা.)র কাছে অনুমতি নিয়ে তাঁর বাবার কাছে যান। হাফসা চলে যাওয়ার পরে রাসুল (সা.) মারিয়াকে ডেকে নেন। কিন্তু যখন হাফসা ফিরে আসে তখন দরজা বন্ধ দেখে এবং মারিয়াকে রাসুল (সা.)র কাছে দেখে তিনি রাগান্বিত হয়ে যান এবং রাসুল (সা.)র সাথে রূঢ় আচরণ করেন। রাসুল (সা.) তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য মারিয়াকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করেন। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৭)
তখন সূরা তাহরিমের এই আয়াতটি নাযিল হয়:
یا أَیهَا النَّبِی لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَک تَبْتَغِی مَرْضَاتَ أَزْوَاجِک ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِیمٌ
অর্থ: হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। (সূরা তাহরিম, আয়াত নং ১)
মারিয়া শেষ পর্যন্ত রাসুল (সা.)এর স্ত্রী হিসেবে থাকেন এবং তাঁর সাথে রাসুলের অন্যান্য স্ত্রীদের মনমালিন্যতা থেকেই যায় এবং মারিয়ার গর্ভবতি হওয়ার সময় তাদের মনমালিন্যতা আরো প্রখর হয়ে উঠে। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে মদীনার বাহিরে এক ছোট খেজেুর বাগানে যা বর্তমানে ‘মাশরাবে উম্মুল ইব্রাহিম’ নামে পরিচিত সেখানে রেখে আসেন এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য তিনি সেখানে যেতেন। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০৭)
হযরত ইব্রাহিমের জন্ম:
মারিয়া দ্বিতীয় রাসুলের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন যিনি রাসুল (সা.)র সন্তানের মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। (আল ইস্তিয়াব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫০)
ইব্রাহিম ৮ই হিজরী যিলহজ্ব মাসে জন্মগ্রহণ করে। জিব্রাইল (আ.) নাযিল হন এবং রাসুল (সা.)কে আবা ইব্রাহিম বলে সালাম দেন। (ইনসাবুল আশরাফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫০)
বর্ণিত হয়েছে যে, ইব্রাহিমের জন্মের পর রাসুল (সা.) অত্যান্ত আনন্দিত ছিলেন তিনি হযরত আয়েশার কাছে ইব্রাহিমকে দেখিয়ে বলেন দেখ এই বাচ্চা আমার সদৃশ। (ইনসাবুল আশরাফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫০)
ইব্রাহিম ১৮ই রজব ১০ই হিজরী ১৮ মাস বয়সে মৃত্যু বরণ করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে কবরস্থ করা হয়। রাসুল (সা.) তাঁর মৃত্যুতে অত্যান্ত দুঃখ পান এবং কন্দন করতে থাকেন। (তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১১৪- ১১৫)
মৃত্যুবরণ:
রাসুল (সা.)র ওফাতের পাঁচ বছর পরে ১৬ হিজরী মহরম মাসে তিনিও ইহলোক ত্যাগ করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। (তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ৬১৮)