Press "Enter" to skip to content

ইমাম আলী (আ.)’র দৃষ্টিতে উপকারী জ্ঞান

মহানবী (স.) ও আমিরুল মোমেনীন আলী (আ.)এর অনেক বক্তব্যের মধ্যে উপকারী ও অনুপকারী জ্ঞানের কথা বর্ণিত হয়েছে।

যেমন : أعوذ بك من علم لاينفع [ হে আল্লাহ অনুপকারী জ্ঞান থেকে আমি আপনার আশ্রায় প্রার্থনা করি] – যোহরের নামাজের তাকিবাতের দোয়ার অংশ ।

তিনি আরো বলেন : لا خير في علم لاينفع অনুপকারী বিদ্যায় কোন কল্যাণ নেই । [নাহজুল বালাগা ৩১ নম্বর খোতবা]

ইমাম আলী (আ.) বলেন : وقفوا أسماعهم علي العلم النافع لهم পরিশুদ্ধ মানবরা উপকারী জ্ঞানের প্রতি তাদের শ্রুতিশক্তি নিবদ্ধ করেন । [ নাহজুল বালাগা ১৯৩খোতবা ]

অথবা ربّ عالم قد قتله جهله و علمه معه لاينفعه কত আলেম বা জ্ঞানী ব্যক্তি যারা তাদের অজ্ঞতার হাতে জীবন দিয়েছেন এবং এমন জ্ঞান বহন করেন তারা যা তাদের কোন উপকারে আসে না । [ নাহজুল বালাগা, ১০৭ নম্বর সংক্ষিপ্ত বানী]

ইমাম আলী (আ.)এর বক্তব্যে উপকারী ও অনুপকারী জ্ঞান যাচাইয়ের মানদন্ড এভাবেই বর্ণিত হয়েছে:

العلم علمان: مطبوع و مسموع، و لاينفع المسموع إذا لم‏يكن المطبوع

জ্ঞান দুই প্রকারের , একটি হল সত্তাগত আরেকটি হল শিক্ষালব্দ জ্ঞান ; কোন ব্যক্তির যদি সত্তাগত জ্ঞান না থাকে তাহলে তার শিক্ষালব্দ জ্ঞান কোন কাজে আসে না। [নাহজুল বালাগা, ৩৩৮ নম্বর সংক্ষিপ্ত বানী]

ইলমে মাতবুউ হল তার সত্তাগত জ্ঞান যে জ্ঞান অর্জন করতে পাঠশালাতে যেতে হয় না ন্যায় ও অন্যায় বা নীতিজ্ঞান যা জন্মের মাধ্যমে প্র্রত্যেকটি মানব সত্তা সাথে নিয়ে পৃথিবীতে পর্দাপণ করেন। আর এজ্ঞানই তার অনন্ত সফরসঙ্গী হিসেবেই তার সাথেই থাকবে । ইমাম আলী (আ.) কোন কোন বক্তব্যে সত্তাগত জ্ঞানকে ইলমে মিজবান পরিভাষায় বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান প্রতিপালক এজ্ঞান সর্ম্পকে বলেন:

و نفس و ما سوّيها فألهمها فجورها و تقويها

তার সত্তাকে ভালোমন্দ ও ন্যায় অন্যায় র্নিনয়ের ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্ট করেছি। [সুরা আল শামস ৭-৮ নম্বর আয়াত] আর এটাই হল তার সত্তাগত জ্ঞান বা ‘ইলমে মাতবুউ’।

আর শিক্ষালব্দ জ্ঞান সর্ম্পকে মহান প্রতিপালক বলেন :

والله أخرجكم من بطون أمّهاتكم لاتعلمون شيئا

“ মহান আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন যখন তোমরা কোন কিছুই জানতে না । তিনি তোমাদেরকে কর্ন, চক্ষু ও অন্তর দান করেছেন যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর ।“ [সুরা নাহল ৭৮ নম্বর আয়াত]

আর এই অর্জিত বিদ্যা মৃত্যুর সাথে সাথে তার থেকে ঝরে পড়ে যাবে । এপ্রসঙ্গে মাওলা আমিরুল মোমেনীন আলী (আ.) বলেন :

ومنكم من يردّ الي أرذل

العمر لكيلا يعلم من بعد علم شيئا

“তোমাদের মধ্যে কাউকে কর্মাক্ষম বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয় ,যখন তার জানা বিষয়গুলোর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না ।“[ সুরা আল হাজ্জা ৫ নম্বর আয়াত ] অতএব মানুষের অর্জিত জ্ঞানগুলো তার মৃত্যুর আগ দিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করে আর মৃত্যুর সাথে সাথেই সবটুকুই ঝরে যায় । আর এজন্যেই এই জ্ঞানকে অতিথী জ্ঞান নাম করণ করা হয়েছে। কেননা বিশেষ সময়ে এসে উপস্থিত হয় আবার সময় হলে সে চলে যায়। তাই এই জাতিয় জ্ঞান ও তার সানদ নিয়ে অহেতুক নিজকে প্রকাশ করা উচিত নয় ।

ইমাম আলী (আ.)এর ভাষ্য অনুযায়ী সত্তাগত জ্ঞান প্রতিমানুষের উপকারী বিদ্যা এবং যেসকল অর্জিত বিদ্যা যা সত্তাগত বিদ্যার সাথে সংঙ্গতিপূর্ণ ও মানবিক বৈশিষ্ট্যসমূহ বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে সেটাও উপকারী বিদ্যা হিসেবে পরিগণিত হবে অন্যাথায় অনুপকারী বিদ্যা।

ইমাম আলী (আ.) বলেন: “صُحْبَةُ الاَحْمَقِ عَذابُ الرُّوحِ” মূর্খ মানুষদের সাথে উঠাবসা নামসিক কষ্ট বয়ে আনে । [ গুরারুল হাকীম, ১খন্ড, ৪৫৫পৃ. ৩১ নম্বর হাদীস]

কারণ সত্তাগত জ্ঞান কর্মের সাথেই অবস্থান করে বরং সত্তাগত জ্ঞান নিজেই আমল। অথবা অনন্তপক্ষে আমলের সাথে অবস্থান করবে যাতে সে ঐজ্ঞানের জ্যোতিতে পূর্ণতার পথ অতিক্রম করে চুড়ান্ত লক্ষ্যে উপণীত হতে পারে ।

অতএব উপকারী বিদ্যার ফল হল সে আমলের নেতৃত্ব দেবে। এটা একমাত্র উপকারী বিদ্যার ফল । আর এজন্যেই অনুপকারী বিদ্যাকে ‘জাহল’ বা আধাঁর হিসেবেই পরিগণনা করা হয়েছে। কারণ জ্ঞানের প্রধান ফল ‘আমল’ যা থেকে সে বঞ্চিত ।

“العلم مقرون بالعمل، فمن علم عمل، و العلم يهتف بالعمل، فان أجابه و الاّ ارتحل عنه”

জ্ঞান আমলের সমান্তরলে অবস্থান করে তাই যিনি জ্ঞান অর্জন করলেন তিনি আমলও করবেন কেননা জ্ঞান আমলকে আহ্বান করে আর এই ডাকে ইতিবাচক সাড়া দিলে (বা আমল করলে ) সে স্থায়ীত্ব লাভ করে নতুবা ঐ জ্ঞানের মৃত্যু ঘটে ।[নাহজুল বালাগা , মরহুম দাশতী অনুবাদ, ৩৬৬ নম্বর সংক্ষিপ্ত বানী,]