Press "Enter" to skip to content

কোরআন ও হাদীসের আলোকে সালামের আদব

মূল: মোজতামায়ে আমুজেশে আলিয়ে ফেক্বহ্

অনুবাদ: মোহাম্মাদ মুনীর হোসাইন খান

প্রত্যেক সমাজে ও সমাজ ব্যবস্থায় কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করার সময় নিজের অনুভূতি ও খুশির বহিঃপ্রকাশের জন্য আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে কিছু বিশেষ পন্থা ও শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষ পন্থা ও বিশেষ শব্দ দেখতে পাওয়া যায়।
ইসলামী সংস্কৃতি ও ইসলামী বিধি বিধানেও এ কাজের জন্য একে অপরকে সালাম করমর্দন ও কোলাকুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন হযরত ঈমান রা (আঃ) বলেছেন :
السلام تحية لملتنا و أمان لأمتنا
“সালাম করা হল আমাদের জাতীর তোহফা বা উপহার এবং আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জামানত স্বরূপ।” (বিহাঃ আঃ খন্ড-৭৬, অঃ ৯৭, খঃ ৪৬।)
(১) পবিত্র কুরআন মজিদ বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের সালাম করার বিষয়ে ইসলামী পন্থার দিক-নির্দেশনা দিয়েছে আর তা হলো এই যে, ইসলামী সালাম হল শুধু মাত্র। “সালামুন আলাইকুম।” যেমনটি সূরা নূরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করছেন :
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا ۚ فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَىٰ أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
“অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।” (সূরা নূর, আয়াত-৬১)
وَ عِبادُ الرَّحْمنِ الَّذينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْناً وَ إِذا خاطَبَهُمُ الْجاهِلُونَ قالُوا سَلاماً
“বহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।” (সূরা ফুরকান, আয়াত-৬৩)
(২) যখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মূর্তিগুলোর পুজা করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং তার চাচা তাকে এ কথার জন্য ভৎসনা ও তিরষ্কার করলেন আর তাকে মূর্তি পূজা করার জন্য তাকিদ জানালেন এবং তাকে এই হুমকি প্রদান করলেন যে, যদি তুমি এমনটি না কর তাহলে তোমার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা হবে। তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) খুবই কোমলতার সাথে এইরূপ তার জবাব দিলেন :
  قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا
“ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, তোমার উপর সালাম হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব।” (সূরা মারইয়াম, আয়াত – ৮৯ )
এই রেওয়ায়েত মোতাবেক আরো পাওয়া যায় যে, যখন আল্লাহর ফেরেশতাগণ হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর বাসায় মেহমান সেজে আসলেন তখন তারা সালাম করলেন এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাদের সালামের জবাব দিলেন:
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ
“আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহিমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল-সালাম, তিনিও বললেন-সালাম।” (সূরা হুদ, আয়াত-৬৯)
(৩) বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহতায়ালা নিজের সালেহ ও নেক বান্দাদের কথা বর্ণনা করে তাদের প্রতি সালাম ও দরুদ প্রেরণ করেছেন। যেমন:
.سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ
سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ
سَلَامٌ عَلَى مُوسَى وَهَارُونَ
“বিশ্ববাসীর মধ্যে নূহের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, ইব্রাহিমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। মূসা ও হারুনের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক।” (সূরা সাফফাত, আয়াত-৭৯, ১০৯ ও ১২০)
(৪) ঠিক তদ্রূপ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সালাম করাকে জান্নাতবাসীদের পন্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন সূরা রা’দের ১২৩ ১২৪ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন :
“ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। বলবে তোমাদের ধৈর্য্যের জন্য তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক।” (সূরা রাফ, আয়াত-২৩ ও ২৪)
অথবা সূরা নাহালে এরশাদ হয়েছে :
الذين تتوفاهم الملائكة طيبين يقولون سلام عليكم  ادخلوا المجنة بما كنتم تعملون
ফেরেশতাগণ যাদেরকে এমন অবস্থায় উত্তোলন করেন যে, তারা পাক ও  পবিত্র থাকে আর তাদেরকে ফেরেশতাগণ বলেন যে, তোমাদের উপর সালাম হোক। করে।  অন্য স্থানে পবিত্র কুরআন বর্ণনা করছে যে, জান্নাতবাসী একে অপরকে সালাম করে।
” تحيتهم فيها سلام
“আর তাদের উপহার হবে সালাম।”  (সূরা ইউনুস-১০, ইব্রাহিম-২৩)
ইহা ব্যতীত পবিত্র কুরআন মজিদে অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেখানে সালাম প্রসঙ্গে  আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে হযরত রাসূল (সাঃ) এবং আইম্মায়ে মাসুমীন (আঃ) গণের রেওয়ায়েতে সালাম করার প্রতি জোর তাকিদ প্রদান করা হয়েছে। আর এর সীমাহীন ফজিলত ও সওয়াব বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি
রেওয়ায়েতের প্রতি মননিবেশ করুন।
(১) হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন :
ان في الجنة غرفا يرى ظاهر هامن باطنها وباطنها من ظاهرها يسكنها من امتى من أطاب الكلام و أطعم الطعام
و أفشى السلام و صلى بالليل و الناس نيام
“জান্নাতে কিছু এমন কক্ষ থাকবে যার ভেতরের অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। আর সেইগুলোর মধ্যে আমার উম্মতের ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ অবস্থান করবে যারা সদাচারী, লোকদের আপ্যায়নকারী, উচ্চ স্বরে সালাম জ্ঞাপনকারী এবং রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পাদানকারী হবে।” (বিহাঃ আঃ খ-৮, অধ্যায়-৩২, হাদীস-৫)
(২) হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বর্ণনা করেন, একদিন হযরত রাসূল (সাঃ)আবদুল মুত্তালিবের সন্তানদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
يابنى عبد المطلب افشو السلام و صلو الارحام وتهجدو او الناس نيام وأطعمو الطعام وأطيبوا الكلام تدخلو ا الجنة بسلام.
“হে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানগণ। স্পষ্টভাবে (উচ্চ স্বরে) একে অপরকে সালাম কর, বিনয় ও দয়া প্রদর্শন করতে থাকো এবং লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় কর। লোকদেরকে আপ্যায়ন করাও, সুন্দরভাবে আলাপ কর যাতে করে শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পার।” (বিহাঃ আঃ ৩৯. অধ্যায়-৩, হাদীস-৭৪)
(৩) হযরত রাসূলে করিম (সাঃ) আরো বলেছেন :
تسلم على من لقيت يزيد الله في حسناتك وسلم في  بیتک يزيد الله في بركتك.
“কারো সাথে সাক্ষাত হলে তাকে সালাম কর, আল্লাহ তোমার নেকী বা পূণ্যসমূহ বর্ধিত করবেন এবং তোমার পরিবার ও পরিজনদের সালাম কর আল্লাহ তোমাদেরকে অধিক বরকত দান করবেন।” (বিহাঃ আঃ খ-৬৯, অধ্যায়-৩৮, হাদীস-৮১)
(৪) ঠিক তদ্রূপ তিনি বলেছেন ঃ
الا أخبر كم بخير أخلاق أهل الدنيا والاخرة؟ قا اوا: بلى یار سول الله فقال : افشاء السلام فى العالم.
“তোমাদের কি দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বোত্তম শিষ্টাচার সম্বন্ধে অবগত করব না? সকলে বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে অবগত করুন।
তখন তিনি (সাঃ) বললেন :
فقال افشاء السلام في العالم.
“দুনিয়াতে উচ্চস্বরে সালাম কর।” (বিহাঃ আঃ খঃ ৭৬, অধ্যায়-৯, হাদীস-৫০)
(৫) তিনি আরো বলেছেন :
ان السلام اسم من أسماء الله تعالى فأفشوه بينكم
“সালাম হলো আল্লাহতায়ালার নামসমূহ হতে একটি। সুতরাং এটাকে তোমার  তোমাদের মাঝে উচুস্বরে আদায় করো।”
(বিহাঃ আঃ খঃ ৮৪,  অধ্যায়-১৭, হাদীস-৩০)
(৬) হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছেন ঃ
. قال سلام عليكم ورحمة الله فهى عشرون حسنه
“যে ব্যক্তি কাউকে সালাম করে এবং বলে, “সালামুন আলাইকুম,” তাহলে সে বিশ নেকীর সওয়াব পাবে।” (বিহাঃ আঃ ৭৬, অধ্যায়-৯৭, হাদীস-৪৬)
(৭) তিনি আরো বলেছেন ঃ
ان من موجبات المغفرة بذل السلام وحسن الكلام
‘একে অপরকে সালাম করা ও একে অপরের সাথে ভালো ব্যবহার করা কাটা ও গুণাহের মাগফিরাতের একটি উপায়ও বটে।”
(বিহাঃ আঃ অধ্যায়-৯৭, হাদীস-৪৬)
(৮) অথবা তিনি এটা বর্ণনা করেছেন ঃ
من التواضع ان تسلم على من لقيت.
“বিনয়ের একটি নিদর্শন হলো, যার সাথে সাক্ষাত হয় তাকে সালাম কর।”  (বিহাঃ আঃ খ-৭৫, অধ্যায়-৫১, হাদীস-৯)
“যেহেতু সালাম করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের কষ্ট কিংবা পেরেশানী অনুভূত হয় না এবং এর জন্য কোন অর্থও ব্যয় করতে হয় না, এ জন্যই আমাদের প্রিয় নবী করিম (সাঃ) বলেছেন যে, أبخل الناس من بخل بالسلام   সবচেয়ে কৃপণ হলো সে ব্যক্তি যে সালাম প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কৃপণতা প্রদর্শন করে।” (বিহাঃ আঃ খ- ১০০, অধ্যায়-৫, হাদীস-২৬)
সালামের নিয়ম বা পন্থা
(১) সালাম করা হলো একটি পূণ্যের কাজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন ।
فاستبقوا الی الخیرات
তোমরা নেক কাজের ক্ষেত্রে একে অপরের উপ অগ্রগামী হও। (সূরা মায়েদা-৪৮)
সুতরাং সালাম করার ক্ষেত্রে মুমিনদের একে অপরের উপর অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করা উচিত । হযরত রাসূল (সাঃ)-এর সিরাতে পাওয়া যায় যে, তিনি যখন কারো সাথে সাক্ষাত করতেন তখন প্রতিপক্ষ সালাম দেয়ার পূর্বেই তাকে সালাম দিতেন।
হযরত আলী (আঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন-
السملام سبعون حسنة تسعة و ستون للمبتدء و واحدة
للراد
“সালামের মধ্যে ৭০টি নেকী রয়েছে। ৬৯টি নেকী সালাম প্রদানকারী পায় এবং ১টি পায় সালামের জবাব প্রদানকারী।”
(বিহাঃ আঃ খঃ ৭৬, অধ্যায়-৯৭, হাদীস-৪৬)
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছেন,
البادی بالسلام اولی بالله و رسول له
সালামের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ব্যক্তিরাই আল্লাহ এবং রাসূলের অধিক নিকটবর্তী।
(২) সালাম ও সালামের উত্তর এতো উচ্চস্বরে হওয়া উচিত যাতে করে প্রতিপক্ষ সহজে শুনতে পায় ।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছেন-
اناسلم أحد كم فليجهر بسلامه. لا يقول : سلمت فلم يردوا على و لعله يكون قد سلم و لم يسمعهم فاذا رد أحد كم فليجهر
برده و لايقول المسلم : سلمت فلم يردوا على
“যখন তোমরা কাউকে সালাম করবে, উচ্চস্বরে করবে। অন্যথায় এমনটা বল না যে, আমি সালাম করেছিলাম অথচ কেউ সালামের উত্তর দেয়নি। কেননা সম্ভবত তারা শুনতেই পায়নি। আর যখন তোমরা কারো সালামের জবাব দাও সেক্ষেত্রেও উচ্চস্বরে দিবে। যাতে সালামকারীর এটা বলতে না পারে যে, আমি সালাম করেছিলাম অথচ তিনি উত্তর দেননি ।”
(উসূলে কাফী, খঃ ২, পৃ. ৪৬৫, হাদীস-৭)
(৩) কোন কথা বা আলাপ শুরু করার প্রাক্কালে সালাম করা উচিত। কেননা হযরত রাসূলে মকবুল (সাঃ) বলেছেন,
من بدأ بالکلام قبل السلام فلانجیبوه
যে ব্যক্তি সালাম না করেই আলাপ শুরু করে তার কথার জবাব দিও না।
(বিহাঃ আঃ বা ৭৬, অধ্যায়-৯৭, হাদীস-৪৬)
তিনি আরো বলেছেন :
لا تدع الى طعامك أحدا حتى يسلم .
“সালাম না করা পর্যন্ত কাউকে নিজের দস্তরখানে আমন্ত্রণ কর না।” (বিহা ৭৬. অধ্যায়-৯৭, হাদীস-৬)
হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) বলেছেন :
لاتاذنو الاحد حتى يسلم.
“সালাম না করা পর্যন্ত কাউকে কোন জিনিসের অনুমতি দিও না।” (বিহাঃ আঃ) ৭৮, অধ্যায়-২০, হাদীস-২)
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছেন,
السلام قبل الکلام
“প্রথমে সালাম অতঃপর কানাম (কথা)।” (বিহাঃ আঃ খঃ ৯৩, অধ্যায়-১৭, হাদীস-১৭)
(৪) সালাম করার ক্ষেত্রে কোন বয়স ও পদমর্যাদার শর্ত নেই, বরং যে আগে সালাম করবে সে অধিক সওয়াব পাবে। হযরত রাসূল (সাঃ)-এর জীবনীতে পাওয়া যায়, তিনি শিশুদেরকেও সালাম করতেন। তিনি বলেন যে,
خمس لاادعهن حتى الممات .. والتسليم على الصبيان
بعدى. لتكون سنة ،
“আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাঁচটি জিনিস পরিত্যাগ করতে পারব না। তন্মধ্যে একটি হলো শিশুদেরকে সালাম করা, যাতে করে আমার পর এটা যেন সুন্নাতে পরিণত হয়। (বিহাঃ আঃ খঃ ১৬, অধ্যায়-৬, হাদীস-৩৭)
অবশ্য সালাম করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা কে পালন করবে? তবে এক্ষেত্রেও কিছু রীতিনীতি রয়েছে।
হযরত রাসূল (সাঃ) বলেছেন :
السنة أن يسلم الراكب على الماشي وراكب الفرس على راكب الحمار والصغير على الكبير و الاقل على الاكثرو ال
القائم على القاعد
সালাম করার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো যে, আরোহী পদাতিককে, অশ্বারোহী গাঁধা আরোহীকে, ছোট বড়কে সংখ্যালঘু সংখ্যাগরিষ্ঠকে, দন্ডায়মান উপবিষ্টকে সালাম করবে।
অনুরূপভাবে আরেকটি রেওয়ায়েতে হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) দ্বারাও এমনটি বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসগুলো দ্বারা এই ফলাফল উপণিত হই যে, সালামের ক্ষেত্রে তাকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত যার জন্য বিনয় অধিক যথার্থ হয়। যেমন হযরত রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহে এই রীতি-নীতিই পরিলক্ষিত হয়।
(৫) সালামের জবাব দেয়ার নিয়ম হলো সে যেভাবে সালাম আপন করা হয়েছে। তার চেয়ে উত্তম রূপে অথবা অন্তত পক্ষে অনুরূপভাবে জবাব দেয়া উচিৎ। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে ঃ
واذا حييتم بتحية فحيوا بأحسن منها أوردو ها ان الله
كان على كل شيء حسيبا.
“আর তোমাদেরকে তখন এক্ষেত্রে তোমরা তারচেয়ে উত্তমরূপে অথবা অন্ততপক্ষে তদ্রূপ ফিরিয়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।” (সূরা নিসা, আয়াত-৮৬)
রেওয়ায়েতে পাওয়া যায় যে, জনৈক ব্যক্তি হযরত রাসূল (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলো এবং السلام علیک বলে সালাম করলো। তিনি উত্তরে বললেন,  علیک السلام ورححتة الله আলাইকাস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। তারপর কেউ এসে এরূপ সালাম করলো  السلام علیک ورححتة الله (আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ) তখন তিনি জবাবে বললেন
السلام علیک ورححتة الله برکاته
(আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)। কিছুক্ষণ পর তৃতীয় ব্যক্তি আসল এবং সে বললো  السلام علیک ورححتة الله و برکاته  (আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)। হযরত রাসূল (সাঃ) জবাবে বললেন
و علیک السلام ورححتة الله و برکاته
(ওয়া  আলাইকাস সালামু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু) ।
হযরত রাসূলে আকরামের নিকটে উপবিষ্ঠ সাহাবীগণ এই তিন ব্যক্তির সালাম করা এবং তাদের প্রতি হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর মুখ থেকে তিনটি ভিন্ন ধরনের জবাব শুনতে পেয়ে হযরত (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন যে, আপনি তো প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তির সালামের জবাবে কিছু যোগ করেছেন কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তির সালামের জবাব সেভাবেই দিলেন যেভাবে সে সালাম করেছে এবং এতে কোন ধরনের সংযুক্তি ঘটাননি। তখন তিনি (সাঃ) বললেন, “তৃতীয় ব্যক্তিটি সালামের কোন অংশই বাদ রাখেনি, সুতরাং আমি তাকে সেই জবাবই দিলাম।” (বিহাঃ আঃ খৃঃ ৮১, পৃ-২৭)
সালাম প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনার পরিসমাপ্তিতে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরি। যে, সালাম হলো একটা ইসলামী সুন্নাত যা মুমিনদের মাঝে বিরাজমান থাকা উচিত এবং রেওয়ায়েতের পর্যালোচনায় জানা যায় যে, কাফের, ফাসিক ও ফাজির ব্যক্তিদেরার সালাম করা যায়েজ ও যথোপযুক্ত নয় ।
করমর্দন ও আলিঙ্গন
পবিত্র ইসলাম ধর্মে সালামের পর মুসাফেহা (করমর্দন) ও মুআনেকার (আলিঙ্গন) খুবই গুরুত্ব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (আঃ) বলেছেন ঃ
اذا لقيتم اخوانكم فتصافحو او أظهر و الهم البشاشة و
البشر تتفرقوا وماعليكم من الاوزار قد ذهب
“যখন তোমরা দ্বীনিভাইদের সাথে যখন সাক্ষাত কর তখন তাদের সাথে মুসাফিহা কর এবং হাসোজ্জ্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাও। এরপর একে অপর থেকে পৃথক হলে তোমাদের জিম্মায় কোন গুণাহ থাকবে না।”  (বিহাঃ আঃ খঃ ৭৬, অধ্যায়-১০০, হাদীস-৩)
হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আঃ) হযরত রাসূল (সাঃ)-এর এই বাণী বর্ণনা করেছেন :
اذا تلاقيتم فتلاقو ابا لتسليم و التصافح و اذا تفر قتم فنفر قو ا بالاستغفار
“কারো সাথে দেখা করার সময় মুসাফেহা বা করমর্দন কর এবং পৃথক হবার সময়  ইসতেগফার কর।”  (বিহাঃ আঃ খঃ ৭৬, অধ্যায়-৯৭, হাদীস-১৩)
হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে :
تصافحو افان التصافح يذهب بالسخيمه ..
“একে অপরের সাথে মুসাফিহা বা করমর্দন কর কেননা মুসাফেহা করার কারণে তা দূরীভূত হয়।”  (বিহাঃ খঃ ৭৭, অধ্যায়-৭, হাদীস-১)
হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছেন,
ان المومنين اذا اعتنقا غمر تهما .الرحمة
“মুমিনীন পরস্পর যখন গলা মিলে বা আলিঙ্গন করে তখন আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় বা আচ্ছাদিত করে নেয়।”
তাঁর থেকেই বর্ণিত :
ان تمام التحيه للمقيم المصافحه وتمام التسليم على المسافر المعانقة.
“মুসাফির নয় এমন ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ সালাম করার নিয়ম হল যে তার সাথে মুসাফেহা করা এবং মুসাফিরকে পরিপূর্ণ সালাম করার নিয়ম হলো, তার সাথে আলিঙ্গন করা।”  (বিহাঃ আঃ খঃ ৭৮, অধ্যায়-২৩, হাদীস-১০৮)
হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর পবিত্র সিরাতে বর্ণিত যে, হযরত রাসূল (সঃ) যখন কারো সাথে মুসাফেহা করতেন তখন যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ স্বয়ং নিজে তার হাত ছেড়ে দিতো না ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তার হাত ছাড়তেন না। অর্থাৎ প্রকৃত পক্ষে হযরত রাসূল (সাঃ) এই রকম করার মাধ্যমে নিজের পক্ষ থেকে অধিক ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেন। এক হাদীসে হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন,
أيديهما يده بين ان المؤمنين اذا التقياو تصافحا ادخل الله فصافح اشدهما حبا لصاحبه
“যখন মুমিনীনগণ একে অপরের সাথে সাক্ষাতের সময় মুসাফিহা করেন তখন আল্লাহতায়ালা তাদের হাতের মাঝখানে নিজের হাতও দিয়ে দেন। আর উভয়ের মধ্যেকার যার অন্তরে নিজের সঙ্গীর প্রতি অধিক ভালোবাসা বিদ্যমান থাকে, আল্লাহ তার সাথে মুসাফেহা করেন।”  (বিহাঃ আঃ খঃ ৭৬, অধ্যায়-১০০, হাদীস-১২)
এই হাদীসের আলোকে যে ব্যক্তি নিজের হাতকে আল্লাহর হাতের উপর রাখতে চায় তবে তার উচিত তার দ্বীনি ভাইয়ের সাথে মুসাফেহা করা।