Press "Enter" to skip to content

রেওয়ায়েতের আলোকে টিকটিকি

এস, এ, এ

টিকটিকি (বৈজ্ঞানিক নাম: Hemidactylus frenatus ভূমধ্যসাগরীয় প্রজাতিঃ Hemidactylus turcicus। এশীয় টিকটিকিকে ভূমধ্যসাগরীয় গৃহটিকটিকির সাথে উল্টাপাল্টা করা যাবে না) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় সরীসৃপ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় গৃহটিকটিকি, এশীয় গৃহটিকটিকি,দেয়াল টিকটিকি,গৃহগিরগিটি,বা চন্দ্রগিরগিটি নামেও পরিচিত। বেশিরভাগ টিকটিকিই নিশাচর, দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে এবং রাতে পোকামাকড়ের সন্ধানে বের হয়। এগুলি বারান্দার আলোর প্রতি আকৃষ্ট পোকামাকড়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে চড়ে বেড়ায় এবং বিশেষ “টিক টিক” শব্দ শুনে এদের চিহ্নিত করা যায় ।

এরা দৈর্ঘ্যে ৭৫–১৫০ মিমি (৩–৬ ইঞ্চি) হয় এবং প্রায় ৫ বছর বেঁচে থাকে। অধিকাংশ মাঝারি থেকে বৃহদাকারের টিকটিকি শান্ত প্রকৃতির হয়। কিন্ত বিপদের আভাস পেলে এরা কামড় দিতে পারে। Hemidactylus frenatus উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে থাকে যেখানে এরা পচা কাঠে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য বুকে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়ায় I এসব স্থানের পাশাপাশি শহুরে পরিবেশেও এদের দেখা যায়। প্রাণীটি খুব দ্রুত এর আশেপাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে । এরা পোকামাকড় ও মাকড়সা শিকার করে খায়।

হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: টিকটিকি হচ্ছে নাপাক সরীসৃপ প্রাণি। পূর্বে টিকটিকির অন্য রূপ ছিল পরবর্তিতে আল্লাহ তাদেরকে টিকটিকিতে রূপান্তরিত করে দেন। যখন তোমরা টিকটিকি মারবে তখন গোসল করবে।

ইমাম জাফর সাদিক্ব  (আ.) বলেন: একদা আমার পিতা ইমাম বাকির (আ.) মসজিদুল হারামে বসে একজনের সাথে কথা বলছিলেন এমতাবস্থায় সেখানে একটি টিকটিকি পরিলক্ষিত হয় যে নিজের জিহবাকে বারবার বাহির করছিল ইমাম (আ.) তাঁর কাছে বসে থাকা একজন সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি জান এই টিকটিকি কি বলছে? সে বলে: না আমি জানি না। ইমাম (আ.) বলেন: এই টিকটিকি বলছে: তোমরা যদি উসমান সম্পর্কে খারাপ কিছু [অভিসম্পাত কর] বল তাহলে আমি আলী সম্পর্কে খারাপ কথা বলবো। তখন আমার পিতা ইমাম বাকির (আ.) বলেন:

(لیس یموت من بنی امیه میّت الّا مسخ وزغاً) যখন কোন বণি উমাইয়া মারা যায় সে টিকটিকিতে পরিণত হয়। যখন আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান-এর মৃত্যুর সময় যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে এবং মারা যায় হঠাৎ সে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার সন্তান ওয়ালিদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে, খুরমা গাছের কান্ডকে একজন মানুষের আকার অনুযায়ি কাটে এবং তাতে লোহার বর্ম পরিয়ে দেয় যেন লোকজন তা বুঝতে না পারে এবং এভাবে তার দাফন কার্য সম্পাদিত হয়। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র মারওয়ানের পরিবার, আমি এবং আমারর সন্তান ব্যাতিত আর কেউ জানে না। [কাফি, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৩২, হাদীস নং ৩০৫, আল খারায়েজ ওয়াল জারায়েহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪]

রাসুল (সা.)-এর যুগে কোন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে তাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হতো যেন তিনি ঐ বাচ্চার জন্য দোয়া করেন। যখন মারওয়ান বিন হাকাম জন্মগ্রহণ করে তখন হযরত আয়েশা তাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যায় রাসুল (সা.) ঐ বাচ্চাকে দেখে বলেন: (اخرجوا عنی الوزغ ابن الوزغ) “এই বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাও টিকটিকির বাচ্চা টিকটিকি”। [মুসতাদরাক, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৭৯, ইয়ানাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৬৯, কিতাবুল ফেতান, পৃষ্ঠা ৭৩, কাফি, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৩৮]

আল্লামা মাজলিসি (রহ.) আরো বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে জ্বালানোর জন্য অগ্নিকুন্ডকে তৈরি করা হয় তখন টিকটিকি তার শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে, তার শরীরে সাদা সাদা দাগ পড়ে যায় এবং তার শরীর মাটির রঙ্গের হয়ে যায়। টিকটিকির বৈশিষ্ট হচ্ছে যে ঘর থেকে জাফরানের ঘ্রাণ আসে সে ঘরে টিকটিকি থাকে না এবং সে শীতকালে নিজের গর্ত থেকে বাহির হয় না এমনকি কিছু খায়ও না। [বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃষ্ঠা ২৩৭]

মরহুম বাহরানি তার “নাফিসুল হাদায়েক্ব” নামক গ্রন্থে করেছেন যেভাবে তওবা করলে গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং তারপরে গোসল করা মুস্তাহাব অনুরূপভাবে টিকটিকি মারলেও গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং তারপরে গোসল করা মুস্তাহাব। [হাদায়েক্বুন নাযেরা, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৯৫]

রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি টিকটিকিকে এক আঘাতে মারতে পারে তাহলে তাকে একশতটি সওয়াব দান করা হবে, আর কেউ যদি টিকটিকিকে দুই আঘাতে মারতে পারে তাহলে তাকে পঞ্চাশটি সওয়াব দান করা হবে এবং কেউ যদি টিকটিকিকে তিন আঘাতে মারতে পারে তাহলে তাকে প্রথম এবং দ্বিতীয় সওয়াবের চেয়ে কম সওয়াব দান করা হবে। [সহীহ মুসলিম, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪২, সুনানে ইবনে দাউদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩১, মুসনাদে আহমাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৬, শারহে উসুলে কাফি, খন্ড ১২, পৃষ্ঠা ৩১৪]

রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী বলেন যে: একদা আমি হযরত আয়েশা-এর ঘরে যায় সেখানে একটি বর্শা রাখা ছিল। আমি হযরত আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করি এটা দিয়ে আপনি কি করবেন? তিনি বলেন: এটা দিয়ে টিকটিকি মারবো। কেননা রাসুল (সা.) বলেছিলেন: যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন সকল প্রাণি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু টিকটিকি আগুন বুদ্ধির জন্য ফুঁ দিচ্ছিল। আর এইজন্য তিনি আমাদেরকে টিকটিকি মারার নির্দেশ দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১২, সহীস মুসলিম, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪২, মুসনাদে আহমাদ, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৮৩]

আরেকটি রেওয়ায়েত যা সিয়ুতী বর্ণনা করেছেন ব্যাঁঙ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য প্রজ্বলিত আগুনকে নিভানোর জন্য চেষ্টা করছিল কিন্তু টিকটিকি আগুনে ফুঁ দিচ্ছিল। আর এই কারণে ব্যাঙ মারতে নিষেধ করা হয়েছে আর টিকটিকি মারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [দুররুল মানসুর, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩২২, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬১, পৃষ্ঠা ৪৮, হাদীস নং ২৫]