অনুবাদ: ড. আবু উসামা মুহাররম
পরবর্তি এবং শেষ পর্ব
৮.২ – ফারসি রচনা
১. হাক্কুল ইয়াকিন
২. আইনুল হায়াত;
৩. হিলয়াতুল মুত্তাকিন;
৪. হায়াতুল কুলুব
৫. মিশকাতুল আনওয়ার
৬. জিলাউল উয়ুন;
৭. যাদুল মাআদ
৮. তোহফাতুয যায়ের
৯. মুকায়িসুল মাসাবিহ
১০. রাবিউল আসাবি;
১১. রিসালা দার শুকুক
১২. রিসালা দিয়্যাত
১৩. রিসালা দার আওকাত
১৪. রিসালা দার জাফর
১৫. রিসালা দার বেহেশত ও দোযখ
১৬. রিসালায়ে ইখতিয়ারাত আয়্যাম
১৭. তারজুমায়ে আহদনামায়ে আমিরুল মুমিনিন(আ.) বে মালিক আশতার
১৮. মিশকাতুল আনওয়ার দার আদাবে কিরাআতে কুরআন ও দোয়া
১৯. শারহে দোয়ায়ে জুশানে কাবির
২০। রিসালা দার রুজআত
২১. রিসালা দার আদাবে নামায
২২. রিসালা দার যাকাত।(১)
এবং বিভিন্ন বিষয়ে ৩০ টিরও বেশি গ্রন্থ এবং পুস্তিকার অনুবাদ এবং আকাইদ ও আহকাম সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত বই রচনা করেন।
৯. আল্লামার কৌশল ও নীতি
আল্লামা মাজলিসি রাজনীতির ময়দানে একজন কিংবদন্তি। কিন্তু প্রাচ্যবাদী ও পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীদের বিদ্বেষ ও হঠকারিতার কারণে রাজনীতির ইতিহাসে তিনি বরাবর উপেক্ষিত থেকেছেন। ১০৯০ হিজরিতে মোল্লা মুহাম্মাদ বাকের সবজেভারীর মৃত্যুর পর আল্লামা শায়খুল ইসলামের পদে অধিষ্ঠিত হন। (২)এই পোস্টে থেকে তিনি ইরান ও শিয়া মতবাদকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক সেবা প্রদান করেছেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আল্লামা মাজলিসির সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান সুফিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শিয়া মাযহাবের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন। আল্লামা মাজলিসি সরকারি দপ্তরে এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তাদের ক্ষমতার বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
এই দলটি সম্পর্কে, রিসালায়ে”ইতেকাদাত গ্রন্থে লিখেন: “এখন, আমি সংক্ষেপে তোমাকে লিখছি। আমার কাছে যে বিষয়গুলি আরও গুরুত্বপূর্ণ তা প্রকাশ করছি। বহু প্রমাণের মাধ্যমে ধর্মের মূলনীতি সুস্পষ্ট হয়েছে যাতে তোমরা বিপথগামী না হও। সুফিদের ছলচাতুরী, প্রতারণা ও অহংকার দ্বারা প্রতারিত না হও এবং আমি তোমাদের উপর খোদার প্রমাণ সম্পূর্ণ করে দেব।” (৩)
সুফিদের সাথে যুদ্ধ করার পাশাপাশি, আল্লামা রাজ দরবারের পুরোহিত, বিদেশী ও পশ্চিমা কোম্পানির প্রতিনিধি এবং পৌত্তলিকদের সাথে মনস্তাত্মিক যুদ্ধ করেন। “একদিন, আল্লামা মাজলিসিকে জানানো হয়েছিল যে ইসফাহান শহরের মুশরিকরা একটি বাড়িতে একটি মূর্তি স্থাপন করেছে এবং তারা সেই বাড়িতে প্রার্থনা ও পূজা করতে যাচ্ছে। আল্লামা মূর্তিটির অবস্থান সম্পর্কে তদন্ত ও জানার পর এটি ভেঙে ফেলার ফতোয়া জারি করেন। (৪)
শাহ সুলেমানের মৃত্যুর পর দরবারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ হোসেন মির্জা (সুলতান হোসেন) কে সিংহাসনে বসান, যিনি শাহের খালা মরিয়ম বেগমের প্রিয় ছিলেন।
রাজ্যাভিষেকের সময় বাদশাহ সুফিদেরকে তার কোমরে তলোয়ার বাঁধতে দেননি। যদিও এটি প্রচলিত ছিল। তবুও তিনি আল্লামা মাজলিসিকে ডেকে এই অনুষ্ঠানগুলি করার জন্য অনুরোধ করেন।”(৫)
আল্লামা মাজলিসি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে হলরুমে এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। “বাদশাহ আল্লামার দিকে ফিরে বললেন: এই সেবার জন্য তুমি কী পুরস্কার চাও?” (৬)
আল্লামা মাজলিসি “তিনি একজন যুবক রাজাকে দেখেছিলেন যে তাকিয়ায় হেলান দিয়েও ঘোড়ায় চড়তে পারতেন না।” (৭) তিনি খুব অল্পবয়সী এবং খুব সহজ-সরল এই দেশের জাহাজটিকে তীরে নিয়ে আসতে সক্ষম ছিলেন। তাই তিনি রাজার কাছে এমন কিছু চাইলেন যা উপস্থিত কেউই, এমনকি সেই সময়ের পণ্ডিতরাও ভাবেননি। তিনি এমন কিছু বলেন যা তার উচ্চ চেতনা এবং বিস্তৃত রাজনৈতিক দূরদর্শনের মহিমা প্রকাশ করে। তিনি তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনটি বিষয়ে এমন যা তার সমাজকে পরিবর্তন করার জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল।
তিনি রাজার দিকে ফিরে বললেন: আমি রাজার কাছে তরুণ প্রজন্মের দুর্নীতি, বিভাজন ও উদাসীনতা দূর করার জন্য ফরমান জারি করার জন্য এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য পান নিষিদ্ধকরণ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ এবং কবুতর খেলা নিষিদ্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি। শাহ সন্তুষ্টির সাথে গ্রহণ করলেন এবং সাথে সাথে একই আদেশ উক্ত ফরমান জারি করলেন। (৮)
আল্লামা তাকে শহর থেকে সুফিদের বিতাড়িত করার জন্য আরেকটি আদেশে স্বাক্ষর করতেও উৎসাহিত করেছিলেন।” (৯)
এটি ছিল আল্লামা মাজলিসির জন্য একটি মহান বিজয় এবং সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে ইরানের পরিত্রাণের প্রথম ধাপ। যা পশ্চিমে অটোমান, পূর্বে উজবেক, দক্ষিণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, দক্ষিণ-পূর্বে গোর্কানি, উত্তরে রাশিয়ান এবং ওলন্দাজদের দ্বারা বেষ্টিত ছিল।
কিন্তু এরই মধ্যে বিলাস-স্বাচ্ছন্দ্যের সন্ধানকারী নপুংসক ও দরবারীদের হাত থেকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ষড়যন্ত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। মরিয়ম বেগমের (শাহের খালা) ষড়যন্ত্রে তারা শাহকে পেটুক ও ভোগ-বিলাসের কোলে ঠেলে দেয়।
আল্লামা মাজলিসির আমলে ইরান ও সুন্নি প্রতিবেশীদের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। ইরানের কোনো সুন্নি প্রদেশই শিয়াদের দ্বারা আগ্রাসিত ছিল না। ইরান সম্পূর্ণ শান্তিতে বসবাস করত। কিন্তু যখন আল্লামা মাজলিসি রমজান মাসের ২৭ তারিখে ১১১১ হি. মৃত্যুবরণ করেন। তখন থেকেই সাফাভিদ সরকারের পতনের কাউন্টডাউন শুরু হয়। “একই বছরে, কান্দাহার প্রদেশের পতন হয়। (১০)
১১. মৃত্যু ও দাফন
আল্লামা মাজলিসি ১১১১ হিজরির ২৭ তম রমজান মাসে ইন্তেকাল করেন। তখন সাফাভি সাম্রাজ্যের পতনের গণনা শুরু হয়। এ উপলক্ষে ইসফাহান শহর এক সপ্তাহের জন্য শোক পালন করে এবং তার শোকসভা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে।
গ্রন্থসূচি:
১. মুসাভি খানসারি, মির্জা মুহা্ম্মদ বাকের, রাউজাত আল-জানাত, খণ্ড ২, পৃ. ৭৯।
২. লরেন্স লকহার্ট, সাফাভিদ রাজবংশের বিলুপ্তি, পৃষ্ঠা ৪৩।
৩. লরেন্স লকহার্ট, সাফাভিদ রাজবংশের বিলুপ্তি, পৃষ্ঠা ৪৩।
৪. লরেন্স লকহার্ট, সাফাভিদ রাজবংশের বিলুপ্তি, পৃ.৩৯।
৫. লরেন্স লকহার্ট, সাফাভিদ রাজবংশের বিলুপ্তি, পৃষ্ঠা ৪৩।
৬. লরেন্স লকহার্ট, সাফাভিদ রাজবংশের বিলুপ্তি, পৃষ্ঠা ৪৩।
৭. তাঙ্কবানি, মির্জা মুহা্ম্মদ, কাসেস আল-উলামা, পৃ.২০৫।
৮. আমিন, সৈয়দ মোহসেন, আয়ান আল-শিয়া, খণ্ড ৯, পৃ. ১৮৪।
৯. মাহদাভি, সাইয়্যেদ মোসলেহউদ্দিন, যিন্দেগিনামায়ে আল্লামা মাজলিসি, খণ্ড ২, পৃ.৫০।
১০. আগা বুজুর্গ তেহরানি, আযযারিয়তু ইলা তাসানিফিশ শিয়া,খণ্ড ১, পৃ. ১৬।