Press "Enter" to skip to content

আহলুস সুন্নাহ এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)এর মর্যাদা-২

অনুবাদ: ড. আবু উসামা মুহাররম

ধর্মীয় বিষয়াবলি এবং ধর্মের সম্মিলনকে স্পষ্ট করার জন্য এবং অনেক বিভ্রম দূর করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সম্ভবত ইসলামি বিশ্বের কিছু জাতিগত সংঘাতের উত্স আহলে বাইতের মর্যাদা এবং গুণাবলি পর্যবেক্ষণ করা। )

এই নিবন্ধটি হজরত যাহরা (সা.আ.)-এর ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলিকে কিছু আয়াত ও সূরার আলোকে এবং আহলুস সুন্নাহ সূত্রে পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহিহ ও অসংখ্য বর্ণনার ভিত্তিতে পরীক্ষা করা হয়েছে।

হজরত ফাতিমা (সা.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) নবুওয়াতের পঞ্চম বছরে মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আসমান ও যমিন সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর নূর থেকে তাঁর উজ্জ্বল অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছিল এবং তিনি আদম ও হাওয়ার তওবা কবুলের মাধ্যম হয়েছিলেন। তাঁর পিতা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং মাতা খাদিজা কুবরা। তাঁর স্বামী ইমাম আলি (আ.) এবং তাঁর সন্তান, কুরআনের ভাষায় মুক্তা এবং দামী পাথর; যারা তার উত্তর প্রজন্মের ধারাবাহিকতা রক্ষাকারী এবং স্বর্গের যুবকদের কর্তা[১] এবং তাদের কন্যারা তাঁর মতো ইমামতির পবিত্রতার রক্ষক ছিলেন।

আহলুস সুন্নাহ রেওয়ায়েতে ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)এর স্থান

আহলে সুন্নাহর ব্যাখ্যামূলক, বর্ণনামূলক, ও ঐতিহাসিক সূত্রে হযরত ফাতিমা (সা.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে শত শত বর্ণনা রয়েছে। এখানে সেগুলোর একটি নাতিদীর্ঘ উদাহরণ প্রদত্ত্ব হলো:

১. আদম ও হাওয়ার জন্মের পূর্বে হযরত ফাতিমা (সা.আ.) এর অস্তিত্ব

আহলুস সুন্নাহ পন্ডিত, ইবনে হাজার আসকালানি (৮৫২ হি.) ইমাম হাসান আসকারি (আ.) থেকে এবং তিনি তার পিতার কাছ থেকে এবং তারা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে এবং তিনি নবি (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে যখন আদম ও হাওয়াকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা হজরত যাহরার নূরের আলো দেখতে পেলেন এবং আল্লাহ তাদের বললেন: তোমাদের সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে তার নূর সৃষ্টি হয়েছে।

২. আল্লাহর হুকুমে হযরত ফাতিমা (সা.)-এর বিবাহ

ইমাম আলি (আ.)-এর মতো মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে আহলুস সুন্নাহ সূত্রে অনেক বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। [৩] আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, [৪] ওমর ইবনে খাত্তাব, [৫] বিলাল ইবনে হামামা, [৬] সিনানশাফালাহ [৭] এবং আনাস (রা.) এ ব্যাপারে উদ্ধৃতি দিয়েছেন।

৩. হযরত ফাতিমা (সা.) এর বংশধর নবির বংশধর

মানবতার জগতে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার সন্তানরা নবির বংশধর। আসিম কর্তৃক বাহদলার বর্ণনায় এসেছে: একটি বৈঠকে হাজ্জাজ ইমাম হুসাইনকে নবির উত্তরসূরী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেন। কিন্তু ইয়াহিয়া বিন ইয়ামার তাকে নবির বংশধর বলে মনে করেন এবং হাজ্জাজকে তিরষ্কার করার পর, তিনি সূরা আনআমের ৮৪ এবং ৮৫ নং আয়াত উল্লেখ করেন। যেখানে প্রমাণ করাহয় যে  ইসা আদমের বংশধর। যখন ইসার কোন পিতা ছিল না এবং তার মামরিয়ম মাধ্যমে তিনি আদমের কাছে পৌঁছান।

৪. হযরত ফাতিমা (সা.)নবির দেহের অংশ

৫. হজরত ফাতিমা (সা.), দুই জাহানের নারীদের সর্দার ((سیدة نساء العالمین) [১০]

৬. ফাতিমা (সা.আ.) এর ক্রোধ আল্লাহর ক্রোধ এবং তার সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি

আল্লাহর নবি (সা.) বলেছেনঃ

یا فاطمه، ان الله یعضب لغضبک و یرضی لرضاک؛

হে ফাতিমা, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার ক্রোধে রাগান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট। [১১]

৭. হজরত ফাতিমা (সা.) রিসালাতের রক্ষক [১২]

এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন রেওয়ায়েত রয়েছে, বিশেষ করে আবু জাহেলের বিরুদ্ধে রাসূল (সা.)-এর প্রতিরক্ষা।

৮. হাশরের ময়দানে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)

আহলুস সুন্নাহ সূত্রে, ইমাম আলি (আ.), হযরত আয়েশা, আবু সাঈদ, আবু হুরায়রা, আবু আইয়ুব, সুওয়ায়েদ বিন উমায়ের, বারিদাহ, ইবনে উমর এবং অন্যান্যদের মতো মহান সাহাবাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে যে ইসলামের নবি বলেছেন: “মাহশরের লোকেরা, আল্লাহর নির্দেশে তাদের চোখ বন্ধ করবে, যাতে হযরত ফাতিমা (সা.) হাশরের ময়দানের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।” [১৩]

খ. আহলুস সুন্নাহ আলেমদের মধ্যে হযরত ফাতিমা (সা.) এর অবস্থান

এখানে আমরা এ প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করাই যথেষ্ট বলে মনে করি:

১. সুয়ুতি বলেছেন: “আমরা বিশ্বাস করি যে বিশ্বের সেরা মহিলারা হলেন মরিয়ম ও ফাতিমা (সা.আ.)”।[১৪]

২. আলুসি বলেছেন: হাদিসে বলা হয়েছে:

ان الفاطمة ابتول افضل نساء المتقدمات و المتاخرات.

 “এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফাতিমা(সা.) সকল নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূলের আত্মা। তাই তিনি আয়েশার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। (১৫)

৩. সুহাইলি বিখ্যাত হাদিস “«فاطمه بضعة منی»” উদ্ধৃত করার পরে বলেন: “আমি কাউকে রাসুলের অংশের সমতুল্য মনে করি না।”[১৬]

৪. ইবনুল জাকনি বলেন: “আরো সঠিক বক্তব্য অনুযায়ী, ফাতিমাহ সকল নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।” [১৭]

কুরআনের আয়াতে হযরত ফাতিমা (সা.আ.) এর অবস্থান

আহলুস সুন্নাহ ভাষ্য ও হাদিস সূত্রে জানা যায়, ঊনচল্লিশটি সূরার আনুমানিক একশত পঁয়ত্রিশটি আয়াত কোনো না কোনোভাবে হজরত ফাতিমা (সা.আ.) সম্পর্কে বর্ণিত। অবশ্য এই সংখ্যাটি শিয়া সূত্রে উল্লেখিত আয়াত থেকে ভিন্ন। ফাতিমা (সা.) এর সম্মানে দুটি সূরা দাহর ও কাউসার সম্পূর্ণরূপে অবতীর্ণ হয়েছিল।

এ বিষয়ে অবতীর্ণ সকল আয়াত ও সূরাকে চারটি শ্রেণীতে রাখা হয়েছে:

১. নাযিলের কারণ: অর্থাৎ হজরত ফাতিমা (সা.আ.) যে আয়াতগুলো নাযিলের কারণ ছিলেন।

২. শানে নুযুল: এর অর্থ যে আয়াতগুলো হযরত যাহরার শানে নাযিল হয়।

৩. ধারাবাহিকতা এবং অভিযোজন: অর্থাৎ হজরত ফাতিমা (সা.আ.) যে আয়াতগুলোর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

৪. মধ্যমনি: এর অর্থ হজরত ফাতিমা (সা.) যে আয়াতগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ হিসেবে বিবেচিত ।

হজরত ফাতিমা (সা.আ.) এর শানে অবতীর্ণ সূরা ও আয়াত।

গ্রন্থসূচি:

১. আহমাদ শুয়াইব নাসায়ি, খাসায়েসে আমিরুল মুমিনীন, ইসলামিক কালচার রিভাইভাল ফোরাম, ১৪১৯ হি, পৃ. ১৯৭-১৯৫।

২. আহমদ বিন হাজার আসকলানি, লিসানুল মিযান, বৈরুত, দারুল-মারেফা, বি.তা, খণ্ড ৩, পৃ. ৩৪৫।

৩. আহমদ তাবারী, যাখাইরুল উকবা, বৈরুত, দারুল মারেফা, বেইতা, পৃ. ৩১।

৪. নুরুদ্দীন হায়ছামি, মাজমাউল-জাওয়ায়েদ, বৈরুত, দারুল-কিতাব আল-আরাবিয়া, ১৯৯৮ খণ্ড ৯, পৃ. ২০৪।

৫. আহমদ তাবারী, তদেব, পৃ. ৩১।

৬. ইবনে আছির, উসদুল গাবা, বৈরুত, দারুল ইয়াহইয়া তুরাছিল-আরাবী, বি.তা, খণ্ড ১, পৃ,২০৬।

৭. তদেব, ভলিউম ২, পৃ. ৩৫৮।

  1. হাকিম নেশাবুরি, আল-মুসতাদরাক, বৈরুত, দারুল মারেফা, বি. তা, খণ্ড ৩, পৃ. ১৬৪।

৯. মুহাম্মদ হোসাইনি, আল-বায়ান ওয়াততারিফ, বৈরুত, দার আল-কিতাব আল-আরাবি, ১৩০১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭০; মোহাম্মদ শামসুল হক আজিমাবাদী, আউনুল মাবউদ, বৈরুত, দারুল-কিতাব আল-আলামিয়া, ১৪১৫ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৪৫; আহমদ হেকামী, মা’রাজিল-কবুল, দাম্মাম, দার ইবনুল কাসিম, ১৯৯০, ভলিউম ৩, পৃ. ১১৯৯।

১০.মহিউদ্দিন ইয়াহইয়া বিন হিজাম, তাহযিব আল-আসমা, পৃ. ১৬২, হা: ১১৮; ইবনে আসাকির আবদুর রহমান, আল-আরবাইন ফি মানাকিব উম্মাহাতুল মুমিনিন, দামেস্ক, দারুল-ফিকর, ১৪০৬ হি, পৃ.৮৪।

১১. হাকিম নেশাবুরী, তদবে., ভলিউম ৩, পৃ. ১৫৪, এবং আরও উল্লেখ করুন: মুহাম্মদ বিন ইউসুফ গঞ্জি, কেফায়াতু-তালিব, তেহরান, দারাহিয়া তুরিাছিল আহলে বাইত (আ.), পৃ. ৩৬৪; আবি আল-কাসিম আলি বিন আসাকির, তারিখে মদিনাতু দামেশক, বৈরুত, দারুল-ফিকর, ২০০০, খণ্ড ৩, পৃ. ১৫৬।

১২. আহমাদ বিন ইসমাইল বুখারি, সহিহ বুখারি, খন্ড ৫, পৃ. ৫৭।

১৩. সাবতে ইবনে জুযী, তাযকিরাতুল খওয়াস, বৈরুত, আহল আল-বাইত ফাউন্ডেশন, ১৯৯৮, পৃ. ২৭৯; মোতাগী হিন্দি, কানযুল উম্মাল, বৈরুত, রিসালা এস্ট., ১৯৮৯, খণ্ড ১২, পৃ. ১০৬।

১৪. জালালুদদীন সুয়ুতি, আস সাগুরুল-বাসমে, পৃ. ৩৪।

১৫. মোহাম্মদ আলুসি, রুহুল মাআনি, তেহরান, জাহান পাবলিকেশন্স, বিতা, খণ্ড ৩, পৃ. ১৩৮।

১৬. আবদুর রহমান বিন আবি আল-হাসান আল-সাহিলি, আল-রওজ আল-আনাফ, মিশর, মাকতাবাতুল কুল্লিয়্যাতুল আযহারিয়্যা,বিতা, খণ্ড ১, পৃ. ২৭৯।

১৭. তদেব।