Press "Enter" to skip to content

সন্তান কামনা করার দোয়া ও এর ফযিলত

পরবর্তি অংশ..

হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে: আবরাশ কালবি ইমাম মুহাম্মদ বাকির (আ.)-কে বলেছিলেন যে আমার সন্তান হয় না। তিনি উত্তরে বললেনঃ প্রতিদিন বা প্রতি রাতে একশত বার ক্ষমা চাও এবং «اَسْتَغْفِرُاللَّهَ رَبّی وَاَتُوبُ اِلَیهِ»  বলো।

অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা সত্তর বার ‘«سُبْحانَ اللَّهِ»’, তারপর দশবার  اَسْتَغْفِرُاللَّهَ رِبّی وَاَتوُبُ اِلَیهِ, অতপর নয়বার سُبْحان اللَّهِ, তারপর এক বার اَسْتَغْفِرُ اللَّهَ رَبّی وَاَتوُبُ اِلَیهِ  বলবে। রাবি বলেন,অনেকে এ আমল করেছেন ও অনেক সন্তান লাভ করেছেন । অনেকে শুধু একবার  اَسْتَغْفِرُ اللَّهَ বলাই যথেষ্ঠ মনে করেন।

অন্য বর্ণনায় ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত আছে: ভোরবেলা আপনার সন্তানের জন্য একশত বার استغفار আদায় করুন এবং যদি আপনি রাতে ভুলে যান তবে অন্য সময়ে তা পূরণ করুন। অন্য একজন তার কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি কোন সন্তান লাভ করতে পারেন না। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সহবাসের ইচ্ছা কর, তখন বল: ” اَللَّهُمَّ اِنْ رَزَقْتَنی ذَکَراًسَمَّیْتُهُ مُحَمَّداً ।

অন্য হাদিসে উল্লেখ আছে; এক ব্যক্তি ইমাম রেযা (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করলেন যে, আমি সবসময় অসুস্থ থাকি এবং সন্তান ধারণ করতে পারি না। তিনি বললেনঃ তোমার ঘরে উচ্চস্বরে আযান দাও। তিনি তাই করলেন, তাঁর শরীর সুস্থ হল এবং তিনি অনেক সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হন।

অন্য হাদিসে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত আছে: এক ব্যক্তি অভিযোগ করল যে, তার কোন সন্তান হয় না। নবি (সা.) বললেনঃ যখন তুমি তোমার স্ত্রীর কাছে যেতে চাও, এই তিনটি আয়াত পড়, আল্লাহ চান তো তোমাকে একটি সন্তান দান করবেন। আয়াতটি হলো-

وَذَاالنُّونِ اِذْ ذَهَبَ مُغاضِباً فَظَنَّ اَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَیْهِ فَنادی فِی الظُّلُماتِ اَنْ لا اِلهَ اِلّا اَنْتَ سُبْحانَکَ اِنِّی کُنْتُ مِنَ الظّالِمِینَ فَاسْتَجَبْنا لَهُ وَنَجَّیْناهُ مِنَ الغَمِّ وَکَذلِکَ نُنْجِی الْمُؤمِنِینَ وَزَکَرَیّا اِذْ نادی رَبَّهُ رَبِّ لا تَذَرْنِی فَرْداً وَاَنْتَ خَیْرُ الوارِثِینَ

আর স্মরণ করুন, যুন-নূনকে, যখন তিনি ক্ৰোধ ভরে চলে গিয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, আমরা তাকে পাকড়াও করব না। তারপর তিনি অন্ধকারে এ আহবান করেছিলেন যে, আপনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই; আপনি কতইনা পবিত্র ও মহান, নিশ্চয়ই আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি!। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে উদ্ধার করেছিলাম, আর এভাবেই আমরা মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি। আর স্মরণ করুন যাকারিয়্যাকে, যখন তিনি তার রবকে ডেকে বলেছিলেন, হে আমার রব! আমাকে একা (নিঃসন্তান) রেখে দিবেন না, আপনি তো শ্রেষ্ঠ ওয়ারিশ। [সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭-৮৯]।

অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন: যার সন্তান নেই, সে নিয়ত করবে যে,

  • “যদি সন্তান জন্ম নেয় তাহলে আমি তার নাম রাখব আলি”

যদি সে তা করে তবে আল্লাহ তাকে একটি পুত্র দান করবেন।

ইমাম যাইনুল আবিদিন (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: যে ব্যক্তি এই দুআটি বেশি বেশি করে পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ থেকে যা চাইবেন তাই দেবেন।

وَ زَکَرِیَّاۤ اِذۡ نَادٰی رَبَّهٗ رَبِّ لَا تَذَرۡنِیۡ فَرۡدًا وَّ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡوٰرِثِیۡنَ وَاجْعَلْ لی مِنْ لَدُنْکَ وَلّیِاً یَرِثُنی فِی حَیوتی وَیَسْتَغْفِرُلی بَعْدَ مَوْتی وَاجْعَلْهُ خَلْقاً سَوِیّاً وَلا تَجْعَلْ لِلشَّیطانِ فیهِ نَصِیباً اَللَّهُمَّ اِنِّی أسْتَغْفِرُکَ وَاَتُوبُ اِلَیکَ اِنَّکَ اَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحیمُ

আর স্মরণ করুন যাকারিয়্যাকে, যখন তিনি তার রবকে ডেকে বলেছিলেন, হে আমার রব! আমাকে একা (নিঃসন্তান) রেখে দিবেন না, আপনি তো শ্রেষ্ঠ ওয়ারিশ। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে একটি সন্তান দান করুন যে আমার উত্তরসূরি হবে আমার জীবদ্দশায়, আর দোয়া করবে আমার মৃত্যুর পর। আর তাকে সুস্থ সবল নিষ্কলঙ্কভাবে তৈরি করুন। তার মাঝে কোন শয়তানি সৃষ্টি করবেন না।হে আল্লাহ তোমার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তওবা করি,নিশ্চয় তুামি ক্ষমাকারী ও দয়ালু।

এই দুআটি সন্তানের জন্য সত্তর বার পাঠ করুন।

হযরত সাদিক (রা.) থেকে বর্ণিত: কোনো মহিলা যখন গর্ভবতী হয় এবং চার মাস অতিবাহিত হয়, তখন তার মুখ কিবলার দিকে ঘুরিয়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ কর এবং তার পাশে হাত রেখে বল:

اَللَّهُمَّ اِنِّی قَدْ سَمَّیْتُهُ مُحَمَّد “

হে আল্লাহ! আমি তার নাম রাখলাম মুহাম্মদ।

যদি সে তা করে তবে আল্লাহ সেই শিশুটিকে একটি ছেলে হিসেবে কবুল করবেন। যদি তিনি তার নাম রাখেন মুহাম্মাদ তবে তিনি ধন্য, এবং যদি তিনি তার নাম তা না রাখেন তবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন।

সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে: যে ব্যক্তির স্ত্রী গর্ভধারণ করে এবং তার নাম মুহাম্মদ বা আলি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তার একটি পুত্র সন্তান হবে।

অন্য হাদিসে আছে: তার নাম আলি রাখ যাতে তার আয়ু দীর্ঘ হয়।

طبّ الأئمّه  গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করেন তার সন্তান কম হওয়ার ব্যপারে, তিনি বললেনঃ তিন দিন সকাল ও সন্ধ্যার নামাযের পর সত্তর বার “সুবহানাল্লাহ” এবং সত্তর বার “আস্তাগফির আল্লাহ” বলুন। এবং তার পরে, এইটি পড়ুন:

اِسْتَغْفِرُوا رَبَّکُمْ اِنَّهُ کانَ غَفّاراً یُرْسِل السَّماءَ عَلَیکُمْ مِدْراراً وَیُمدِدْکُمْ بِاَمْوالٍ وَبَنِینَ وَیَجْعَلْ لَکُمْ جَنّاتٍ وَیَجْعَل لَکُمْ اَنْهار

অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [সুরা নুহ, আয়াত ১০-১২] ।

অতপর  তৃতীয় রাতে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলন কর, তাহলে আল্লাহ সুস্থসবল পুত্র সৃষ্টি তোমাকে দান করবেন।

نوادر الحکمه নাওয়াদিরুল-হিকমা গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে: এক ব্যক্তি ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসুলের বংশধর! আমি আটটি মেয়ের জন্ম দিয়েছি এবং আমি কোন ছেলের দেখা পাইনি। তখন তিনি বলেনঃ যখন তুমি কোন মহিলার পায়ের মাঝখানে বসবে তখন তোমার ডান হাত মহিলার নাভীর ডান পাশে রাখবে এবং সূরা ” إنّا أنزلناه সাতবার পাঠ করবে, তারপর সহবাস করবে। তাতে গর্ভাবস্থার প্রভাব দেখা দিলে রাতে তোমার হাত মহিলার নাভির ডান পাশে রাখ এবং সূরা ” إنّا أنزلناه ” সাতবার পাঠ কর।

লোকটি বললঃ আমি তাই করলাম, এবং আল্লাহ আমাকে পরপর সাতটি পুত্র দান করলেন।

ইমাম হাসান (আ.) উল্লেখ করেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্তান চায়, সে যেন অনেক استغفار আদায় করে।

তথ্যসূত্র:

হিলয়াতুল মুত্তাকিন, আল্লামা বাকের মাজলিসি, পৃ. ৯৭।