Press "Enter" to skip to content

ঐশী বিবাহ

এস, এ, এ

ঐশি এবং ঐতিহাসিক এই বিবাহের বর ছিলেন আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) আর কনে ছিলেন নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)। দ্বিতীয় হিজরীর ১লা জিলহজে হযরত আলী (আ.) এবং হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর দু’বছরে মধ্যে অনেকেই রাসুলের কাছে ফাতিমার বিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু রাসূলে খোদা কাউকে কিছু না বলে আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছিলেন। অবশেষে হযরত আলী (আ.) তাঁর কাছে ফাতিমার বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন। মহানবী এতে খুশী হলেন। আলী (আ.)’র প্রস্তাব নিয়ে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা হযরত ফাতিমা (সা.আ.)’র কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “মা, তুমি কি আলীকে বিয়ে করতে রাজি আছো? আল্লাহ আমাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত ফাতিমা একথা শুনে মনে মনে খুশী হলেন। কিন্তু লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলেন না। কেবল মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন। মহানবী মেয়ের সম্মতি জানতে পেরে খুশীতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উঠলেন।

এরপর দ্বিতীয় হিজরীর ১ লা জিলহজ্ব রোজ শুক্রবার হযরত আলীর সাথে হযরত ফাতেমার শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। এই বিবাহের অনুষ্ঠানে সকল আনসার ও মুহাজির উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আল্লাহর আদেশে আমি ফাতেমার সাথে আলীর বিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের বিয়ের মোহরানা বাবত ধার্য করেছি চারশ মিসকাল রৌপ্য। এরপর মহানবী (সাঃ) হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আলী তুমি কি এতে রাজী আছো ? হযরত আলী সম্মতি জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমি রাজী। তখন নবীজী দু’হাত তুলে তাঁদের জন্য এবং তাঁদের আগত বংশধরদের সার্বিক কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন।

এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি কিন্তু খুবই সাদামাটা ছিল। তাই হযরত উম্মে আয়মন এসে মহানবীর কাছে দুঃখ করে বললেন, সেদিনও তো আনসারদের এক মেয়ের বিয়ে হল। সে অনুষ্ঠানে কত জাঁকজমক ও আনন্দ ফুর্তি হল! অথচ বিশ্ববাসীর নেতা মহানবীর মেয়ের বিয়ে কিনা এতো সাদাসিধেভাবে হচ্ছে! উম্মে আয়মনের কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, এ বিয়ের সাথে পৃথিবীর কোন বিয়ের তুলনাই হয় না। পৃথিবীতে এ বিয়ের কোন জাঁকজমক না হলেও আল্লাহর আদেশে আসমানে এ বিয়ে উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজন হচ্ছে। বেহেশতকে অপুর্ব সাজে সাজানো হয়েছে। ফেরেশতারা, হুর-গেলমান সবাই আনন্দ করছে। বেহেশতের গাছপালা থেকে মণি-মুক্তা ঝরছে! একথা শুনে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মুখ খুশীতে ভরে উঠলো।

এই পবিত্র বিবাহ সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন: যদি হজরত আলী (আ.) এর জন্ম না হতো তাহলে সারা পৃথিবিতে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)কে বিবাহ করার মতো কোন উপযুক্ত ও যোগ্য পাত্র পাওয়া যেত না।

তথ্যসূত্র:

১. বাশারাতুল মোস্তফা, পৃষ্ঠা ২৬৭।

২. তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ১৩৭।

৩. মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬০০।

৪. মানলা ইয়াহ যারুহুল ফাকিহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৯৩।

৫. কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬১।