ইমামের চারিত্রিক গুণাবলী ও আধ্যাত্মিক সাধনার ফলে বন্ধুমহল এমনকি শত্রুরাও তাঁর মহত্ত্বও শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিয়েছেন। হাসান ইবনে মুহাম্মদ আ’শআরী ও মুহাম্মদ ইয়াহিয়া এবং আরও অনেকে বর্ণনা করেছেন যে, আহমাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে খাকান আব্বাসীয় খলিফার কোম অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল। একদা তার এক আলোচনা সভায় শিয়াদের আকিদা বিশ্বাস সম্পর্কিত কথা উঠলে সে (কট্টর নাসেবী) (যারা ইমামদের সাথে বিরোধিতা ও শত্রুতা করে থাকে তাদেরকে নাসেবী বলা হয়) বললো : “সামেরায় আমি আলাভীদের মধ্যে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী রেযা (ইমাম আসকারী)-এর মত ভদ্র, অমায়িক, মহৎ ও মহান ব্যক্তিত্ব তার পরিবার ও হাশেমী বংশের মধ্যে অন্য কাউকে দেখি নি। তিনি যেমন তার পরিবারের মধ্যে সম্মানিত ছিলেন তেমনই জনসাধারণের মধ্যেও। আমার মনে আছে একদিন আমার পিতা(আহমাদের পিতা আবদুল্লাহ্ ইবনে খাকান সামররায় আব্বাসীয় শাসকদের দরবারী কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব) সান্নিধ্যে ছিলাম এমন সময় রক্ষিগণ খবর দিল আবু মুহাম্মদ ইবনে রেযা (ইমাম আসকারী) এসেছেন, বাবা বললেন, ঠিক আছে তাকে আসতে দাও। রক্ষীদের এমন সম্বোধন শুনে আমি বিস্মিত হলাম। কারণ ইতোপূর্বে খলিফা অথবা তার উত্তরাধিকারী অথবা তার প্রেরিত বিশিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো উপনামে (আরবদের মধ্যে অতীতকালে এমন প্রথা ছিল যে কাউকে তার সম্মানের খাতিরে তার নাম উল্লেখ না করে তার উপনামে ডাকতো) বাবার সামনে সম্বোধন করতো না। তখন উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের উচা-লম্বা, সুন্দর চেহারার বলিষ্ঠ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন এক যুবক প্রবেশ করলো। বাবার দৃষ্টি তার দিকে পড়া মাত্রই উঠে দাঁড়ালেন এবং এগিয়ে গিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। বাবা আগে কখনও কাউকে এভাবে সম্বোধন করেন নি। তার সাথে কোলাকুলি করলেন, তার মুখে ও বুকে চুমু খেলেন এবং তার হাত ধরে নিজের নামাজ পড়ার স্থানে বসালেন। নিজে ইমামের সামনা-সামনি বসে কথা বলতে লাগলেন। কথোপকথনের মাঝে প্রায়ই বলতে শুনলাম “আমি আপনার জন্য উৎসর্গীত”। সেখানে যা কিছুই দেখলাম বিস্মিত হলাম।
হঠাৎ দাররক্ষী এসে বললো খলিফা এসেছেন। প্রথা অনুযায়ী খলিফা আসলে তার সম্মুখে দেহরক্ষী, কমান্ডার ও সৈন্যবহর সজ্জিত থাকত এবং বাবার আলোচনার স্থল থেকে প্রবেশদ্বার পর্যন্ত দু’সারিতে সৈন্যবাহিনী অপেক্ষা করতে থাকতো যতক্ষণ পর্যন্ত খলিফা ফিরে না যেত। বাবা নির্দ্বিধায় ইমামের সাথে কথা বলতে লাগলেন। যখন খলিফার বিশেষ গোলাম তার সামনে এসে উপস্থিত হলো তখন বাবা বললেন, আমি আপনার জন্য উৎসর্গীত। যদি চান চলে যেতে পারেন। অন্যদিকে নিজের দ্বাররক্ষীদের উদ্দেশ্যে বললেন, ইমামকে সারিবদ্ধ সৈন্যদের পিছন দিক দিয়ে নিয়ে যেতে যাতে খলিফা ইমামকে দেখতে না পায়। ইমাম উঠে দাঁড়ালে বাবাও উঠে দাঁড়ান, ইমামের সাথে কোলাকুলি করেন। অতঃপর ইমাম চলে গেলেন। বাবার দ্বাররক্ষিগণ ও ভৃত্যদের জিজ্ঞেস করলাম : আহ! এই ব্যক্তি কে ছিল যে তার সম্মানে তার উপনামে সম্বোধন করলে এবং বাবাও এরূপ অকল্পনীয় সম্মান প্রদর্শন করলেন?
‘বললেন : তিনি একজন আলাভী, হাসান ইবনে আলী ও ইবনে রেযা(ইমাম রেযা (আঃ) এর পরবর্তী তিন ইমাম (ইমাম জাওয়াদ, ইমাম হাদী ও ইমাম আসকারী) কে ইমাম রেযা (আঃ) এর সম্মানে সমাজ ও রাজ দরবাবে ইবনে রেজা বলে সম্বোধন করা হতো) নামে প্রসিদ্ধ।
আমার বিস্ময় আরও বেড়ে গেল। রাত পর্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম। বাবা সাধারণত রাতে এশার নামাজের পর বসে যে সংবাদগুলো খলিফার গোচরীভূত করা প্রয়োজন সেগুলোকে পর্যালোচনা করতেন। বাবা যখন নামাজ পড়ে বসলেন আমিও তার পাশে বসলাম। তখন সেখানে অন্য কেউ ছিল না। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন :
আহমাদ! তুমি কি কিছু বলবে?
বললাম : হ্যাঁ, যদি অনুমতি দেন।
বললেন : বল।
বললাম : বাবা! সকালে যে লোকটা এসেছিল এবং যাকে আপনি এত সম্মান দেখালেন আর প্রায়ই বলতে শুনলাম “আমি আপনার জন্য উৎসর্গীত, উৎসর্গীত আমার পিতা ও মাতা”। লোকটা কে ছিল?
বললেন : তিনি রাফেজীদের ইমাম (এরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ. ৩১৮) হাসান ইবনে আলী, ইবনে রেযা নামে প্রসিদ্ধ।
অতঃপর বাবা কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন : খেলাফত যদি আব্বাসীয়দের হাত থেকে চলে যায় তাহলে তিনিই হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি খলিফা হওয়ার যোগ্য। এর কারণ তাঁর সততা, পরহেজগারী, উত্তম চরিত্র বৈশিষ্ট্য, ইবাদত ও দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তি। তাঁর পিতাকে যদি দেখতে বুঝতে পারতে তিনি কত মহাজ্ঞানী ও মর্যাদা সম্পন্ন লোক ছিলেন।
এমন বক্তব্য শুনে আমার চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা আরও বাড়তে লাগলো। একই সাথে বাবার প্রতি ক্রোধও বৃদ্ধি পেতে লাগলো। যে বিষয়টি আমার একমাত্র কর্মে পরিণত হলো তা হলো ইমাম সম্পর্কে যতদূর সম্ভব তথ্য সংগ্রহ ও অনুসন্ধান চালানো। বনি হাসেমের লোকজন, সৈন্যবাহিনীর কমান্ডার, লেখক ও বিচারক যার কাছেই ইমাম সম্পর্কে জানতে চেয়েছি মূলত তার মহত্ত্ব, সম্মান ও উচ্চ মর্যাদা ব্যতীত অন্য কিছুই শুনিনি। সবাই তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করেছেন এবং সকল বংশ ও গোত্র প্রধানদের চেয়ে তাঁকে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন। এ কারণে ইমামের মর্যাদা আমার কাছে আরও স্পষ্ট হলো। কারণ এমন কোন বন্ধু অথবা শত্রু কাউকেই দেখিনি যারা ইমামের অনুগ্রহ ও বদান্নতার কথা স্বীকার করেন নি অধিকন্তু তাঁর প্রশংসা করেছেন। (এরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ. ৩১৮)
ইমামের দুনিয়া বিমুখতা
‘কামেল মাদানী’ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জন্য ইমামের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন। তিনি বলেন:
যখন ঐ মহান ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করলাম, তিনি সাদা মসৃণ পোশাক পরেছিলেন। মনে মনে বললাম : “আল্লাহর ওলি ও হুজ্জাত নরম ও মসৃণ পোশাক পরিধান করেন অথচ আমাদেরকে এ ধরনের পোশাক পরিধানে নিষেধ করেন।”
ইমাম মুচকি হেসে জামার হাতা উঠিয়ে দেখালেন ঐ জামার নিচে কালো রুক্ষ পোশাক পরে আছেন। অতঃপর বললেন : ওহে কামেল! (هَذا لِلَّهِ وَ هَذا لَكُمْ ) এই রুক্ষ পোশাক পরেছি আল্লাহর জন্য আর উপরে যা দেখতে পাচ্ছো তা তোমাদের জন্য। (বিহারুল আনওয়ার, ৫০তম খণ্ড, পৃ. ২৫৩)
দুই অভাবীর আগমন
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুসা ইবনে জা’ফর বলেন : একবার প্রকট অভাব অনটনে পড়ে গিয়েছিলাম। বাবা বললেন, ‘চল প্রখ্যাত দানশীল ইমাম আসকারী (আ.)-এর কাছে যাই।
জিজ্ঞেস করলাম : তাঁকে তুমি চেন?
বললেন : না, তাঁকে কখনও দেখিনি।
একসাথে রওনা হলাম। রাস্তার মাঝে বাবা বললেন, “হায় আল্লাহ্! কি ভাল হতো যদি ইমাম আমাকে ৫০০ দেরহাম সাহায্য করতেন। ২০০ দেরহাম ঋণ পরিশোধ করতাম, ২০০ দেরহাম দিয়ে জামা-কাপড় কিনতাম ও বাকী ১০০ দেরহাম দিয়ে অন্যান্য খরচাদি চালাতাম।”
আমিও মনে মনে বললাম, “হায় আল্লাহ্! যদি তিনি আমাকেও ৩০০ দেরহাম দান করতেন। ১০০ দেরহাম দিয়ে একটা উট কিনতাম, ১০০ দেরহাম দিয়ে জামা-কাপড় কিনতাম ও বাকী ১০০ দেরহাম দিয়ে অন্যান্য খরচাদি চালাতাম। অতঃপর জাবাল শহরে যেতাম। ইমামের বাড়ীতে পৌঁছা মাত্রই তাঁর ভৃত্য এসে বললেন, আলী ইবনে ইবরাহীম ও তাঁর পুত্রকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে।” আমরা সেখানে প্রবেশ করে ইমামকে সালাম করলাম। তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওহে আলী তোমার কি হয়েছে! এ পর্যন্ত আমার কাছে আসনি?
বাবা বললেন : এমন দরিদ্র দশায় আপনার সাথে দেখা করতে আসতে লজ্জিত হচ্ছিলাম।
যখন বাইরে এলাম ইমামের ভৃত্য আমাদের দু’জনকে দু’থলি টাকা দিয়ে বললেন : তোমার এখানে বাবাকে দেয়া থলিতে) ৫০০ দেরহাম আছে, ২০০ দেরহাম ঋণ পরিশোধের জন্য, ২০০ দেরহাম জামা-কাপড় কেনার জন্য, বাকী ১০০ দেরহাম অন্যান্য খরচাদির জন্য। এবং আমাকে বললেন : তোমার এখানে ৩০০ দেরহাম আছে। ১০০ দেরহাম দিয়ে উট কিনবে, ১০০ দেরহাম দিয়ে জামা-কাপড় ও বাকী ১০০ দেরহাম দিয়ে অন্যান্য খরচাদি চালাবে। কিন্তু জাবাল শহরের দিকে যেওনা। ইরাকের শুরা শহরের দিকে যাও। তা তোমার জন্য ভাল হবে…। (উসুলে কাফি, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫০৬)
ইমামের ইবাদত
ইমাম আসকারী (আ.) নিজেও তাঁর সম্মানিত পূর্ব পূরুষদের ন্যায় ইবাদত ও বন্দেগীতে আদর্শ দৃষ্টান্ত পেশ করেন। নামাজের সময় হলে সব কাজ বাদ দিয়ে প্রথমেই নামাজ আদায় করতেন। আবু হাশেম জা’ফরী বলেন :
একদা ইমাম আসকারী (আ.)-এর সাক্ষাতে হাজির হলাম। তিনি কোন একটা বিষয়ে লেখায় মগ্ন ছিলেন এমন সময় নামাজের ওয়াক্ত হলো। তিনি এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন…। (বিহারুল আনওয়ার, ৫০তম খণ্ড, পৃ. ৩০৪)
ইমামের নামাজের ধরণ অন্যদেরকে আল্লাহর দিকে (ইবাদতে) আকৃষ্ট করতো। এমনও দেখা গিয়েছে পথভ্রষ্ট কোন লোককে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ইমাম যখন সালেহ্ ইবনে ওয়াসিফের কারাগারে বন্দী ছিলেন তৎকালীন খলিফা কারাধ্যক্ষ কে নির্দেশ দিয়েছিল যাতে সে ইমামের সাথে রূঢ় আচরণ করে ও কঠিন শাস্তি দেয়। এজন্য দু’জন নিকৃষ্ট জল্লাদ নিয়োজিত ছিল। কিন্তু তারা ইমামের সঙ্গ পেয়ে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে পরহেজগার হয়ে যায়।
কারাধ্যক্ষ জল্লাদদ্বয়কে ডেকে বলল : তোদের প্রতি ধিক্কার, এই বন্দীর সাথে কেমন আচরণ করেছিস?
তারা বললো : আমরা কি করব, যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে সারা রাত নামাজে মগ্ন থাকেন, এবং ইবাদত ব্যতীত অন্য কিছুই করেন না। যখনই আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত করতেন আমরা নিজেদের অজান্তেই কাঁপতে থাকতাম এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতাম …। (এরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ. ৩২৪)
মুলসমানদের সত্য পথ প্রদর্শন
ইবনে সাব্বাগ মালেকী ও আবু হাশেম জা’ফারী এর মত কয়েকজন প্রখ্যাত সুন্নি আলেম বর্ণনা করেন :
“…একবার সামাররায় কঠিন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। তৎকালীন খলিফা মো’তামেদ দেশবাসীকে ইসতেসকার নামাজ (বৃষ্টি কামনা করে যে নামাজ পড়া হয়) পড়ার জন্য আদেশ জারি করে। জনগণ পর পর তিন দিন নামাজ পড়ে দোয়া করা সত্ত্বেও বৃষ্টি হয় নি। অতঃপর চতুর্থদিনে খৃস্টানদের প্রধান পাদ্রী তার মাযহাবের লোকজনদের সাথে নিয়ে মরুভূমিতে গেলেন। তাদের মধ্যে এক সন্ন্যাসী ছিল যখনই হাত তুলে দোয়া করতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি হতো। সেদিনও ঐ সন্ন্যাসীদের দিয়ে দোয়া করালো এবং এত বৃষ্টি হলো যে, দেশবাসীর আর বৃষ্টির প্রয়োজন রইলো না। এই বিস্ময়কর ঘটনা দেখে মানুষের মনে সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিল এবং অনেক মুসলমান খৃস্টান ধর্মের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়লো। এ ঘটনা খলিফার কাছে একেবারে অপ্রীতিকর মনে হলো। খলিফা ইমাম আসকারী (আ.)-এর শরণাপন্ন হলো। ইমামকে কারাগার থেকে মুক্ত করে বলল :
“আপনার পূর্বপুরুষদের উম্মত গোমরাহ্ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এদেরকে ঠেকান।”
ইমাম বললেন : প্রধান পাদ্রী ও ঐ সন্ন্যাসীকে আগামীকাল মঙ্গলবার মরুভূমিতে আসতে বলো।
খলিফা বলল : আমাদের তো আর বৃষ্টির প্রয়োজন নেই। মরুভূমিতে গিয়ে কি হবে?
ইমাম বললেন : এ কারণে যে, ইনশাআল্লাহ্ এই সন্দেহের অবসান ঘটাবো।
খলিফা ইমামের কথা মত আদেশ জারি করে দিল। ইমাম নিজেও জনগণের সাথে মরুভূমিতে গেলেন। সন্ন্যাসী ও তার লোকজন হাত তুলে দোয়া শুরু করলো, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলো এবং বৃষ্টি এলো। ইমাম সন্ন্যাসীর হাত ধরে তার হাতে লুকায়িত বস্তুটি বের করে আনার আদেশ দিলেন। সন্ন্যাসীর আঙ্গুলের ফাঁকে কালো রংয়ের একটা মানব হাড় রাখা ছিল। ইমাম ঐ হাড়টি নিয়ে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিলেন এবং বললেন এখন তুমি বৃষ্টির জন্য দোয়া কর। সন্ন্যাসী এবারও দোয়া করতে লাগলো কিন্তু মেঘ সরে গিয়ে সূর্য স্পষ্ট হলো। মানুষের বিস্ময় ভেঙ্গে গেল। খলিফা ইমামকে জিজ্ঞেস করলো : এটা কিসের হাড়?
ইমাম : আল্লাহর কোন এক নবীর শরীরের হাড়। কোন এক নবীর সমাধিস্থল থেকে সে এটি সংগ্রহ করেছে এবং নবীদের শরীরের হাড় প্রকাশ পেলে অবশ্যই বৃষ্টি হবে।
খলিফা ইমামের প্রশংসা করলো এবং পরীক্ষা করে দেখলো তিনি যা বলেছেন তাই ঠিক …। (এহ্কাকুল হাক্ক, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৪৬৪)
ইরাকী দার্শনিককে দিক নির্দেশনা
বস্তুবাদী ইরাকী দার্শনিক ইসহাক কিন্দি বই লেখার উদ্যেগ নেয়। সে প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, কোরআনে বহু বৈপরীত্য বিদ্যমান। এজন্য জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লেখার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। একদা তার এক শিষ্য ইমামের সাক্ষাত লাভ করলে ইমাম জিজ্ঞেস করেন : তোমাদের মাঝে এমন কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নেই যে, তাকে এই অনর্থক কাজের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখবে ?
বলল : আমরা তার শিষ্য, কিভাবে সম্ভব আমরা তার কাজে বিরোধিতা করব!
ইমাম বললেন : আমি যা বলবো তার কাছে তা পৌঁছাতে পারবে ?
বললো : হ্যাঁ, পারবো।
ইমাম বললেন : তার কাছে যাও এবং তার সাথে বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্টতা সৃষ্টি কর, তার ঐ কাজে সহযোগিতা কর। অতঃপর তাকে এভাবে বল যে, আমার একটা প্রশ্ন আছে, আপনি অনুমতি দিলে তা ব্যক্ত করতে পারি। সে তোমাকে অনুমতি দিবে। অতঃপর তাকে বলবে : এমন কি হতে পারে না যে, মহান আল্লাহ্ যিনি পবিত্র কোরআনের প্রেরক, তার উদ্দেশ্য তুমি যা বুঝেছো তা থেকে ভিন্ন কিছু হবে। সে বলবে : হতে পারে। কারণ যদি সে তোমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে তবে তা বুঝতে পারবে। যখন এরূপ জবাব দিবে তখন জিজ্ঞেস কর : কিভাবে নিশ্চিত হলে যে, কোরআনের বিষয়ে তুমি যে ধারণা রাখ তাই সঠিক ? এমনও হতে পারে আল্লাহর উদ্দেশ্য এক রকম এবং কোরআনের শব্দসমূহ ও বাক্য বিন্যাস থেকে তুমি তার ভিন্ন অর্থ বুঝেছো।
ঐ লোকটি ইসহাক কিন্দির নিকট গেল এবং ইমামের নির্দেশিত পন্থায় তার সাথে সদাচরণ করলো। অতঃপর একসময় প্রশ্ন উত্থাপন করলো। কিন্দি তাকে প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করতে বলল। অতঃপর চিন্তায় মগ্ন হলো এবং অর্থ ও ব্যাকরণগত দৃষ্টিতে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করে বিষয়টি সম্ভব বলে স্বীকার করলো। অতঃপর তার শিষ্যকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো এই প্রশ্ন তুমি কোথা থেকে পেয়েছো? শিষ্য বলল : হঠাৎ করেই আমার মাথায় এসেছে ।
কিন্দি বলল : তুমি এবং তোমার মত লোকের মাথায় এমন প্রশ্ন আসতেই পারে না, সত্যি করে বল কে শিখিয়েছে তোমাকে ?
শিষ্য বলল : আবু মুহাম্মদ (ইমাম আসকারী) আমাকে এরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কিন্দি বলল : এতক্ষণে সত্য কথা বলেছো। এমন প্রশ্ন ঐ বংশের লোক ব্যতীত অন্য কারো চিন্তায় আসতে পারে না।
অতঃপর তার ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটলো এবং তার ঐ ভিত্তিহীন লেখাগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেললো। (মানাকেব, ইবনে শাহরে অশুব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২৫)