অনুবাদ: ড. আবু উসামা মুহাররম
নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন নেক সন্তান বেহেশতের ফুলগুলোর মধ্য থেকে একটি ফুল। তিনি আরো বলেন: একজন নেক সন্তান মানুষর সৌভাগ্যের প্রতীক। মহানবি সা.বলেন: তোমরা অধিক সন্তানের জন্মাদান করো। কারণ আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের আধিক্যতার জন্য বড়াই করব।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) বলেনঃ সন্তানের যে রোগ হয় তা তার পিতামাতার গুনাহের কাফফারা। একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে: একদিন জিবরাইল (আ.) অবতরণ করলেন এসময় হযরত আলি ক্রন্দন করছিলেন। জিবরাইল (আঃ) এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমার দুই সন্তান কষ্ট পেয়েছিল এবং তাদের কান্নায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। জিবরাইল বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনার সন্তানদের জন্য কিছু মানুষ গড়ে তুলতে চান, যাতে তাদের সন্তানরা যখন কাঁদবে, তখন ঐ সন্তানদের কান্না সাত বছর ধরে لا اِلهَ اِلَّا اللَّهُ”এর যিকির হবে। যখন সাত বছর অতিবাহিত হবে, তখন তাদের কান্না হবে তাদের পিতামাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার। তাই যখন তারা পরিণত হয়, তাদের পিতামাতার উচিত তাদের সওয়াবের অংশীদার করা এবং তাদের পাপের অংশীদার করা উচিত নয়।
নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার দিন থেকে সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত এবং সন্তানকে দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত এমন সওয়াব পাবে যেমন একজন ব্যক্তি মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য কাফেরদের সাথে জিহাদের ময়দানে যুদ্ধরত। এর মধ্যে সে মারা গেলে তার জন্য শহীদের সওয়াব রয়েছে।
আরেকটি সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ঈসা (আঃ) একটি কবরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যে কবরের বাসিন্দাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। পরের বছর তিনি একই কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে সময় দেখলেন সে কবেরর বাসিন্দাকে শাস্তি দেওয়া হিচ্ছিল না। তখন তিনি তার প্রভুকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে তাঁর কাছে একটি ওহি আসলো যে, এই বছরে, তাঁর একটি যোগ্য পুত্র পরিণত হয়েছে এবং একটি ভালো কাজ করেছে, যে একটি এতিমকে মাথা গুজার ঠাই দিয়েছে। এই কারণে আমি তাকে তার পুত্রের কৃতকর্মের ফল স্বরুপ ক্ষমা করে দিয়েছি। তাই নবি বললেনঃ
বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর জন্য যে উত্তরাধিকার রাখা হয় তা হল নেককার পুত্র যে বাবার জন্য তার মৃত্যুর পর আল্লাহর ইবাদত করে।
অন্য বর্ণনায় উল্লেখ আছে: যে নিঃসন্তান মৃত্যুবরণ করে, বলা হয় সে যেন কখনো মানুষের মধ্যেই ছিল না। আর যে ব্যক্তি সন্তান রেখে মারা যায়, বলা হয় সে যেন মারা যায়নি।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: আল্লাহ সর্বশক্তিমান ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের প্রতি বেশি দয়ালু। প্রত্যেক পুরুষ যে মাহরাম মহিলার খোজখবর রাখে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আনন্দিত অবস্থায় উত্থিত করবেন।
হযরত জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: কন্যা হলো নেক আমল এবং পুত্র হলো নিয়ামত। আর আল্লাহ নেক আমলের প্রতিদান দেন নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।
ইমাম সাদিক তার এক সাথীকে বললেনঃ আমি শুনেছি যে তুমি একটি মেয়েকে বিয়ে করেছ, অথচ তুমি এখন নাকি তাকে চাও না, এতে তোমার ক্ষতি কী? তুমি একটি ফুলের গন্ধ পাচ্ছো, এবং এর রিজিক আল্লাহর উপর। আল্লাহর রাসুল কিন্তু কন্যা সন্তানের বাবা ছিলেন।
অন্য হাদিসে তিনি বলেন: হযরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর রবের কাছে চেয়েছিলেন, তিনি যেন তাকে একটি কন্যা দেন, যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য কাঁদবে। তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি মেয়েদের মৃত্যু কামনা করে এরপর সে মারা যায়, সে পুরস্কার পাবে না এবং বিচারের দিন আল্লাহর অবাধ্য হয়ে উত্থিত হবে।
অন্য হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে: এক ব্যক্তি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসে ছিলেন, যখন তাঁর কাছে এই খবর পৌঁছল যে, তাঁর একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে তখন তাঁর রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল।
মহানবি (সা.) বললেনঃ পৃথিবী তাকে বহন করে এবং আকাশ তার উপর ছায়া ফেলে এবং আল্লাহ তাকে রিজিক দান করেন, আর তুমি তার থেকে ফুলের মত গন্ধ পাও। এরপর তিনি তার সঙ্গীদের দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ যার একটি কন্যা আছে, তার দায়িত্ব হচ্ছে মহামূল্যবান। যার দুটি কন্যা আছে, তারা তার এমন পুজি যে তারা ঐ বাবার সকল প্রার্থনা আল্লাহ পর্যন্ত পৌছাবে, আর যার তিনটি কন্যা আছে, তার থেকে জিহাদ ও অন্যান্য কষ্ট বিদূরিত করবে আর যার আছে চার কন্যা, হে আল্লাহর বান্দারা! তাকে সাহায্য কর হে আল্লাহর বান্দাগণ! তাকে ঋণ দাও হে আল্লাহর বান্দাগণ! তার প্রতি দয়া কর।
অন্য একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছেঃ যে ব্যক্তি তিন কন্যা বা তিন বোনকে ভরণ-পোষণ দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। অতঃপর তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি তাদের দু’একজনকে ভরণপোষণ দেবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন একটি শিশু কারো কাছে দেরিতে পৌঁছায়, তখন সে এই দোয়াটি পাঠ করবে:
اَللَّهُمَّ لا تَذَرْنِی فَرْداً وَاَنْتَ خَیْرُ الوارِثِینَ وَحِیداً وَحْشاً فَیَقْصُرُ شُکْرِی عَنْ تَفَکُّرِی بَلْ هَبْ لِی عاقِبَهَ صِدْقٍ ذُکُوراً وَاُناثاً آنَسُ بِهِمْ مِنَ الوَحْدَهِ وَاَسْکُنُ اِلَیْهِمْ مِنَ الوَحْدَهِ وَاَشْکُرُکَ عِنْدَ تَمامِ النِّعْمَهِ یا وَهاب یا عَظِیمُ یا مُعْظِمُ ثُمَّ اَعْطِنِی فِی کُلِّ عافِیَهٍ شُکْراً حَتّی تُبْلِغَنِی مِنْها رِضْوانَکَ فِی صِدْقِ الحَدِیثِ وَاَدآءِ الاَمانَهِ وَوَفآءٍ بِالعَهْدِ
অন্য হাদিসে আছে: নেক সন্তান কামনা করে নিচের এই দুটি আয়াত পড়:
«رَبِّ هَبْ لِی مِنْ لَدُنْکَ ذُرِّیَّهً طَیِّبَهً اِنَّکَ سَمِیعُ الدُّع
[আল-ইমরান/আয়াত ৩৮]
অথবা এটি পাঠ করো
رَبِّ لا تَذَرْنی فَرْداً وَاَنْتَ خَیْرُ الْوارِثینَ
[সুরা আম্বিয়া /আয়াত ৮৯]।
আর অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন: যে ব্যক্তি চায় তার স্ত্রী গর্ভবতী হোক, সে যেন জুমার নামাযের পর দুই রাকাত নামায পড়ে এবং রুকু ও সিজদা দীর্ঘ করে, তারপর সে যেন বলে:
اَللَّهُمَّ اِنِّی اَسْألُکَ بِماسَألَکَ بِهِ زَکَرِیّا رَبِّ لا تَذَرْنی فَرْداً وَاَنْتَ خَیْرُ الْوارثینَ اَللَّهُمَّ هَبْ لی مِنْ لَدُنْکَ ذُرّیَهً طَیِّبَهً اِنَّکَ سَمیعُ الدُّعاءِ، اَللَّهُمَّ بِاسْمِکَ اِسْتَحْلَلْتُها وَفی اَمانَتِکَ اَخَذْتُها فِانْ قَضَیْتَ فِی رَحِمِها وَلَداً فَاجْعَلْهُ غُلاماً مُبارَکاً زَکِیاً وَلا تَجْعَلْ لِلشَّیطانِ فیهِ شَرَکاً وَلا نَصِیباً
চলবে…
তথ্যসূত্র:
হিলয়াতুল মুত্তাকিন, আল্লামা বাকের মাজলিসি, পৃ. ৯৭।