মুহাম্মাদ মুনীর হুসাইন খান
দ্বিতীয় পর্ব:
যারা ছিলেন হযরত আলী আঃ ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর আহলুল বাইতের (আঃ)খাঁটি শিয়া (অনুসারী) তাঁরা মুষ্ঠিমেয় ও নগণ্য সংখ্যক হওয়া সত্ত্বেও কখনোই পৃষ্ঠ প্রদর্শন ও বিশ্বাসঘাতকতা (খিয়ানত) করেন নি হযরত আলী (আঃ )এবং রাসূলুল্লাহ (সা:)- আহলুল বাইতের (আঃ) সাথে । শুধু তাই নয় , ইমাম হুসাইন (আঃ)- এর হক্কানীয়াত ( সত্যতা ও খিলাফতের প্রকৃত হকদার হওয়া) এবং মাযলূমীয়াতের ( মযলূম ও অত্যাচারিত হওয়া ) বিষয়টি স্পষ্ট
প্রমাণিত হয়ে গেলে হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহীসহ কতিপয় ব্যক্তি
উমর ইবনে সাদের নেতৃত্বাধীন ইয়াযীদী সেনাবাহিনী ত্যাগ করে ইমাম হুসাইনের (আঃ) শিবিরে যোগদান করেন এবং ইমাম হুসাইন আঃ ও তাঁর আহলুল বাইতের আঃ) পক্ষে যুদ্ধ করে শাহাদাৎ বরণ করে সেদিন যারা নিরপেক্ষ ও নির্লিপ্ত থেকে মযলূম ইমাম হুসাইন আঃ কে সাহায্য করে নি তাদের এতদসংক্রান্ত অজুহাত পেশ করার পথ চিরতরে রুদ্ধ ও বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ সকল মুসলিম উম্মাহর সেদিন অবশ্য কর্তব্য ও দায়িত্ব ছিল ইমাম হুসাইন আঃ কে সাহায্য এবং তাঁর পক্ষে ও ইয়াযীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা না চুপচাপ বসে থাকা ও বলা: আমরা নিরপেক্ষ না ইয়াযীদের পক্ষে না হুসাইনের পক্ষে । আর তাদের নিরপেক্ষ ও নির্লিপ্ত থাকা প্রকৃত প্রস্তাবে ইয়াযীদের পক্ষেই গেছে । কারণ এর ফলে ইমাম হুসাইন (আঃ) ইয়াযীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য ও যোদ্ধা পান নি ; আর এটা সুস্পষ্ট যে সেদিন আপামর জনগণ এ ধরণের নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে আসলে সত্য ও ন্যায়ের ইমাম (“`এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই এবং কারো সন্দেহ পোষণ করাও অনচিৎ , কারণ ইমাম হুসাইন (আঃ) মহানবী (সা: )হতে এবং মহানবী (সা:)ও ইমাম হুসাইন (আঃ) হতে দ্র্ঃ মহানবী (সা:) সহীহ প্রতিষ্ঠিত হাদীসে বলেছেন: আমার হতে হুসাইন এবং আমি হুসাইন হতে ; যে হুসাইনকে ভালোবাসে মহান আল্লাহ তাকে ভালোবাসুক ; হুসাইন আমার একজন দৌহিত্র আল-মুস্তাদরাক আলাস সাহীহাইন ,খ:৩, পৃ: ৩৮৭, হাদীস নং ৪৮৮৩ এবং সহীহ মুতাওয়াতির হাদীস অনুসারে ইমাম হাসান আঃ ও ইমাম হুসাইন আঃ বেহেশতের যুবকদের নেতা )“`অর্থাৎ ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর বিরোধিতাই করেছে । আর নিরপেক্ষ থাকার কথা ফাকা বুলি ছাড়া আর কিছুই নয় । কারণ এরা কি এর আগে ইয়াযীদের হাতে বাইআত করে নি? আর এজন্যেই তো ইমাম হুসাইনের (আঃ) সাথে কেবল মুষ্ঠিমেয় লোক ছিল । তার মানে তদানীন্তন সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক আসলে নিরপেক্ষ ছিল না ; তারা ছিল বেহেশতের যুবকদের নেতাকে ত্যাগ করে বিভ্রান্ত ইয়াযীদ ও বনি উমাইয়ার প্রতি অনুগত । অথচ এই ইয়াযীদ , মারওয়ান তথা বনী উমাইয়া সম্পর্কে মহানবী (সা:) বলেছেন : “`আমার উম্মতের ধ্বংস হবে কুরাইশ বংশীয় (তরলমতির) যুবকদের হাতে ( সহীহ বুখারী , পৃ: ৮৮১, হাদীস নং ৩৬০৫)“` সহীহ বুখারীর ৩৬০৪ নং হাদীসে মহানবী (সা:) বলেছেন: “`জনগণ (উম্মত)কে ধ্বংস করবে কুরাইশদের এই মহল্লা ( বনী উমাইয়ার মহল্লা) । তখন উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ জিজ্ঞেস করল: আপনি
আমাদেরকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন? মহানবী (সা:) বললেন: যদি জনগণ তাদেরকে বর্জন করত অর্থাৎ তাদের থেকে পৃথক ও দূরে থাকত ।“` আর নি: সন্দেহে যখন নবী দৌহিত্র বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন আঃ কে সাহাবী সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাসের পুত্র উমর ইবনে সাদের নেতৃত্বে ইয়াযীদ ও ইবনে যিয়াদের সেনাবাহিনী কারবালায় হত্যা ও শহীদ করল সমগ্র উম্মাহর চোখের সামনে তখন রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদীস মোতাবেক উম্মত তো ধ্বংস প্রাপ্ত ই হয়ে গেছে । এখানে ধ্বংসের অর্থ কী? অর্থাৎ তাদের আখেরাত বরবাদ হওয়া ; তারা যখন বেহেশতের যুবকদের নেতাকে সাহায্য করল না এবং চোখ দিয়ে দেখল যে ইমাম হুসাইন আঃ কে হত্যা ও শহীদ করল ইয়াযীদ ও ইবনে যিয়াদের সেনাবাহিনী অল্প কিছু সংখ্যক ব্যতীত সবাই নির্বিকার রইল তখন ~সেই নির্বিকার জনতা ও উম্মত কোন্ বেহেশতে যেতে চায়~ ? ঐ বেহেশতে কি যার যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইন (আঃ) ও তাঁর অগ্রজ ইমাম হাসান হবেন না (নাঊযু বিল্লাহ) ? এমন বেহেশত বাস্তবে আছে কি ? অবস্থার কতটা অবনতি হয়েছিল যে ইমাম হুসাইন আঃ কে হত্যা করার পর ইয়াযীদের জঘন্য বিচ্যুতি প্রমাণিত হয়ে যাওয়ায় মদীনাবাসীরা ইয়াযীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বাইআত ভঙ্গ করলে _সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর বাইআত ভঙ্গকারী মদীনাবাসীদেরকে গাদের ( বিদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক গাদ্দার ) বলে অভিহিত করে তাদের সাথে তার নিজের সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন!!!! (দ্র্ঃ সহীহ বুখারী , পৃ: ১৭৮৫ , হাদীস নং ৭১১১)।_ অথচ তিনি মুসলমান মুসলমান বিরোধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে বেঁচে থাকার অজুহাত দেখিয়ে হযরত আলীর (আঃ) হাতে বাইআত করেন নি । কিন্তু ইয়াযীদের হাতেআল্লাহ ও রাসূলের (সা:)নামে তিনি ঠিকই বাইআত করেছিলেন !!!! আর তাঁর দৃষ্টিতে ইমাম হুসাইন (আঃ) নাঊযুবিল্লাহ বিদ্রোহী ও বাগী বলে গণ্য হলে আশ্চর্যের কিছু নেই । তাই দু:খজনক হলেও সত্য যে তখনকার মুসলিম উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের এ ধরণের বিচ্যুত দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব ইমাম হুসাইন আঃ-এর শাহাদাতের পথ ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।
তাই আজ যারা বলে যে আমরা তো আর ইমাম হুসাইন আঃ কে হত্যা করি নি আমরা কেন তাঁর জন্য শোক করব? তাদেরকে প্রশ্ন করতে হয় : আপনারা কি এ জঘন্য অপরাধের জন্য দু:খিত না
আনন্দিত ? যদি তারা বলে যে তারা দু:খিত তাহলে তাদেরকে বলতে হয় : শোক প্রকাশে কেন আপনাদের আপত্তি? আর যদি তারা বলে : তারা আনন্দিত ও সন্তুষ্ট তাহলে তাদের বলতে হয় :
আপনারা ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়াপন্থী এবং ইমাম হুসাইন (আঃ) ও মহানবীর (সা:) আহলুল বাইত(আঃ)-এর বিদ্বেষ পোষণকারী (নাসিবী) যাদের হাশর নশর হবে ইয়াযীদ ও মহানবী (সা:)-এর শত্রুদের সাথে । পরকালে এদের ঠিকানা ও বাসস্থান বেহেশত হবে না । কারণ
বেহেশতের যুবকদের নেতাদেরকে এরা বিশ্বাস করে না ও মানে না ; বরং এরা তাঁদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ ও তাঁদেরকে হত্যা করেছিল বা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। “`মহানবী (সা: )সহীহ হাদীসে বলেছেন: যে এ দু’জনকে (ইমাম হাসান আঃ ও ইমাম হুসাইনের আঃ) ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে এবং যে তাঁদেরকে ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমাকেই ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করে ( দ্র্ঃ আল- মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন , খ: ৩, পৃ: ৩৮১, হাদীস নং ৪৮৬০)।“`
এ বছর (২০১৯) যারা আশুরার দিবসকে ফেরআউনের হাত থেকে হযরত মূসা (আঃ )ও বনী ইসরাইলের মুক্তি পাওয়ার দিবস হিসেবে পালন করার আহ্বান জানিয়েছিল তারা আসলে ইমাম হুসাইনের (আঃ )শাহাদাতের গুরুত্ব খাটো করার জন্যই এ ধরণের উদ্ভট উদ্যোগ নিয়েছে এবং এর পিছনে ইসলামের শত্রুদের বিশেষ করে জায়নবাদী ইসরাইলের হাত রয়েছে । আর বর্তমানে সৌদি সহ প্রতিক্রিয়াশীল আরব রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের দহরম মহরম কারো অজানা নয় । আর আশুরার দিন ইমাম হুসাইনের (আঃ) শাহাদাত দিবস পালন না করে বনী ইসরাইলের নাজাত বা মুক্তি দিবস পালন করার অর্থই ফিলিস্তিন জবর দখলকারী জায়নবাদী ইসরাইলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের কাছে সহনীয় ও গ্রহনযোগ্য করে তোলা যা সত্যি বিপজ্জনক । ~আশুরার দিন ইমাম হুসাইনের (আঃ) শাহাদাতের শোক দিবস হিসেবে পালনকে বিদআত বলে গণ্য করার পর এদের কাছে এ দিবস ( আশুরার দিবস ) বনী ইসরাইলের নাজাত দিবস পালন কিভাবে জায়েয হয় এবং বিদআত বলে গণ্য হয় না ?!!~ যদি ইমাম হুসাইনের আঃ জন্য শোক প্রকাশ বিদআত ও নাজায়েজ হয় তাহলে এ দিনে কথিত কতিপয় খুশি ও নাজাত (মুক্তি) প্রাপ্তির ঘটনায় আনন্দ প্রকাশ ও আনন্দানুষ্ঠান উদযাপন ও নিঃসন্দেহে বিদআত ও নাজায়েজ হবে । আর ইমাম হুসাইন আঃ-এর শাহাদাতের ঘটনা ঐতিহাসিক ও মুতাওয়াতিরভাবে অর্থাৎ অকাট্য সূত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং আশুরার দিবসে কথিত পূর্ববর্তী উম্মাহর ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার রেওয়ায়ত ও হাদীস দূর্বল (যাঈফ) , অনির্ভর্যোগ্য ও খবরে ওয়াহেদ সূত্রে বর্ণিত এবং ইমাম হুসাইনের (আঃ) শাহাদাৎ ও মহানবীর আহলুল বাইতের (আঃ) -এর উপর জুলুমের ঘটনার গুরুত্ব কমানোর জন্য ও মুসলিম উম্মাহ যাতে এ ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বনী উমাইয়া বিদ্বেষী না হয় সেজন্য বনী উমাইয়া প্রশাসন ও খিলাফত বেতনভুক দরবারী আলেম ও রাবীদের মাধ্যমে এ সব হাদীস মহানবী (সা:)-এর নামে জাল করে মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচার করেছে ও চালিয়ে দিয়েছে । আর এভাবে মুসলিম উম্মাহকে ইমাম হুসাইন (আঃ) ও মহানবীর (সা:) আহলুল বাইতের (আঃ) খাটি ইসলামী আদর্শ ও সান্নিধ্য থেকে দূরে সরিয়ে ও বিভ্রান্তির আঁধারের মধ্যে রেখে তাদেরকে ধ্বংস করার পথে নিয়ে গেছে বনী উমাইয়া যা প্রাগুক্ত সহীহ বুখারীর
কতিপয় হাদীসেও স্পষ্ট উল্লেখিত হয়েছে। আর মুসলিম উম্মাহর এক বিরাট অংশ এ সব অনির্ভরযোগ্য , দুর্বল ও জাল হাদীসের বেড়াজাল ও ঘূর্ণি পাকে পড়ে হাবুডুবু ও ঘুরপাক খাচ্ছে । তাই আবার আমার উম্মতের ধ্বংস কুরাইশ বংশীয় যুবকদের (বনী উমাইয়া: বনী সুফিয়ান ও বনী মারওয়ান ) হাতে । —– এ সব হাদীসের তাৎপর্য কারবালায় ইমাম হুসাইন আঃ ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের শাহাদাতের আলোকে উপলব্ধি ও মূল্যায়ন করার সময় এসেছে যদিও নেকড়ে ও হায়েনা সদৃশ বনী উমাইয়ার নিশি তস্কর ও মানস সন্তানেরা নিষ্ক্রিয় বসে নেই । তাই আমাদের সবার উচিত এদের চিন্তা ভাবনা ও আকীদা বিশ্বাসের স্বরূপ যথাযথ উপলব্ধি করে এদের ব্যাপারে সাবধান হওয়া ও এদের থেকে দূরে থাকা ।
আহলুল বাইতের ( আঃ) অনুসারী রা যারা মহানবীর আহলুল বাইতের (আঃ) মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইরান, ইরাক, লেবানন, সৌদি আরব ও পারস্যোপসাগরীয় আরব দেশ সমুহ ( কাতার , কুয়েত , বাহরাইন, আরব আমিরাত , ওমান) , ইয়েমেন , তুরস্ক , আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র , আফগানিস্তান , পাকিস্তান , ভারত , নাইজেরিয়া এবং বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশে ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর শাহাদাতের স্মরণে শোক পালন করেন তারা আসলে আহলুল বাইতের (আঃ) আদর্শানুসারী মাযহাবী শিয়া ( অনুসারী অর্থাৎ ideological shias) এবং তারা কূফার তথাকথিত সুবিধাবাদী রাজনৈতিক শিয়া যারা ইমাম হুসাইনকে (আঃ) সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাহায্য করে নি তাদের থেকে নিজেদেরকে ভিন্ন ও পৃথক মনে এবং তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে; আর ইমাম হুসাইনের (আঃ)
একনিষ্ঠ , নিবেদিত , বিশ্বস্ত ,মুখলিস শিয়াদের ( যাদের একাংশ কারবালায় ইমামের সাথে এবং একাংশ কারবালার আগে ও পরে শহীদ হয়েছিলেন তাদের) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইমাম হুসাইনের আদর্শ সমুন্নত রাখতে ইমাম হুসাইনের শাহাদাত স্মরণে শোক পালন এবং ইমাম হুসাইনের (আঃ) হত্যাকারী ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে
ঈমানী ক্ষোভ , অসন্তোষ ও বিষোদগার ব্যক্ত করেন যাদের ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা:) ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ এবং যাদেরকে মুসলিম উম্মাহর ধ্বংসকারী বলে পরিচিত করেছেন । আহলুল বাইতের (আঃ) বর্তমান শিয়ারা যে আহলুল বাইতের (আঃ) খাটি একনিষ্ঠ মুখলিস শিয়াদের ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ বা সম্প্রসারিত রূপ ( ( Historical extension of the pure faithful mukhlis Shias of Ahlul Bait (A.S.) )) এতে কোনো সন্দেহ নেই । আর এর অন্যথা হলে তা হবে সত্যের অপলাপ । কারণ তাহলে বলতে হবে যে বর্তমান কালের অধিকাংশ মুসলমান যাদেরকে ইমাম হুসাইনের আঃ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় , নিস্পৃহ ও নিরপেক্ষ রাখা ও দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তাহলে তারা কি ইমাম হুসাইনের আঃ যুগের নিষ্ক্রিয় , নিস্পৃহ ও নিরপেক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান যারা ইমাম হুসাইনের আঃ পক্ষাবলম্বন করে নি ও তাঁর সাহায্যার্থে অগ্রসর হয় নি তাদের ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ বা সম্প্রসা রিত রূপ বলে বিবেচিত হবে ?
তবে আজ যারা ইমাম হুসাইনের (আঃ) ব্যাপারে নিস্পৃহ , নিরপেক্ষ নির্লিপ্ত ও উদাসীন থাকে বা থাকবে তারা ইমাম হুসাইনের (আঃ) এর যুগের সেই সব নির্লিপ্ত , নিস্পৃহ , নিরপেক্ষ ও উদাসীন জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য যাদের এ ধরণের পদক্ষেপ উম্মাহ ধ্বংস কারী ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়ার পক্ষে ও ইমাম হুসাইন আঃ-এর বিপক্ষে গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তা বেহেশতের যুবকদের নেতার শাহাদাৎ বরণে ভূমিকা ও প্রভাব রেখেছিল ।আর ইসলামের দৃষ্টিতে
নিরপেক্ষ থাকা সম্পূর্ণ অর্থহীন , অবাস্তব এবং সত্য পথ থেকে বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছুই নয় । *হয় সত্যের পক্ষে মহান আল্লাহর ওয়ালীর পক্ষে না হয় সত্যের বিপক্ষে মিথ্যার পক্ষে মহান আল্লাহর শত্রুর পক্ষে থাকতেই হবে এদুভয়ের মাঝামাঝি কোনো পথ নেই ।* _*হয় আল্লাহর সেনা বা জুনূদুর রহমানের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে না হয় জুনূদুশ শয়তানের ( শয়তানের সৈনিকদের) অন্তর্ভুক্ত হতে হবে । আউলিয়া উল্লাহর (আল্লাহর বন্ধু দের) সমর্থক এবং আউলিয়াউত তাগূতের ( তাগূত শয়তানের মিত্রদের) বিরোধী হতে হবে ।*_ এটাই হচ্ছে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা মহানবীর (সা:) শিক্ষা ও আদর্শ । এখন সবার কাছে প্রশ্ন : ইমাম হুসাইন (আঃ) যিনি বেহেশতের যুবকদের নেতা তিনি কি ওয়ালীউল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু) এবং ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়া কি আল্লাহর শত্রু , তাগূত ও ওয়ালীউশ শয়তান ( শয়তানের মিত্র) নয় ?! আজ যারা ইমাম হুসাইনের ( আঃ) সমর্থক , তাঁর আদর্শের অনুসারী ,তাঁর জন্য শোক প্রকাশ কারী এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম রত তারা কি মহান আল্লাহর বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত , হিযবুল্লাহ ( আল্লাহর দল)এবং জুনূদুল্লাহর ( আল্লাহ পাকের সৈনিকদের) অন্তর্ভুক্ত নয় ? আর আজ যারা পাপিষ্ঠ পাপাত্মা লাঈন মালঊন (অভিশপ্ত) ইয়াযীদ এবং উম্মাহ ধ্বংস কারী বিষবৃক্ষতূল্য বনী উমাইয়ার সমর্থক , তাদেরকে (ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়াকে) ইমাম হুসাইনের (আঃ) হত্যার দায় দায়িত্ব থেকে বাঁচানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেই সাথে এ যুগের ইয়াযীদ , শিমার , ইবনে যিয়াদ ও উমর ইবনে সাদ , ফেরাউন , হামান , শাদ্দাদ , নমরূদের ( পাশ্চাত্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ,ইসরাইল ইত্যাদি)হাতে মুসলিম উম্মাহর সর্বস্ব তুলে দিচ্ছে এবং
মুসলিম উম্মাহর অশেষ দুর্ভোগ ও দুর্দশার কারণ হচ্ছে তারা কি মহান আল্লাহর শত্রু , তাগূতের মিত্র , হিযবুশ শয়তান ( শয়তানের দল) , শয়তানের সৈনিক ( জুনূদুশ শয়তান) বলে গণ্য হবে না ?!! ।“`এখন সময় এসেছে ভাবার ও চিন্তা করার । তাই চিন্তা করুন ও ভাবুন হে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিরা !!!
فَاعْتَبِرُوْا يَا أُوْلِي الْأَبْصَارِ .