Press "Enter" to skip to content

বদর যুদ্ধের বিজয়ের নায়ক আলী(আ.)

মোঃ তুরাব রসুল।
আজ ১৭ই রমজানুল মুবারক যা মুসলিমদের জন্য বড়ই খুশি ও বিজয়ের দিন কারণ এই দিনেই মুসলিমরা কুফরী শক্তির ওপর বিজয় লাভ করেছিলেন।কিন্তু বড়ই দঃখ ও লজ্জার বিষয় হলো এই যুদ্ধে বিজয়ের পেছনে যার সবথেকে বড় ভুমিকা ও অবদান সেই আলীর কথা আমরা স্বরণ করিনা যদিও ১৭ই রমজান “বদর দিবস”খুব ঘটা করে পালন করি। কেউ কেউ আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলতে পারে শুধু আলী কেন সকলেরই অবদান আছে কথা সত্য কিন্তু সব বিষয়ে বিশেষ কোন কারণ বা ব্যাক্তি বিশেষের কিছু অবদান থাকে, আর আলীই হলো সেই ব্যাক্তি যার অবদানে মুসলিমদের বদরের যুদ্ধে জয় লাভ। এ দাবিটা নিছক আমার কোন দাবি না এ দাবি খোদ বুখারী শরীফের হাদিস। যেমন ইমাম বুখারী তার সহীহুল বুখারীতে উল্লেখ করেছেন।
আবু ইসহাক(র)হতে বর্ণিত যে আমি শুনলাম,এক ব্যক্তি বারা (রা) কে জিজ্ঞেস করলো, আলী (রা) কি বাদর যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন? তিনি বললেন, ‘ আলী ঐ যুদ্ধে মুকাবিলা করেছিলেন এবং হাককে বিজয়ী করেছিলেন। (সহীহুল বুখারী ৪র্থ খন্ড, হাদিস নং- ৩৯৭০ পৃ-১১,অধ্যায় আবু জাহলের হত্যা, তাওহীদ পাবলিকেশন্স,প্রকাশ-২০০৫সাল।) হাদিসের ভাষা লক্ষ্য করার মত ” আলী হাককে বিজয়ী করেছিলেন “।অর্থাৎ বদর যুদ্ধের নায়কই হলেন আলী। আমার সাথে দ্বিমত পোষণকারীদের কে স্বরণ করিয়ে দিতে চাই এটা “বুখারী”উমাইয়া পন্হিদের দাবি মোতাবেক কোরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব। এটা শীয়াদের কোন কিতাব না আর তেহরান থেকেও ছাপানো না।
মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে বদর নামক গ্রামে নবী (সা) ৩১৩ সৈন্য নিয়ে কুরাইশ কাফেলাকে আটকের জন্য বদর কুপের নিকট অবস্থান করেন।
এ সংবাদ পাওয়ার পর কুরাইশ গোত্রপতিরা নবীজি(সা)এর মোকাবেলা করার জন্য বদর প্রান্তে হাজির হয়।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে রাসুলুল্লাহ(স) সাহাবাগণের পরামর্শ চান। প্রথমে হযরত আবু বকর তার পরামর্শে বলেনঃ “কুরাইশ গোত্রপতিগণ ও বীরগণ এ সেনাবাহিনী গঠনে অংশ গ্রহণ করেছে। কুরাইশগণ কখনো কোন আদর্শে ইমান আনেনি ও এক মুহূর্তের জন্যও পরাজিত এবং অপমানিত হয়নি। আর আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়নি।” হযরত ওমর, হযরত আবু বকরের কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
এখানে একটা বিষয় পরিস্কার যে এই দুজন বুজর্গ যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন তা তাদের কথায় ফু্টে উঠেছে।(ওয়াক্বেদ,মাগ্বাযী) তাবারী বর্ণনা করেন মিকদাদ যখন কথা বলতে দাড়ায় তখন নবীর(সা) চেহারায়(পূর্ববর্তী দুই জনের কথার কারণে) রাগান্বিত ভাব ফুটে উঠে।কিন্তু যখন হযরত মিকদাদের কথা শুনেন তখন তাঁর(সা) চেহারায় স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।
হযরত মিকদাদ(রা) দাঁড়িয়ে বলেনঃ মহান আল্লাহর শপথ, আমরা বনি ইসরাইলীর মত নই যারা মুসা(আ)কে বলেছলঃ “হে মুসা! তুমি ও তোমার প্রভু গিয়ে যুদ্ধ কর, আর আমরা এখানে বসলাম।” বরং আমরা তাদের বিপরীতে বলবোঃ”আপনি আপনার প্রভুর সহযোগিতা নিয়ে জিহাদ করুন, আমরাও আপনার সাথে দাঁড়িয়ে জিহাদ করবো।”
সাদ বিন মুয়াজ(রা)ও যুদ্ধের পক্ষে মত দেন। নবী(সা) তাদের কথায় খুশি হলেন এবং তিনি(সা) সুসংবাদ দিয়ে বললেনঃ “আমি কুরাইশদের মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি।”
বদরের যুদ্ধে যিনি সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেন তিনি হচ্ছেন আলী ইবনে আবি তালিব। প্রথমে আনসারদের মধ্যে তিন বীরকে পাঠানো হল কিন্তু কুরাইশরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে রাজি না হয়ে তাদের সমকক্ষদেরকে পাঠানোর আহবান জানালো। এ যুদ্ধে হামযা শাইবাকে আলী ওয়ালিদকে ও হামযা এবং আলী উতবাকে হত্যার ব্যাবারে উবাইদাকে সহযোগিতা কনেন। (সিরাতুন্নবী ইবনে হিশাম ও সহীহুল বুখারী ৪র্থ খন্ড মাগাযী অধ্যায়) এ প্রসঙ্গে হযরত আলী বলেন সর্বপ্রথম আমিই কিয়ামতের দিন দয়াময়ের সামনে বিবাদ মিমাংসার জন্য হাটু গেড়ে বসব। কায়েস ইবনে উবাদ(রা) বলেন, এদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছেঃ”এরা দুটি বিবদমান পক্ষ তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে বিতর্ক করে”।(সুরা হাজ্ব ২২/১৯) তিনি বলেনঃ(মুসলিম পক্ষের) তারা হলেন হামযা,আলী ও উবাইদাহ অথবা আবু উবািদাহ ইবনুল হারিস(রা),(অপর পক্ষে) শায়বা বিন রাবীআহ, উতবাহ বিন রাবীআহ এবং ওয়ালিদ ইবনু উতবাহ যারা বদর যুদ্ধের দিন পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।(সহীহুল বুখারী ৪র্থ খন্ড,তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নং- ৩৯৬৫)
হযরত আলী মুয়াবিয়াকে যে পত্র লিখেন তাতে উল্লেখ করেনঃ “একই সময় তোমার নানা,তোমার মামা ও তোমার ভাইয়ের ওপর যে তরবারি দিয়ে আঘাত হেনেছিলাম তা আমার নিকট আছে।” অর্থাৎ কাফের কুরাইশদের বড় বড় গোত্রপতিরা আলীর(আ) তরবারির আঘাতে জাহান্নামে যায়।
শুধু তাই নয় এই যুদ্ধে কাফেরদের মোট ৭০জন সৈন্য মারা যায় তার মধ্যে হযরত আলী(আ) একাই ৩৬জনকে হত্যা করেন।(ইবনে হিশাম)।
সহীহুল বুখারী ও ইসলামের ইতিহাস উল্লেখিত বর্ণনা মতে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে ইসলাম অর্থাৎ সত্যের বিজয়ে ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব(আ)এর অবদান অনস্বীকার্য। তাই আসুন ১৭ই রমজান “বদর” দিবসে হযরত আলীকে (আ) শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করি ও তাঁর প্রতি জানাই বিনম্রশ্রদ্ধান্জলী।
সালাম তাদের প্রতি যারা সত্যকে গ্রহণ করে।
মোঃ তুরাব রসুল।
১১/০৫/২০২০ইং।
১৭ই রমজানুল মুবারক ১৪৪১হিজরি।