Press "Enter" to skip to content

বিভিন্ন দেশে শবে-বরাত”এর বিভিন্ন নাম

পবিত্র শবে-বরাত। বরকতময়, রহমতপূর্ন এবং অতি পূণ্যময় রজনী বা প্রচলিত শব্দে “শবে-বরাতের” বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন–, লাইলাতুল বরাত , লাইলাতুল দোয়া ।

আরবী ভাষাতে — নিসফ্ শা’বান ।

ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শা’বান

মালয় ভাষাতে — নিসফু শা’বান ।

তুর্কি ভাষাতে — বিরাত কান্দিলি ।

ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয় “শবে-বরাত” ।

শবে-বরাত কথাটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে । ফার্সি শবে কথাটির অর্থ বাংলায় – রাত এবং বরাত কথাটির অর্থ – ভাগ্য/ মুক্তি । অর্থাৎ ভাগ্যের/ মুক্তির রাত/ রজনী।

প্রশ্ন : শবে-বরাত” কথাটি কি পবিত্র কোরআন আছে?

সহজ জবাব না, সরাসরি শবে-বরাত কথাটি নাই । যেভাবে নামাজ-রোজা সরাসরি নাই।

প্রশ্ন – তাহলে পবিত্র কোরআনে কি নামে পাওয়া যায়?

সহজ জবাব: পবিত্র কোরআনে – “লাইলাতুল মোবারাকা” (لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ) এবং সহীহ হাদিসে-‘লাইলাতুল নিসফি মিন শা’বান’ (لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ) নামে পাওয়া যায়। যেভাবে নামাজকে “সালাত” ও রোজাকে “সাওম” নামে পাওয়া যায়।

সবথেকে মজার বিষয় হল যে , শতভাগ ভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট আহলে হাদিস পন্থীগন পবিত্র “শবে-বরাতকে” অস্বীকার করলেও এদের প্রধানতম ধর্মীয় গুরু আলবানি এই “শবে-বরাতের” হাদিসকে সহীহ এবং বিশুদ্ব বলেছেন । যদি তারা সত্যিই সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতেন তবে অবশ্যই “শবে-বরাত” নিয়ে অহেতুক ধুম্রজাল তৈরী করতেন না ।

শবে-বরাত সম্পর্কিত দলীল সমূহ –

এই সম্পর্কিত হাদিস কি সহীহ সিত্তায় বর্ণিত হয়েছে ?

সহজ জবাব: জ্বী, হয়েছে যেমন , সহীহ মুসলিম , হাদিস নং – ২৬২২ , ২৬২৩, ২৬২৪ / ইবনে মাজাহ , হাদিস নং – ১৩৮৯ , ১৩৯০ / আবু দাউদ , হাদিস নং – ১১৪৪, ১৫৬৩ / জামি সগীর , হাদীস নং – ১৮১৯ / মিশকাত শরীফ , হাদিস নং – ১৩০৬, ১৬০৭ ।

যেহেতু এ সম্পর্কিত হাদিস সহীহ সনদে বর্ণিত পাওয়া যায় । সুতরাং, ফেৎনাবাজ আহলে হাদিসরা কোনভাবেই শবে-বরাতকে অস্বীকার করতে পারবে না । কেবল নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্যতীত ।

প্রিয় পাঠক, শবে -বরাত সম্পর্কিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আরও দলীল নজেই দেখে নিন।

শরীয়তে শবে-বরাত বলে কিছু আছে কী?

শবে-বরাতের ফজীলত নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমানিত ।

সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এ রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে শক্তি ও সামর্থানুযায়ী বেশী বেশী ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত ।

আহলে সুন্নাতের রেওয়ায়েত থেকে শবে-বরাতের ফজীলত ও করণীয় বিষয়ে —

হযরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন–, “–মহান আল্লাহ ১৫ই শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন–” । (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৫৬ / সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ- ৩/৩১৫ )

হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণিত ,নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন-,”–অর্ধ শাবানের রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাক এবং দিনের বেলা রোজা রাখ । কেননা এ রাতের সূর্যাস্তের পর আল্লাহ প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব । আছে কি কোন রিজিকপ্রার্থী ? আমি তাকে রিজিক দেব । কোন বিপদগ্রস্থ আছে কি ? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব । এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাকে ডাকতে থাকেন–” । (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৪ / বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদিস নং.৩৮২২ / আত তারগীব ওয়াত তাওহীব ২/২৪২)

হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন”–অর্ধ শাবানের রাতে (শবে-বরাতে) মহান আল্লাহ তাঁর সমস্ত মাখলুকের বা সমগ্র সৃষ্টির প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন–” ।

সূত্র – সহীহ ইবনে হিব্বান , হাদিস নং-৫৬৬৫ / মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪/ মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদিস নং-১৭০২ / তাবারানী : আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬/ আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫ / সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৯০ / মুসনাদুশ শামীন, হাদিস নং-২০৩ / মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৪৭৯ / শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২০৪ ও ৩৫৫২ / সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১/৪৪৫ / মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ২/১৭৬ / সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং- ৩/৩৮১; হাদিসটি সহীহ / কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৪, হাদিস-৫১২ / আল ইহসান-৭/৪৭ / মাওয়ারিদুয যমআন-৪৮৬, হাদিস-১৯৮০ / মাজমাউ যাওয়াইদ-৮/৬৫ / সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদিস-১১৪৪ / আততারগীব-২/২৪২, হাদিসটির মান – হাদিসটি সম্পূর্ণ সহীহ ।

বর্তমান লা মাযহাবী (আহলে হাদিস) ভাইদের প্রসিদ্ধ শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ . সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ গ্রন্থের ৩/১৩৫-১৩৯ -এ শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন যে , শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিস সমূহ নিঃসন্দেহে সহীহ এবং বিশুদ্ব প্রমাণিত হয় ।

সম্মানীত পাঠকবৃন্দ, পরিশেষে নিবেদন এই যে , আমার মতে ভ্রান্ত কথায় বিভ্রান্ত হয়ে বরকতময়পূর্ন এই রজনীর বিশাল রহমত থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। সর্বশেষ বারতম ইমাম মাহদীর (আঃ) শুভ আগমন উপলক্ষে যথাসাধ্য আনন্দ করুন এবং পবিত্র রাতটিতে ইবাদত আমল পালন করুন ।

সংগৃহিত