Press "Enter" to skip to content

মুবাহিলা কি ও কাকে বলে?

লেখক ও গবেষক- মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ রুকুন উদ্দীন ক্বাদরী ।

মুবাহিলা এর আয়াত পাক সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৫৯

إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ

অর্থঃ নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাকের নিকট হযরত ঈসা (আঃ) এঁর দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদম (আঃ) এঁর মতো। তাঁকে তোরাব/মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাঁকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৬০

ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْمُمْتَرِينَ

অর্থঃ যা আপনার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৬১

فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَٰذِبِينَ

অর্থঃ অতঃপর আপনার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে আপনার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বলুন-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের কে এবং তোমরা তোমাদের পুত্রদের কে এবং আমরা আমাদের স্ত্রীদের কে ও তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কে এবং আমরা আমাদের (নফস বা আত্না) নিজেদের কে ও তোমরা তোমাদের নিজেদের কে আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী।

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৬২

إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلْقَصَصُ ٱلْحَقُّ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا ٱللَّهُ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ

অর্থঃ নিঃসন্দেহে এটাই হলো সত্য ভাষণ। আর এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহ; তিনিই হলেন পরাক্রমশালী মহাপ্রাজ্ঞ।

১৪৩১ চন্দ্র-বছর আগে নবম হিজরির এই দিনে তথা ২৪ শে জ্বিলহজ্ব মদীনায় দোজাহানের বাদশাহ ইমামুল আম্বিয়া আখেরি নবি আল্লাহ্‌র হাবিব তাজেদারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (দঃ) ও নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলের মধ্যে ঐতিহাসিক ‘মুবাহিলা’ হওয়ার কথা ছিল।

মুবাহিলা কাকে বলে?

মুবাহিলা আরবী শব্দ বাহল بهل থেকে নেয়া হয়েছে। উট যখন বাচ্চা প্রসব করে তখন তার স্তনকে বেঁধে রাখা হয় যাতে তার বাচ্চা সব দুধ খেয়ে ফেলতে না পারে এবং উটের মালিকের জন্য কিছু দুধ অবশিষ্ট থাকে। আবার কখনো কখনো সে বাঁধন ছেড়ে দেয়া হয় যাতে বাচ্চা তার ইচ্ছেমত দুধ পান করতে পারে। আবার উটের এই দ্বিতীয় অবস্থাকে ابل باهل বলা হয়, অর্থ হলঃ এমন একটা উট যার দুধ তার বাচ্চার জন্যই স্বাধীনভাবে রাখা হয়েছে। যাতে বাচ্চা তার ইচ্ছে মত দুধ পান করতে পারে।

পারিভাষিক অর্থে তা ভিন্ন অর্থ প্রদান করে আর তা হলঃ দুইজন বা দুই দল লোক যখন যুক্তিযুক্ত দলিলাদির ভিত্তিতে বিতর্ক করে বিপক্ষ দলকে পরাজিত করতে পারেনা এ অবস্থায় দুই পক্ষই অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অভিসম্পাত বর্ষণ করে বলে থাকেঃ যদি আমি সত্য পথে থেকে থাকি এবং তুমি মিথ্যা পথে তাহলে মহান আল্লাহ্‌র আযাব তোমার উপর বর্ষিত হোক। অপর পক্ষও ঠিক একই বাক্য বলে থাকে। আর এ কাজেকেই নির্দিষ্ট শর্তাসাপেক্ষে মুবাহিলা বলা হয়। সুউচ্চ মর্যাদার কথা প্রমাণিত হয়। আর এ থেকেই আলী (আঃ) এঁর বিলায়াত, ইমামত, খিলাফাত ও সালতানাতের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।

‘মুবাহিলা’ বলতে মিথ্যাবাদী কে তা প্রমাণের লক্ষ্যে মিথ্যাবাদীর উপর মহান আল্লাহ পাকের অভিশাপ বর্ষণের জন্য দোয়া বা প্রার্থনা করাকে বোঝায়। পবিত্র আল-কুরআনের সুরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৬১

فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَٰذِبِينَ

অর্থঃ অতঃপর আপনার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে আপনার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বলুন-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের কে এবং তোমরা তোমাদের পুত্রদের কে এবং আমরা আমাদের স্ত্রীদের কে ও তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কে এবং আমরা আমাদের নিজেদের কে ও তোমরা তোমাদের নিজেদের কে আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী।

এই ঘটনাটি ঘটেছিল খ্রিস্টানদের সঙ্গে তিন দিন ধরে বিতর্ক চলার পর। হুজুর পাক (দঃ) মুখে মানুষের সঙ্গে সাদৃশ্যহীন মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে অকাট্য যুক্তি (হযরত আদম-(আঃ) এঁর  উদাহরণ সহ) শোনার পরও নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধিরা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বা পুত্র-আল্লাহ বলার মত অদ্ভুত বিশ্বাসের উপর অবিচল ছিল এবং হুজুর পাক (দঃ) কে সত্য নবী হিসেবে মানতে অস্বীকার করছিল। (খ্রিস্টান পাদ্রিরা এ বিতর্কের সময় বলছিল যে হযরত ঈসা নবী-(আঃ) যেহেতু পিতা ছাড়াই জন্ম নিয়েছেন তাই তিনি আসলে আল্লাহর পুত্র। জবাবে মহান আল্লাহর রাসূল-(দঃ) বলেছিলেন, আদম-(আঃ) তো পিতা ও মাতা ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন তাহলে তো আল্লাহর পুত্র হওয়ার সম্ভাবনা-নাউজুবিল্লাহ- তারই বেশি হওয়ার কথা ছিল!)

এ অবস্থায় হুজুর পাক (দঃ) মুবাহিলার মতো চ্যালেঞ্জ জানান। অর্থাৎ যাহারা মিথ্যাবাদী তাদের ধ্বংসের জন্য উভয় পক্ষ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাবে। খ্রিস্টান পাদ্রিরা বেশ সাহস দেখিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মেনে নেয়। এ অবস্থায় নাজেল হয় পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৬১

فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَٰذِبِينَ

যেখানে মহান আল্লাহ পাক উভয় পক্ষ কে তাদের নারী, পুত্র এবং শিশু সন্তানসহ শহরের বাইরে একটি ময়দানে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেন।

পরের দিন হুজুর পাক (দঃ)

শান্তচিত্তে ও অবিচল অবস্থায় আস্থা নিয়ে নির্ধারিত স্থানে আসেন। সঙ্গে ছিলেন স্যাইয়েদায়ে কায়েনাত খাতুনে আতহার ফাতিমা বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ফাতেহে বাবে বিলায়াত সারওয়ারে বাব ইমামাত ইমামুল আওলিয়ায়ে বর-গুজিদায়ে কিবরিয়া ওলীয়ে খোদা ওসীয়ে মুস্তাফা আসাদুল্লাহ-হিল গালিব আলী ইবনে আবু তালিব কাররামুল্লাহ ওজহু এবং শাহজাদা বড় ইমাম পাক হযরত ইমাম হাসান আল-মুজতবা ও শাহেন-শাহে কারবালা পাকের দুলহা {ওফাদাইনাহু বি-যিবহিন আজীম} মাজলুম ইমাম শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (আঃ)।(তাঁদের সবার উপর মহান আল্লাহর অশেষ দরুদ ও রহমত বর্ষিত হোক)।

পাক পাঞ্জাতন পাকের নুরানি চেহারা মুবারক ও অভিব্যক্তি দেখেই খ্রিস্টানরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে যায়। ইসলাম যে সত্য ধর্ম তা তারা বুঝতে পারে। তাই তারা মিথ্যাবাদীর উপর খোদায়ী অভিশাপ বর্ষণের আহ্বান জানানোর চ্যালেঞ্জ প্রত্যাহার করে নেয়।

নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধি বা পাদ্রিদের প্রধান দলপতি তখন তার সঙ্গীদের বলেছিলেনঃ আমি এমন জ্যোতির্ময় বা পুণ্যবান ব্যক্তিদের নূরানী চেহারা মুবারক দেখছি যারা খোদায়ী অভিশাপের জন্য হাত উঠালে পাহাড়গুলো তাদের স্থান থেকে সরে আসবে, তাই মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেয়াই ভাল, নইলে কিয়ামত পর্যন্ত খ্রিস্টানদের নাম-নিশানাও থাকবে না। পরে তারা মুসলমান না হয়েই সন্ধি করে ও জিজিয়া কর দিতে সম্মত হয়।

হুজুর পাক (দঃ) বললেনঃ মহান আল্লাহ পাকের কসম! এরা যদি মুবাহিলা করত তাহলে আল্লাহ তাদের বানরে বা শুকরে রূপান্তরিত করতেন এবং ময়দান আগুনে পরিণত হত। আর নাজরানের একটি প্রাণীও এমনকি পাখি পর্যন্ত রক্ষা পেত না।{সূত্রঃ তাফসীরে জালালালাইন, ১ম খণ্ড, পৃ.৬০, তাফসীরে বায়দ্বাভী, ১ম খণ্ড, পৃ.১১৮, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ২য় খণ্ড, পৃ.৩৯, মিশর মুদ্রণ}

এভাবে খ্রিস্টানদের সঙ্গে সংলাপে হুজুর পাক (দঃ) এঁর বিজয় এবং তাঁর মহা-পবিত্র আহলে বাঈতের উচ্চতর মর্যাদা প্রকাশিত হওয়ার জন্য ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এই ঘটনা। (আল-কুরআনের আয়াত অনুযায়ী) হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) এঁর আহলে বাইত পাকে আতহার বা তাঁর পরিবারের বিশেষ নিষ্পাপ সদস্যদের প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্য প্রদর্শন মুসলমানদের জন্য ফরজ।

সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৬১

فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَٰذِبِينَ

এর অর্থ ইঙ্গিত করে যে, স্যাইয়েদায়ে কায়েনাত খাতুনে আতহার ফাতিমা বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওলীয়ে খোদা ওসীয়ে মুস্তাফা আসাদুল্লাহ-হিল গালিব আলী ইবনে আবু তালিব কাররামুল্লাহ ওজহু এবং এবং শাহজাদা হযরত ইমাম হাসান আল-মুজতবা ও শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) হলেন রাসূল (দঃ) এঁর পরিবারের বিশেষ মর্যাদার অধিকারী সদস্য তথা আহলে বাঈত পাক (আঃ) ছিলেন। এ আয়াতে ওলীয়ে খোদা ওসীয়ে মুস্তাফা আসাদুল্লাহ-হিল গালিব আলী ইবনে আবু তালিব কাররামুল্লাহ ওজহু ও বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যৌথভাবে উল্লেখিত হয়েছেন ‘আমাদের নিজেদের বা নিজ (নফসে আত্না) সত্তাদের’ হিসেবে। পবিত্র হাদিসেও (হুবশি ইবনে জানাদাহ থেকে বর্ণিত) এসেছে, হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, “আলী আমা থেকে ও আমি আলী থেকে এবং আলী ছাড়া অন্য কেউ আমাকে প্রতিনিধিত্ব করে না।

হুজুর পাক (দঃ) এঁর আহলে বাইত পাকদের মহান শান পাকে পবিত্র আল-কুরআনের কয়েকটি আয়াত নাজিল হওয়ার বার্ষিকী।

নাজরানের খ্রিস্টান পাদ্রিদের সঙ্গে সংলাপে ও মুবাহিলার ঘটনায় হুজুর পাক (দঃ) এঁর বিজয়ের ঐতিহাসিক আগের রাতে হুজুর পাক (দঃ) এঁর আহলে বাঈত বা তাঁর পরিবারের বিশেষ সদস্যদের নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়ে নাজিল হয়েছিল সূরা আল আহ্‌যাব (الْأحزاب), আয়াত: ৩৩

إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجْسَ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

অর্থঃ হে আহলে বাঈত পাক (আঃ)! মহান আল্লাহ পাক কেবল চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদের কে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।

হুজুর পাক (দঃ) এঁর আহলে বাঈতের প্রতি ভালবাসার নির্দেশ এসেছে। তাদের আনুগত্যও করতে বলা হয়েছে। যেমন, সূরা আশ্-শূরা (الشّورى), আয়াত: ২৩

ذَٰلِكَ ٱلَّذِى يُبَشِّرُ ٱللَّهُ عِبَادَهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ قُل لَّآ أَسْـَٔلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا ٱلْمَوَدَّةَ فِى ٱلْقُرْبَىٰ وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُۥ فِيهَا حُسْنًا إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ

অর্থঃ এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সে সব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। ইয়া রাসূলুল্লাহ (দঃ)! আমি আমার ইসলাম প্রচারের জন্য দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কেবল আত্নীয়তাজনিত সৌহার্দ চাই। যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্যে তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, গুণগ্রাহী।

قال الامام الشافي رحمه الله عنه

ياأهل بيت رسول الله حبكم + فرض من الله في القران انزله

يكفيكم من عظيم القدرانكم + من لم يصل عليكم لا صلوة له

হযরত ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেছেনঃ

আহলে বাঈতে রাসূল (দঃ), ফরয আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে তোমাদের ভালোবাসা।

নাযিলকৃত কুরআন মাঝে আছে তাই তো লেখ।

তোমাদের মহান মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হয়, তোমাদের প্রতি দরূদ ছাড়া নামায নাহি হয়।

হুজুর পাক (দঃ) তাঁর আহলে বাইত বলতে তাঁর নিষ্পাপ ও পবিত্র বংশধরকে বোঝাতেন। যেমন- স্যাইয়েদায়ে কায়েনাত খাতুনে আতহার ফাতিমা বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, শাহজাদা হযরত ইমাম হাসান আল-মুজতবা ও শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) মওলা-এ-কায়েনাত পাক আলী (আঃ)। কেননা মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে (মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, পৃ-১৩০) এবং তিরমিযী স্বীয় সুনানে উন্মূল মু’মিনিন হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যে,

نزلت هذه الآية علی النبی (صلی الله عليه [وآله] وسلّم)-

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

في بيت امّ سلمة، فدعا النبي -صلّی الله عليه [وآله] وسلّم- فاطمة و حسناً و حسيناً فجلّلهم بکساء و علی خلف ظهره فجلّله بکساء ثم قال: الّلهم هولاء أهل بيتی فاذهب عنهم الرجس و طَهّرهم تطهيراً. قلت أمّ سلمة: و انا معهم يا نبی الله؟ قال: أنت علی مکانک و أنت إلی الخير.

ইয়া আহলে বাঈত পাক (আঃ)! আল্লাহ তো শুধু আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদের থেকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে চান।”- এই আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (দঃ) এঁর উপর হযরত উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) এঁর ঘরে অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (দঃ), স্যাইয়েদায়ে কায়েনাত খাতুনে আতহার ফাতিমা বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হযরত ইমাম হাসান (আঃ) ও হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) কে নিজের ঢিলেঢালা লম্বা জামা তথা আলখাল্লার মধ্যে নিলেন এমতাবস্থায় মওলা আলী (আঃ) তাঁর পেছনে অবস্থান করছিলেন। এরপর তাঁদের সবাইকে একটি চাদর দিয়ে ঢেকে এরূপ দোয়া করলেন: “হে আমার প্রতিপালক! এহারাই আমার আহলে বাঈত (আঃ)। অপবিত্রতাকে এহাদের থেকে দূর করে এহাদেরকে পবিত্র থেকে পবিত্রতম করুন।

হযরত উম্মে সালমা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (দঃ)! আমিও কি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত (আমিও কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত)? হুজুর পাক (দঃ) বললেনঃ তুমি নিজের স্থানেই থাকো। তুমি সত্য ও কল্যাণের পথেই রয়েছ। এভাবে হুজুর রাসূলে পাক (দঃ) তাঁর কোনো স্ত্রীকে ঐ বিশেষ চাদরে তাতহীর/ পাকের নীচে আসার অনুমতি দেননি যেখানে ছিলেন স্বয়ং হুজুর পাক (দঃ) এবং স্যাইয়েদায়ে কায়েনাত খাতুনে আতহার ফাতিমা (আঃ) মওলা-এ-কায়েনাত পাক  আলী (আঃ) ও শাহজাদা ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (তাদের সবার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও দরুদ বর্ষিত হোক।)

উল্লেখ্য, অন্য এক বছর একই দিনে নাজিল হয়েছিল সুরা মায়েদার ৫৫ ও ৫৬ নম্বর আয়াত। আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) এঁর অনুপম এক দানের প্রশংসা করতে গিয়ে এই দুই আয়াতে বলা হয়েছেঃ

হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীরা যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় জাকাত দেয়। এবং যে কেউ মহান আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং সেই বিশ্বাসীদের নিজ অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে (সে আল্লাহর দলের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং) নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।

অনেকে ই মনে করেন উপরোক্ত ৫৬ নম্বর আয়াতে হযরত আলী (আঃ)-কে রাসূল (দঃ)’র পর মুমিনদের অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সমস্ত তাফসির বিদগণ একমত যে উপরোক্ত ৫৫ নম্বর আয়াতটি হযরত আলী (আঃ) এঁর শানে নাজিল হয়েছিল। কারণ, হযরত আলী (আঃ) রুকু অবস্থায় একজন সাহায্যপ্রার্থীকে হাতের আঙুল থেকে আংটি খুলে দিয়ে যাকাত দিয়েছিলেন। ইবনে মারদুইয়া ও খতিব বাগদাদি ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) সূত্রে এবং তাবরানি ও ইবনে মারদুইয়া আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাদিঃ) ও আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আয়াত পাকটি আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) সম্পর্কে নাজিল হয়েছিল যখন তিনি রুকু অবস্থায় জাকাত দেন।

সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৫৫

إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَهُمْ رَٰكِعُونَ

অর্থঃ তোমাদের ওলী তো মহান আল্লাহ পাক তাঁর রাসূলে পাক (দঃ) এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় রুকু অবস্থা এবং বিনম্র।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَی مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলে-মুহাম্মাদ।