Press "Enter" to skip to content

রেওয়ায়েতের আলোকে আযান দেওয়ার ফযিলত

এস, এ, এ

আযান (أَذَان)‎‎ অথবা আজান হিসেবে উচ্চারণ করা হয়।‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام)। পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে সালাতের আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়। ʾআযান শব্দের মূল অর্থ দাড়ায় أَذِنَ ডাকা,আহবান করা। যার মূল উদ্দেশ্য হল অবগত করানো। এই শব্দের আরেকটি বুৎপত্তিগত অর্থ হল ʾআজুন। (أُذُن), যার অর্থ হল “শোনা”। কুরআনের কয়েকটি স্থানে আজুন শব্দটি এসেছে।

নিন্মে রেওয়ায়েতের আলোকে আযানের কিছু ফযিলত বর্ণনা করব:

১. মুহাম্মাদ বিন রাশেদ বলেন: হেশাম বিন ইব্রাহিম আমাকে বলেন: আমি ইমাম রেযা (আ.)কে আমার অসুস্থতা এবং সন্তান না হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করি। তিনি আমাকে বলেন: তুমি নিজের বাড়িতে উচ্চস্বরে আযান দাও।

হেশাম বিন ইব্রাহিম বলেন: আমি যখন থেকে বাড়িতে উচ্চস্বরে আযান দেওয়া শুরু করলাম ধিরেধিরে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম এবং একাধিক সন্তানের পিতা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলাম।

মুহাম্মাদ বিন রাশেদ বলেন: আমিও প্রায় অসুস্থ থাকতাম এমনকি আমার পরিবারের লোকজনও প্রায় অসুস্থ থাকতো। কখনও এমনও হতো যে আমারা সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়তাম এবং আমাদের সেবা করার কেউ থাকতো না। আমি যখন এই হাদীসটি হেশামের কাছ থেকে শুনলাম এবং ইমাম রেযা (আ.)-এর কথামতো আমল করলাম আল্লাহও অপার দয়ায় সকল অসুস্থতা আমাদের বাড়ি থেকে দূর হয়ে যায়।

২. মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান বলেন: ইমাম রেযা (আ.) আমাকে বলেন: তুমি নিজের ঘরে আযান দিবে তাহলে শয়তান তোমার ঘর থেকে পলায়ন করবে।

৩. একজন ব্যাক্তি নিজের অভাব অনটন সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)-এর কাছে অবগত করে। ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: যখন তুমি আযান শুনবে তখন তুমিও মুয়াযযিনের সাথে সাথে আযান উচ্চারণ করবে।

৪. রাসুল (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা ভোরের নির্মল এবং কোমল বাতাসকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আযানের শব্দকে আকাশের দিকে নিয়ে যায়। যখন ফেরেশতারা দুনিয়ার এই আযানকে শুনতে পাই। তখন তারা বলে: এটা হচ্ছে মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতদের আওয়াজ যা আল্লাহর একত্বাবাদের স্বীকারোক্তি দিচ্ছে এবং আযানের শব্দ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ বান্দাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।

৫. ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: যেই ব্যাক্তি আযান দিবে কেয়ামতের দিন তাদের মস্তক উন্নত অবস্থায় থাকবে।

৬. রাসুল (সা.) বলেছেন: কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আযান দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে ৪০ হাজার শহীদ, ৪০ হাজার সিদ্দিক [সত্যবাদি] -এর সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন এবং আমার উম্মতের ৪০ হাজার ব্যাক্তিকে সে শেফায়াত করে বেহেশতে নিয়ে যাবে।

৭. রাসুল (সা.) বলেছেন: কেউ যদি ১০ বছর আযান দেয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সাথে একই তাবুতে রাখবেন।

৮. রাসুল (সা.) বলেছেন: কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র একটি নামাজের জন্য আযান দেয় তাহলে আল্লাহ ঐ ব্যাক্তির সকল গুনাহকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে বেহেশতে শহীদদের পাশে তাকে স্থঅন দান করবেন।

৯. ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: আযান দানকারীর শব্দ শুনে যে সকল মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসবে, তাকে উক্ত মুসল্লিদের নামাজ পাঠের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে।

১০. ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: পাঁচটি কাজ সম্পাদ করলে বাড়ি বরকতময় হয়।

এক- আযান।

দুই- কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা।

তিন- মেহমানদারী।

চার- সালাম করা।

পাঁচ- ময়লা বাসন ধুয়ে রাখা এবং ঘরের ময়লা পরিষ্কার করা।

১১- ইমাম রেযা (আ.) বলেন: যেই ঘরে আযান দেওয়া হয় সেই ঘরের বাচ্চারা সৎকর্মশীল হয় এবং বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে মুক্ত থাকে।

তথ্যসূত্র:

১. কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ১০, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩০৭, ৩০৮।

২. ফাক্বিহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৮৯।

৩. মাকারিমুল আখলাক্ব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫০।

৪. মাহাসিন, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২০।

৫. মান লা ইয়াহযারুহুল ফাক্বিহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৮৬।