মোহাম্মাদ মাজিদুল ইসলাম
কারবালার ঘটনা সংগঠিত হওয়ার পুর্বে থেকেই মওলা হুসাইন (আঃ) উপর আগত মুসিবতকে কথা স্বরন করে, সয়ং রাসূল (সাঃ)-এর ক্রন্দন যা আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত হাদিসসমূহে এসেছে—
▪️মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ–উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমি দশই মহররম রাসুল্লাহ (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখেছি যে, খালি মাথা, খালি পা, তার মস্তকে ও দাড়িতে ধুলি মাটি লেগে রয়েছে। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কি হলো ? তিনি বললেন, আমি এক্ষুনি হোসাইনের শাহাদত বরণ স্বচক্ষে দেখে এসেছি।
—গ্রন্থসূত্রঃ তিরমিযী, খঃ ২, পৃঃ ২১৮)/ তিরমিযী, খন্ড ৬ হাদিস নং – ৩৭৭১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)/মুস্তাদরাক আল সাহীহাইন, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ১৯।
▪️হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ– আমি দশই মহরম দুপুরের সময় মহানবী (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখলাম তার আলুলায়িত কেশ ধুলায় মলিন। তাঁর হাতে রক্তভর্তি একটি বোতল । আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক , এটা কি ? রাসুল (সাঃ) বললেন , হোসাইন ও তাঁর সাথীদের রক্ত,আমি আজই এটা সংগ্রহ করেছি।
সূত্রঃ মেশকাত শরীফ /আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া,খন্ড ৬ পৃ.৩৪৩(ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ।
▪️এই প্রসঙ্গে আরও দেখে নিন, ঐতিহাসিক ইয়াকুবি তাঁর ‘তারীখ’ গ্রন্থে ইমাম হোসাইন (আঃ)-এর শোকে উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামার অঝরে ক্রন্দনের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। “উম্মুল মুমিনীন বলেনঃ যেদিন হোসাইন শহীদ হন আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে স্বপ্নে ধূলি ধুসরিত ও শোকে মূহ্যমান অবস্থায় দেখলাম। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেনঃ আমার সন্তান হোসাইন ও তার আহলে বাইতকে আজ শহীদ করা হয়েছে। আমি এইমাত্র তাদের দাফন সম্পন্ন করে আসলাম।”
গ্রন্থসূত্রঃ-তারীখে ইয়াকুবি, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪৬/সুয়ূতি, তারীখুল খোলাফা, পৃ, ২০৮, ইবনে আব্বাস সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে : মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৩ ও আল-মুসতাদরাক, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৯৭।
▪️হযরত উম্মে ফজল বিনতে হারিস থেকে বর্ণিতঃ- তিনি মহানবী (সাঃ) এর কাছে গেলেন এবং বললেন যে,হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ! আমি গতরাতে এক দুঃস্বপ্ন দেখেছি। রাসুল (সাঃ) বললেন , কি দেখেছ ? জবাব দিলেন , খুব কঠিন এক স্বপ্ন ।মহানবী (সাঃ) বললেন , কি হয়েছে ? তখন বললেন , আমি দেখলাম আপনার শরীরের একটি টুকরো আপনার থেকে বিছিন্ন হয়ে আমার আঁচলে এসে পড়ল ! আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন , তুমি খুব ভাল স্বপ্ন দেখেছ । আল্লাহর ইচ্ছায় ফাতেমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম হবে এবং তোমার আঁচলে জায়গা নেবে।এই ঘটনার কিছুদিন পর রাসুল (সাঃ) এর বর্ননামতে ইমাম হোসেন (আঃ) এর জন্ম হল এবং তিনি (সাঃ) আমার আঁচলে স্থান দিলেন ।একদিন মহানবী (সাঃ) এর নিকট গেলাম এবং ইমাম হোসেন (আঃ) কে তাঁর কোলে রাখলাম । এর কিছুক্ষন পরে নবীজী (সাঃ) এর দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরে গেল । হঠাৎ দেখলাম যে , নবীজী (সাঃ) এর দুই চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রুধারা বয়ে চলেছে । তিনি (সাঃ) শিশুর মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন । অবাক হয়ে আমি তাঁকে বললাম , হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক । আপনি কাঁদছেন কেন ? আপনার কি হয়েছে ? মহানবী (সাঃ) বললেন , এইমাত্র জীবরাঈল (আঃ) আমকে খবর দিয়ে গেলেন যে , আমার উম্মত খুব শীঘ্রই আমার এই বংশধরকে হত্যা করবে।আমি বললাম , এই শিশুকে ! রাসুল (সাঃ) বললেন , হ্যাঁ , জীবরাঈল (আঃ) আমার জন্য সেই হত্যা স্থানের রক্তিম কিছু মাটিও এনেছেন।
তথ্যসূত্রঃ – মুসতাদরাকে সহীহাইন , ৩য় খন্ড , পৃ- ১৭৬ , ১৭৯ / তারিখে ইবনে আসাকির , হাদিস নং – ৬৩১, ৬৩০ / মাজমাউয যাওয়ায়েদ , ৯ম খন্ড , পৃ- ১৭৯ / মাকতালে খাওয়ারেযমী , ১ম খন্ড , পৃ- ১৫৯ , ১৬২ / তারিখে আসির , ৬ষ্ঠ খন্ড , পৃ- ২৩০ , ৮ম খন্ড , পৃ- ১৯৯ / আমালীয়ে শাজায়ী , পৃ- ১৮৮ / ফুসলুল মুহিম্মাাহ , ইবনে সাব্বাগ মালিকী, পৃ- ১৪৫ / মেশকাত শরীফ/রাওদান নাদ্বির , ১ম খন্ড , পৃ- ৮৯ / সাওয়ায়েক , পৃ- ১১৫ এবং অন্য সংস্করনে পৃ- ১৯০ / কানযুল উম্মাাল , ৬ষ্ঠ খন্ড , পৃ- ২২৩ (১ম সংস্করন) / আল খাসায়েসুল কোবরা , ২য় খন্ড , পৃ- ১২৫ / আহলে বাইত (আঃ) অনুসারীদের গ্রন্থ সমূহে , মুসিরুল আহযান , পৃ- ৮ / ইবনে তাউস , পৃ- ৬ এবং ৭ ।
বিঃদ্রঃ -মুসতাদরাকে সহীহাইন, তারিখে ইবনে আসাকির, মাকতালে খাওয়ারিযমীসহ আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। মুসতাদরাকে সহীহাইনের হাদিস লেখক বলেন যে , এই হাদিসটি বুখারী এবং মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ হাদিস । কিন্ত কোন এক অজ্ঞাত কারনে তারা এটি বর্ননা করেন নি । পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতের আলোকে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন ,মূল লেখক – আল্লামা সাইয়্যেদ মূর্তাজা আসকারী ,পৃষ্ঠা – ৮।
এ বিষয়ে অন্যান্য বর্ণনাও এসেছে—
▪️উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নাব বিনতে জাহশ থেকে বর্ণিতঃ-একদিন মহানবী (সাঃ) আমার ঘরে ছিলেন, সবে হাঁটতে শেখা হুসাইনকে (আঃ) আমি নজরে রাখছিলাম। হঠাৎ আমি অন্যমনস্ক হয়েছিলাম। এ সুযোগে হুসাইন (আঃ) আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) নিকট গেলেন। তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। (এর পর বলা হয়) অতঃপর হাত ওপরে তুললেন। এরপর মহানবী (সাঃ) নামায শেষ করলে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), আজ আমি আপনাকে একটি কাজ করতে দেখলাম যা এ পর্যন্ত কখনােই দেখিনি? তিনি বললেনঃ ‘জিবরাঈল এসে আমাকে এ খবর দিলেন যে, আমার উম্মত আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে।’ বললামঃ তাহলে আমাকে ঐ মাটি দেখান। তিনি আমার জন্য রক্তিম মাটি আনলেন।
বিঃদ্রঃ-বর্ণনাটি তারিখে ইবনে আসাকির, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, তারিখে ইবনে কাসিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে এসেছে।ইবনে আসাকিরের ইতিহাসে বিষয়টি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে।উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহশ রাসূলের (সাঃ) পত্নী।পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতের আলোকে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দন ,মূল লেখক – আল্লামা সাইয়্যেদ মূর্তাজা আসকারী ,পৃষ্ঠা – ৯।
তথ্যসূত্রঃ – তারিখে ইবনে আসাকির, ইমাম হুসাইন (আঃ) সম্পর্কিত বর্ণনায়, হাদীস ৬২৯/ মাজমাউয যাওয়াযি ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৮৮/ কানযুল উম্মাল ১৩তম খণ্ড, পৃঃ১১২/ ইবনে কাসিরও তাঁর ইতিহাস গ্রন্থের ৮ম খণ্ড, পৃ. ১৯৯ এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীদের গ্রন্থ , আমালীয়ে শেখ তুসী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৩, মুসিরুল আহযান পৃ. ৭-১০, বর্ণনাটির শেষে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপসংহার রয়েছে, বর্ণনায় লুহুফ ৭-৯ পৃ. ইত্যাদি।
▪️হযরত আয়েশার থেকে বর্ণিতঃ- তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হুসাইনকে (আঃ) তাঁর উরুতে বসিয়েছিলেন। জিবরাঈল (আঃ) তাঁর (সাঃ) নিকট এসে বললেনঃ এ আপনার বংশধর? মহানবী (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। জিবরাঈল বললেনঃ কিন্তু শীঘ্রই আপনার উম্মত (আপনার পরে) তাঁকে হুসাইনকে (আঃ) হত্যা করবে। মহানবী (সাঃ)-এর চোখ দু’টি অশ্রুসিক্ত হলো। জিবরাঈলকে বললেন, যদি আপনি চান তাহলে যে মাটিতে তিনি (ইমাম হুসাইন) শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি। তিনি (সাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, তাই করুন। জিবরাঈল (আঃ) তাফ (কারবালা) থেকে মাটি এনে হযরত (সাঃ)-কে দেখালেন।”অপর এক বর্ণনায় এসেছে ও জিবরাঈল ইরাকের তাফের (কারবালা) দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং লাল রংয়ের মাটি তাঁকে দেখিয়ে বললেন এ হল তাঁর শাহাদাত স্থলের মাটি।
তারিখে ইবনে আসাকির মাকতালে খাওয়ারেযমী, মাজমাউয যাওয়ায়িদসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে আবি সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ – খাওয়ারেযমীর বর্ণনা /তাবাকাতে ইবনে সাদ, হাদীস ২৬৯/ তারিখে ইবনে আসাকির ইমাম হুসাইন (আঃ) সম্পর্কিত বর্ণনা, হাদীস নং ৬২৭/ মাকতালে খাওয়ারেযমী ১ম খণ্ড,পৃ. ১৫৯/ মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৮৭ ও ১৮৮/কানযুল উম্মাল ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১০৮ (নতুন সংস্করণ) ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২২৩ (পুরাতন সংস্করণ)/আস্ সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ইবনে হাজার, পৃ ১১৫/খাসায়েসুস সুয়ূতি, খণ্ড-২ পৃ. ১২৫ও ১২৬/ জাওহারাতুল কালাম আল কুররাতু গাউলি পৃ. ১১৭ এবং আমালি, শেখ তুসী (আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীদের গ্রন্থসমুহের অন্তর্ভূক্ত ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৫ ও আমালীয়ে শাজারী পৃ. ১৭৭ বিস্তারিত জানতে দেখুন।
▪️হজরত আব্বাস (রাঃ)’এর স্ত্রী থেকে বর্ণিতঃ-আমি একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘এর খেদমতে হাজির হলাম এবং হুসাইনকে রাসুলের কোলে দিয়ে দিলাম, এরপর আমি কিছুক্ষনের জন্য অন্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলাম,পরে রাসূল (সাঃ) ‘এর নিকট যাই তখন দেখি রাসূল কাঁদছিলেন। আমি কান্নার কারন জিগ্গাসা করলে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ এখন আমার নিকট জিব্রাঈল এসেছিলেন এবং আমাকে খবর দিলেন যে আম্মার উম্মত আমার সন্তানকে শহীদ করবে । আমি(আব্বাসের স্ত্রী) যখন জিগ্গাসা করলাম এই সন্তান(হুসাইন)’কে তিনি বললেন হ্যাঁ।
তথ্যসূত্রঃ -মিশকাতুল শরীফ খন্ড-২ পৃঃ৪৪২ হাদীস নং-৫৮৮৮ উর্দু এডিশন থেকে সংগৃহীত]স্বয়ং আল্লাহর রাসূল জিবরাইল (আ.) থেকে ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের খবর (ভবিষ্যদ্বাণী) শুনে ক্রন্দন করেছেন। দ্রষ্টব্য : মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮৪ ও ৬৪৮/ মুসনাদে আবি ইয়ালা, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০৬, হাদীস ৩৫৮/ আল-মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন, ৩য় খণ্ড, পৃ, ১৭৬ ও ১৭৯/মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ম খণ্ড, পৃ, ১৭৯/ আসসাওয়ায়েকুল মুহরিকা, পৃ. ১১৫, অন্য সংস্করণে পৃ. ১৯৬/ ইবনে সাব্বাগ মালেকী, আল-ফুসুলুল মুহিম্মাহ, পৃ. ১৫৪/কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২২৩/ নাসায়ী, খাসায়িসুল কুবরা, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২৫/ তারীখে ইবনে কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৩০ ও ৮ম খণ্ড, পৃ. ১৯৯/ মাকতালে খাওয়ারেযমি, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৯ ও ১৬৩/ ইবনে আছাম, আল-ফুতুহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩২৫।
▪️উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালামা বর্ণনাঃ মুসতাদরাকে সহীহাইন, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, তারিখে ইবনে আসাকির সহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে বর্ণনাকারী বলেনঃ উম্মে সালমা (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিলেন যে, এক রাতে মহানবী (সাঃ) ঘুমানাের জন্য বিছানায় শুলেন এবং (কিছুক্ষণ) পরে বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলেন, পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন ও নীরব হলেন। দ্বিতীয়বার প্রথমবারের চেয়ে আরও বেশী বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পুনরায় হাতে রক্তিম বর্ণের মাটি হাতে নিয়ে তাতে চুম্বনরত অবস্থায়-জেগে উঠলেন। আমি বললাম ! হে আল্লাহর রাসূল! এ মাটি কিসের ? তিনি (সাঃ) বললেনঃ “ জিবরাঈল আমাকে সংবাদ দিল যে, সে (হুসাইন (আঃ) কারবালার মাটিতে শহীদ হবে। আমি জিবরাঈলকে বললাম যে মাটিতে শহীদ হবে তা আমাকে দেখাও। আর এ হল সেখানকার মাটি।মহানবী (সাঃ) সে মাটির গন্ধ নিলেন এবং বললেন, এ মাটি থেকে বিপদ-আপদের গন্ধ আসছে। তারপর সে মাটি তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন এ মাটি যখন রক্ত হয়ে যাবে তখন বুঝে নেবে হােসাইন শহীদ হয়েছে। আমি ঐ মাটি শিশিতে ভরে রাখলাম। যেদিন ইমাম হােসাইন শহীদ হলেন সেদিন এ মাটি রক্তে পরিণত হয়েছিল।
বিঃদ্রঃ-হাকিম বলেন,এ হাদীসটি প্রসিদ্ধ দুই হাদীসবেত্তার (বােখারী ও মুসলিম) শর্তানুসারে সহীহ হাদীস বলে গণ্য কিন্তু তারা এটি তাদের নিজেদের গ্রন্থে বর্ণনা করেন নি।
তথ্যসূত্রঃ – মুসতাদরাকে সহীহাইন ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৯৮/ আল মােজামূল কাবির তাবরানী হাদীস নং ৫৫/ তারিখে ইবনে আসাকির, হাদীস নং ৬১৯/তাবাক্বাতে ইবনে সা’দ, গবেষণা ও প্রকাশ, আব্দুল আজীজ তাবাতাবায়ী, পৃ. ৪২-৪৪ হাদীস নং ৬২৮, তারিখুল ইসলামে যাহাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১। সিয়ারু আলামুন নুবালা এ লামুনন্নব ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৯৪,ও ১৯৫/ছাওয়ায়েকে মুহারেকা/মাকতালুল খাওয়ারেযমী ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৮ ও ১৫৯/ যাখায়েরুল ওকুবা, মুহিব আত্ তাবারী পৃ. ১৪৮ও ১৪৯ /তারিখে ইবনে কাসির ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৩০/ কানযুল উম্মাল, মােত্তাকী ১৬ তম খণ্ড, পৃ.২৬৬।
▪️ইবনে শাইবা স্বীয় সূত্রে ইবনে মাসুদ হতে বর্ননা করেছেনঃ– একদিন আমরা রাসূল(সা)’এর নিকট বসেছিলাম । হটাৎ বনী হাশিমের একদল নারী পুরুষ সেখানে আসলো ।মহানবী(সাঃ) দেখা মাত্রই কাঁদতে শুরু করলেন এবং উনার চেহারা মুবারক পরিবর্তিত হয়ে গেলো । সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা) কেন আপনার চেহারায় বিষন্নতা লক্ষ্য করছি ?রাসূলুল্লাহ(সা)’বললেনঃ আমরা এমন এক বংশ যাদের আখেরাতকে মহান আল্লাহ দুনিয়ার উপর প্রাধান্য করেছেন । বেশি দূরে নয় আমার আহলে বাইতের উপর বিপদাপদ ও নির্বাসনের দুর্যোগ নেমে আসবে । সূত্র:আল মুসান্নীফ খন্ড-৮,পৃঃ ৬৯৭]
▪️উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালামা বর্ণনাঃ মুসতাদরাকে সহীহাইন, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, তারিখে ইবনে আসাকির সহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে বর্ণনাকারী বলেনঃ উম্মে সালমা (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিলেন যে, এক রাতে মহানবী (সাঃ) ঘুমানাের জন্য বিছানায় শুলেন এবং (কিছুক্ষণ) পরে বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলেন, পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন ও নীরব হলেন। দ্বিতীয়বার প্রথমবারের চেয়ে আরও বেশী বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পুনরায় হাতে রক্তিম বর্ণের মাটি হাতে নিয়ে তাতে চুম্বনরত অবস্থায়-জেগে উঠলেন। আমি বললাম ! হে আল্লাহর রাসূল! এ মাটি কিসের ? তিনি (সাঃ) বললেন, জিবরাঈল আমাকে সংবাদ দিল যে, হুসাইন কারবালার মাটিতে শহীদ হবে। আমি জিবরাঈলকে বললাম যে মাটিতে শহীদ হবে তা আমাকে দেখাও। আর এ হল সেখানকার মাটি।মহানবী (সাঃ) সে মাটির গন্ধ নিলেন এবং বললেন, এ মাটি থেকে বিপদ-আপদের গন্ধ আসছে। তারপর সে মাটি তিনি আমার হাতে দিয়ে বললেন এ মাটি যখন রক্ত হয়ে যাবে তখন বুঝে নেবে হোসাইন শহীদ হয়েছে। আমি ঐ মাটি শিশিতে ভরে রাখলাম। যেদিন ইমাম হোসাইন শহীদ হলেন সেদিন এ মাটি রক্তে পরিণত হয়েছিল।
বিঃদ্রঃ-হাকিম বলেন,এ হাদীসটি প্রসিদ্ধ দুই হাদীসবেত্তার (বোখারী ও মুসলিম) শর্তানুসারে সহীহ হাদীস বলে গণ্য কিন্তু তারা এটি তাদের নিজেদের গ্রন্থে বর্ণনা করেন নি।
তথ্যসূত্রঃ – মুসতাদরাকে সহীহাইন ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৯৮/ আল মােজামূল কাবির তাবরানী হাদীস নং ৫৫/ তারিখে ইবনে আসাকির, হাদীস নং ৬১৯/তাবাক্বাতে ইবনে সা’দ, গবেষণা ও প্রকাশ, আব্দুল আজীজ তাবাতাবায়ী, পৃ. ৪২-৪৪ হাদীস নং ৬২৮, তারিখুল ইসলামে যাহাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১। সিয়ারু আলামুন নুবালা এ লামুনন্নব ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৯৪,ও ১৯৫/ছাওয়ায়েকে মুহারেকা/মাকতালুল খাওয়ারেযমী ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৮ ও ১৫৯/ যাখায়েরুল ওকুবা, মুহিব আত্ তাবারী পৃ. ১৪৮ও ১৪৯ /তারিখে ইবনে কাসির ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৩০/ কানযুল উম্মাল, মােত্তাকী ১৬ তম খণ্ড, পৃ.২৬৬।
▪️ইবনে শাইবা স্বীয় সূত্রে ইবনে মাসুদ হতে বর্ননা করেছেনঃ একদিন আমরা রাসূল(সা)’এর নিকট বসেছিলাম । হটাৎ বনী হাশিমের একদল নারী পুরুষ সেখানে আসলো ।মহানবী(সাঃ) দেখা মাত্রই কাঁদতে শুরু করলেন এবং উনার চেহারা মুবারক পরিবর্তিত হয়ে গেলো । সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ(সা)’কেন আপনার চেহারায় বিষন্নতা লক্ষ্য করছি ?রাসূলুল্লাহ(সা)’বললেনঃ আমরা এমন এক বংশ যাদের আখেরাতকে মহান আল্লাহ দুনিয়ার উপর প্রাধান্য করেছেন । বেশি দূরে নয় আমার আহলেবাইতের উপর বিপদাপদ ও নির্বাসনের দুর্যোগ নেমে আসবে ।
সূত্রঃ আল মুসান্নীফ খন্ড-৮,পৃঃ ৬৯৭
▪️সিহাসীত্তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সুনান এ ইবনে মাজা গ্রন্থে এসেছেঃ– একদা রাসূলুল্লাহ(সা) নিজ স্ত্রী উম্মে সালমা (রা.) বললেনঃ আমি বিশ্রাম করবো তাই যদি আসে তাকে ফিরিয়ে দিবে ।অতঃপর যখন ইমাম হুসাইন (আঃ) আসলেন উম্মে সালমা (রা.) ইমাম হুসাইন (আঃ) কে থামিয়ে দিলেন তখন ইমাম হুসাইন (আঃ) ভিতর যাইতে চাইলেন তো ইমামের পা পিছলে গেলো(ইবনে মাজা এর অকাঈদ ভিক্তিক)। তখন রাসূলুল্লাহ(সা) জিগ্গাসা করলেন তুমি হুসাইনকে আসতে বাধা দিয়েছো ? উম্মে সালমা বললেন-আপনি বলেছেন যে কাওকে ভিতরে না করতে দিতে।তখন রাসূলুল্লাহ(সা) বললেনঃ আমি কাওকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিবে না এর অর্থ হলো সবাইকে নয় হুসাইনতো আমার আপন “হুসাইন আমার হতে আমি হুসাইন হতে”এবং যে সময় ইমাম হুসাইন (আঃ) এর পা পিছলে গিয়েছিলো তখন রাসূলুল্লাহ(সা) দৌড়ে গেলেন তাকে তুললেন এবং দুঃখপ্রকাশ করলেন।”
এখান থেকে অতি সহজে প্রমানিত হয়ে যায় যে ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর কস্ট রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনোই সহ্য করেন নাই । শোক ও মাতমের দলিল থাকা সত্যেও যারা এটিকে এড়িয়ে ফতোয়া দিচ্ছে মাতম না করে সবর করা উচিত তাদেরকে সকল ফিকহ এর উসুল মোতাবেক বলছি- রাসূলুল্লাহ(সাঃ) নিজ সন্তানের কস্ট সহ্য না করে দুঃখ প্রকাশ করে প্রমান করলেন আমার সন্তানের শোকে শোক পালন হবে । আর এ শোকের বিরোধিতাকারী হবে সুন্নাহ বিরোধী।
উপরোক্ত বর্ণিত হাদীসে এটাও স্পস্ট হয়ে যায় যে,সর্বপ্রথম শোক,মাতম পালনকারী ব্যক্তি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যিনি ইমাম হোসাইন (আঃ) শাহাদতের পুর্বেই তার উপডে আগত মুসিবতকে কথা স্বরন করে ক্রন্দন করেছিলেন,শোকাহত হয়েছিলেন। যে ঘটনা সংগঠিত হওয়ার আগে থেকে সয়ং রাসূল (সাঃ)’আহলে বাইতের উপর আগত মুসিবতকে কথা স্বরন করে ক্রন্দন করেছিলেন,শোকাহত হয়েছিলেন, তাহলে উক্ত ঘটনার পর কি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আহলে বাইতের মুসিবত দেখে ধৈর্য ধরে চুপ থাকতেন নাকি ক্রন্দন করতেন ? তিনি (সাঃ)’হচ্ছেন মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল তিনি চাইলে মওলা হুসাইন (আঃ)’এর শাহাদাতের খবর পেয়ে ধৈর্য ধারণ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি ধৈর্য না ধরে শোকাহত হয়েছিলেন ও ক্রন্দন করেছিলেন।যদি ইমামের শাহাদাত এর আগে রাসূল (সাঃ)’শোকাহত হয়ে থাকেন, তাহলে কি ইমামের শোকের পর রাসুলাল্লাহ (সাঃ)’ধৈর্য ধরে বিষয়টি সমাপ্ত করে দিতেন ? মহানবী (সাঃ)-এর ইন্তেকালের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়। মহানবীর জীবদ্দশায় যদি কারবালা ঐ ঘটনা সংঘটিত হতে তাহলে তিনি হয়তো ভবিষ্যতে স্মরণ করার জন্য একটা সমীচীন ব্যবস্থা করে যেতেন।বারবার কেউ যদি কোন মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ করে এর পর্যালোচনা করে তবে এর কিছু না কিছু প্রভাব তার মধ্যে অবশ্যই আসবে। এটা কারো অজানা নয়।কারবালার ঘটনাবলী বার বার পর্যালোচনা করলে বা বার বার স্মরণ করলে যে সব অপকর্মের ফলে পৃথিবীতে ইয়াযিদিগণ আজও ঘৃণিত-নিন্দিত তা থেকে মানুষ দুরে থাকতে চেষ্টা করবে।