মুয়াবিয়া হিজরী ৩৮ সনে ওমর ইবনে আসকে ছয় হাজার সৈন্যের একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে মিশরে প্রেরণ করেছিলেন । ঐ সময়ে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মিশরে হযরত আলী (আ.) – এর পক্ষ থেকে গর্ভণর হিসাবে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত। ওমর ইবনে আস মিশরে প্রবেশের পথে একটি স্থানে অবতরণ কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করে । আর সেখানে তৃতীয় খলিফা ওসমানের সর্মথকগণকে সমবেত করা হয় । উসমানের সমর্থকদের নিয়ে ওমর ইবনে আস জামায়াতে নামাজ আদায় করে ওখানে বসেই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে একটি পত্র লেখেন:
“হে আবু বকরের পুত্র ! আমি তোমাকে অভিভূত করতে চাই যে আমি তোমাকে পরাজিত করতে চাই না । তবে জেনে রাখো ! মিশরের জনগণ তোমার বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে এবং তারা আর তোমার আনুগত্য মেনে চলতে রাজি নয়, তারা তোমার থেকে অনুতপ্ত। অতএব যখন তাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে তখন তারা কিন্তু তোমাকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করবে। সুতরাং আমি তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছি মিশর ত্যাগ করে চলে যাও । – তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ”
একইসাথে মুয়াবিয়া যে পত্রটি মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে সম্বোধন করে লিখেছিলেন সেটিও মিশরের নতুন গর্ভনর মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন ওমর ইবনে আস। মুয়াবিয়ার ঐ চিঠিতে লেখা ছিলেন: ” ওসমানকে তোমার চেয়ে অধিক কেউ নিপীড়ন ও ক্ষতি করেছে বলে আমার জানা নেই। তুমি ঐ ব্যক্তি যে ষড়যন্ত্র ও তাঁর হত্যায় অংশ নিয়ে ছিলে।তুমি কি ভেবেছো আমি এসব কিছু উপেক্ষা করব বা ভুলে যাব …! এখন আমি একটি দল পাঠিয়েছি যারা তোমার রক্তের জন্য তৃষ্ণার্ত এবং তোমাকে হত্যা করার মাধ্যমে জিহাদ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন।
অবশেষে ওমর ইবনে আস এবং তার বন্ধু মুয়াবিয়া ইবনে হুদাযইজ জনাব মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের বেশ কয়েকজন সাথীদের হত্যা করেন, বিশেষ করে কাননাহ ইবনে বাশার সহ আরো কয়েকজনকে হত্যা করে । এরপর যখন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে খুঁজে পায় তখন তাঁকে বন্দী করে মিশরের একটি কারাগারে নিয়ে আটকে রাখে । আর সেখানে তারা তাকে তৃষ্ণা নিবারণে বাধা দেয় এবং তিনি যখন পচন্ড পিপাসায় ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে হত্যা করা হয় ।
অতপর তারা একটি মৃত গাধার দেহের উপর তাঁকে ফেলে আগুন দিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে দেয় !!!
উম্মুল মোমনেীন হযরত আয়েশা (রা.) (মুহাম্মদ ইবনু আবু বকরের বোন) -এর যখন খবরটি শোনেন তখন তিনি অনেক ক্রোন্দন করেন এবং নামাজ পড়ে মুয়াবিয়া ও ওমর ইবনে আসের প্রতি অভিশাপ দেন।
[তারিখে তাবারী, ৬খণ্ড, ৫৮ নম্বর পৃষ্ঠা, ৩৮ বছরের ঘটনাবলী,/ আল-কামিল ইবনে আসির, ৩খণ্ড, ১৫৪ নম্বর পৃষ্ঠা ৩৮ সনের ঘটনাবলী।/ তারিখে ইবনে কাসির, ৭খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, ৩৮ সনের ঘটনাবলী/ আল এস্তিয়াব ২খন্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠা।/ তাহজিব আত তাহজিব, ৯খন্ড, ৮১ পৃষ্ঠা]
মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মৃত্যুর সংবাদ যখন মুয়াবিয়া ও তার অনুসারীদের কাছে পৌঁছালো, তখন তারা খুবই খুশী ও আনন্দ উল্লাস করেছিল। অন্যদিকে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মৃত্যু এবং মুয়াবিয়ার উল্লাসের সংবাদ যখন ইমাম আলী (আ.) -কে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন: তারা যতখানি খুশি হয়েছে আমি ততোধিক শোকাহত হয়ে আছি যুদ্ধের শুরু থেকে এখনো । আমি এ পর্যন্ত কারো ব্যাপারে এতোখানি শোকাহত হইনি। আমি তাঁকে নিজের হাতে লালনপালন করেছি তাঁকে আমি সন্তান হিসাবে বিবেচনা করতাম।… হে খোদা এ
কুরবানী তোমার পথে উৎসর্গ করলাম।[ – মুরুজুজ্ জাহাব ২খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা।/ তারিখে ইবনে কাসির, ৭খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, ৩৮ সনের ঘটনাবলী ]
ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ আল-নুযুমুজ জাহরা-তে বলা হয়েছে তারা মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মস্তক শিরশ্ছেদ করে দামেস্কে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের কাছে নিয়ে যায় । আর তারই নির্দেশে ইসলামী ইতিহাসে এই প্রথমবার কারো কর্তিত মস্তক সমস্ত শহর প্রদক্ষিণ করানো হয় । [-আল-নুযুমুজ জাহরা গ্রন্থ, ১ম খন্ড, ১১০ নম্বর পৃষ্ঠা]