Press "Enter" to skip to content

ইমাম মাহদী আঃ এর আবির্ভাবের নিদর্শন

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর বিশ্বজনীন বিপ্লবের বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। এ নিদর্শনসমূহ জানা থাকলে আমাদের অনেক উপকার হবে। এই নির্দশনসমূহ যেহেতু ইমমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের সংবাদ দেয় এবং তার এক একটি ঘটনা পরিদৃষ্ট হওয়ার সাথে সাথে প্রতীক্ষাকারীদের মনে আশার আলো জাগায় এবং দুশমনদের মনে ত্রাস সঞ্চার করে। কেননা ,এর মাধ্যমে তাদের অত্যাচারের পালা শেষ হবে এবং মু’মিনদের জন্য পবিত্র ইমামের সাথে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার সুযোগ হবে। তাছাড়াও আমাদের যদি জানা থাকে যে ,ভবিষ্যতে কি ঘটবে তাহলে আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি ও কাজ করতে পারব এবং বুঝতে পারবে যে ,তখন আমাদের কি করতে হবে। এটা আমাদেরকে ভণ্ড মাহ্দী দাবীকারীদেরকে চিনতে সাহায্য করবে। সুতরাং যদি কেউ মিথ্যা মাহ্দী দাবী করে এবং তার সংগ্রামে এসকল নিদর্শন না থাকে তাহলে অতি সহজেই বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে যে ,সে একজন মিথ্যা দাবীদার ভন্ড মানুষ।

পবিত্র ইমামদের বাণীতে আবির্ভাবের অনেক নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে তার কিছু কিছু স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক এবং কিছু কিছু অস্বাভাবিক ও অলৌকিক। এ নিদর্শনসমূহের মধ্য থেকে প্রথমে আমরা নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ রেওয়ায়েতসমূহ বর্ণনা করব এবং শেষে সংক্ষেপে আরও কিছূ নিদর্শন বর্ণনা করব।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহদী (আ.)-এর সংগ্রামের পাঁচটি নিদর্শন রয়েছে, যা হচ্ছে:

১. সুফিয়ানির আবির্ভাব,

২. ইয়ামানির আবির্ভাব,

৩. আসমানী গায়েবী আওয়াজ,

৪. নাফসে যাকিয়ার হত্যা এবং

৫. খুসুফে বাইদা।

📚 গাইবাতে নোমানি ১৪তম অধ্যায় বাব ৯ম হাদীস, ২৬১ নম্বর পৃষ্ঠা।

এখন উপরিউক্ত পাঁচটি নিদর্শনের ব্যাখ্যা দেওয়া হল যদিও এর সবকটিই হয়ত বস্তুনিষ্ঠ নয়।

(ক)- সুফিয়ানির আবির্ভাব:

সুফিয়ানির আবির্ভাব একটি নিদর্শন যা বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। সুফিয়ানি ,আবু সুফিয়ানের বংশধর যে ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু দিন পূর্বে সিরিয়াতে সংগ্রাম করবে। সে এমন এক অত্যাচারি যে হত্যা করতে কোন পরওয়া করে না এবং তার শত্রুদের সাথে অতি ভয়ানক আচরণ করবে।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) তার সম্পর্কে বলেছেন:

যদি সুফিয়ানিকে দেখ তাহলে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম লোককে দেখলে।

📚 আল কামালুদ্দীন গ্রন্থ, ২ খন্ড, ৫৭ নম্বর অধ্যায়, ১০ নম্বর হাদীস, ৫৫৭ নম্বর পৃষ্ঠা।

সে রজব মাসে তার সংগ্রাম শুরু করবে। সে সমগ্র সিরিয়াকে তার আয়ত্বে আনার পর ইরাকে হামলা করবে এবং বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাবে।

হাদীসের বর্ণনা মতে তার সংগ্রাম থেকে হত্যা হওয়া পর্যন্ত পনের মাস সময় লাগবে।

📚গাইবাতে নোমানি গ্রন্থ, ১৮তম অধ্যায়, ১ নম্বর হাদীস, ৩১০ নম্বর পৃষ্ঠা।

(খ)- খুসুফে বাইদা:

খুসুফ অর্থাৎ তলিয়ে যাওয়া এবং বাইদা হচ্ছে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থান। খুসুফে বাইদার ঘটনাটি হচ্ছে যে ,সুফিয়ানি ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধের জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করবে। তার সৈন্যরা যখন বাইদায় পৌঁছাবে অলৌকিকভাবে তারা মাটির নিচে তলিয়ে যাবে।

ইমাম বাকের (আ.) এসম্পর্কে বলেছেন:

সুফিয়ানির সেনা প্রধান জানতে পারবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) মক্কার দিকে রওনা হয়েছেন। অতঃপর সৈন্য বাহিনীকে তার দিকে প্রেরণ করবে কিন্তু তাকে দেখতে পাবে না। যখন তার সেনাবাহিনী বাইদায় পৌঁছবে গায়েবী আওয়াজ আসবে “হে বাইদা তাদেরকে ধ্বংস কর ”অতঃপর সেই স্থান তাদেরকে তলিয়ে নিবে ।

📚 পূর্বোক্ত গ্রন্থ, ১৪তম অধ্যায়, ৬৭ নম্বর হাদীস ২৮৯ নম্বর পৃষ্ঠা।

(গ)- ইয়ামানির আবির্ভাব:

ইয়ামান থেকে এক নেতার সংগ্রাম একটি নিদর্শন যা ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু পূর্বে ঘটবে। তিনি একজন মু ’ মিন ও মোখলেস বান্দা। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। তবে সে সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত কিছু জানা নেই।

ইমাম বাকের (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে যতগুলো সংগ্রাম হবে তার মধ্যে ইয়ামানির সংগ্রামের পতাকা হেদায়েতপূর্ণ। তার পতাকাই হচ্ছে হেদায়েতের পতাকা। কেননা ,সে তোমাদেরকে তোমাদের ইমামের দিকে আহবান করে।

📚 পূর্বোক্ত গ্রন্থ, ১৪তম অধ্যায়, ১৩ নম্বর হাদীস, ২৬৪ নম্বর পৃষ্ঠা।

(ঘ)- আসমানি আওয়াজ:

আর্বিভাবের পূর্বে অপর যে নিদর্শনটি দেখা যাবে তা হল আসমানী আওয়াজ । এই আসমানী আওয়াজ হাদীসের ভাষ্যমতে হযরত জীব্রাইলের আওয়াজ এবং তা রমযান মাসে শুনতে পাওয়া যাবে।

📚গাইবাতে নোমানি গ্রন্থ, ১৪তম অধ্যায়, ২৬২ নম্বর পৃষ্ঠা।

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সংগ্রাম যেহেতু বিশ্বজনীন এবং প্রত্যেকেই তার অপেক্ষায় রয়েছে সুতরাং এ আওয়াজের মাধ্যমেই প্রত্যেকে খবর পাবে যে ,ইমাম মাহ্দী (আ.) আবির্ভূত হয়েছেন।

ইমাম বাকের (আ.) এসম্পর্কে বলেছেন:

আসমানী গায়েবী আওয়াজ না আসা পর্যন্ত আমাদের কায়েম কিয়াম করবেন না , যে আওয়াজ পূর্ব ও পশ্চিমের সকলেই শুনতে পাবে।

📚গাইবাতে নোমানি গ্রন্থ, ১৪তম অধ্যায়, ১৪তম হাদীস, ২৬৫ নম্বর পৃষ্ঠা।

এই আওয়াজ মু ’ মিনদের জন্য যেমন আনন্দদায়ক অসৎকর্মশীলদের জন্য তেমন কঠিন। কেননা ,তাদেরকে অন্যায় ত্যাগ করে সৎকর্মশীল হতে হবে।

এই আওয়াজ সম্পর্কে ইমাম জা ’ ফর সাদিক (আ.) বলেছেন: আহবানকারী ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তার পিতার নাম ধরে আহবান করবেন।

📚গাইবাতে নোমানি গ্রন্থ, ১০ তম অধ্যায়, ২৯ নম্বর হাদীস, ২৬৫ নম্বর পৃষ্ঠা।

(ঙ)- নাফসে যাকিয়ার হত্যা:

নাফসে যাকিয়ার অর্থ হচ্ছে যে ব্যক্তি পূর্ণতায় পৌঁছেছে অথবা পবিত্র ও নিষ্পাপ ব্যক্তি যে কোন হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয় নি বা অন্যায় করে নি। ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছু পূর্বে একজন নিষ্পাপ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তি তার বিরোধীদের হাতে নিহত হবেন।

হাদীসের ভাষ্যমতে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের ১৫ দিন পূর্বে এ ঘটনাটি ঘটবে। ইমাম জা ’ ফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন:

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব এবং নাফসে যাকিয়ার নিহত হওয়ার মধ্যে মাত্র ১৫টি রাতের ব্যবধান।

📚 কামালুদ্দীন গ্রন্থ, ২য় খন্ড, ৫৭ নম্বর অধ্যায়, ২ নম্বর হাদীস, ৫৫৪ নম্বর পৃষ্ঠা।

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাবের আরও অনেক নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে হচ্ছে: দজ্জালের আগমন (একটি ভণ্ড ও নিকৃষ্ট চরিত্র যে অনেক মানুষকে গোমরাহ করবে) রমযান মাসে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ। ফিতনাসমূহ প্রকাশ পাবে এবং খোরাসান থেকে এক ব্যক্তি সংগ্রাম করবে।

সংগৃহীত