Press "Enter" to skip to content

সাইয়্যেদ ইবনে তাউস-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী – ২

অনুবাদ: ড. আবু উসামা মুহাররম

পরবর্তি অংশের পরে..

মঙ্গোলীয়দের সাথে যোগাযোগ

৬৫২ হিজরিতে যে সময়ে হালাকু খান বাগদাদে অভিযান চালান তখন ইবনে তাউস আবার বাগদাদে যান এবং ৬৫৬ হিজরিতে এই শহরটি মঙ্গোলরা বিশাল গণহত্যার মাধ্যমে জয় করে। সাইয়্যেদ বিন তাউসের কাছে হালাকু খানের পক্ষ থেকে একটি নিরাপত্তার চিঠি এসেছিল, যা দৃশ্যত নাসির উদ্দিন তুসির অনুরোধে পেয়েছিলেন। আলী হালাকোর নিরাপত্তার বিশ্বাসে প্রায় এক হাজার ইরাকি লোককে তার সাথে হেল্লায় নিয়ে যান। একটি বর্ণনা অনুসারে, হালাকু যখন বাগদাদ দখল করেন, তখন তিনি বাগদাদে মুসলিম পণ্ডিতদের একত্র করেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেন যে, একজন ধার্মিক রাজা নাকি একজন দুষ্ট মুসলিম রাজা উত্তম। সাইয়েদ ইবনে তাউস ন্যায়পরায়ণ বাদশাহকে অন্যায়কারী মুসলমানের চেয়ে উত্তম মনে করতেন। কেউ কেউ এই উত্তরটিকে শিয়া পন্ডিতদের প্রতি হালাকুর সুদৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

শিয়া ইশনা আশআরিদের নেতৃত্ব

যখন ৬৬১ হিজরিতে হালাকু তাকে নেতৃত্বের প্রস্তাব দেন, তিনি এই পদটি গ্রহণ করেন। যদিও কিছু সূত্র অনুসারে, তিনি অনিচ্ছায় এবং বাধ্য হয়ে এই পদটি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার জীবনের শেষ পর্যন্ত প্রায় চার বছর উক্ত পদে সমাসীন ছিলে।

নৈতিক গুণাবলী এবং আধ্যাত্মিক অবস্থান

আল্লামা হিল্লি (মৃত্যু ৭২৬ হিজরি) সাইয়্যিদ ইবনে তাওউসকে সীমাহীন গুণাবলীর অধিকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। কুমি তাকে বিভিন্ন গুণাবলী দ্বারা প্রশংসা করেছেন। যেমন: মহৎ, ধার্মিক, তপস্বী, সুখী, রহস্যবাদীদের নেতা, রাত্রি জাগরণকারি, অসামান্য গুণের অধিকারী, কারামতসম্পন্ন ওলি। সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ হাসান (সায়্যিদ মুহাম্মাদ হাসান এলাহী নামে পরিচিত) (আল্লামা তাবাতাবায়ীর ভাই) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমরা অনেক আলেমের আত্মাকে (তাঁর একজন ছাত্রের মাধ্যমে) ডেকেছিলাম এবং প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু দুই ব্যক্তির আত্মাকে আমরা এখনও হাযির করতে পারিনি, একজন ছিলেন মরহুম সাইয়্যেদ ইবনে তাউসের আত্মা এবং অন্যজন মরহুম সাইয়্যেদ মোহাম্মদ মেহেদী বাহরুল উলূমের আত্মা। আল্লাহ তাদের শান্তি দান করুন; এই দুই ব্যক্তির আত্মা বললেনঃ আমরা হজরত আমীরুল মুমিনীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়োজিত, আমাদের নিচে নেমে আসার কোনো সুযোগ নেই।

সাইয়্যেদ ইবনে তাউসের গ্রন্থসমূহ

ইবনে তাউসের প্রায় ৫০টি গ্রন্থ রচনা রয়েছে, যার অধিকাংশই প্রার্থনা এবং যিয়ারত সম্পর্কিত।

সাইয়্যিদ ইবনে তাউসের যে কাজটি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হল “তাতিম্মাতু মিসবাহিল মুতহাজ্জাদ ওয়া মুহিম্মাতু ফি সালাহ আল-মুতাআব্বাদ” শিরোনামে লেখা কাজগুলি অর্থাৎ, এমন একটি কিতাব যেখানে ইবাদতকারিদের জন্য উপকারী দোয়া রয়েছে।

সাইয়্যিদ ইবনে তাউসের কিছু কাজ হল:

  1. فلاح السائل
  2. زهرة الربیع
  3. الدروع الواقیة
  4. اقبال الاعمال
  5. اللهوف
  6. فرج المهموم فی تاریخ علماءالنجوم،
  7. محاسبة النفس.

সাইয়্যেদ বিন তাউসের গ্রন্থাগার

সাইয়্যেদ বিন তাউসের একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ছিল যেখানে ১৫০০ টিরও বেশি বই বিদ্যমান।(৯)

এই সংগ্রহটি গুরুত্বপূর্ণ এই বিবেচনায় যে অনেক বই মঙ্গোল আক্রমণে হারিয়ে গিয়েছিল, সেসকল বইয়ের অনেক কপি তিনি আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলেন।  ইটান কোলবর্গ ইবনে তাউসের জীবন-কর্ম বিষয় নিয়ে ও অন্যান্য কর্ম নিয়ে এই গ্রন্থাগারটি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেন। তুরস্কে সাইয়্যেদ বিন তাউস গ্রন্থাগারের একটি বইয়ের একটি অনুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই কপির একটি পৃষ্ঠায় সাইয়েদের একটি হাতের লেখা অবশিষ্ট আছে, যা তিনি কাউকে উৎসর্গ করার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন।

সাইয়্যেদ বিন তাউসের চিন্তাধারা

কিছু গবেষকের মতে, ইবনে তাউস আধ্যাত্মিক বিষয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন। এই কারণে, তার অধিকাংশ রচনা ছিল প্রার্থনা সম্পর্কে। গবেষকদের মতে, ইবনে তাউস আইনশাস্ত্র কম অধ্যয়ন করেছেন এবং ফতোয়া জারি করা এড়িয়ে গেছেন। আইনশাস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়ে শিয়া পন্ডিতদের মতানৈক্য এবং ভুল বা কল্পনার উপর ভিত্তি করে মতামত তৈরি করার ভয়ের কারণে তিনি নিজেই আইনশাস্ত্র সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। তাঁর কাছ থেকে শুধুমাত্র দুটি ফিক্বাহশাস্ত্রের বই অবশিষ্ট আছে যেগুলো নামাযের নিয়ম-কানুন সম্পর্কিত এবং এ বিষয়টি আকস্মিক নয়। কারণ প্রার্থনা হৃদয় ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের সাথেও জড়িত।

ইবনে তাউস ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে অনুকূল মতামত উপস্থাপন করেনি। তিনি মু’তাজিলা চিন্তাধারার তীব্র বিরোধিতা করেন। ইবনে তাউসের মতে, ঐশ্বরিক জ্ঞানে পৌঁছানোর জন্য ধর্মতত্ত্বের সমস্যাবলির জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। তিনি ঐশ্বরিক জ্ঞানকে ঐশ্বরিক নির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণার ফল এবং একটি প্রাকৃতিক জিনিস বলে মনে করেন। এটি  তার মতে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তার ফলাফল নয়।

ইবনে তাওউসের লেখার উপর ভিত্তি করে কিছু লেখক তাকে একজন নির্জনবাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

মৃত্যু

সাইয়্যেদ আলী বিন তাউস ৬৬৪ হিজরিতে ৭৫ বছর বয়সে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মরদেহকে নাজাফ আশরাফে স্থানান্তরিত করা হয় এবং আমির আল-মুমিনীন আলি (সা.)-এর মাজারের পাশে দাফন করা হয়।

গ্রন্থসূচি:

১. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ২৩ এবং ২৫।

২. সাইয়্যেদ ইবনে তাউস, কাশফুল মুহাজ্জা, ১৪১৭ হি, পৃ. ১৬৮-১৬৯।

১. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ.৩০।

৪. ইবনুল তাকতাকী, আল-ফাখরী, ১৪১৮ হিজরি, পৃ. ২৩।

৫. বারানী, “ইলখানিদের যুগে শিয়া ধর্মের প্রতি ইরানীদের প্রবণতা”, পৃ.৮৮।

৬. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ৩১-৩২।

৭. নুরী, খতমে মোস্তাদরাকুল ওয়াসাইল, ১৪০৮ হি, খন্ড ২, পৃ. ৪৩৯

৮. মাজলিসি, বিহারুল আনোয়ার, ১৪০৩ হি, খণ্ড ১, পৃ. ১৩

৯. কুমি, আল ফাওয়াইদুর রাযাভিয়্যাহ, ২০০৫, ভলিউম ১, পৃ.৫৪২।

১০. তেহরানী, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন, মাআদ শিনাসি, খণ্ড ১, পৃ. ১৮৬

১১. ১. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ১১১-৫০।

১২. দেখুন: খুশফার, আন্দিশেহায়ে সায়্যেদ ইবনে তাউস”, পৃ.৯৮।

১৩. আহমদি, তারিখ হাদিসে শিয়া, ২০০৯, পৃ. ৩৩৪; খোশফার, আন্দিশেহায়ে সায়্যেদ ইবনে তাউস”, ১৪. ময়ূর”, পৃ. ৯৯।

১৫. ১. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ১৩২।

১৬. নিলসায, ফাহিম, “বাররাসি তাহলিলি সাদ আস সৌদ ইবনে তাউস, নকাদে কুরআন ও হাদীস

১৭. ১৩৯৬, নং ১১, পৃ. ৬।

১৮. ১. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ১৩।

১৯. দেখুন: কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ৬১২-১৫৯;

২০.https://jscenter.ir/other-topics/jewish-celebrities/৬২৫৬/Etan-Kelberg-      Zionist-Zad

২১. শিয়া ধর্মমত/

২২. লিবার্নস, “মিরাসে এক দানিশমান্দ মুসলামানে মুতাআল্লাক বে কুরুনে মিয়ানে

২৩. জাফরিয়ান, আদাবে দুয়ায়ে শিয়া”, পৃ. ২১৪।

২৪. সাইয়্যেদ ইবনে তাউস, কাশফুল মুহাজ্জা, ১৪১৭ হিজরি, পৃ. ১৬৬।

২৫. দেখুন: ১. কোলবার্গ, কিতাবখানায়ে ইবনে তাউস, ১৩৭১, পৃ. ৪৩।

২৬. দেখুন: সাইয়্যেদ ইবনে তাউস, কাশফুল মুহাজ্জা, ১৪১৭ হিজরি, পৃ. ৫২, ৬০।

২৭. সাদেগী কাশানি, তারিখে ইবনে তাউস ১৩৯৪, পৃ. ২৫।

২৮. সাইয়্যেদ ইবনে তাউস, কাশফুল মুহাজ্জা,