ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ইসলামকে যেসব পন্থা ও কৌশলে জনগণের কাছে প্রচার করেছেন তার মধ্যে এই দোয়া এবং ইবাদতের সংস্কৃতি ছিল অন্যতম একটি মাধ্যম। তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বহু লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চিত্তাকর্ষক দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তাঁর সেইসব দোয়া সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া নামের একটি সংকলনে বিধৃত হয়েছে।
আল্লাহর অত্যধিক ইবাদত বন্দেগীর কারণে বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য এই মহান ইমাম জাইনুল আবেদীন বা ইবাদতকারীদের অলংকার উপাধি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ ও সিজদায় রত থাকতেন বলে তিনি সাজ্জাদ নামেও পরিচিত ছিলেন।
ইমাম সাজ্জাদ কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। দশই মহরমের সেই ভয়াবহ ঘটনার দিনে মারাত্মক অসুস্থ থাকায় তিন জিহাদে যোগ দিতে পারেন নি। ইয়াজিদের সেনারা তাকে হত্যা করতে গিয়েও তাঁর ফুফু জাইনাব (সা.)’র প্রতিরোধের মুখে এই মহান ইমামকে জীবিত রাখতে বাধ্য হয়।
পরবর্তীকালেও আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। আসলে মহান আল্লাহই এভাবে তাঁকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়াসহ কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের পরবর্তী অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা ও এ বিপ্লবের প্রকৃত বাণী মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে জীবিত রেখেছিলেন।
কারবালার ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন ও তাঁর বোন হযরত জয়নাব (সা.) যদি জীবিত না থাকতেন তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো।
উমাইয়া শাসকরা তখন এটাও প্রচার করতো যে ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াজিদের মতো তাগুতি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছিলেন। আর এর ফলে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবিচারের ব্যাপারে আপোসকামী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রও সফল হতো।
কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইমাম সাজ্জাদ ও জয়নাব (সা.) কারবালা থেকে বন্দী অবস্থায় কুফা ও দামেস্কে যাবার পথেই স্বল্প সময়ে জনগণকে জানিয়ে দেন যে কারবালায় প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল এবং কারা ছিল ইসলামের জন্যে নিবেদিত-প্রাণ ও কারা ছিল ইসলামের লেবাসধারী জালেম শাসক মাত্র।
কারবালা বিপ্লবের প্রকৃত ঘটনা ও শিক্ষা প্রচারের পাশাপাশি ইসলাম বিরোধী নানা চিন্তাধারার মোকাবিলায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতেন ইমাম সাজ্জাদ।