Press "Enter" to skip to content

করজে হাসানাহ

মো. রফিকুল ইসলাম

“করজে হাসানাহ” শব্দ দুটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে। কর্জ অর্থ ঋণ আর হাসানাহ অর্থ উত্তম । অর্থাৎ করজে হাসানাহ অর্থ উত্তম ঋণ। আরবি ভাষার এ শব্দ দুটি বাংলা ভাষায় একটি পরিভাষা হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সাওয়াবের নিয়তে শর্ত ছাড়া কাউকে ঋণ প্রদান করাকে করজে হাসানাহ বলে।

কর্জ বা ঋণ দুই প্রকার।

১. শর্তযুক্ত ঋণ

২. শর্ত ছাড়া ঋণ।

১. শর্তযুক্ত ঋণ: যে ঋণ গ্রহণের ফলে ঋণগ্রহীতাকে গ্রহণকৃত অর্থের সাথে অতিরিক্ত অর্থ ঋণদাতাকে প্রদান করতে হয়। শর্তযুক্ত ঋণ আবার দুই প্রকার।

ক.  যে শর্তযুক্ত ঋণ ব্যবসা বা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয়। এটা হালাল বা বৈধ।

খ.  যে শর্তযুক্ত ঋণ ব্যবসা বা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয় না বরং তা ভোগ বা বিনোদনের জন্য নেয়া হয়। এটা হারাম বা নিষিদ্ধ। কারণ এ ধরণের ঋণ মানুষ গ্রহণ করে থাকে অভাবে পরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অথবা শখ বা বিলাস সামগ্রী ক্রয় করার জন্য।এ ধরণের ঋণ গ্রহণ বা প্রদানকেই ইসলামে সুদ বা রিবা বলা হয়েছে।

## রিবা শব্দটি আরবি।এর অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, প্রবৃদ্ধি। রিবা বা প্রবৃদ্ধি যা ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত হয়,তা হালাল বা বৈধ। আর যে রিবা বা প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এমন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে যাতে ঋণদাতা ঋণ প্রদান করে – ক) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। খ) নির্দিষ্ট হারে।

এ সময়ের মধ্যে ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণদাতা মূল ঋণের সাথে সুদ বা প্রবৃদ্ধি যোগ করে পুনরায় সুদ ধার্য করে।যাকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বলে। এটা জুলুম। উভয় ক্ষেত্রেই যেহেতু রিবা বা প্রবৃদ্ধি হয়ে থাকে। এজন্য অবিশ্বাসীরা ব্যবসা এবং ঋণ প্রদানের মাধ্যমে রিবা বা প্রবৃদ্ধিকে একই রকম মনে করত। অথচ আল্লাহ তাআলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং ঋণ প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত রিবা বা প্রবৃদ্ধিকে হারাম করেছেন।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ  ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا  وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا  فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ  وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ  هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥]

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (সুরা বাকারাহ ২ : ২৭৫ )

২. শর্ত ছাড়া ঋণ: যে ঋণ গ্রহণের ফলে ঋণগ্রহীতাকে গ্রহণকৃত অর্থের সাথে অতিরিক্ত অর্থ ঋণদাতাকে প্রদান করতে হয় না বরং ঋণদাতা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সাওয়াবের নিয়তে শর্ত ছাড়া কাউকে ঋণ প্রদান করে থাকে।পবিত্র কুরআনে এ ধরণের ঋণ প্রদানকে করজে হাসানাহ বলা হয়েছে।

ইসলামি শরীয়তে করজে হাসানাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদত। এটি ফরযে কেফায়া। ইসলামি সমাজের কেউই এটা পালন না করলে সবাই ফরয তরকের গোনাহে গোনাহগার হবে। কারণ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা করজে হাসানাহ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ তাআলার বাণী:

إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِّنَ الَّذِينَ مَعَكَ  وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ  عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ  فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ  عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ  وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ  وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ  فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ  وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا  وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا  وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ  إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٧٣:٢٠]

আপনার পালনকর্তা জানেন, আপনি এবাদতের জন্যে দন্ডায়মান হন রাত্রির প্রায় দু’তৃতীয়াংশ, অর্ধাংশ ও তৃতীয়াংশ এবং আপনার সঙ্গীদের একটি দলও দন্ডায়মান হয়। আল্লাহ দিবা ও রাত্রি পরিমাপ করেন। তিনি জানেন, তোমরা এর পূর্ণ হিসাব রাখতে পার না। অতএব তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরায়ন হয়েছেন। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা মুযযাম্মিল ৭৩ : ২০ )

এ আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা নামাজ ও যাকাত আদায়ের সাথে করজে হাসানাহ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারাহ ২ : ২৪৫, সুরা মায়েদাহ ৫ : ১২, সুরা আল হাদিদ ৫৭ : ১১ ও ১৮ এবং সুরা আত তাগাবুন ৬৪ : ১৭ আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ তাআলা করজে হাসানাহ প্রদানের কথা বলেছেন। প্রত্যেকটি আয়াতেই আল্লাহ তাআলা নিজেকে করজে হাসানাহ প্রদানের কথা বলে এর গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং এ আমলটি যে মহান আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত প্রিয় তা ব্যক্ত করেছেন।

## করজে হাসানাহ কাদের উপর ফরজ: যাদের উপর যাকাত,খুমুস ও হজ্জ আদায় করা ফরজ এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে করজে হাসানাহ আবশ্যিকভাবে প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ রয়েছে।(সুরা মুযযাম্মিল ৭৩ : ২০ )। করজে হাসানাহ প্রদানকারীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

ক.   কেউ ঋণ প্রার্থী হলে তাকে ঋণ দেওয়া।

খ.   ঋণগ্রহীতা যদি চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তবে সেক্ষেত্রে ঋণদাতা সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত তাকে সুযোগ দিবে বা মাফ করে দিবে। পবিত্র কুরআনে এসেছে,

وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍ  وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَّكُمْ  إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢:٢٨٠]

যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি কর।

গ.   ঋণগ্রহীতার সাথে নরম ও ভদ্রসুলোভ ব্যবহার করতে হবে। কঠোরতা, গালি-গালাজ ও ঝগ্রা-বিবাদ করা যাবে না।

ঘ.    খোটা বা অন্য কোনোভাবে ঋণগ্রহীতাকে কষ্ট না দেওয়া। মহান আল্লাহর বাণী,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ  فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا  لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا  وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ [٢:٢٦٤]

হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা বাকারাহ ২:২৬৪)

## করজে হাসানাহ কারা গ্রহণ করবে:  যাদের ঋণ গ্রহণ ছাড়া নিজ পরিবার পরিচালনা করা কষ্টকর, এমন ব্যাক্তি করজে হাসানাহ গ্রহণ করবে। তবে তাদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

১.       ঋণগ্রহণ ছাড়া অন্যভাবে তাদের অভাব পূরন সম্ভব কি না।

২.       ঋণগ্রহণ করলে সময়মত পরিশোধ করতে পারবে কি না।

৩.       বিশেষ প্রয়োজন এবং সময়মত ঋণ পরিশোধের প্রবল ধারণা ছাড়া ঋণগ্রহণ জায়েয নয়।

৪.       অপচয় ও অন্যায় কাজে ঋণ নেওয়া এবং ঋণকে জীবনের সাধারণ নিয়মে পরিণত করা যাবে না।

৫.       ঋণ একটি বোঝা। ঋণগ্রস্ততা অনেক সময় অশান্তি, দুশ্চিন্তা ও অনৈতিকতার কারণ হয়।

৬.       ঋণগ্রস্ত ব্যাক্তি সদাসর্বদা আল্লাহ তাআলার কাছে ঋণ থেকে আশ্রয় চাইবে এবং দোয়া করবে, যেন আল্লাহ তাআলা ঋণ ছাড়াই সব প্রয়োজন পূরণ করে দেন।

৭.       ঋণ নেয়ার সময় খারাপ নিয়ত রাখা বা ঋণ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পরা যাবে না। মহানবী সা. বলেন, যে ব্যাক্তি পরিশোধ করার নিয়তে ঋণ নেয়, আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দেন। আর যে ব্যাক্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তা ধ্বংস করে দেন। – বুখারী শরীফ, হাদীস ২৩৮৭

৮.       ঋণ দেওয়ার জন্য দাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, তার জন্য দোয়া করা। এতে দাতা খুশি হবে এবং ঋণদানে উৎসাহিত হবে।

৯.       ঋণ বান্দার হক, যা পরিশোধ করতে হয় অথবা দাতা কর্তৃক মাফ পেতে হয়। হাদীসে এসেছে, ঋণ ছাড়া শহীদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। মুসলিম শরীফ, হাদীস ১৮৮৬

## করজে হাসানাহ বা উত্তম ঋণ দাতা ও গ্রহীতার দায়িত্ব-কর্তব্য:

১.   ঋণের আদান-প্রদান লিখিত চুক্তির মাধ্যমে হতে হবে।

২.   একজন লেখক এ চুক্তিপত্রটি ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখে দিবে।

৩.   ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার পছন্দমত দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলাকে সাক্ষী করতে হবে।

৪.   ঋণ ছোট হোক বা বড় হোক সর্বাবস্থায় তা লিখিতভাবে হতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ তাআলার নিরদেশ।আল্লাহর বাণী,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ  وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ  وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّهُ  فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا  فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ  وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ  فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَىٰ  وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا  وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ  ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا  إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا  وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ  وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ  وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ  وَاتَّقُوا اللَّهَ  وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ  وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ [٢:٢٨٢]

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন। (সুরা বাকারাহ ২:২৮২)