ড. আবু উসামা মুহাররম
শামাউনের কন্যা মারিয়া (মৃত্যু: ১৬হিজরি), যিনি মারিয়া কিবতিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। নবি (সা.)-এর অন্যতম স্ত্রী; যার ঔরষে ইব্রাহিমের জন্ম হয়েছিল। নবির চিঠির জবাবে মিশর ও আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক মুকাওকিস তাঁকে নবির কাছে উপহার দিয়ে পাঠান। নবির স্ত্রীদের মধ্যে হযরত খাদিজা ব্যতীত মারিয়াই একমাত্র মহিলা যিনি নবির সন্তানের মা ছিলেন।
শামাউনের কন্যা মারিয়া মিশরের “আনসানা” অঞ্চলের “হাফন” গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হিজরী সপ্তম বর্ষে আল্লাহর রসুল (সা.) হাতিব বিন আবি বালতাহকে মিশর ও আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক মুকাওকিসকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য একটি চিঠি সহ পাঠান।তিনি ছিলেন মিশরের রাজার কন্যাদের একজন। তাকে ও তার বোন “সিরিন” মতান্তরে”শিরিন” ও অনেক উপহারও সহ রসূল (সা.)এর নিকট পাঠানো হয়। এই উপহারগুলির সাথে মুকাওকিস নবিকে একটি চিঠিও লিখেন; যার একটি অংশে বলা হয়েছে: “আমি আপনার বার্তাবাহককে সম্মানিত করেছি এবং আপনার কাছে দুটি দাসী পাঠিয়েছি। যারা কিবতি সম্প্রাদায়ের বিশাল ভূমিতে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।” বর্ণিত আছে যে হাতিব ইবনে আবি বালতাহ রাস্তার মাঝখানে তাদের কাছে ইসলামের পরিচয় দেন এবং তারা মুসলমান হয়ে যায়।
নবি (সা.) এর সাথে বিবাহ
মদিনায় প্রবেশের পর আল্লাহর রসূল (সা.) মারিয়াকে নিজের জন্য বেছে নেন এবং হাসসান বিন সাবিরতের নিকট সিরিনকে উপহার দেন। উম্মুল মুমিনীন মারিয়ার প্রথম বাসস্থান ছিল হারিসা বিন নুমানের বাড়ি। তিনি এক বছর এই বাড়িতে বসবাস করেন। মারিয়ার যোগ্যতা এবং তার প্রতি নবির মনোযোগ নবির কিছু স্ত্রীদের বিশেষ করে আয়েশার ঈর্ষা জাগিয়ে তুলেছিল। মারিয়া একজন খাঁটি মহিলা, ধার্মিক, গুণী, যোগ্য এবং নবি (সা.) এর বিশেষ পছন্দের ছিলেন। ঐতিহাসিক ও জীবনীকাররা তার ধর্ম-কর্মের জন্য তার প্রশংসা করেছেন। নবি (সা.) রাবিকে বলেন, “যখন তুমি মিশর জয় করবে, তখন তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, কারণ আমি তাদের জামাই।”।
সুরা তাহরিমের আয়াত অবতীর্ণ
একদিন হাফসা তার বিশেষ দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে তার বাবার নিকট কোনো কাজে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। হযরত তাকে অনুমতি দিলেন। হাফসা চলে যাওয়ার পর তার অন্য স্ত্রী মারিয়াকে রাসুলের কাছে নিয়ে গেলেন। হাফসা মারিয়ার সাথে নবিকে দেখে বিরক্ত হয়ে নবিকে বকাঝকা করলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারিয়াকে তার নিজের কাছে রেখে দেন।
এ সময় সূরা তাহরীমের প্রথম আয়াত নাযিল হয়।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكَ ۖ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ ۚ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“হে নবি, আপনার স্ত্রীদের খুশি করার জন্য আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন আপনি তা হারাম করছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।”।
অবশেষে, আল্লাহর নবি (সা.) মারিয়াকে মদিনার বাইরে খেজুর বেষ্টিত আলিয়া নামক একটি ছোট পল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যান। যেটি বনি নাজির অভিযানের সময় তার হস্তগত হয়েছিল (আজ উম্মে ইব্রাহিমের মাশরাবা নামে পরিচিত) রাসুল তাকে সেখানে দেখতে যেতেন। এখন এই স্থানটি একটি জরাজীর্ণ কবরস্থান এবং সেখানে ইমাম রেজা (আ.)-এর মা নাজমেহ এবং ইমামদের বংশধরদের এবং আহলে বাইত (আ.)-এর প্রেমিকদের কবর রয়েছে৷ কারণ ইরানিরা মাঝে মাঝে তীর্থযাত্রার জন্য সেখানে যে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এর চারপাশে উঁচু প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে এবং তারা সেখানে ইরানিদের যেতে দেয় না।
নবির পুত্র ইব্রাহিমের জন্ম
বলা হয়েছে যে, খাদিজা ছাড়া মারিয়াই একমাত্র মহিলা যিনি মহানবি (সা.)-এর জন্য একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। মারিয়া নতুন বাড়িতে বসতি স্থাপনের কিছুদিন পর আল্লাহর রসূল (সা.)-এর পুত্র ইব্রাহিম (আ.) হিজরির ৮ম বর্ষের জিলহজ মাসে জন্মগ্রহণ করেন । এ সময় জিব্রাইল অবতীর্ণ হন এবং তিনি নবিকে “আবু ইব্রাহিম” উপাধি দিয়ে অভিবাদন জানান। এবং বলেন: “দেখুন এই শিশুটি আমার মতো দেখতে কত!”। ইব্রাহিম হিজরির দশম বর্ষে মারা যান এবং তাকে জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত করা হয়। রাসুল (সা.) তার শোকে দুঃখ পেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “এই শোক অশ্রু প্রবাহিত করে এবং হৃদয়কে দুঃখ দেয়, তবে আমি এমন কিছু বলব না যা প্রভুর ক্রোধের কারণ হবে।”
মারিয়ার মৃত্যু
মহানবি (সা.)-এর ইন্তেকালের পাঁচ বছর পর ১৬ই মুহাররম মাসে মারিয়া মারা যান এবং তাকে জান্নাতুল বাকীতে সমাহিত করা হয়।
পাদটীকা
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 1, পৃ. 107।
- তাবার, তারিখুল উম ওয়াল মুলুক, 1378 হি, খণ্ড 11, পৃ. 617।
- বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, 1959, খণ্ড 1, পৃ. 449।
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 1, পৃ. 200।
- বালাযুরি, আনসাব আল-আশরাফ, 1959, খণ্ড 1, পৃ. 449।
- তাবারি, তারিখ আল-উম ওয়াল আল-মুলুক, 1378 হি, খণ্ড 11, পৃ. 617।
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 8, পৃ. 171।
- তাবারি, তারিখুল উম ওয়াল মুলুক, 1378 হি, খণ্ড 3, পৃ. 22।
- ইবনে কাসির, আল বেদাইয়া ওয়ান নাহাইয়া, 1407 হি, খণ্ড 7, পৃ.74।
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 1, পৃ. 107।
- হামভি, মুজামুল বুলদান, 1995, খণ্ড 5, পৃ. 138।
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 8, পৃ. 182।
- সূরা তাহরিম, আয়াত 1।
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 1, পৃ. 107।
- “মারিয়া, নবি (সা.) এর স্ত্রী, ইব্রাহিমের মা”,
- ইবনে আবদুল বার, আল ইসতিয়াব, 1412 হি, খণ্ড 1, পৃ. 50।
- বালাযুরি, আনসাব আল আশরাফ, 1959, খণ্ড 1, পৃ. 450
- বালাযুরি, আনসাব আল-আশরাফ, 1959, খণ্ড 1, পৃ. 450।
- ইবনে সাদ, তাবাকাতুল কুবরা, 1414 হি, খণ্ড 1, পৃ. 114-115।
- বালাযুরি, আনসাব আল-আশরাফ, 1959, খণ্ড 1, পৃ. 450।