Press "Enter" to skip to content

আলী বিন মাহযিয়ার আহওয়াযি কে ছিলেন?

এস, এ, এ

নাম:  

আলী বিন মাহযিয়ার আহওয়াযি দারুক্বি একজন ফক্বিহ, মুহাদ্দিস এবং শিয়াদের সম্মানিত ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমদিকে জীবন যাপন করতেন। ইমাম (আ.) গণের নিকটে তিনি যথেষ্ট বিশ্বস্তের পাত্র ছিলেন। এছাড়া তিনি একাধারে ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.) ও ইমাম আলী নাক্বি (আ.)’র নির্ধারিত উকিল ছিলেন।

আলী বিন মাহযিয়ার আহওয়াযি’র উপনাম আবুল হাসান, আহওয়াযি, দুরুক্বি। আলী বিন মাহযিয়ার খৃষ্টান ছিলেন এবং পরবির্তিতে নব যুবক বয়সে তিনি এবং তার পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি একজন ইবাদতকারী এবং জ্ঞান অন্বেষনকারী ছিলেন। তিনি আহলে বাইত (আ.)’র পক্ষে কথা বলতেন। ইমাম (আ.)’র সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল এবং ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.) একটি পত্রে তার খুব প্রশংসা করেন।

উপাধি:

আলী বিন মাহযিয়ার’র পিতা একজন খৃষ্টান এবং হিন্দবাসী ছিলেন। তবে পরবর্তিতে তার পিতা আহওয়াযের একটি গ্রামে বসবাস করে। আলী বিন মাহযিয়ার যৌবনকালে তার পিতার সহিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে, তিনি হিন্দিজান ফার্সের অধিবাসী ছিলেন। পূর্বে হিন্দিজান পুরাতন দুরুক্বের একটি শহর যা পারস্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।

আলী বিন মাহযিয়ার’র উপাধি ছিল আহওয়াযি, দারুক্বি। দুরুক্বি নামকরণ করা হয় কারণ তার জন্মস্থান ছিল দুরুক্ব যা খুজেস্তানের অন্তর্ভূক্ত ছিল।

আলী বিন মাহযিয়ারর বৈশিষ্টসমূহ:

ইবাদত:

আলী বিন মাহযিয়ার’র ইবাদত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, ফজরের নামাজের পরে সূর্যোদয়ের সময় তিনি হাজার মুমিনদের জন্য দোয়া সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেজদা থেকে মাথঅআকে উত্তোলন করতেন না। তার অতিরিক্ত সেজদারত অবস্থায় থাকার কারণে তার কপালে উটের হাটুর ন্যায় দাগ পড়ে যায়।

আলী বিন মাহযিয়ারর জ্ঞান:

শেখ তুসী’র বর্ণনা অনুযায়ি আলী বিন মাহযিয়ার তৃতীয় হিজরীর একজন প্রসিদ্ধ মুফাসসির ছিলেন। ত্রিশটিরও বেশী গ্রন্থ তিনি লিখেছেন। প্রায় ৪৩৭ রেওয়ায়েতে নথিতে তাঁর নাম উল্লেখ রয়েছে।

ইমাম (আ.)দের সাথে সম্পর্ক:

আলী বিন মাহযিয়ার ইমাম রেযা (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। তিনি ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.) এবং ইমাম আলী নাক্বি (আ.)’র ঘনিষ্ট সাহাবী এবং বিশ্বস্ত উকিল ছিলেন। তার নামে লিখা ইমাম (আ.)’র চিঠি আজও বিদ্যমান রয়েছে। আলী বিন মাহযিয়ার ইমাম আলী নাক্বি (আ.)’র নির্ধারিত উকিল ছিলেন। ইমাম (আ.)’র পক্ষ থেকে শিয়াদের উদ্দেশ্যে লিখা কিছু চিঠি আলী বিন মাহযিয়ার’র কাছে ছিল।

ইমামমীয়া মাযহাবের পৃষ্ঠপোষকতা:

আলী বিন মাহযিয়ার ফাতাহিয়া মাযহাবের অনুসারী আলী বিন আসবাত’র সাথে মুনাযিরা করতেন এবং এই বিষয় (মাযহাব) নিয়ে কথোপকথোন হতো। একপর্যায়ে তারা উভয়ে বিষয়টিকে নিয়ে ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি (আ.)’র সমীপে উপস্থিত হতেন এবং অবশেষে আলী বিন আসবাত তার বাতিল আকিদার জন্য পরাস্থ হতেন।

ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা:

আলী বিন মাহযিয়ারের লেখনীর বিষয়সমূহ নিন্মরূপ:

১. তিনি কোরআন বিষয়ক দুইটি গ্রন্থ রচনা করেছেন: হুরুফুল কোরআন এবং তাফসীর।

২. ইতিহাস সংক্রান্ত: তিনি আম্বিয়াদের জীবনি সম্পর্কে পুস্তক লিখেছেন।

৩. ফিক্বাহ সংক্রান্ত: আলী বিন মাহযিয়ারের অধিকাংশ গ্রন্থ হচ্ছে ফিক্বহ সংক্রান্ত যেমন: কিতাবুল ওয়াযু, কিতাবুস সালাত, কিতাবুয যাকাত, কিতাবুস সওম, কিতাবুল হজ্ব, কিতাবুত তালাক্ব, কিতাবুল হুদুদ, কিতাবুত দিয়াত, কিতাবুত তাফসীর, কিতাবুল ফাযায়েল, কিতাবুল ইতক্ব, কিতাবুত তাদবীর, কিতাবুল তেজারাত ওয়াল এজারাত, কিতাবুল মাকাসিব।

৪. অন্যান্য: কিতাবুল মাসালেব, কিতাবুদ দোয়া, কিতাবুল তাজাম্মুল ওয়াল মারওয়া এবং কিতাবুল মাযার।

শিক্ষকবৃন্দ:

খুয়ী’র বর্ণনা অনুযায়ি আলী বিন মাহযিয়ার প্রায় ৫০জন ব্যাক্তিত্বদের কাছ হতে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ ছিলেন:

১. মুহাম্মাদ বিন আবি উমাইর।

২. আহমাদ বিন ইসহাক্ব আবহারী।

৩. আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আবি নাসর বাযান্তি।

৪. হাসান বিন আলী বিন ফাযযাল।

৫. হাসান বিন মাহবুব।

৬. হুসাইন বিন সাঈদ আহওয়াযি।

৭. হাম্মাদ বিন ঈসা জাহনী।

৮. সাফওয়ান বিন ইয়াহিয়া বাজালি কুফি।

৯. আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহিয়া।

১০. মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল বাযিঅ।

১১. মুহাম্মাদ বিন হাসান কুম্মী।

১২. মূসা বিন কাসিম।

ছাত্রবৃন্দ:

আলী বিন মাহযিয়ারের ছাত্রবৃন্দ ছিল নিন্মরূপ:

১. আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন খালিদ বারক্বি।

২. ইব্রাহিম বিন হাশিম কুম্মী।

আলী বিন মাহযিয়ারে উল্লেখযোগ্য কর্মসমূহ:

১. ইমাম জাওয়াদ (আ.)’র শাহাদাতের পরে জনগণের কাছে ইমাম হাদী (আ.)কে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

২. আইনশাস্ত্র সম্পর্কিত বিষয় ব্যাখ্যা করা এবং মানুষের বিচার বিভাগের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।

৩. জনগণের কাছে ইমামের ফিকাহ সম্পর্কিত মতামত পৌঁছে দেওয়া।

৪. ইরানের আহওয়ায প্রদেশে ইমাম জাওয়াদ (আ.)’র ইমামতের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

৫. ইমাম জাওয়াদ ও ইমাম হাদী (আ.)’র প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন।

৬. আব্বাসীদের শ্বাসরূদ্ধকর পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও লোকদের ইমামের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা।

৭. ইরানের আহওয়ায প্রদেশে শান্তি ও সৌভাগ্যের পতাকাবাহীর দায়িত্ব পালন।

বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বদের দৃষ্টিতে আলী বিন মাহযিয়ার:

শেখ তুসীর দৃষ্টিতে: আলী বিন মাহযিয়ার ইমাম মুহাম্মাদ তাক্বি ও ইমাম আলী নাক্বি (আ.)’র একজন বিশ্বস্ত সাহাবী ছিলেন এবং তিনি সহীহ আকিদার ব্যাক্তি ছিলেন।

কাশশি’র দৃষ্টিতে: আলী বিন মাহযিয়ার একজন খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিলেন কিন্তু আল্লাহ তাকে হেদায়াত করেছেন। তিনি হিন্দুস্তানের হিন্দিজান এলাকার অধিবাসী ছিলেন যা পূর্বে পারস্যের একটি গ্রাম হিসাবে বিবেচিত হত। কিন্তু পরবর্তিতে তিনি আহওয়াযকে জীবন যাপনের জন্য নির্বাজন করেন।

মৃত্যু:

আলী বিন মাহযিয়ারের মৃত্যুর সঠিক তারিখ কোথাও বর্ণিত হয়নি তবে ধারণা করা হয় যে, তিনি প্রায় ২৫৪ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর কবর ইরানের আহওয়ায প্রদেশে জাজারম নামক এলাকায় অবস্থিত রয়েছে। বেশ কয়েক বছর পূর্বে আলী বিন মাহজিয়ারের সমাধি মেরামত করার জন্য একটি কবর খনন করে, সেখানে তার লাশ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে আলী বিন মাহযিয়ার’র কবর নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন তার কবর জাজারম নামক স্থানে রয়েছে আবার কেউ বলে: তার কবর আহওয়াযে রয়েছে।

তথ্যসূত্র:

১. আল আলাম, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৭৮।

২. রেজালে নাজ্জাশি, পৃষ্ঠা ১৭৭, ২৫৩।

৩. রেজালে ইবনে দাউদ, পৃষ্ঠা ১৪২।

৪. মোজামে বোলদান, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৮৩।

৫. মোজামে রেজালে হাদীস, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩১৮, খন্ড ১২, পৃষ্ঠা ১৯৪, ১৯৯, খন্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৩০।

৬. তাহলিলি আয যিন্দেগানী ইমাম হাদী (আ.), পৃষ্ঠা ২৯৩।

৭. আল কুনিয়া ওয়াল আলক্বাব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৩২।

৮. ফেহরেস্তে শেখ তুসী, পৃষ্ঠা ৮৮।

৯. রেজালে আল্লামা হিল্লি, পৃষ্ঠা ৯২।

১০. হায়াতে ইমামে রেযা (আ.), খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫০।

১১. মাফাখেরে ইসলাম, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১১১, ১২০।

১২. মামাক্বানী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১০।

১৩. মাহদী মওউদ, পৃষ্ঠা ৯৪৭।

১৪. হায়াতে ফিকরি সিয়াসী আয়েম্মা, ৪৯২।

১৫. আয়ানুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২২৬।

১৬. আযযারিয়া, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫৬।

১৭. আত তাশরিফু বিল মেনান, পৃষ্ঠা ৩০।

১৮. মাজালিসে মুমিনিন, পৃষ্ঠা ১৮১।

১৯. আত তাহযিব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৯৪।

২০. রেজালে শেখ তুসী, পৃষ্ঠা ৩৮১।

২১. এখতিয়ারু মারিফাতির রেজাল, পৃষ্ঠা ৫৪৮।