Press "Enter" to skip to content

জন্মদিন ও ঈদে মীলাদুন্নাবী (সা.) উদযাপন

নূর হোসেন মাজিদী

কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে নবী-রাসূলগণের (আ.) জন্ম আনন্দের বিষয়। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা বেশকয়েকজন নবী-রাসূলের (আ.) জন্মের আগাম সংবাদ দিতে গিয়ে তাকে “সুসংবাদ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

হযরত ইবরাহীম (‘আ.) একজন সুসন্তানের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে আবেদন জানালে আল্লাহ্ তা‘আলা তা কবুল করেন এবং হযরত ইসমা‘ঈল (‘আ.)-এর জন্মের আগাম সুসংবাদ দেন; এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে :

فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلامٍ حَلِيمٍ

“অতঃপর আমি তাকে একজন ভদ্র-নম্র পুত্রের (জন্মের) আগাম সুসংবাদ দিলাম।” (সূরাহ্ আছ-ছাফফাত্ : ১০১)

তেমনি হযরত ইসহাক্ব্ (‘আঃ)-এর জন্মের আগাম সুসংবাদ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে :

وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيًّا مِنَ الصَّالِحِينَ

“আর আমি তাকে (ইবরাহীমকে) ইসহাক্বের (জন্মের) আগাম সুসংবাদ দিলাম – যে সুযোগ্য নবীদের অন্যতম। ” (সূরাহ্ আছ-ছাফফাত্ : ১১২)

আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত যাকারীয়া’ (‘আঃ)কে সম্বোধন করে এরশাদ করেন :

يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلامٍ اسْمُهُ يَحْيَى لَمْ نَجْعَلْ لَهُ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا

“হে যাকারীয়া! নিঃসন্দেহে তোমাকে একটি পুত্রের (জন্মের) আগাম সুসংবাদ দিচ্ছি – যার নাম ইয়াহইয়া; তার জন্য এমন কোনো নামকরণ করি নি পূর্বে কেউ যে নামের অধিকারী ছিলো। “ (সূরাহ্ মারইয়াম : ৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা চাইলে এসব আয়াতে যথাক্রমে اَخبَرنا (সংবাদ দিলাম) ও نُخبِرُ (সংবাদ দিচ্ছি) বলতে পারতেন, কিন্তু তিনি বলেন নি, বরং সুসংবাদের কথা বলেছেন।

শুধু তা-ই নয়, স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত ইয়াহইয়া (আ.)কে তাঁর জন্মের পর অভিনন্দন (সালাম) জানান। এরশাদ হয়েছে :

وَسَلامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا

“আর অভিনন্দন (সালাম) তার প্রতি যেদিন সে জন্মগ্রহণ করেছে এবং যেদিন সে মৃত্যুবরণ করবে ও যেদিন সে জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবে। “(সূরাহ্ মারইয়াম : ১৫)

আর হযরত ‘ঈসা (‘আঃ) তাঁর মাতৃক্রোড়ে থাকা অবস্থায় বানী ইসরাঈলের লোকদের উদ্দেশে স্বীয় নবুওয়াতের ঘোষণা প্রদানের পর নিজেকেই নিজে অভিনন্দিত করেন; তিনি বলেন :

وَالسَّلامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا

“আর অভিনন্দন (সালাম) আমার প্রতি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করবো ও যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবো।” (সূরাহ্ মারইয়াম : ৩৩)

উপরের আয়াতগুলোতে “সালাম” অর্থ “শান্তি বর্ষিত হোক” করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিটি আয়াতেই জন্মের পরে সালামের কথা আছে, আর “শান্তি বর্ষিত হোক” কথাটা ভবিষ্যত কাল বাচক; অতীতে যা ঘটেছে সে জন্য ব্যবহৃত হতে পারে না। আর যেহেতু আয়াতগুলোতে সুস্পষ্টভাবে কোনো ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয় নি সেহেতু তাতে অতীতে জানানো অভিনন্দন এবং ভবিষ্যতের জন্য আগাম অভিনন্দন উভয় অর্থকেই শামিল করা সম্ভব।

অতএব, এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নবী-রাসূলগণের (‘আ.) জন্ম হচ্ছে আনন্দের ঘটনা বা সুসংবাদ এবং সে জন্য তাঁরা তাঁদের “জন্মের দিনে” অভিনন্দন পাওয়ার উপযুক্ত। শুধু তা-ই নয়, যেহেতু তাঁদের পার্থিব মৃত্যু মানে অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালনের পর প্রভুর সান্নিধানে উপস্থিতি – যখন আর তাঁরা দায়িত্ব পালনে ত্রুটি হবার আশঙ্কা করছেন না সেহেতু পার্থিব মৃত্যু তাঁদের জন্য আনন্দের ব্যাপার, সুতরাং তা-ও অভিনন্দনযোগ্য।

আর এ থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, নিষ্পাপ অবস্থায় জন্মগ্রহণের কারণে যে কোনো শিশুর জন্মই সুসংবাদ ও অভিনন্দনযোগ্য এবং দৃশ্যতঃ আমরা যাদেরকে নেককার হিসেবে জানি তাঁদের জন্মদিনও আমাদের জন্য আনন্দের। তাই এ উপলক্ষ্যে নির্দোষ আনন্দ-উৎসব করায় গুনাহ্ হওয়ার কোনোই কারণ নেই। বিশেষ করে নিষ্পাপ বা নেককার ব্যক্তিদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বা উৎসবে (ও মৃত্যুদিবসের অনুষ্ঠানেও) যদি কোরআন তেলাওয়াত, দো‘আ, মুনাজাত ইত্যাদি ছাওয়াবের কাজ আঞ্জাম দেয়া হয় ও দান-ছাদাক্বাহ্ করা হয় এবং তাঁদের জীবনাচরণ ও আদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করে উত্তম শিক্ষা গ্রহণ করা হয় তাহলে তা খুবই উত্তম।