এস, এ, এ
পানির অপর নাম জীবন। পানি (অন্যান্য নাম: বারি, সলিল, নীর, অম্বু) হলো একটি অজৈব, স্বচ্ছ, স্বাদহীন, গন্ধহীন এবং প্রায় বর্ণহীন এক রাসায়নিক পদার্থ, যা পৃথিবীর বারিমণ্ডলের ও যে কোন জীব-কোষ বা উদ্ভিদ-কোষের একটি প্রধান উপাদান। যদিও পানি কোন প্রাণী বা উদ্ভিদকে কোন রকমের শক্তির বা জৈব পরিপোষকের যোগান দেয় না, তবু এখনও পর্যন্ত আমরা যা জানি, তাতে সমস্ত ধরনের প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। আজকে আমরা রেওয়ায়েতের আলোকে পানি পানের আদবসমূহ সম্পর্কে জানবো:
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি পানি খাওয়ার সময় ইমাম হুসাইন (আ.)এর আহলে বাইত (আ.)-এর কথাকে স্মরণ করে এবং তাঁকে হত্যাকারীর প্রতি অভিসম্পাত করে তাহলে আল্লাহ তাকে এক লক্ষ সওয়াব দান করবেন, তার এক লক্ষ গুনাহকে ক্ষমা করে দিবেন এবং এক লক্ষ পদ মর্যাদা দান করবেন এমনকি তাকে এক লক্ষ দাশ মুক্ত করার সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে আনন্দিত এবং চিত্ত হৃদয়ে উত্তোলিত করবেন। আর যদি পানি পানের সময় এই দোয়াটি পাঠ করা হয় তাহলে আরো উত্তম:
صَلَواتُ اللَّهِ عَلَی الْحُسَیْنِ وَاَهْلِ بَیْتِهِ وَاَصْحابِهِ وَلَعْنَهُ اللَّهِ عَلَی قَتَلهِ الْحُسَیْنِ وَاَعْدائِهِ
সহীহ হাদীসে ইমাম (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, একজন ব্যাক্তি এক গ্লাস শরবত পান করার কারণে আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করেন। কেউ যদি তৃষ্ণা নিবারণ হওয়ার পূর্বে পানি পান করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং আল্লাহর প্রশংসা করে তারপরে আবার পানি পান করে তারপরে বিরতি দিয়ে আবারও আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ এমন কাজের জন্য বেহেশতকে তার জন্য ওয়াজিব করে দিবেন।
অন্যে একটি বিশ্বস্ত হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম (আ.) বলেছেন:
اَلحَمْدُ للَّهِ ِ الَّذِیِ سَقانا عَذْباً زُلالاً وَلَمْ یُسْقِنا مِلْحاً اَجاجاً وَلَمْ یُؤاخِذْنا بِذُنُوبِنا
অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি পানি পানের পূর্বে বিসমিল্লাহ «بِسْمِ اللَّهِ» পাঠ করে এক ঢোক পানি পান করে এবং “আল হাদমদুলিল্লাহ” «اَلحَمْدُ للَّهِ» পাঠ করে তারপরে আবার বিসমিল্লাহ «بِسْمِ اللَّهِ» পাঠ করে এক ঢোক পানি পান করে এবং “আল হাদমদুলিল্লাহ” «اَلحَمْدُ للَّهِ» পাঠ করে এমতাবস্থায় যতক্ষণ উক্ত পানি তার পেটে থাকবে ততক্ষণ সে আল্লাহর তসবিহ পাঠ করতে থাকবে এবং পানি পানকারী উক্ত যিকিরের সওয়াব অর্জন করতে থাকবে।
অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তোমরা যখনই রাতে পানি পান করবে তখন পানির পাত্রে পানি নিয়ে তা নাড়াতে হবে এবং বলতে হবে: «یا مآءُ، مآءُ زَمْزَمَ وَمآءُ فُراتٍ یَقْرَءانِکَ السَّلامَ».
অন্য একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি রাতে পানি পান করার সময় তিনবার বলে:
“«عَلَیْکَ السَّلامُ مِنْ مآءِ زَمْزَم وَمآءِ الفُراتِ»” তাহলে উক্ত পানি পান করলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
অন্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, পানি পান করার সময় যেন এই দোয়াটি পাঠ করা উত্তম:
اَلحَمْدُ للَّهِ ِ الَّذِی سَقانِی فَاَرْوانِی وَاَعْطانِی فَاَرْصانِی وَعافانِی وَکَفانِی، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِی مِمَّنْ تَسْقِیهِ فِی المَعادِ مِنْ حَوْضِ مُحَمَّدٍ وَتُسْعِدُهُ بِمُرافَقَتِهِ بِرَحْمَتِکَ یا اَرْحَمَ الرّاحِمِینَ.
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: অতিরিক্ত পানি পান করো না তাহলে বিভিন্ন ধরণের ব্যাথ্যায় আক্রান্ত হবে যতক্ষণ নাভিতে ব্যাথ্যা করবে তখন ঔষধ খেয় না।
আলেমগণের দৃষ্টিতে দাড়িয়ে পানি পান করা মাকরুহ এবং সুন্নাত হচ্ছে পানি তিন নিঃশ্বাসে পান করা উচিত। এছাড়া অনেক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, দাড়িয়ে পানি পান করা, তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা, দিনে দাড়িয়ে এবং রাতে বসে পানি পান করা উত্তম।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: দিনের বেলায় দাড়িয়ে পানি পান করলে পিত্তরস ভাল হয়। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, দাড়িয়ে পানি পান করলে শারীরিক অবস্থা শক্তিশালী হয়।
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: রাতে দাড়িয়ে পানি পান করো না কেননা উক্ত কারণে এমন ব্যাথ্যা সৃষ্টি হবে যার কোন ঔষধ নাই তবে যদি আল্লাহ শেফা দিতে চান।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: রাতে দাড়িয়ে পানি পান করো না, কবরের চারিধারে ঘুরবে না, পানিতে দাড়িয়ে পেশাব করো না কেউ যদি এমনটি করে তাহলে সে এমন বীপদে নিপতিত হবে যে সে শুধু নিজেকে দোষারোপ করবে।
একজন ব্যাক্তি ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)কে জিজ্ঞাসা করলো যে, কেউ যদি এক নিঃশ্বাসে পানি পান করে তাহলে কি হুকুম রয়েছে? লোকজন বলে এভাবে পানি পান করাকে “শোরবে হীম” তৃষ্ণার্ত উট বলে। তখন ইমাম (আ.) বলেন: শোরবে হীম দ্বারা এখানে পানি পান করার সময় আল্লাহর নামকে স্মরণ না করাকে বুঝানো হয়েছে।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন: পানি পানের আদব হচ্ছে শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা এবং শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করা।
তিনি আরো বলেছেন: কলসের মুখে মুখ লাগিয়ে এবং যেখানে ভাঙ্গা বা ছিদ্র রয়েছে উক্ত স্থান থেকে পানি পান করো না কেননা ঐটা হচ্ছে শয়তানের স্থান।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বাম হাত দিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি আরো বলেছেন: পানি অল্প অল্প করে পান কর এবং মুখ ভরে পানি পান করো না। তাহলে যকৃৎ ব্যাথ্যা করবে।
রাসুল (সা.) কখনও শামের কাঁচের গামলায়, কখনও কাঠের পাত্রে কখনও চামড়ার পাত্রে এবং কখনও মাটির পাত্রে পানি পান করতেন আর তা না থাকলে দুই অঞ্জলি ভরে পানি পান করতেন।
তথ্যসূত্র: হিল্লিয়াতুল মুত্তাক্বিন, পৃষ্ঠা ৭৬-৭৮।