অনুবাদ: ড. আবু উসামা মুহাররম
একটি সহিহ হাদিসে ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: যখন তোমার কাছে নববধূকে আনা হবে, তখন তাকে আগে অযু করতে বল এবং তুমিও অযু করে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর আল্লাহর প্রশংসা এবং মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরিবারের উপর দরুদ পাঠের পর দোয়া কর। তাকে তোমার দোয়ার বাক্যের সাথে আমিন বলতে বলো। এরপর এই দোয়াটি পাঠ কর:
اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِی اِلْفَها وُوُدَّها وَرِضاها وَارْضِنِی بِها وَاجْمَعْ بَیْنَنا بِاَحْسَنِ اجْتِماعٍ وَآنَسِ ائْتِلافٍ فَاِنَّکَ تُحِبُّ الحَلالَ وَتَکْرَهُ الحَرامَ
হে আল্লাহ, আমাকে তার দয়া, স্নেহ এবং সন্তুষ্টি দিন, এবং আমাকে তার সাথে সন্তুষ্ট করুন, এবং আমাদের সর্বোত্তম উপায়ে একত্রিত করুন, এবং সম্প্রীতি তৈরি করুন, কারণ আপনি হালালকে ভালবাসেন এবং হারামকে ঘৃণা করেন।
এরপরে তিনি বলেন: ভালবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং শত্রুতা শয়তানের কাছ থেকে। শয়তান চায় আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা মানুষের জন্য অপছন্দনীয় করতে ।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে হাসান হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: যখন বিয়ের রাতে নববধূর কাছে যাও, তখন তার কপালের চুল সরিয়ে নাও এবং তাকে কেবলার দিকে ঘুরিয়ে দাও ও বল:
اَللَّهُمَّ بِاَمانَتِکَ اَخَذْتُها وَبِکَلِماتِکَ اِسْتَحْلَلْتُها، فَاِنْ قَضَیْتَ لِی مِنْها وَلَداً فَاجْعَلْهُ مُبارَکاً تَقِیّاً مِنْ شِیعَهِ آلِ مُحَمَّدٍ، وَلا تَجْعَلْ لِلشَّیْطانِ فِیهِ شَرَکاً وَلا نَصِیباً.
হে খোদা, তোমার বিশ্বস্ততার দ্বারা আমি তাকে গ্রহণ করেছি এবং তোমার কথার দ্বারা আমি তাকে হালাল করেছি। সুতরাং তুমি যদি তার দ্বারা আমার জন্য একটি পুত্রের ফয়সালা করো। তবে তাকে মুহাম্মদের পরিবারের অনুসারীদের মত একজন বরকতময় ও ধার্মিক বানাও, এবং শয়তানকে এতে কোন অংশীদার বা ভাগ দিও না।
অন্য একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে: তার কপালে হাত রেখে বল:
اَللَّهُمَّ عَلی کِتابِکَ تَزَوَّجْتُها وَفِی اَمانَتِکَ اَخَذْتُها وَبِکَلِماتِکَ اسْتَحْلَلْتُ فَرْجَها فَاِنْ قَضَیْتَ لِی فِی رَحِمِها شَیْئاً فَاجْعَلْهُ سَوِیّاً وَلا تَجْعَلْهُ شَرَکَ شَیْطانٍ
হে আল্লাহ, তোমার কিতাব অনুসারে আমি তাকে বিয়ে করেছি এবং তোমার ভরসায় আমি তাকে গ্রহণ করেছি। তোমার কথায় আমি তার গোপনাঙ্গের অনুমতি গ্রহণ করেছে। সুতরাং তুমি যদি তার গর্ভে আমার জন্য কিছু নির্ধারণ করে দাও, তবে তা শয়তানের ফাঁদ করো না।
বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেনঃ মানুষ শয়তানের হয় কেমনে? তিনি বললেনঃ যদি তারা সহবাসের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তাহলে শয়তান চলে যায়, আর যদি না করে, তখন সে ঐ ব্যক্তির লিঙ্গের সাথে তার লিঙ্গ প্রবেশ করায়। তখন যৌনমিলন তাদের উভয়ের থেকে হয় এবং শুক্রাণু তৈরি হয়। ঐ লোকটি জিজ্ঞেস করল শয়তান কারো সাথে শরীক হয়েছে তা কিভাবে জানব? তিনি বললেনঃ যে আমাদের আহলে বাইতদের ভালবাসে, শয়তান তার সাথে শরীক হতে পারে না। আর যে আমাদের শত্রু, শয়তান তার সাথে শরীক হয়। এ বিষয়ে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত আছেঃ বিয়ের সময় এই দোয়াটি পাঠ করা উচিত:
اَللَّهُمَّ بِکَلِماتِکَ اسْتَحْلَلْتُها وَبِاَمانَتِکَ اَخَذْتُها، اَللَّهُمَّ اجْعَلْها وَلُوداً وَدُوداً لا تَقْرَکْ تَأْکُلُ مِمّا راحَ وَلا تَسْئلُ عَمّا سَرَحَ.
অর্থ: হে খোদা, তোমার কথায় আমি তাকে হালালরুপে গ্রহণ করেছি এবং তোমার ভরসায় তাকে সঙ্গী করেছি। হে আল্লাহ তাকে নম্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ করে দাও। সে যা খেতে পছন্দ করে তা ছিনিয়ে নিওনা।
অন্য একটি নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েতে হজরত সাদিক থেকে বর্ণিত হয়েছে: তিনি এই দোয়াটি পাঠ করতে বলেছেন:
بِکَلِماتِ اللَّهِ اسْتَحْلَلْتُ فَرْجَها وَفِی اَمانَهِ اللَّهِ اَخَذْتُها، اَللَّهُمَّ اِنْ قَضَیْتَ لِی فِی رَحِمِها شَیْئاً فَاجْعَلْهُ بارّاً تَقِیّاً وَاجْعَلْهُ مُسْلِماً سَوِیّاً وَلا تَجْعَلْ فِیهِ شَرَکاً لِلشَّیْطانِ
অর্থ: আল্লাহর হুকুমে আমি তার পাণি হালালরুপে গ্রহণ করেছি এবং আল্লাহর ভরসায় তাকে স্ত্রী গ্রহণ করেছি, হে আল্লাহ, যদি আপনি তার গর্ভে আমার জন্য কিছু নির্ধারণ করেন তবে এটিকে সৎ ও ধার্মিক করুন এবং এটিকে মুসলিম করুন এবং এটিকে শয়তানের ফাঁদ ও ধোকা থেকে রক্ষা করুন।
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত আছে: মানুষের শুক্রাণুতে শয়তানের অংশগ্রহণ খুবই ভয়ঙ্কর। বর্ণনাকারী বলেন, এটি যাতে না ঘটে তার জন্য কী করা উচিত? তিনি বলেনঃ যখনই তোমার সহবাসের ইচ্ছা হবে তখন বলো:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِیمِ، لا اِلهَ اِلَّا هُوَ، بَدِیعُ السَّمواتِ وَالاَرْضِ، اَللَّهُمَّ اِنْ قَضَیْتَ مِنِّی فِی هذِهِ اللَّیْلَهِ خَلِیفَهً، فَلا تَجْعَلْ لِلشَّیْطانِ فِیهِ شَرَکاً وَلا نَصِیباً وَلا حَظّاً وَاجْعَلْهُ مُؤْمِناً مُخْلِصاً مُصَفّیً مِنَ الشَّیطانِ وَرِجْزِهِ جَلَّ ثَنآؤُکَ
অর্থ: পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা। হে আল্লাহ, আপনি যদি এই রাতে আমার জন্য আমার উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করেন, তাহলে মন্দ কাজের জন্য নিযুক্ত করবেন না। শয়তানের কোন ফাঁদে তাকে ফেলবেন না । তাকে একটি খাটি মুমিন ও বিশ্বাসী বানান। আর তাকে শয়তান থেকে রক্ষা করুন।
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেছেন: যখন সে চায় শয়তান যেন শরীক না থাকে, সে যেন আল্লাহর নাম বলে এবং শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।
আমিরুল মুমিনিন (সা.) থেকে বর্ণিত আছে: কেউ যখন সহবাস করতে চায়, তখন তাকে বলতে হবে:
بِسْمِ اللَّهِ وَبِاللَّهِ، اَللَّهُمَّ جَنِّبْنِی الشَّیْطانَ وَجَنِّبِ الشَّیْطانَ ما رَزَقْتَنِی
অর্থ: “আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর কসম, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের রিযিক হিসেবে যা দিবেন শয়তানকে তা থেকে দুরে রাখুন।”
সুতরাং যদি একটি শিশু জন্ম নেয়, তবে শয়তান তার ক্ষতি করবে না।
ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: যখন তুমি সহবাস করার ইচ্ছা কর, তখন এই দোয়াটি পাঠ কর:
اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِی وَلَداً وَاجْعَلْهُ تَقِیّاً زَکِیّاً لَیْسَ فِی خَلْقِهِ زِیادَهٌ وَلا نُقْصانٌ وَاجْعَلْ عاقِبَتَهُ اِلی خَیْرٍ
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাকে একটি সন্তান দান করুন এবং তাকে ধার্মিক, নেককার বানান। তাকে সৃষ্টিগতভাবে সুস্থ সবল ও সুন্দর করুন এবং তার শেষ পরিণাম ভালো করুন”।
তথ্যসূত্র:
হিলয়াতুল মুত্তাকিন, আল্লামা বাকের মাজলিসি,পৃ.৮৫।