Press "Enter" to skip to content

কোরআনের সর্বপ্রথম বাংলা অনুবাদকারী শ্রী গিরিশচন্দ্র নাকি অন্য কেউ?

বহুল প্রচারিত ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ি বাংলা ভাষাতে পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম বাংলা অনুবাদ করেছেন শ্রী গিরিশচন্দ্র সেন।ইতিহাস থেকে যা পাওয়া যায় সেটাই এখানে দেওয়া গেল। শ্রী গিরিশচন্দ্র সেন পবিত্র কোরআন সর্বপ্রথম বাংলা অনুবাদক নন বরং তিনি ছিলেন প্রকাশক।

অবিভক্ত বাংলায় ১৮০৮ সালে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় পবিত্র কোরআন শরীফের আংশিক অনুবাদ করেন মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া।এরপর বাংলা ভাষায় পবিত্র কোরআন শরীফের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন মৌলভী নাঈমুদ্দীন ১৮৩৬ সালে। শ্রী গিরিশচন্দ্র সেন শুধু উক্ত অনুবাদকে পুস্তক আকারে সন্নিবেশ করেছেন। অর্থাৎ শ্রী গিরিশচন্দ্র হচ্ছেন প্রকাশক। তাও অনেক পরে, ১৮৮৬ সালে। সুতরাং পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক শ্রী গিরিশচন্দ্র সেন নন। বরং মৌলভী নাঈমুদ্দীনই পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক। আর মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া হলেন বাংলা ভাষায় প্রথম কোরআন শরীফের আংশিক অনুবাদক ।

শ্রী গিরিশচন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৫ সালে এবং মৃত্যু ১৯১০ সালে। শ্রী গিরিশচন্দ্রের জন্মেরও আগে অর্থাৎ ১৮০৮ সালে পবিত্র কোরআন শরীফের বাংলায় অনুবাদের কাজ শুরু করেন মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া। এরপর শ্রী গিরিশচন্দ্র সেনের জন্মের একবছর পরই অর্থাৎ ১৮৩৬ সনে মৌলভী নাঈমুদ্দীন পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ সুসম্পন্ন করেন।

অবশ্য পবিত্র কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ আরবী ভাষা এবং আরবী ব্যকরন উত্তমরুপে জানা যে কোন ধর্মালম্বী ব্যক্তি করতেই পারেন। এক্ষেত্রে শরীয়তী কোন নিষেধাজ্ঞা নাই। যতটুকু জানা যায় যে, আরবী ভাষা এবং আরবী ব্যকরন সম্বন্ধে শ্রী গিরিশচন্দ্র সেন তেমন পারদর্শী ছিলেন না। সঙ্গত কারনেই এরুপ ব্যক্তির পক্ষে পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, শ্রী গিরীশচন্দ্র সেন পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম বাংলা অনুবাদক।

এই প্রচারণার কিছু কারণ ছিল। বৃটিশ আমলে এদেশে ব্রাহ্মধর্মের একটা জোয়ার এসেছিল। গোঁড়া হিন্দু শ্রী গিরীশচন্দ্র সেন এক সময় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ব্রহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মধর্ম এ দেশে ছিল একটি নতুন ধর্মমত। তাই এ ধর্মমত আপামর জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য শ্রী গিরীশচন্দ্র নিজে উদ্যোগী হলেন। কিন্তু অর্থকড়ির তো প্রয়োজন। সেটা আসবে কোথেকে! তিনি ফারসী ভাষায় পন্ডিত ছিলেন ।

মুসলমানদের পকেট থেকে টাকা বের করার জন্য বেশকিছু ইসলামী বই রচনা করলেন এবং সেইসাথে পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করলেন একজন প্রকাশক হয়ে। মুসলমানরা এ বই কিনলোও প্রচুর। ফলে বাংলা ভাষাভাষী যারাই পবিত্র কোরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ হাতে পেতে চাইলো তাদের হাতে পৌঁছে গেল তারই প্রকাশিত পবিত্র কোরআন শরীফ।

এ ব্যাপারে তাঁকে ব্রাহ্মসমাজ হিন্দু ব্যক্তিবর্গ এমন কি বৃটিশরাও যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করেছে। ফলে মানুষ মনে করেছে পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হচ্ছেন শ্রী গিরীশচন্দ্র সেন। আসলে পবিত্র কোরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী মৌলভী মোহাম্মদ নঈম উদ্দীন সে কথা অল্প কিছু লোক জানলেও ব্যাপকভাবে প্রচার করার সুযোগ আসে নাই।

শ্রী গিরীশচন্দ্র সেন পবিত্র কোরআনের অনুবাদ বিক্রী করে যে অর্থ লাভ করতেন তা ব্যয় করতেন ব্রহ্মধর্ম প্রচার কাজে । ফলে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের মিশনের সাথে পবিত্র কোরআন বিক্রয়ের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। মৌলভী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ছিলেন একজন মুসলমান। তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পবিত্র কোরআনের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। তা প্রচারের জন্য শ্রী গিরীশচন্দ্র সেনের মতো তার কোন আর্থিক সামর্থ ছিল না। যার কারণে তার প্রচার প্রসার ছিল খুবই সীমিত। যার কারনে পবিত্র কোরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হয়েও মৌলভী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন নিজে শ্রি গিরীশচন্দ্র সেনের মতো প্রচার পেতে পারেন নাই।

তথ্যসুত্র:

ইন্টারনেট ও অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন মিডিয়া / দৈনিক সংগ্রামঃ ২১ শে জুলাই,২০১৮ / দৈনিক ঢাকা পোস্টঃ ৭ই সেপ্টেম্বর,২০১৮ / জিব্রাইলের ডানাঃ ১লা মার্চ,২০০৯ / বিডি আল কোরআনঃ ৪ঠা এপ্রিল,২০১৩ / সাইবার মোজাহিদঃ জানুয়ারি,২০১৮ / মাসিক মদিনাঃ আগস্ট,২০০৪, প্রশ্নোত্তর পর্ব,পৃষ্ঠাঃ ৪৭।