Press "Enter" to skip to content

ইমাম হোসাইন (আ.) এর কন্যা, ফাতিমা

এস, এ, এ

ফাতিমা বিনতে হুসাইন বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) হলেন ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কন্যা। তাঁর মা, উম্মে ইসহাক, তালহা বিন ওবায়দুল্লাহর কন্যা। ফাতেমা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বন্দী হন। তিনি কুফায় খুতবা দেন এবং কুফাবাসীর নিন্দা করেন। ইমাম বাকির (আ.)-এর হাদিস অনুসারে, তাঁর শাহাদাতের আগে, ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর ইমামতি আমানত এবং লিখিত উইল তাঁর কাছে অর্পণ করেছিলেন এবং পরে তিনি সেগুলি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-কে দিয়েছিলেন। তিনি তার পিতা এবং তার ভাই ইমাম সাজ্জাদ (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।

ফাতিমা উম্মে ইসহাক থেকে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কন্যা ছিলেন।[আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৯১, তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২১৪]

তার জন্মের সঠিক তারিখ সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কিছুই জানা যায়নি; কিন্তু যেহেতু তাঁর মা ছিলেন প্রথমে ইমাম হাসান (আ.)-এর স্ত্রী এবং তাঁর শাহাদাতের পর (৪৯ বা ৫০ হিজরি), তিনি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর স্ত্রী হন, তাঁর জন্ম ৫০ হিজরির পরে, তাই কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি ৫১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। [দানেশ নামেহ্ ইমামে হুসাইন (আ.), খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫১]

এটি কারণ ছিল যে ফাতিমাকে ইমাম হুসাইন (আ.)এর বড় কন্যা হিসেবে মনে করা হয়। [তারিখে তাবারি, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৬৪]

জানা গেছে যে ইমাম হোসাইন (আ.) ফাতিমাকে তাঁর দুই কন্যার (ফাতিমা ও সাকিনা) মধ্যে ফাতিমা বিনতে রাসুলুল্লাহর অনুরূপ বলেছেন। এটা সেই সময়ের ঘটনা যখন ইমাম হাসান (আ.)-এর পুত্র হাসান মুসান্না ফাতিমাকে বিবাহ করার জন্য ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে প্রস্তাব দেন।[আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫, মাকাতেলুত তালেবিন, পৃষ্ঠা ১২২] কারবালার ঘটনার পূর্বেই হাসান মুসান্নার সাথে তাঁর বিবাহ সংঘটিত হয়। [তারিখে দামেস্ক, খন্ড ৭০, পৃষ্ঠা ১৭, আল মাআরেফ, পৃষ্ঠা ২১৩, তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৭৩]

আশুরার মর্মান্তিক ঘটনার সময় ফাতিমা ও তার স্বামী হাসান মুসান্না কারবালায় উপস্থিত ছিলেন।[আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২১, ১২৫]

আশুরার দিনে হাসানে মুসান্না ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সাথে থেকে যুদ্ধ করেন অবশেষে তিনি  আহত ও বন্দী হন। তার মামা আসমা বিন খারেজে ফাযারি তাকে রক্ষা করেন। হাসানে মুসান্না কুফায় চিকিৎসা নেন এবং সুস্থ হয়ে মদীনায় ফিরে আসেন।[আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫, লাহুফ, পৃষ্ঠা ৬৩]

ফাতিমাকে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কুফা ও শামে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। [আল কামেল ফিত তারিখ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৬, আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২১]

তাঁর কাছ থেকে তাবুসমূহে এজিদ বাহিনীর হামলা এবং কারবালার বন্দীদের বন্দিত্বের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। [এমালি, পৃষ্ঠা ১৬৪, আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২১]

শামের দরবারে তাঁর ও ইয়াজিদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। [তারিখে উমাম ওয়াল মুলুক, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৬৪]

আহমাদ বিন আলী তাবারসি কুফাবাসীদের সাথে তার বিতর্কগুলো বর্ণনা করেছেন।[আল এহতেজাজ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭২৯]

ইমামতি আমানত স্থানান্তরের স্থান:

ইমাম বাকির (আ.)-এর একটি হাদিস অনুসারে, ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর শাহাদাতের আগে ফাতিমার কাছে তাঁর ইমামতি আমানত এবং লিখিত উইল অর্পণ করেছিলেন এবং পরে তিনি সেগুলি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। [বাসায়েরুদ দারজাত, পৃষ্ঠা ১৮৫, কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০৩]

হাদীসের বর্ণনা:

ফাতিমা ছিলেন তাবেঈন এবং হাদীস বর্ণনাকারীদের একজন। তিনি তার পিতা ইমাম হোসাইন (আ.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আসমা বিনতে উমাইস থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। [তারিখে দামেস্ক, খন্ড ৭০, পৃষ্ঠা ১০, তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৩৫, পৃষ্ঠা ২৫৪, ২৫৫]

তিনি হজরত ফাতিমা (সা.আ.) থেকে মুরসাল রূপে হাদীস বর্ণনা করেছেন বলে জানা যায়। অনুরূপভাবে তিনি তাঁর পিতা হুসাইন বিন আলী (আ.), তার ফুফু হযরত যায়নাব (আ.), তার ভাই ইমাম সাজ্জাদ (আ.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত আয়েশা, আসমা বিনতে উমাইস এবং বিলাল থেকে মুরসাল রূপে বর্ণনা করেছেন। [তারিখে দামেস্ক, খন্ড ৭০, পৃষ্ঠা ১০, তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৩৫, পৃষ্ঠা ২৫৪]

ফাতিমাকে বিশ্বস্ত এবং চতুর্থ শ্রেণীর বর্ণনাকারী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। [তাকরিবুত তাহযিব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৫৭]

ফাতিমা কুফায় বন্দী অবস্থায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণে তিনি কুফিয়ানদের কাছ থেকে ইমাম হোসাইনের আহলে বাইতের উপর আসা বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। খুতবার বিষয়বস্তু হল:

১. আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী (সাঃ) এর রেসালাতের স্বীকৃতি।

২. ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাত।

৩. কুফাবাসীদের সাহায্যের অনীহা এবং ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাত।

৪. আহলে বাইত (আ.)-এর মর্যাদা ও ফজিলত।

৫. কুফাবাসীদের প্রতি দোষারোপ করা।

৬. কুফাবাসীদের দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির প্রতিশ্রুতি। [আল এহতেজাজ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৪-১০৮]

হাসানে মুসান্নার শোকে শোকাহত:

কথিত আছে, হাসানে মুসান্নার মৃত্যুর পর ফাতিমা তার কবরে এক বছর শোক পালন করেন এবং তিনি দিনে রোজা রাখতেন এবং রাতে ইবাদত করতেন। [আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৬]

হাসানে মুসান্নার মৃত্যুর পর ফাতিমা আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উসমান ইবনে আফফানকে বিয়ে করেন। [তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৩৫, পৃষ্ঠা ২৫৬, মাকাতেলুত তালেবিন, পৃষ্ঠা ১৬৭] আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর মদিনার গভর্নর আবদুল রহমান ইবনে যাহাক ফাতিমাকে প্রস্তাব দেন, যা তিনি গ্রহণ করেননি। [তাবাকাতুল কুবরা, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৭৪]

ফাতিমার হাসানে মুসান্নার কাছ থেকে আব্দুল্লাহ, ইব্রাহিম, হাসান এবং জয়নাব নামে চারটি সন্তান ছিল। [তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৩৫, পৃষ্ঠা ২৫৬, লোবাবুল ইনসাব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৫]

ফাতিমার তার দ্বিতীয় স্বামী আবদুল্লাহ বিন আমর বিন ওসমানের কাছ থেকে তার তিনটি সন্তান ছিল যার নাম ছিল মুহাম্মদ দিবাজ, কাসিম এবং রুকিয়াহ।[তাহযিবুল কামাল, খন্ড ৩৫, পৃষ্ঠা ২৫৬]

ফাতিমার বেশিরভাগ সন্তান এবং নাতি-নাতনি। তিনি বনি আব্বাস খলিফার বিরুদ্ধে বিপ্লবী যুদ্ধে শহীদ বা কারারুদ্ধ হন। [তারিখে উমাম ওয়াল মুলুক, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৫৩৬]

মৃত্যু:

ইবনে জুযী তার তাজকিরে আল-খোয়াস নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কন্যা ফাতিমা ১১৭ হিজরির দিকে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। [তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃষ্ঠা ২৫১]

কিন্তু শামসুদ্দিন যাহাবী তার মৃত্যুর সাল ১১০ হিজরি উদ্ধৃত করেছেন। [তারিখুল ইসলাম, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪৪২]

এছাড়াও, কিছু ঐতিহাসিক তার মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করেন না যে, মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল নব্বই বছর। [সহীহ, ইবনে হেব্বান, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩০১]

অন্যান্য সূত্র অনুসারে, তিনি হিশাম বিন আব্দুল মালিকের (শাসনকাল: ১০৫-১২৫ হিজরি) খেলাফতকালে মারা যান। [তারিখে দামেস্ক, খন্ড ৭০, পৃষ্ঠা ১৭]

সন ১১৭ হিজরি মদীনায় ফাতিমাকে দাফন করা হয়। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে, সিরিয়ার বাবুস সাগির কবরস্থানে তাঁকে দাফনস্থ করা হয়েছে। [মিরাসে জাভেদান, পৃষ্ঠা ৮৭-১২৬]