এস, এ, এ
তসবিহে উম্মুল বানিন কি?
মুসলমানদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের তসবিহ দেখতে পাওয়া যায় তন্মধ্যে তসবিহে উম্মুল বানিন হচ্ছে একটি যা বিভিন্ন রঙের দানা দ্বারা সুসজ্জিত। এই তসবিহ-এর এত প্রচলণ হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে তসবিহটি বিভিন্ন রঙের দানা, সুন্দর রঙ এবং বৈচিত্র্য, নিজস্ব বিশেষত্ব এবং অনন্য সৌন্দর্যতার কারণে মুসলমানদের সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে।
উম্মুল বানিনের তাসবিহ নামকরণের কারণ:
উম্মুল বানুনের তাসবিহ নামকরণের কারণ এবং কেন এই নামে পরিচিত সে সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী বর্ণনাটি হল যে উম্মুল বানিন ছেঁড়া তসবিহর অবশিষ্ট দানা সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলি বেঁধেছিলেন এবং নিজের জন্য একটি নতুন তসবিহ তৈরি করেছিলেন। এই কারণে, এই রঙিন তসবিহটি উম্মুল বানিনের রঙিন তসবিহ নামে সুপরিচিত।
উম্মুল বানিনের তসবিহর বৈশিষ্ট্যসমূহ:
উম্মুল বানিনের তসবিহর ধরন এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? এই তসবিহটি আকিক পাথর দিয়ে তৈরি, যার অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই তসবিহটির জন্য উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে, নিম্নলিখিতগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে:
১. তৃতীয় চক্র পেটের নিচের স্নায়বিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পঞ্চম চক্র গলা বা শ্বাসনালী নিয়ন্ত্রণ করে।
২. এটি আবেগের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হৃদয়কে নিরাময় করে।
৩. এটি সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
৪. ঘাড়ের ব্যথা দূর করে।
৫. তসবিহটি পাঠ করলে বরকত ও প্রচুর রিজিক বৃদ্ধি পায়।
৬. দুর্ঘটনা এবং বিপর্যয় থেকে তসবিহ-এর মালিককে রক্ষা করে।
৭. উম্মুল বানিনের তসবিহ সাথে থাকলে মালিকের জন্য মঙ্গল এবং সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে।
৮. উম্মুল বানিনের তসবিহ ভারী রক্তপাত প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকরি, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য।
৯. উম্মুল বানিনের তসবিহ প্রশান্তিদায়ক এবং মানসিক যন্ত্রণা এবং দুঃখ দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকরি।
তসবিহে উম্মুল বানিন পাঠ ও তাওয়াসসুল করার বিভিন্ন পদ্ধতি:
বিভিন্নভাবে হযরত উম্মুল বানিন-এর মাধ্যমে দোয়া চাওয়া যায়। ধর্মীয় আলেমদের বর্ণনার ভিত্তিতে নিন্মে তা বর্ণনা করবো:
১. আয়াতুল্লাহ হাজ সৈয়দ মাহমুদ হুসাইনি শাহরুদি (রহ.) বলেছেন: তিনি কষ্টের সময় হযরত আব্বাস (আ.)-এর মা উম্মুল বানিন-এর ওপরে ১০০বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে নিজের সমস্যার সমাধান করতেন।
২. হজরত উম্মুল বানিনের পক্ষ থেকে কারবালা যিয়ারতের মানত করা এবং তাঁর রূহকে তীর্থযাত্রার সওয়াব প্রদান গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।
৩. সুরা ইয়াসীনের খতম, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তি সময়ের আট রাত পর্যন্ত হযরত উম্মুল বানিনের ও হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর সন্তানদের সংখ্যা অনুযায়ী সুরা ইয়াসীন পাঠ করতে হবে। এভাবে যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু করবে এবং প্রথম রাতে হযরত আব্বাস (আ.)-এর নিয়তে সুরা ইয়াসীন পাঠ করবে এবং এর সওয়াবকে হযরত উম্মুল বানিনের রূহকে হাদীয়া করবে এবং মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তি সময়ে পাঠ করবে। তারপর হযরত উম্মুল বানিনের যিয়ারত পাঠ করবে এবং ১৩৫ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে হযরত উম্মুল বানিনের রূহের উদ্দেশ্যে হাদীয়া করবে।
দ্বিতীয় রাতে, যেটি শনিবার রাত, হযরত উম্মুল বানিনের অপর পুত্র আবদুল্লাহর পক্ষ থেকে, তৃতীয় রাতে তৃতীয় সন্তান উসমানের পক্ষ থেকে, চতুর্থ রাতে, চতুর্থ সন্তান জাফরের পক্ষ থেকে, পঞ্চম রাতে হযরত জয়নাবের পক্ষ থেকে, ষষ্ঠ রাতে হযরত উম্মে কুলসুম, সপ্তম রাতে ইমাম হাসান (আ.)-এর পক্ষ থেকে এবং অষ্টম রাতে, যেটি আবার শুক্রবারের রাতে, ইমাম হুসাইনের পক্ষ থেকে আমলের পুনরাবৃত্তি করুন। তারপর হজরত আবা আবদুল্লাহ হুসাইন (আ.)-এর কষ্টের কথা উল্লেখ করে হজরত উম্মুল বানিনের কাছে তাওয়াসসুল করলে এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে ইনশাআল্লাহ হাজত পূরণ হবে।
৪. সালাওয়াতের খতম; এভাবে যে বুধবার থেকে শুরু করে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ফজরের নামাযের পর হজরত উম্মুল বানিন (সা.)-এর আত্মার প্রতি ১৩৫ বার দুরুদ শরীফ হাদীয়া করুন।
৫. ইলমে জাফর সম্বলিত গ্রন্থে এই খতমের কথা বলা হয়েছে; এভাবে মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু করে সকালের নামাযের পর বা সন্ধ্যার নামাযের পর প্রথম দিন মহানবী (সা.)-এর নিয়তে, দ্বিতীয় দিন হযরত আমিরুল মুমিনের(আ.)-এর নিয়তে, এবং এইভাবে পর্যায়ক্রমে ইমামদের এবং সর্বশেষ ইমাম মাহদী (আ.) এর নিয়তে চতুর্দশ দিন পর্যন্ত, প্রতিদিন এক হাজার বার সালাওয়াত পাঠ করা ” و عجل فرجهم ” উল্লেখ সহ পাঠ করতে হবে। এছাড়া, পনের তারিখে হজরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.)-এর নিয়তে এবং ষোড়শ দিনে হজরত উম্মে আল-বানিন (আ.)-এর নিয়তে এবং সপ্তদশ দিনে হজরত জয়নব কুবরা (আ.)-এর নিয়তে প্রতিদিন হাজার দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে এভাবে শেষ দিনে সালাওয়াত শেষ করে তাওয়াসসুল করে হাজত পূরণের জন্য দোয়া করতে হবে।
৬. হজরত উম্মুল বানুন (আ.)-এর পক্ষ থেকে কুরআন খতম করলে তা সমস্যা সমাধানে কার্যকর হবে।
শেষ কথা
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, শিয়ারা বিপর্যয় এড়াতে এবং তাদের হাজত পূরণের জন্য বিভিন্ন উপায়ে উম্ম আল-বানিন-এর কাছে তাওয়াসসুলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্যে কামনা করে আসছে। অন্যদের খাওয়ানোর মাধ্যমেও হজরত উম্মুল বানিনাহর কাছেও তাওয়াসসুল বা মানত করা হয়। তবে উল্লেখ্য যে, হজরত উম্মুল বানিন বা মহান ব্যক্তিত্বদের পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্যে সওয়াব পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে মান্নতের খাবার বিতরণ করা হয় তা যেন শুদ্ধ নিয়ত ও হালাল উপার্জনের হয়।

তসবিহে উম্মুল বানিন
More from ইসলামি আধ্যাতিকতাMore posts in ইসলামি আধ্যাতিকতা »
More from দোয়া ও মুনাজাতMore posts in দোয়া ও মুনাজাত »