Press "Enter" to skip to content

আহমাদ বিন ইসহাক্ব আশআরী কুম্মী কে ছিলেন?

এস, এ, এ

নাম: আহমাদ বিন ইসহাক্ব আশআরী কুম্মী।

বংশ: আশআরীউন।

জন্মস্থান: কুম।

জীবন যাপনের স্থানসমূহ: কুম ও বাগদাদ।

মৃত্যু: প্রায় ২৬০ অথবা ২৬৩ হিজরীতে।

দাফনের স্থান: কেরমানশাহ প্রদেশের যাহাব নামাক পুলের কাছে।

ইমামদের সাথে সাক্ষাত: ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.), ইমাম আলী নাক্বি (আ.) এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.)।

দ্বীনি কাজ: তিনি কুম নগরীতে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র নির্ধারিত উকিল ছিলেন। তিনি ইমাম হাসান (আ.)র নামে একটি মসজিদ তৈরী করেছিলেন যা আজও অবশিষ্ট রয়েছে।

গ্রন্থ: এলালুস সাওম, মাসায়েলুর রেজাল।

আহমাদ বিন ইসহাক্ব আশআরী কুম্মী শিয়াদের একজন হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় চার জন ইমাম (আ.)র (ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.), ইমাম আলী নাক্বি (আ.) এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এবং নবজাতক ইমাম মাহদী (আ.)কে) সাথে সাক্ষাত করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। কিছু বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম মাহদী (আ.)র স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময় তিনি উসমান বিন সাঈদ’র প্রথম উপ-সহকারী রূপে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। কুম নগরীতে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র নির্দেশে তিনি একটি মসজিদ তৈরী করেছিলেন যা আজও অবশিষ্ট রয়েছে।

বংশ:

তাঁর নাম ছিল আহমাদ বিন ইসহাক্ব বিন আব্দুল্লাহ বিন সাআদ বিন মালিকিল আহওয়াস আশআরী এবং তার উপনাম ছিল আবু আলী।

তার পূর্বপুরুষগণ আশআরী গোত্রের লোক ছিলেন যারা কুফা শহরে বসবাস করতো। তার চতূর্থ পূর্বপুরুষ আহওয়াস বিন সায়েল ১২১ হিজরীতে যায়দ বিন আলী’র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং সেনাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি যায়দের শাহাদতের পরে বন্দি হন। চার বছর পরে তার ভাই আব্দুল্লাহ যখন হাজ্জাজকে তাকে মুক্তি করার জন্য অনুরোধ জানায় তখন তিনি মুক্তি লাভ করেন এবং তিনি তার ভাইয়ের সাথে কুম শহরে চলে যান। এভাবেই কুম শহরে আশআরী গোত্র বিস্তার লাভ করে।

তার পিতা ইসহাক্ব বিন আব্দুল্লাহ বিন সাআদ কুম শহরের একজন বিশ্বস্ত রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী ছিলেন এবং তিনি ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) ও ইমাম মূসা কাযিম (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।

ইমাম (আ.)দের সান্নিধ্য অর্জন:

শিয়া রেজাল শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী আহমাদ বিন ইসহাক্ব তিনজন ইমাম (আ.)’র (ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.), ইমাম আলী নাক্বি (আ.) এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.)) সাহাবী ছিলেন এবং তাঁদের থেকে রেওয়ায়েতও বর্ণনা করেছেন। তিনি “এলালুস সাওম, মাসায়েলুর রেজাল” নামক দুইটি গ্রন্থও রচনা করেছিলেন।

ওকালতি:

কিছু বর্ণনা অনুযায়ি তিনি কুম নগরীতে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র নির্ধারিত উকিল ছিলেন। ৫ আবার অনেকে মনে করেন যে, তিনি ইমাম আলী নাক্বি (আ.) ও উকিল ছিলেন।

ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র স্বীকৃতিনামা:

কিছু বর্ণনা অনুযায়ি তিনি ইমাম হাসান আসকারী (আ.) স্বীকৃতি ও অনুমতিক্রমে বিভিন্ন খাতের অর্থ সংগ্রহ করতেন। আহমাদ বিন ইসহাক্ব বলেন: একদা আমি ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র সাথে সাক্ষাত করার জন্য যাই এবং তাঁতে অনুরোধ করি তিনি যেন আমাকে একটি চিঠি লিখে দেন কেননা যখন তিনি কিছূ পাঠবেন আমি যেন তার হাতের লিখা দেখে বুঝতে পারি  যে তিনি তা প্ররেণ করেছেন। ইমাম (আ.) বলেন: হে আহমাদ! মোটা ও পাতলা কলম দিয়ে লিখেলে তা দেখতে অন্যরকম লাগে (লিখর ধরণটা লক্ষ্য কর না মোটা ও পাতলা লিখা)। তারপর তিনি দাওয়াত ও কলম চাইলেন এবং একটি চিঠি লিখলেন। আমি নিজে মনে মনে বললাম: তাঁর কাছ থেকে কলমটি চেয়ে নেই যা দিয়ে তিনি এই চিঠিটি লিখলেন। চিঠিটি লিখার পরে তিনি আমার সাথে কথা বলছিলেন এবং কলমটি রুমাল দ্বারা পরিষ্কার করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন: হে আহমাদ! এই কলমটা নাও।

ইমমা মাহদী (আ.)’র সাথে সাক্ষাত:

আব্বাসীয় শাসকদের রাজনৈতিক চাপের কারণে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র স্থলাভিসিক্তের বিষয়টি গোপন ছিল এবং ইমাম (আ.) বিশ্বস্ত সাহাবী ব্যাতিত আর কেউ এই বিষয়ে অবগত ছিল না। কুম নগরীর শিয়াগণ ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র স্থলাভিসিক্তের বিষয় সম্পর্কে আহমাদ বিন ইসহাক্বকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ইমাম (আ.)’র স্থলাভিষিক্তকে নিজ চোখে দেখার উদ্দেশ্যে সামেরার দিকে রওনা হন। তিনি ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র কাছে উপস্থিত হয়ে কিছূ বলার পূর্বেই তিনি আহমাদকে বলেন: হে আহমাদ বিন ইসহাক্ব! আল্লাহ তায়ালা আদম থেকে নিয়ে আজ অবধি পৃথিবীকে তাঁর হুজ্জাত ব্যাতিত খালি রাখেন নি এবং কেয়ামত পর্যন্ত খালি থাকবে না।

আহমাদ বিন ইসহাক্ব জিজ্ঞাসা করেন: তাহলে আপনার পরে আল্লাহর হুজ্জাত কে? ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ঘরের ভিতরে যান েএবং কিছুক্ষণ পরে তিন বছরের একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আমার কাছে এসে বলেন: তুমি যদি আল্লাহর হুজ্জাতের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত না হতে তাহলে আমি কখনই এই বাচ্চাকে তোমার সম্মুখে উপস্থিত করতাম না। এই বাচ্চার নাম ও উপমান হচ্ছে রাসুল (সা.)’র নামমের মতো পৃথিবী যখন অত্যাচারে পূর্ণ হয়ে যাবে তখন তিনি ন্যায় দ্বারা তা পূর্ণ করে দিবেন।

উক্ত সাক্ষঅতের পূর্বেই ইমাম হাসান আসকারী (আ.) আহমাদ বিন ইসহাক্বকে চিঠির মাধ্যমে খবর পৌছে দিয়েছিলেন।

স্বল্প অন্তর্ধানকালীন সময়ে ওকালতি:

বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ি আহমাদ বিন ইসহাক্ব ইসমান বিন সাঈদ’র যুগে কুম থেকে বাগদাদে চলে যান এবং তাঁর সাথে দুইজন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ কোতান কুম্মী এবং হায়েয বিন ইয়াযিদকে সাথে নিয়ে যান। সেখানে তিনি উসমান বিন সাঈদের সহকারী হিসাবে কাজ করেতেন।

শেখ সাদুক্বের বর্ণনা অনুযায়ি তিনি ইমাম মাহদী (আ.)’র সাক্ষাতকারী এবং তাঁর মোজেযাকেও তিনি অবলোকন করেছিলেন।

সামাজিক কার্যকলাপ:

কুম নগরীতে আহমাদ বিন ইসহাক্বের দ্বায়িত্ব ছিল তিনি জনগণের আকিদাগত এবং ফিক্বহ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতেন ইমাম (আ.)’র পক্ষ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন এবং তা ইমাম (আ.)’র কাছে প্রেরণ করতেন। তিনি প্রয়োজনবোধে উক্ত অর্থকে দ্বীনের পথে খরচও করতেন। ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র নির্দেশে তিনি কুম নগরীতে একটি মসজিদ তৈরী করেন। বর্তমানে যা মসজিদে ইমাম হাসান আসকারী নামে পরিচিত।

আহমাদ বিন ইসহাক্বের মৃত্যু:

কাশশি’র বর্ণনা অনুযায়ি আহমাদ বিন ইসহাক্ব ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র শাহাদতের পরেও জীবিত ছিলেন। তিনি ইমাম (আ.)কে চিঠি লিখেন যে তিনি হজ্বে যেতে চান। ইমাম (আ.) তাকে হজ্বে যাওয়ার অনুমতি দেন এবং তার জন্য একটি কাপড় প্রেরণ করেন। আহমাদ কাপড়টি দেখে বুঝতে পারে যে ইমাম (আ.) তাকে মৃত্যুর খবর দিয়েছেন। তিনি হজ্ব থেকে ফিরে আসার পথে হালওয়ান নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।

দালায়েদুল ইমামা নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, আহমাদ বিন ইসহাক্ব তখন ইমাম মাহদী (আ.)’র উকিল পদে নিয়োজিত ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি কুম নগরীতে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। ইমাম (আ.) পত্রে লিখেন যে, তিনি কুম সফরের পথে অসুস্থ হবেন এবং মৃত্যুবরণ করবেন। সে সফরে হাওলান নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুবরণ করে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

সেই অনুযায়ি তিন প্রায় ২৬০ অথবা ২৬৩ জিহরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তবে শেখ সাদুকের বর্ণনা অনুযায়ি তিনি ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র যুগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং বর্তমানে পুলে যেহাবের কাছে তার কবর রয়েছে। তার কবরটি শিয়াদের মিলন এবং যিয়ারতের স্থানে রূপান্তরিত হয়েছে।

অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ি কুম নগরীতে ইমাম হাসান আসকারী নামক মসজিদের সামনে কার কবর রয়েছে।

তথ্যসূত্র:

১. রেজালে নাজ্জাশি, পৃষ্ঠা ৭৩, ৯১।

২. তারিখে কুম, পৃষ্ঠা ১২৬, ২২৭, ২৫০।

৩. আমীনে ইমামত, পৃষ্ঠা ১৫।

৪. দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ২৭২, ৫০৩।

৫. সাযমানে ওয়েকালাত, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৪৯- ৫৫০, ৫৫৫।

৬. কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১৩।

৭. কামাল উদ্দিন, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮৪, ৪৪২, ৪৬৪, ৪৬৫।

৮. তারিখে জামে কুম, পৃষ্ঠা ১৩৮- ১৩৯।

৯. রেজালে কাশশি, পৃষ্ঠা ৫৫৭।