অনুবাদ: ড. আবু উসামা মুহাররম
কুতুব আরবাহ বা উসুলে আরবাহ হল চারটি হাদিসের বই যেগুলোকে শিয়া ইসনা আশআরিরা তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিসের উৎস বলে মনে করে। চারটি বইগুলো হলো:
১. আল-কাফি, লেখক: আল কুলাইনি।
২. মান লা ইয়াহ যারুহুল ফাকিহ, লেখক: শাইখ সাদুক।
৩. তাহযিবুল আহকাম, লেখক: শাইখে তুসি।
৪. আল-ইসতিবসার, লেখক: শাইখে তুসি।
প্রথমবারের মতো, শহিদে সানি একটি বর্ণনায় এই চারটি বইকে বোঝাতে ‘কুতুবে আরবাআ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর এই শব্দটি ফিক্বাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়। ধীরে ধীরে শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিছু শিয়া ইসনা আশআরির আলেমগণ আরবাআ গ্রন্থের সকল হাদিসকে সহিহ হিসেবে জানে; এবং তাদের অধিকাংশই এমন হাদিসসমূহ গ্রহণ করে যা হয় নির্ভরযোগ্য বা সহিহ।
শিয়া ইসনা আশআরিরা কাফি, তাহযিব, ইসতেবসার এবং মান লা ইয়াহ যারুহুল ফকিহ নামের চারটি গ্রন্থকে তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিসের উত্স হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। তারা এটাকে বাধ্যতামূলক মনে করে না কিন্তু সেগুলো অনুসরণ করার জন্য তারা হাদিসের দলিল ও ইঙ্গিত যাচাই করে।
‘কুতুবে আরবাআ’ শব্দটির পটভূমি
শহিদ সানিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি এই চারটি বইয়ের জন্য আরবাআ শব্দটি ব্যবহার করেন। ৯৫০ হিজরিতে তিনি একটি বর্ণনার জন্য, «کتب الحدیث الأربعة “চারটি হাদীসের বই” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তারপর এই বাক্যাংশের আরও কয়েকটি বর্ণনায় الكُتُب الأربَعَةতিনি “আল-কুতুব আল-আরবা’ শব্দটি ব্যবহার করেন।
এর প্রায় তিন দশক পরে, মুহাক্কিকে আরদাবিলি তার ফিক্বাহ শাস্ত্রের বই মাজমা আল-ফাইদেহ এবং আল-বুরহানে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যা সূচনা হয়েছিল ৯৭৭ হিজরিতে এবং শেষ হয়েছিল ৯8৫ হিজরিতে।
এইভাবে এই শব্দটি হাদিসের স্থান থেকে ফিক্বাহ শাস্ত্রের বইতেও ব্যবহৃত হয়। এরপর যথাক্রমে زُبدة البیان জুবদাতুল বায়ান (৯৮৯ হিজরিতে লিখিত),)، مُنتَقَی الجُمان মুনতাকি আল জুমান (১০০৬ হিজরিতে লেখা) গ্রন্থে এবং الوافیه আল-ওয়াফিয়াহ (১০৫৯ হিজরিতে লিখিত) ব্যবহার করা হয়।
কুতুবে আরবাআর গ্রহণযোগ্যতা:
শিয়া ইসনা আশআরির ফিক্বাহবিদগণ চারটি গ্রন্থের সাধারণ বৈধতা দান করেছেন। শাইখ আনসারী এ বিখ্যাত বইগুলির বিশুদ্ধতাকে অসম্ভাব্য মনে করেননি। শিয়া ইসনা আশআরির ধর্মমতের জন্য এ বইগুলোকে অপরিহার্য মনে করেন। সকল হাদীসের শুদ্ধতা ও সনদ নিয়ে স্বীকৃত বলে মনে করেন। এ বিষয়ে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করা যেতে পারে:
১. সকল হাদিসের বৈধতার নিশ্চয়তা:
হাদিস বর্ণনাকারীগন আরবা কিতাবের সকল হাদীসকে সহিহ বলে মনে করেন । তারা মনে করেন এ সকল হাদিসের বর্ণনাকারীগণ নিশ্চিত ইমামে মাসুমিন। সাইয়্যেদ মুর্তাজার দৃষ্টিতে এসব বইয়ের হাদিস মুতাওয়াতির ও সহিহ পর্যায়ের।
২. সমস্ত বর্ণনার সত্যতা এবং অনিশ্চয়তা:
কিছু ফক্বিহবিদ যেমন ফাজেল তুনি, [8] মোল্লা আহমদ নারাক্বি [৯] এবং মির্জা মোহাম্মদ হোসাইন নয়িনী[১০] তারা আরবাহ গ্রন্থের সকল হাদিসের নিশ্চিততা গ্রহণ করেনি বরং এর বর্ণনার ক্ষেত্রে তারা মত দিয়েছেন।
৩. অধিকাংশ হাদিস অনুমান নির্ভর তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র:
শিয়া ইসনা আশআরির ফক্বিহবিদদের সাধারণ মতামত হল সীমিত কিছু হাদিস মুতাওয়াতির। কাফি গ্রন্থের অবশিষ্টগুলো ধারণাপ্রসূত। তবে সনদের দৃষ্টিতে সেগুলো দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।[১১]
আল-কাফি:
আবু জাফর কুলাইনি (মৃত্যু ৩২৯ হিজরি) আল কাফি গ্রন্থটি গাইবতে সুগরার সময় লেখেন। [১২] বইটিতে ১৬,০০০ হাদিস রয়েছে। এর তিনটি সাধারণ অংশ রয়েছে: [اصول، فروع، روضه]
১. উসুল: আকিদাসংক্রান্ত হদিস।
২. ফুরুঅ: ফিকহি সংক্রান্ত হাদিস বিবিধ বিষয়ের।
৩. রওযা: বিয়গান্তক ঘটনার বিস্তারিত বিবরণি সম্বলিত।
মান লা ইয়াহযুরুহুল ফাক্বিহ:
মান লা ইয়াহ যুরহুল ফকিহ এই বইটি শেখ সাদুক (মৃত্যু ৩৮১ হিজরি) লিখেছেন। এতে প্রায় ৬০০০ হাদিস রয়েছে যা ফিক্বাহশাস্ত্র এবং ব্যবহারিক বিধান বিষয়ক। এই গ্রন্থে শাইখ সাদুক এমন হাদিস এনেছেন, যেগুলোকে তিনি সঠিক বলে মনে করেন এবং সেগুলোর উপর ভিত্তি করে তারা ফতোয়া দিয়েছেন।[১৫]
তাহযিবুল আহকাম:
তাহযিবুল আহকাম লিখেছেন শেখ তুসি (মৃত্যু ৪৬০ হিজরি)। এই বইটিতে ৩৯৩টি বিভাগ এবং ১৩,৫৯০টি হাদিস রয়েছে। এর বিষয় ফিক্বাহশাস্ত্র। শেখ মুফিদ এর [المقنعه] আল-মাকনার ব্যখ্যায় ও তার পদ্ধতি সম্পর্কে শেখ তুসি এই বইটি লিখেছেন । [১৬]
আল ইসতিবসার ফী মা ইখতালাফা মিনাল আখবার:
আল ইসতিবসার ফী মা ইখতালাফা মিনাল আখবার শায়খ তুসি তাহযিবুল-আহকামের পরে এবং তাঁর কয়েকজন ছাত্রের অনুরোধে এই বইটি লেখা হয়। তিনি এই বইতে বিভিন্ন ফিক্বাহশাস্ত্রীয় বিষয়ে শুধুমাত্র পরস্পর বিরোধী বর্ণনা সংগ্রহ করেছেন। এই কারণে, বইটিতে সমস্ত ফিক্বাহশাস্ত্রীয় বিষয়ক হাদিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। [১৭]
গ্রন্থসূচি:
১. আমিনি, আল-গাদির, ১৪১৬ হি, খণ্ড ৩, পৃ. ৩8৩-৩8৪।
২. আমিনি, আল-গাদির, ১৪১৬ হি, খণ্ড ৩, পৃ. ৩8৩-৩8৪।
৩. বাকেরি, “চাহার কিতাবে হাদিসি ওয়া রেওয়াজে ইসতেলাহ, আল কুতুবুল আরবাআ: নাকদি বার দিদগাহে আনদুরু নিওমান, “।
৪. বাকেরি, “চাহার কিতাবে হাদিসি ওয়া রেওয়াজে ইসতেলাহ, আল কুতুবুল আরবাআ: নাকদি বার দিদগাহে আনদুরু নিওমান,
৫. আর কে আনসারি, ফারায়েদুল উসুল, ১৪২8 AH, vol.১, p.২৩৯।
৬. ইসতারাবাদি, আল-ফাওয়ায়েদ আল-মাদিনাহ, পৃ. ১১২; আল-কারকি, হিদায়া আবরার, ১৩৯৬ হিজরি, পৃ. ১৭।
৭. হাসান আমেলি দ্বারা উদ্ধৃত, মাআলিমুল উসুল, পৃ. ১৫৭
- ফাযিল তুনি, আল-ওয়াফিয়াহ ফি উসুলিল ফিকহ, ১৪১৫ হি, পৃ. ১৬৬।
৯. মোল্লা আহমদ নারাগি, মানাহিজ, পৃ. ১৬৬
১০. কুতুবে আরবাইয়ে শিয়া কুদামান্দ, খবরগুযারি শিয়া ইসনা আশআরি নৌরোয। সংবাদ সংস্থা।
১১. সাইয়্যেদ আবুল কাসেম খুয়ি, মোজাম রিজালুল হাদিস, খণ্ড ১, পৃ. 8৭-৯৭
১২. মুদির শানেচি , ইলমুল হাদিস, ১৩8১, ৯৬।
১৩. মুদির শানেচি , ইলমুল হাদিস, ২০০১, ৯৬ এবং ৯৭।
১৪. মুদির শানেচি , ইলমুল হাদিস, ২০১৩, ৯৬ এবং ৯৭।
১৫. মুদির শানেচি , তারিখে হাদিস, ১৩৭৭, পৃ. ১৩০ এবং ১৩৫।
১৬. মুদির শানেচি , তারিখে হাদিস, ১৩৭৭, পৃ. ১৩8 এবং ১৪০।
১৭. মুদির শানেচি , তারিখে হাদিস, ১৩৭৭, পৃ. ১৪8 এবং ১৫০।