Press "Enter" to skip to content

আশুরার রাত ও দিনের আমলসমূহ

এস, এ, এ

৯ই মহরমের দিবাগত রাতকে “আশুরার রাত্রি” বলা হয়। “ইক্ববালুল আমাল” নামক গ্রন্থে এ রাতে জন্য একাধিক ফযিলতপূর্ণ নামাজ ও দোয়া বর্ণনা করেছেন।

সৈয়দ ইবনে তাউস (রহ.) “দাসতুরুল মাযকুরিন” নামক গ্রন্থ থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল (সা.) বলেছেন: কেউ যদি আশুরার রাতে জাগ্রত থাকে তাহলে তাকে ফেরেশতাদের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে এবং কেউ যদি এই রাতে ইবাদত করে তাহলে তাকে ৭০ বছরের কবুল আমলের সওয়াব দান করা হবে। [1]

এছাড়া রাত্রি জাগরণ সম্পর্কে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি এ রাতে কারবালায় উপস্থিত থাকে তাহলে সে যেন ইমাম হুসাইন (আ.)এর যিয়ারত পাঠ করে এবং রাত্রি জাগরণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে কেয়ামতে ইমাম হুসাইন (আ.)এর রক্তে রন্জিত ও তাঁর সাহাবীদের সাথে উত্তোলন করবেন।

এই রাতে ১০০ রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে ৩ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পড়তে হবে। ১০০ রাকাত নামাজ শেষে ৭০ বার বলতে হবে:

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُلِلَّهِ وَلاَاِلهَ اِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ اَكبَرُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِاللَّهِ الْعَلَى‏ العَظيمِ.

অন্যান্য রেওয়ায়েতে “الْعَلَى‏ العَظيمِ”এর পরে ৭০ বার “اَسْتَغْفِرُ اللَّه” পাঠ করতে হবে। তারপর ৭০বার অথবা ১০০ বার পাঠ করতে হবে “وَ صَلَّى اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ” “আর রিয়ায” গ্রন্থে বর্ণিত এ দোয়াটি পাঠ করতে হবে:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ يَا اللَّهُ يَا رَحْمَانُ….. كَرْبِي يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.

“ইক্ববালুল আমাল” নামক গ্রন্থে বর্ণিত এই দোয়াটি যেহেতু বড় তাই এখানে উল্লেখ করা সম্ভব না। [2]

ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এই রাতের শেষভাগে ৪ রাকাত নামাজ পড়তে হবে। নামাজটির প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে আয়াতুল কুরসী, সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস প্রত্যেকটি ১০ বার করে পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতটিও অনুরূপ পদ্ধতিতে পড়তে হবে। নামাজান্তে ১০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম।

কোন ব্যাক্তি যদি এই নামাজটি পড়ে তাহলে আল্লাহ তাকে উক্ত নামাজের বিনিময়ে বেহেশতে দশ লক্ষ নূরের শহর তৈরী করে দিবেন এবং প্রত্যেকটি শহরে দশ লক্ষ প্রাসাদ থাকবে এবং প্রত্যেক প্রাসাদে দশ লক্ষ কক্ষ রয়েছে এবং প্রত্যেকটি কক্ষে দশ লক্ষ পালঙ্ক রয়েছে এবং প্রত্যেকটি পালঙ্কে দশ লক্ষ বিছানা রয়েছে এবং প্রত্যেকটি বিছানায় দশ লক্ষ হুর রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি কক্ষে দশ লক্ষ দস্তরখান রয়েছে এবং প্রত্যেকটি দস্তরখানে দশ লক্ষ বিভিন্ন খাবারের পাত্র রয়েছে এবং প্রত্যেকটি পাত্রে দশ লক্ষ প্রকারের খাদ্য রয়েছে। প্রত্যেকটি দস্তরখানের সামনে দশ লক্ষ সুদর্শন সেবক বা সুন্দরী সেবিকা উপস্থিত থাকবে তাদের সকলের ঘাড়ে কাপড় রাখা থাকবে এবং তারা সেবা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। [3]

অন্য এক রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতে ৪ রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাস ৫০ বার পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাটিও অনুরূপভাবে পড়তে হবে। নামাজটি আমীরুল মু’মিনিন (আ.)এর নামাজের ন্যায় ফযিলতপূর্ণ। নামাজান্তে অসংখ্যবার আল্লাহর যিকির এবং দুরুদ শরীফ পাঠ করা এবং আহলে বাইত (আ.) এর শত্রুদের প্রতি অভিসম্পাত করা উত্তম।

১০ই মহরম দিনের আমল

১০ই মহরম আবা আব্দিল্লাহিল হুসাইন (আ.)এর কষ্টের এবং ইমাম (আ.)গণ এবং তাঁদের অনুসারীদের জন্য দুঃখের দিন। আশুরার দিন সকল পার্থিব কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা, খাদ্য সঞ্চয় না করা উত্তম বরং ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর আহলে বাইত (আ.) এর কষ্টকে স্মরণ করে এমনভাবে শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং ক্রন্দন এবং মাতম করা যেন মনে হয় তার নিজের কেউ মারা গেছে। যিয়ারত-এ আশুরা পাঠ করা, আহলে বাইত (আ.)এর শত্রুদের প্রতি অভিসম্পাত করা।

মুমিনদের সাথে সাক্ষাতকালে বলতে হবে:

اَعْظَمَ اللَّهُ اُجُورَنا وَاُجورَكُمْ بِمُصابِنا بِالْحُسَينِ عَلَيْهِ أَلسَّلاَمُ  وَجَعَلَنا وَاِيَاكُمْ مِنَ الطّآلِبينَ بِثارِهِ مَعَ وَلِيهِ اِلاَّمَامِ الْمَهْدِي‏ مِنْ آلِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِمُ أَلسَّلاَمُ .

এই দিনে একে অপরের কাছে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাগুলো বর্ণনা করা এবং ক্রন্দন করা উচিত। কেননা যখন হযরত  মূসা (আ.) হযরত  খিযির (আ.)এর সাথে সাক্ষাত করেন তখন তিনি হযরত  মূসা (আ.)এর কাছে কারবালায় আহলে বাইত (আ.)এর মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনা করেন এবং উভয়েই ক্রন্দন করেছিলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.)বর্ণনা করেন আমি “যিক্বার” নামক স্থানে ইমাম আলী (আ.)এর সমীপে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি আমাকে এমন একটি পুস্তক (রাসুল (সা.) যা বলেছিলেন এবং আলী (আ.) তা লিখেছিলেন) দেখান, সেখানে লিখা ছিল ইমাম হুসাইন (আ.) কোথায় কিভাবে শহীদ হবেন, কারা তাঁকে শহীদ করবে এবং কারা তাঁকে সাহায্যে করবে এবং কারা তাঁর সাথে শাহাদত বরণ করবেন। অতঃপর ইমাম আলী (আ.) এমনভাবে ক্রন্দন করেন যে, আমিও তাঁর সাথে কাঁদতে থাকি। এছাড়া ইমাম হুসাইন (আ.)এর শাহাদতের ঘটনা সম্পর্কে অবগতির জন্য তার শাহাদত সম্পর্কিত পুস্তকগুলো পাঠ করলে এ সম্পর্কে আরো বেশী জানতে পারা যাবে।

কোন ব্যাক্তি যদি আশুরার দিন কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাজারে উপস্থিত থাকে তাহলে সে যেন কারবালার শহীদদের পিপাসাকে স্মরণ করে এবং এ চিন্তা অন্তরে নিয়ে মুসলমানদেরকে পানি পান করায় যেন সে কারবালার সৈন্যদের পানি পান করাচ্ছে এবং ইমাম হুসাইন (আ.)এর সৈন্য দলের মধ্যে অবস্থান করছে।

এ দিনে ১০০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম। কেউ যদি তা পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন।

ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) আব্দুল্লাহ বিন সানান (রহ.)কে আশুরার দিনের বিশেষ আমলের শিক্ষা দেন। আমলটি নিন্মরূপ: আশুরার দিন চাশতের (সূর্য পূর্ণরূপে উদয় হওয়ার পর) সময় খোলা আকাশের নিচে ৪ রাকাত নামাজ পড়তে হবে। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। পরবর্তি দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা আহযাব এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা মুনাফিকুন পাঠ করা উত্তম। অতঃপর ১০০০ বার পাঠ করতে হবে:

اَللَّهُمَّ الْعَنْ قَتَلَةَ الْحُسَينِ وَ اَصْحَابِهِ.

তারপর উক্ত স্থানে থেকে উঠে দাড়িয়ে কয়েক ধাপ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বলতে হবে:

إِنَّا لِلَّهِ وَ إِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، رِضًا بِقَضَائِهِ وَ تَسْلِيماً لِأَمْرِهِ.

এই আমলটি ৭ বার সম্পাদন করতে হবে। আমলটি সম্পাদনের পরে সেখানে বসে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হবে:

اَللَّهُمَّ عَذِّبِ الْفَجَرَةَ، الَّذِينَ شَاقُّوا رَسُولَكَ، وَ حَارَبُوا اَوْلِيَاءَكَ، وَ عَبَدُوا غَيْرَكَ، وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَكَ، وَالْعَنِ الْقَادَةَ وَاِلاَّتْبَاعَ، وَ مَنْ كَانَ مِنْهُمْ، فَخَبَّ وَ اَوْضَعَ مَعَهُمْ، اَوْ رَضِيَ بِفِعْلِهِمْ لَعْناً كَثِيراً.

তারপরে বলতে হবে:

اَللَّهُمَّ وَ عَجِّلْ فَرَجَ آلِ مُحَمَّدٍ، وَاجْعَلْ صَلَوَاتِكَ عَلَيْهِمْ، وَاسْتَنْقِذْهُمْ مِنْ اَيْدِي الْمُنَافِقِينَ وَ الْمُضِلِّينَ وَ الْكَفَرَةِ الْجَاحِدِينَ، وَافْتَحْ لَهُمْ فَتْحاً يَسِيراً، وَ اَتِحْ لَهُمْ رُوحاً وَ فَرَجاً قَرِيباً، وَاجْعَلْ لَهُمْ مِنْ لَدُنْكَ عَلَى‏ عَدُوِّ‌ كَ وَ عَدُوِّهِمْ سُلْطَاناً نَصِيراً.

অতঃপর কুনুতের ন্যায় হাতদ্বয়কে উচু করে বলতে হবে:

اللَّهُمَّ إِنَّ الْأُمَّةَ خَالَفَتِ الْأَئِمَّةَ وَ كَفَرُوا بِالْكَلِمَةِ وَ أَقَامُوا عَلَى الضَّلَالَةِ وَ الْكُفْرِ وَ الرَّدَى وَ الْجَهَالَةِ وَ الْعَمَى وَ هَجَرُوا الْكِتَابَ الَّذِي أَمَرْتَ بِمَعْرِفَتِهِ وَ الْوَصِيَّ الَّذِي أَمَرْتَ بِطَاعَتِهِ فَأَمَاتُوا الْحَقَّ وَ عَدَلُوا عَنِ الْقِسْطِ وَ أَضَلُّوا الْأُمَّةَ عَنِ الْحَقِّ وَ خَالَفُوا السُّنَّةَ وَ بَدَّلُوا الْكِتَابَ وَ مَلَكُوا الْأَحْزَابَ وَ كَفَرُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ وَ تَمَسَّكُوا بِالْبَاطِلِ وَ ضَيَّعُوا الْحَقَّ وَ أَضَلُّوا خَلْقَكَ وَ قَتَلُوا أَوْلَادَ نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ آلِهِ وَ خِيَرَةَ عِبَادِكَ وَ أَصْفِيَاءَكَ وَ حَمَلَةَ عَرْشِكَ وَ خَزَنَةَ سِرِّكَ وَ مَنْ جَعَلْتَهُمُ الْحُكَّامَ فِي سَمَاوَاتِكَ وَ أَرْضِكَ اللَّهُمَّ فَزَلْزِلْ‏ أَقْدَامَهُمْ وَ أَخْرِبْ دِيَارَهُمْ وَ اكْفُفْ سِلَاحَهُمْ وَ أَيْدِيَهُمْ وَ أَلْقِ الِاخْتِلَافَ فِيمَا بَيْنَهُمْ وَ أَوْهِنْ كَيْدَهُمْ وَ اضْرِبْهُمْ بِسَيْفِكَ الصَّارِمِ وَ حَجَرِكَ الدَّافِعِ [الدَّامِغِ‏] وَ طُمَّهُمْ بِالْبَلَاءِ طَمّاً وَ ارْمِهِمْ بِالْبَلَاءِ رَمْياً وَ عَذِّبْهُمْ عَذَاباً شَدِيداً نُكْراً وَ ارْمِهِمْ بِالْغَلَاءِ وَ خُذْهُمْ بِالسِّنِينَ الَّذِي أَخَذْتَ بِهَا أَعْدَاءَكَ وَ أَهْلِكْهُمْ بِمَا أَهْلَكْتَهُمْ بِهِ اللَّهُمَّ وَ خُذْهُمْ أَخْذَ الْقُرى‏ وَ هِيَ ظالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ اللَّهُمَّ إِنَّ سُبُلَكَ ضَائِعَةٌ وَ أَحْكَامَكَ مُعَطَّلَةٌ وَ أَهْلَ نَبِيِّكَ فِي الْأَرْضِ هَائِمَةٌ كَالْوَحْشِ السَّائِمَةِ اللَّهُمَّ أَعْلِ الْحَقَّ وَ اسْتَنْقِذِ الْخَلْقَ وَ امْنُنْ عَلَيْنَا بِالنَّجَاةِ وَ اهْدِنَا لِلْإِيمَانِ وَ عَجِّلْ فَرَجَنَا بِالْقَائِمِ ع وَ اجْعَلْهُ لَنَا رِدْءاً وَ اجْعَلْنَا لَهُ رِفْداً اللَّهُمَّ وَ أَهْلِكْ مَنْ جَعَلَ قَتْلَ أَهْلِ بَيْتِ نَبِيِّكَ عِيداً وَ اسْتَهَلَّ فَرَحاً وَ سُرُوراً وَ خُذْ آخِرَهُمْ بِمَا أَخَذْتَ بِهِ أَوَّلَهُمْ اللَّهُمَّ أَضْعِفِ الْبَلَاءَ وَ الْعَذَابَ وَ التَّنْكِيلَ عَلَى الظَّالِمِينَ مِنَ الْأَوَّلِينَ وَ الْآخِرِينَ وَ عَلَى ظَالِمِي آلِ بَيْتِ نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ آلِهِ وَ زِدْهُمْ نَكَالًا وَ لَعْنَةً وَ أَهْلِكْ شِيعَتَهُمْ وَ قَادَتَهُمْ وَ جَمَاعَتَهُمْ اللَّهُمَّ ارْحَمِ الْعِتْرَةَ الضَّائِعَةَ الْمَقْتُولَةَ الذَّلِيلَةَ مِنَ الشَّجَرَةِ الطَّيِّبَةِ الْمُبَارَكَةِ اللَّهُمَّ أَعْلِ كَلِمَتَهُمْ وَ أَفْلِجْ حُجَّتَهُمْ وَ ثَبِّتْ قُلُوبَهُمْ وَ قُلُوبَ شِيعَتِهِمْ عَلَى مُوَالاتِهِمْ وَ انْصُرْهُمْ وَ أَعِنْهُمْ وَ صَبِّرْهُمْ عَلَى الْأَذَى فِي جَنْبِكَ وَ اجْعَلْ لَهُمْ أَيَّاماً مَشْهُودَةً وَ أَيَّاماً مَعْلُومَةً كَمَا ضَمِنْتَ لِأَوْلِيَائِكَ فِي كِتَابِكَ الْمُنْزَلِ فَإِنَّكَ قُلْتَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَ عَمِلُوا الصَّالِحاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَ لَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضى‏ لَهُمْ وَ لَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْناً اللَّهُمَّ أَعْلِ كَلِمَتَهُمْ يَا لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ يَا لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ يَا لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ يَا لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ فَإِنِّي عَبْدُكَ الْخَائِفُ مِنْكَ وَ الرَّاجِعُ إِلَيْكَ وَ السَّائِلُ لَدَيْكَ وَ الْمُتَوَكِّلُ عَلَيْكَ وَ اللَّاجِئُ بِفِنَائِكَ فَتَقَبَّلْ دُعَائِي وَ اسْمَعْ نَجْوَايَ وَ اجْعَلْنِي مِمَّنْ رَضِيتَ عَمَلَهُ وَ هَدَيْتَهُ وَ قَبِلْتَ نُسُكَهُ وَ انْتَجَبْتَهُ بِرَحْمَتِكَ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْوَهَّابُ وَ أَسْأَلُكَ يَا اللَّهُ بِلَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَلَّا تُفَرِّقَ بَيْنِي وَ بَيْنَ مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ الْأَئِمَّةِ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ وَ اجْعَلْنِي مِنْ شِيعَةِ مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ تَذْكُرُهُمْ وَاحِداً وَاحِداً بِأَسْمَائِهِمْ إِلَى الْقَائِمِ ع وَ أَدْخِلْنِي فِيمَا أَدْخَلْتَهُمْ فِيهِ وَ أَخْرِجْنِي مِمَّا أَخْرَجْتَهُمْ مِنْهُ.

তারপরে নিজের চেহারাকে মাটির সাথে স্পর্শ করে বলতে হবে:

يَا مَنْ يَحْكُمُ بِمَا يَشَاءُ وَ يَعْمَلُ مَا يُرِيدُ أَنْتَ حَكَمْتَ فِي أَهْلِ بَيْتِ مُحَمَّدٍ مَا حَكَمْتَ فَلَكَ الْحَمْدُ مَحْمُوداً مَشْكُوراً وَ عَجِّلْ فَرَجَهُمْ وَ فَرَجَنَا بِهِمْ فَإِنَّكَ ضَمِنْتَ إِعْزَازَهُمْ بَعْدَ الذِّلَّةِ وَ تَكْثِيرَهُمْ بَعْدَ الْقِلَّةِ وَ إِظْهَارَهُمْ‏ بَعْدَ الْخُمُولِ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ أَسْأَلُكَ يَا إِلَهِي وَ سَيِّدِي بِجُودِكَ وَ كَرَمِكَ أَنْ تُبَلِّغَنِي أَمَلِي وَ تَشْكُرَ قَلِيلَ عَمَلِي وَ أَنْ تَزِيدَ فِي أَيَّامِي وَ تُبَلِّغَنِي ذَلِكَ الْمَشْهَدَ وَ تَجْعَلَنِي مِنَ الَّذِينَ [الذي‏] دُعِيَ فَأَجَابَ إِلَى طَاعَتِهِمْ وَ مُوَالاتِهِمْ وَ أَرِنِي ذَلِكَ قَرِيباً سَرِيعاً إِنَّكَ عَلى‏ كُلِّ شَيْ‏ءٍ قَدِيرٌ.

অতঃপর আকাশের দিকে মুখ তুলে দোয়া করতে হবে। কেউ যদি এ নামাজটি পড়ে এবং এই আমলটি সম্পাদন করে তাহলে সে কবুল হজ্ব ও ওমরা হজ্ব পালনের সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হবে। এছাড়া আল্লাহ তাকে বিশেষ কিছু  সুবিধা দান করবেন যেমন: সে খারাপভাবে মৃত্যুবরণ করবে না, শত্রু তার ওপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, সে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত থাকবে, পাগলামী ও কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্ত থাকবে, তার পরবর্তি চার প্রজন্ম এর উপকারীতা উপলব্ধি করতে পারবে এবং সে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকবে।

আল্লামা মাজলিসি (রহ.) বলেছেন: আহলে বাইত (আ.)এর অনুসারীরা যেন রোজার নিয়ত ব্যাতিত এই দিনে উপোস থাকে এবং দিনের শেষভাগে ইফতার করে। এই দিনে মজাদার ও সুস্বাদু খাবার না খাওয়া বরং সাধারণ খাদ্য খাওয়া, পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা, (পুরুষদের জন্য) জামার বোতামগুলোকে খুলে রাখা, জামার হাতাগুলোকে গুটিয়ে রাখা এবং দুঃখভারাক্রান্ত মানুষের ন্যায় থাকা উত্তম। আল্লামা মাজলিসি (রহ.) তাঁর “যাদুল মাআদ” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ৯ ও ১০ মহরম রোজা না রাখা, কেননা উমাইয়ারা এ দু’দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)কে হত্যা করার কারণে আনন্দিত হয়, এই দিনকে নিজেদের জন্য বরকতময় এবং আহলে বাইতকে কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে রোজা রেখেছিল। তারা রাসুল (সা.)এর নাম দিয়ে এ দু’দিনে রোজা রাখার ফযিলত সংক্রান্ত অনেক মিথ্যা হাদীস তৈরী করেছে। অপর দিকে ইমাম (আ.)গণ এই দিনগুলোতে বিশেষত আশুরার দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। কারণ  উমাইয়ারা আশুরার দিন খাদ্য গুদামজাত করাকে নিজেদের জন্য বরকতময় বলে মনে করতো। আর এ কারণে ইমাম রেযা (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি আশুরার দিন পার্থিব চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে নিজেকে বিরত রাখে আল্লাহ তার ইহকাল ও পরকালের চাহিদাকে পূর্ণ করবেন। আর কেউ যদি এ দিনে দুঃখভারাক্রান্ত অবস্থায় থাকে এবং ক্রন্দন করে তাহলে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে প্রফুল্ল ও আনন্দিত অবস্থায় রাখবেন এবং তার চোখ বেহেশতে আহলে বাইত (আ.) এর অবস্থান অবলোকন করার পর নূরানী হয়ে উঠবে। অপরদিকে কেউ যদি আশুরার দিনকে বরকতময় মনে করে এবং ঘরে কিছু জমা বা গুদামজাত করে তাহলে আল্লাহ এই জমাকৃত জিনিষকে তার জন্য অমঙ্গলজনক করে দিবেন এবং তাকে কেয়ামতের দিন এজিদ, ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ, উমর ইবনে সাআদ (লা.)এর সাথে পুণরুত্থান করবেন। এজন্য আশুরার দিন পার্থিব কাজে নিজেকে মগ্ন না রাখা উত্তম। বরং ক্রন্দন, আহাজারি এবং মাতম করা, পরিবার পরিজনকে ইমাম হুসাইন (আ.)এর শোকে শোকাহত হওয়ার নির্দেশ দেয়া, খাদ্য জমা না করা এবং আসরের সময় পর্যন্ত না খেয়ে থাকা।

এই দিনে ১০০০ বার আহলে বাইতের (আ.) শত্রুদের প্রতি অভিসম্পাত করা উত্তম:

اَللَّهُمَّ الْعَنْ قَتَلَةَ الْحُسَينِ عَلَيهِ السَّلاَم.

“মাফাতিহুল জিনান ও ইক্ববালুল আমাল” নামক গ্রন্থের লেখকগণ বলেছেন: আশুরার ফযিলত সংক্রান্ত যে হাদীসগুলো রাসুল (সা.) এর নামে তৈরী করা হয়েছে তা হচ্ছে জাল ও মিথ্যা। “শিফাউস সুদুর” গ্রন্থের লেখক যিয়ারত-এ আশুরার এ অংশে উল্লেখ করেছেন “اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا يَوْمٌ تَبَرَّكَتْ بِهِ بَنُو أُمَيَّة” এবং এ সম্পর্কে তিনি একটি হাদীস থেকে বিষয়টিকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন। যে কারণে উমাইয়ারা এই অশুভ দিনটিকে বরকতময় বলে মনে করে তা নিন্মরূপ:

১. উমাইয়ারা আশুরার দিনে সারা বছরের জন্য খাদ্য গুদামজাত করা মুস্তাহাব এবং তা নিজেদের জন্য রুজি বৃদ্ধি এবং বিলাসিতার কারণ বলে মনে করতো। যদিও আহলে বাইত (আ.) তাদের এ ধারণাকে ভ্রান্ত এবং তা করতে নিষেধ করেছেন।

২. উমাইয়ারা আশুরার দিন ঈদ উৎযাপন করতো। তারা তাদের পরিবার পরিজনদের জন্য নতুন পোষাক, খাদ্য, একে অপরের সাথে সাক্ষাত, কোলাকুলি করা, সাজসজ্জা করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজেদের অনুসারীরে মধ্যে ধিরেধিরে প্রচলন ঘটায়।

৩. উমাইয়ারা আশুরার দিনে রোজা সম্পর্কে অনেক জাল হাদীস বর্ণনা করেছে।

৪. তারা আশুরার দিনে নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য দোয়া করাকে মুস্তাহাব মনে করতো। এছাড়া তারা এই দিনে রোজার ফযিলত সম্পর্কে অনেক জাল হাদীস বর্ণনা করেছে, দোয়া লিখেছে এবং তা প্রচার করেছে যেন সাধারণ লোকজন প্রকৃত সত্য থেকে অজ্ঞ থেকে যায়। সুতরাং তারা বিভিন্ন মসজিদের মিম্বারে, শহরে যে বক্তৃতা দেয় তাতে বর্ণনা করে যে, আশুরা পূর্ববর্তী সকল নবীদের জন্য ছিল মর্দাপূর্ণ যেমন: নমরূদের নির্দেশে প্রজ্বলিত আগুন নিভে যায়, হযরত  নূহ (আ.) এর নৌকা জুদি পাহাড়ে থামে, ফেরাউনের সৈন্যরা নীল নদে ডুবে যায়, হযরত  ঈসা (আ.) ইয়াহুদীদের চক্রান্ত থেকে পরিত্রাণ পান এবং তাদের বর্ণনা অনুযায়ী উল্লেখিত সকল ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়। শেখ সাদুক্ব (রহ.) জাবালে মাক্কি হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: আমি মিসামে তাম্মার (রা.)কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর শপথ! মুসলিম উম্মাহ আশুরার দিন রাসুল (সা.)এর প্রাণ প্রিয় দৌহিত্রকে শহীদ করবে এবং আল্লাহর শত্রুরা সে দিনকে নিজেদের জন্য বরকতময় বলে মনে করবে। কথাটি বলার পরে মিসামে তাম্মার (রা.) কাঁদতে কাঁদতে বলেন: হে জনতা! তারা এমন এক মনগড়া হাদীস জাল করবে যাতে তারা উল্লেখ করবে যে, আজকের দিনেই আল্লাহ তায়ালা হযরত  আদম (আ.)এর তওবাকে কবুল করেছিলেন। অথচ প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে, আল্লাহ তাঁর তওবাকে জিলহজ্ব মাসে কবুল করেছিলেন এবং তারা বলবে যে, আজকেই হযরত  ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। কিন্তু আল্লাহ তাকে জিলক্বদ মাসে মাছের পেট থেকে মুক্তি দান করেছিলেন। তারা বলবে যে, আজকের দিনে হযরত  নূহ (আ.)এর নৌকা জুদি পাহাড়ে থামে। কিন্তু সত্য ঘটনা হলো যে, নৌকাটি ১৮ জিলহজ্বে জুদি পাহাড়ে থেমেছিল। তারা প্রচার করবে যে, আজকের দিনেই হযরত  মূসার (আ.) জন্য নীল নদের পানি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু আসলে ঘটনাটি রবিউল আওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছিল। মিসামে তাম্মারের এই কথা থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হচ্ছে নবুওয়াত ও ইমামতের জন্য একটি নিদর্শন স্বরূপ এবং শিয়া মুসলমানদের হক্ব পথে থাকার একটি দলিল স্বরূপ। কেননা হাদীসটিতে এমন কিছু লিখা রয়েছে যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছিল এবং পরবর্তিতে তা ঘটছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, ঘটনাগুলো জাল হওয়ার পরেও লোকজন তা মিথ্যা ধারণা উপরে ভিত্তি করে মেনে নিয়েছে এবং দোয়াও রচনা করেছে যা বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, উপরে উল্লেখিত প্রকৃত সত্য ঘটনা সম্পর্কে সে যুগের লোকেরা অজ্ঞ ছিল। তারা সেই দোয়াগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেয় যা পাঠ করা বিদআত ও হারাম। ঐ দোয়াসমূহের মধ্যে নিন্মোক্ত দোয়া হলো একটি:

”بِسْمِ    اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ سُبْحَانَ اللَّهِ مِلْ ءَ الْمِيزَانِ وَ مُنْتَهَى الْعِلْمِ وَ مَبْلَغَ الرِّضَا وَ زِنَةَ الْعَرْشِ.

কয়েকটি লাইন পরে বর্ণিত হয়েছে যে, ১০ বার  দুরুদ শরীফ পাঠ করার পরে বলতে হবে:

يَا قَابِلَ تَوْبَةِ آدَمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ يَا رَافِعَ إِدْرِيسَ إِلَى السَّمَاءِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ يَا مُسَكِّنَ سَفِينَةِ نُوحٍ عَلَى الْجُودِيِّ يَوْمَ عَاشُورَاءَ يَا غِيَاثَ إِبْرَاهِيمَ مِنَ النَّارِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ .“

এতে কোন সন্দেহ নেই যে,এ দোয়াটি মদীনার কোন নাসেবি (আহলে বাইতের শত্রু) বা “মোসকেত” নামক স্থানের  কোন খারেজি তা বর্ণনা করেছে অথবা তাদের কোন মতাদর্শী এ দোয়াটি বর্ণনা করেছে। আর এভাবেই উমাইয়ার অত্যাচারকে তারা শেষ পর্যায় পর্যন্ত পৌছায়। এটাই ছিল “শিফাউস সুদুর” নামক গ্রন্থের সারসংক্ষেপ যা এখানেই শেষ হয়ে যায়।

যাইহোক আমাদের উচিত কারবালাতে ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর বাচ্চা ও নারীদের উপরে এজিদ বাহিনীর কৃত অত্যাচারের কথা স্মরণ করা যে, তাদের অবস্থা তখন কেমন ছিল? তাঁরা এজিদ বাহিনীর হাতে বন্দি হয়ে ক্রন্দন করছিলেন। আহলে বাইত (আ.)এর উপরে এমনভাবে অত্যাচার করা হয় যা কোন মানুষের উপরে করা হয়নি।

আশুরার দিনের শেষভাগে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.), হযরত আলী, ফাতিমা, ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.)এর সকল সন্তানদেরকে সমবেদনা জানানো এবং ক্রন্দনরত অবস্থায়  তাঁদের প্রতি সালাম প্রেরণ করা।

[1] . ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৫৪।

[2] . ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৫৬- ৫৫৮।

[3] . ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৫৫।