Press "Enter" to skip to content

যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলসমূহ

এস, এ, এ

রাসুল (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের মতো কোন দিনই এতো পবিত্র না। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় আল্লাহর পথে জিহাদ? তিনি বলেন:জিহাদের চেয়েও উত্তম। তবে কেউ যদি জিহাদের জন্য নিজের জান ও মাল সহ বাড়ি থেকে বাহির হয়ে যায় এবং মারা যায় তার কথা ভিন্ন।

যখন যিলহজ্ব মাস আসতো তখন সাঈদ বিন জুবাইর এতই বেশী ইবাদত করতেন যে, সকলের দ্বারা এভাবে ইবাদত করা সম্ভব না।

কোরআন শরীফে যিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনকে “আইয়ামে মালুমাত” বলা হয়েছে আর এই দিনগুলো অনেক বরকতময় ও ফযিলতপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন:  যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত  ও সৎকর্মসমূহ অন্যান্য দিনের তুলনায় আল্লাহর কাছে অনেক বেশী প্রিয়।

যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনে বিশেষ কিছু ইবাদত বর্ণিত হয়েছে যেমন:

১. রোজা রাখা:

ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেন যে, কেউ যদি যিলহজ্ব মাসে ৮ দিন রোজা রাখে তাহলে তাকে ৬০ বছরের কাফফারার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে।

ইমাম মূসা কাযিম (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি যিলহজ্ব মাসের প্রথম ৯ দিনে রোজা রাখে তাহলে আল্লাহ তাকে আজীবন রোজা রাখার সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন। (ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২ যিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪৮)

২. দুই রাকাত নামাজ পড়া:

যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনে প্রতিদিন মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তি সময়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করলে তাকে হাজীদের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। নামাজটি পড়ার পদ্ধতি: প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে ১ বার সুরা ইখলাস এবং ১ বার সুরা আরাফ- এর ১৪২ নং আয়াতটি পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতটিও অনুরূপ পদ্ধতিতে পড়তে হবে। সুরা আরাফ-এর ১৪২ নং আয়াতটি নিন্মরূপ:

وَ وَاعَدْنَا مُوسَى ثَلاثِينَ لَيْلَةً وَ أَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً وَ قَالَ مُوسَى لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَ أَصْلِحْ وَ لا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ.

উচ্চারণ: ওয়া ওয়াআদনা মূসা সালাসিনা লাইলাতাউ ওয়া আতমামনাহা বিআশরিন ফাতাম্মা মিকাতু রাব্বিহি আরবাঈনা লাইলাতা ওয়া ক্বলা মূসা লিআখিহি হারুনাখ লুফনি ফি কাউমী ওয়া আসলেহ ওয়া লা তাত্তাবিঅ সাবিলাল মুফসিদীন। ( মাফাতিহুল জিনান, দ্বিতীয় অধ্যায় জিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪০১- ৪০২।)

৩. দোয়া পাঠ করা:

শেখ কাফআমী এবং সৈয়দ ইবনে তাউস (রহ) উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম সাদিক্ব (আ.) হতে বর্ণিত দোয়াটি প্রথম দিন থেকে নিয়ে আরাফাতের দিন (৯ যিলহজ্ব) বিকাল পর্যন্ত এবং ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরে নিন্মোক্ত দোয়া পাঠ করা উত্তম:

اللَّهُمَّ هَذِهِ الْأَيَّامُ الَّتِي فَضَّلْتَهَا عَلَى الْأَيَّامِ وَ شَرَّفْتَهَا قَدْ بَلَّغْتَنِيهَا بِمَنِّكَ وَ رَحْمَتِكَ فَأَنْزِلْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَ أَوْسِعْ عَلَيْنَا فِيهَا مِنْ نَعْمَائِكَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ أَنْ تَهْدِيَنَا فِيهَا لِسَبِيلِ الْهُدَى وَ الْعَفَافِ وَ الْغِنَى وَ الْعَمَلِ فِيهَا بِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا مَوْضِعَ كُلِّ شَكْوَى وَ يَا سَامِعَ كُلِّ نَجْوَى وَ يَا شَاهِدَ كُلِّ مَلَإٍ وَ يَا عَالِمَ كُلِّ خَفِيَّةٍ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ أَنْ تَكْشِفَ عَنَّا فِيهَا الْبَلاءَ وَ تَسْتَجِيبَ لَنَا فِيهَا الدُّعَاءَ وَ تُقَوِّيَنَا فِيهَا وَ تُعِينَنَا وَ تُوَفِّقَنَا فِيهَا لِمَا تُحِبُّ رَبَّنَا وَ تَرْضَى وَ عَلَى مَا افْتَرَضْتَ عَلَيْنَا مِنْ طَاعَتِكَ وَ طَاعَةِ رَسُولِكَ وَ أَهْلِ وِلايَتِكَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ أَنْ تُصَلِّيَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ، وَ أَنْ تَهَبَ لَنَا فِيهَا الرِّضَا إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ وَ لا تَحْرِمْنَا خَيْرَ مَا تُنْزِلُ فِيهَا مِنَ السَّمَاءِ وَ طَهِّرْنَا مِنَ الذُّنُوبِ يَا عَلامَ الْغُيُوبِ وَ أَوْجِبْ لَنَا فِيهَا دَارَ الْخُلُودِ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ لا تَتْرُكْ لَنَا فِيهَا ذَنْبا إِلّا غَفَرْتَهُ وَ لا هَمّا إِلّا فَرَّجْتَهُ وَ لا دَيْناً إِلّا قَضَيْتَهُ وَ لا غَائِباً إِلّا أَدَّيْتَهُ وَ لا حَاجَةً مِنْ حَوَائِجِ الدُّنْيَا وَ الْآخِرَةِ إِلا سَهَّلْتَهَا وَ يَسَّرْتَهَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْ ءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ يَا عَالِمَ الْخَفِيَّاتِ يَا رَاحِمَ الْعَبَرَاتِ يَا مُجِيبَ الدَّعَوَاتِ يَا رَبَّ الْأَرَضِينَ وَ السَّمَاوَاتِ يَا مَنْ لا تَتَشَابَهُ عَلَيْهِ الْأَصْوَاتُ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ اجْعَلْنَا فِيهَا مِنْ عُتَقَائِكَ وَ طُلَقَائِكَ مِنَ النَّارِ وَ الْفَائِزِينَ بِجَنَّتِكَ وَ النَّاجِينَ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ وَ صَلَّى اللَّهُ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَ آلِهِ أَجْمَعِينَ

 ( মাফাতিহুল জিনান, দ্বিতীয় অধ্যায় জিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪০২- ৪০৩।)

৪. যিকির পাঠ করা:

ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিব্রাইল (আ.) যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনে পাঁচটি দোয়া হযরত ঈসা (আ.)এর জন্য উপহার স্বরূপ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি হযরত ঈসা (আ.)কে বলেছিলেন যে, এই দোয়াটি যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম এবং আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। দোয়াটি নিন্মরূপ:

(১)

أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَ هُوَ عَلى‏ كُلِّ شَيْ‏ءٍ قَدِيرٌ.

(২)

 أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ أَحَداً صَمَداً لَمْ يَتَّخِذْ صاحِبَةً وَ لا وَلَداً .

(৩)

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ أَحَداً صَمَداً لَمْ يَلِدْ وَ لَمْ يُولَدْ وَ لَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَد .

(৪)

أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَ يُمِيتُ وَ هُوَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَ هُوَ عَلى‏ كُلِّ شَيْ‏ءٍ قَدِيرٌ.

(৫)

حَسْبِيَ اللَّهُ وَ كَفَى سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ دَعَا لَيْسَ وَرَاءَ اللَّهِ مُنْتَهَى أَشْهَدُ لِلَّهِ بِمَا دَعَا وَ أَنَّهُ بَرِي‏ءٌ مِمَّنْ تَبَرَّئَ وَ أَنَّ لِلَّهِ الْآخِرَةُ وَ الْأُولى‏ .

হযরত ঈসা (আ.)’র বিশেষ সাহাবীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করে যে হে রুহুল্লাহ! এই দোয়াগুলো পাঠ করার সওয়াব কি? তিনি বলেন: কেউ যদি প্রথম বাক্যটি ১০০ বার পাঠ করে তাহলে তার এই আমল দুনিয়াবাসীদের আমলের চেয়ে উত্তম হিসেবে গণ্য করা হবে। কেউ যদি দ্বিতীয় বাক্যটি ১০০ বার পাঠ করে তাহলে তাকে ১২ বার তাওরাত ও ইন্জিল পাঠ করার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। (হযরত ঈসা (আ.) হযরত জিব্রাইল (আ.) কে জিজ্ঞাসা করেন তাওরাত ও ইন্জিলের অর্থ কি? হযরত জিব্রাইল (আ.) বলেন: সাত আসমানের সকল ফেরেশতারা তাওরাত ও ইন্জিলের একটি অক্ষরকে বহন করার ক্ষমতা রাখে না যতক্ষণ না আমি ও ইস্রাফিল (আ.) তাদের সাহায্য করি), তারপর হযরত ঈসা (আ.) বলেন: কেউ যদি তৃতীয় বাক্যটি ১০০ বার পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তাকে ১০ হাজার সৎ কাজ করার সমপরিমাণ সওয়াব, ১০ হাজার গুনাহকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং ৭০ হাজার ফেরেশতা দুনিয়ার বুকে নেমে আসবে এবং তার ওপরে দুরুদ প্রেরণ করবে (হযরত ঈসা (আ.) জিজ্ঞাসা করেন যে, ফেরেশতারাও কি নবীদের ব্যাতিত অন্যান্যদের ওপরে দুরুদ প্রেরণ করে? হজরত জিব্রাইল (আ.) বলেন: হ্যা। কেউ যদি নবীদের কথা অনুযায়ী ঈমান নিয়ে আসে এবং তার উপরে বলবত থাকে তাহলে তাকে নবীদের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হয়), কেউ যদি চতূর্থ বাক্যটি ১০০ বার পাঠ করে তাহলে ফেরেশতারা যখন তাকে আল্লাহর কাছে উপস্থিত করবে তখন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আল্লাহ যার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে দেখেন তার সকল দূর্ভাগ্য সৌভাগ্যে পরিণত হয়। হযরত ঈসা (আ.) পঞ্চম বাক্যটি সম্পর্কে হযতে জিব্রাইল (আ.) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন: এই বাক্যটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়ার অনুমতি আমাকে দেয়া হয়নি। (মাফাতিহুল জিনান, দ্বিতীয় অধ্যায় জিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪০৩- ৪০৪, ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২ যিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪৪- ৪৬)

৫. তাহলিল পাঠ করা:

হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি এই তাহলিলগুলো যিলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের প্রত্যেকদিন পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক তাহলিলের বিনিময়ে বেহেশতে তাকে মুক্তা ও ইয়াকুতের শহর দান করবেন যার একে অপরের সাথে দূরত্ব হচ্ছে ১০০ বছর দ্রুতগামী বাহনের সমপরিমাণ তাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে যা এতো পরিমাণ মণি মুক্তা দ্বারা সুসজ্জিত করা হবে যা কেউ বর্ণনা করতে পারবে না, যখন তাকে কবর থেকে উত্তোলন করা হবে তখন তার চুলগুলো নূরের ন্যায় আলেকিত হবে যা তাকে পথ চলতে সাহায্যে করবে, ৭০ হাজার ফেরেশতা তাকে স্বাগতম জানানোর জন্য আসবে এবং তাকে বেহেশতের দিকে নিয়ে যাবে। নিন্মোক্ত তাহলিলসমূহ প্রতি দিন ১০ বার করে পাঠ করা অতি উত্তম: (মাফাতিহুল জিনান, দ্বিতীয় অধ্যায় জিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪০৪- ৪০৫, ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২ যিলহজ্ব মাস, পৃষ্ঠা ৪৬, ৪৭)

لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ الّلَيَالي‏ وَالدُّهُورِ، لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ اَمْواجِ الْبُحُورِ.

 لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ وَرَحْمَتُهُ خَيرٌ مِمّا يجْمَعُونَ، لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ الشَّوْك وَالشَّجَرِ.

 لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ الشَّعْرِ وَالْوَبَرِ، لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ الْحَجَرِ وَالْمَدَرِ.

لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ لَمْحِ الْعُيونِ، لاَ اِلهَ اِلاَّ اللَّهُ فِي‏ اللَّيلِ اِذا عَسْعَسَ  وَالصُّبْحِ اِذا تَنَفَّسَ.

 لاَ اِلـهَ اِلاَّ اللَّهُ عَدَدَ الرِّيَاحِ فِي‏ الْبَراري‏ وَالصُّخُـورِ.

 لاَ اِلـهَ اِلاَّ اللَّهُ مِـنَ الْيـوْمِ اِلـي‏ يـوْمِ ينْفَخُ فِي‏ الصُّورِ.