মোঃ তুরাব রসুল
“তোমাদের ওলি(পৃষ্ঠপোষক, অভিভাবক)তো শুধু মাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা) ও মুমিনবৃন্দ যারা সলাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায়”।( মায়েদা আ নং-৫৫)
উল্লেখিত আয়াতটি যদি আমরা পবিত্র হাদিসের আলোকে পর্যালোচনা করি তাহলে স্পষ্টভাবে হযরত আলী(আ)এর বেলায়েতের কথাই বর্ণিত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয। শুধু মাত্র হিংসাপরায়ণ ও মাঝহাবী একগুঁয়েমী সম্প্রদায়গণই তা অস্বীকার করে।
উল্লেখিত আয়াতের তাফসির হিসাবে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে যে হাদিসটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবদিক থেকে পরিপূর্ণ যা আহলে সুন্নতের বিখ্যাত তাফসিরকারক ফকরে রাজী(র) তাঁর তাফসিরে কবিরে হযরত আবুযার গিফফারী(রা)থেকে বর্ণনা করেছেনঃ
একদা রাসুল (সা)এর ইমামতিতে যোহরের নামাজ আদায় করেছিলাম,অতঃপর একজন অভাবী মসজিদে প্রবেশ করে সাহায্য কামনা করল কিন্তু কেউই তাকে কিছু দিলনা, অতঃপর অভাবী লোকটি তার দুহাত আকাশের দিকে উত্তোলন করে বললঃ ” হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থেকো আমি তোমার রাসুলের(সা) মসজিদে এসে সাহায্য চাইলাম কেউই আমাকে সাহায্য করলো না” আলী(আ) তখন নামাজের(মুস্তাহাব) রুকুতে ছিলেন সে তাঁর ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলটি অভাবীর দিকে ইশারা করল ও সেখানে একটি আংটি ছিল। অভাবী লোকটি এসে আংটিটি নিয়ে চলে গেল। এ ঘটনাটি নাবী(সা) এর সামনেই ঘটল। অতঃপর নাবী(সা) বললেনঃ হে আল্লাহ আমার ভাই মুসা(আ) তোমার কাছে আবেদন করেছিল “হে আমার প্রভু আমার বক্ষ স্ফীত কর,আমার কাজকে আমার জন্য সহজ করে দাও। আমার জিহবার জড়তাকে কাটিয়ে দাও,যাতে মানুষ আমার কথাকে বুঝতে পারে। আমার পরিবার থেকে একজনকে আমার উজির বানিয়ে দাও। আমার ভাই হারুনকে এ পদে মনোনীত কর, তাঁর দ্বারা আমার পিঠকে মজবুত কর,তাকে আমার কাজে অংশীদার বানিয়ে দাও ” (সুরা তোয়াহা আ নং-২৫-৩২) অতঃপর তুমি তার এ আবেদন কবুল করে কোরআনে বলেছোঃ খুব শীঘ্রই তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার বাহুকে মজবুত করব। ও তোমার জন্য রাজত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করব। হে আল্লাহ আমি তোমার নবী ও তোমারই মনোনীত, আমার বক্ষকে স্ফীত কর, আমার কাজকে সহজ করে দাও, আলীকে এ পদে মনোনীত কর।তাঁর দ্বারা আমার পিঠকে মজবুত কর।
আবুজার (রা) বলেনঃ আল্লাহর শপথ, তখনও রাসুলুল্লাহ(সা) তাঁর কথা শেষ করেনি জিবরাইল(আ) অবতরণ করলেন এবং আয়াতটি রাসুলুল্লাহর(সা) কাছে পাঠ করলেন।(এছাড়া হাদিসবেত্তা বালখীও মুসনাদে আহমাদের সূত্রে হদিসটি নকল করেছেন)
উল্লেখিত সুরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ ও রাসুলের(সা) পরে যে ইমাম আলী (আ) মুমিনদের অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, নেতা তথা ওলী তা আহলে সুন্নতের হাদিস গ্রন্থে চব্বিশটি(২৪) হাদিস বর্ণিত হয়েছে (গায়াতুল মারাম,মরহুম মুহাদ্দিস বাহরানী)
এছাড়া তাফসিরে তাবারী, তাফসিরে আসবাব উন নযুল, নরুল আবসার, সাওয়াকে মুহারিক,তাফসিরে ইবনে কাসির যা আল্লামা আমিনী তাঁর বিখ্যাত কিতাব “আল গাদিরে” আহলে সুন্নতের ২০টি সূত্র উল্লেখিত আয়াতের আলোচিত বিষয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম আলী (আ) এর বেলায়েতের পক্ষে বর্ণিত হাদিস গুলো দশজন বিখ্যাত সাহাবী(রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে।তাঁরা হলেনঃ
১। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী ২। ইবনে আব্বাস ৩। আম্মার ইয়াসির ৪। আনাস ইবনে মালেক ৫। আবুজার গিফফারী ৬। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ৭। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ৮। সালামাত ইবনে কহিল ৯। আবদুল্লাহ ইবনে গালেব ১০। আকবাত ইবনে হাকিম।
এছাড়া ইমাম আলী(আ) এ আয়াতের শানে নযুল সম্পর্কে নিজের বেলায়েতের তথা খিলাফতের পক্ষে হাদিসের মাধ্যমে যুক্তি পেশ করেছেন।
ইমাম আলী(আ)এর বেলায়েতের পক্ষে বর্ণিত হাদিসসমূহ মুতাওাতির পর্যায়ের। মুতাওয়াতির হাদিস তাকেই বলা হয় যা এত বেশি পরিমাণে বর্ণিত ও পুনরাবৃত্তি হয়েছে যার ফলে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে সে হাদিসের মূল বিষয়বস্ত সত্য ও অবধারিত এবং সে হাদিসের সনদ পর্যালোচনা করার প্রয়োজন পড়ে না।
অতএব সুরা মায়েদার ৫৫নং আয়াত ও মুতাওয়াতির হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে ইমাম আলী (আ) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের(সা) পরে সকল মুমিন মুসলমানগণের অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক তথা ওলি অর্থাৎ বেলায়েতের অধিকারী।
ইমাম আলী (আ) এর বেলায়েতের পক্ষে আর একটি হাদিস উল্লেখ করা যথেষ্ট বলে মনে করছি।
হাদিসে হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্হে ইবনে আব্বাস(রা) হতে বর্ণনা করেছেন যেখানে আলী(আ) এর দশটি বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে নবী(সা) আলী( আ) কে বলেছেন ” আমার পর তুমি সকল মুমিনের অভিভাক হবে।
শান্তি বর্ষিত হোক তাদের প্রতি যারা সত্যকে গ্রহণ করে।

বেলায়াতে আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)
More from সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টিMore posts in সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি »