Press "Enter" to skip to content

জামকারান মসজিদের ইতিকথা

এস, এ, এ

জামকারান মসজিদটি কোমের উপকণ্ঠে অবস্থিত, শিয়াদের দ্বাদশ ইমামের আদেশে চতুর্থ চন্দ্র শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। চৌদ্দ শতকের শিয়া মুহাদ্দিদ মির্জা হোসেইন নুরির বর্ণনা অনুযায়ী জামকারান মসজিদটি ইমাম আল—জামান (আ.)—এর আদেশে এবং কওমের অন্যতম আলেম আবুল হাসান—এর মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল। মুহাদ্দিস নুরি তার একটি বৈঠকের কথা বলেছেন: হজরত মাহদী (আ.)—এর সাথে হাসান ইবনে মুসাল্লা জামকারানী সাক্ষাত করেছেন এবং ইমামে যামানা (আ.) জামকারান মসজিদটি নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। মির্জা হুসাইন নুরি এই ঘটনাটি ৩৩৩ বা ৩৯৩ হিজরী সংঘটিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন।
মসজিদে জামকেরান বিভন্ন যুগে জামকারান মসজিদটি বিভিন্ন সময়ে মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাচীন লেখনী উল্লেখ করা হয়েছে এই মসজিদটি ১১৬৭ ক্বামারী সালে তৈরি করা হয়েছিল। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পূর্বে মসজিদটি আকারে ছোট ছিল। কিন্তু ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পরে তার পরিধি বৃদ্ধি করা হয়। জামকারান মসজিদটি বাইরের বারান্দা, প্রধান বারান্দা, মসজিদের ছাদ বিশিষ্ট বহিরাঙ্গন, মাকাম মসজিদ এবং অফিস ভবনগুলি নিয়ে গঠিত।
জামকেরান মসজিদটি হযরত মাসুমা (সা.আ.)—এর মাজার থেকে ৮ কি:মি: দূরে অবস্থিত। এই মসজিদটি ইমাম মাহদী (আ.)—এর সাথে সম্পৃক্ত। জামকেরান গ্রামের কাছে থাকা কারণে মসজিদটির নামকরণ করা হয় মসজিদে জামকেরান। ৩ অতীতে এই মসজিদটি মার্বেল পাথরের উপর শিয়াদের দ্বাদশ ইমামের কদমগাহের চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হত এবং তা মসজিদে কদমগাহ হিসেবে সুপরিচিত ছিল। এই মসজিদটি ইমাম মাহদী (আ.)—এর সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে মসজিদে সাহেবুয যামান নামেও পরিচিত ছিল।
ইমামে যানামা (আ.)—এর সাথে সম্পৃক্ত
১৪ শতাব্দীর মুহাদ্দিস মীর্যা হুসাইন নূরী বর্ণনার ভিত্তিতে জামকেরান নামক মসজিদটি ইমাম মাহদী (আ.)—এর নির্দেশে কুম নগরীর আলেম সৈয়দ আবুল হাসানের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। হাসান বিন মুসাল্লাহ জামকেরানি থেকে মুহাদ্দেস নূরী বর্ণনা করেছেন যে, ৩৯৩ ক্বা: সালে রমজান মাসে মঙ্গলবার রাতে তিনি ইমাম মাহদী (আ.)—এর সাথে সাক্ষাত করেন। ইমাম (আ.) তাকে বলেন: হাসান বিন মুসলিমকে বল সে যেন আর এই জমিতে চাষাবাদ না করে এবং কুমের আলেম সৈয়দ আবুল হাসানকে বল সে যেন হাসান বিন মুসলিম এই জমিতে কয়েক বছরের কৃষিক্ষেত্রে যে অর্থ উপার্জন করেছে তা দিয়ে যেন মসজিদ নির্মাণ করে। এই ঘটনার পরে সেই অনুসারে সৈয়দ আবুল হাসান ইমাম মাহদী (আ.)—এর নির্ধারিত স্থানে কাঠের ছাদ বিশিষ্ট একটি মসজিদ তৈরি করেন।
জামকেরান মসজিদটি তৈরির ঘটনাটি মুহাদ্দেস নূরীরর বিভিন্ন গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে যেমন: কলেমা তৈয়বা, নাজমুস সাক্বিব, মুসতাদরাকে ওসায়েল, জান্নাতুল মাঅওয়া, মুহাদ্দেস নূরী এই ঘটনাটির সূত্র হিসেবে মুনিসিল হাযিন ফি মাআরিফাতিল হাক্ব এবং শেইখ সাদুক্বের আল ইয়াক্বিন নামক গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি মুসতাদরাকে ওসায়েল নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ওয়াহিদ বেহবাহানী—এর সন্তান মুহাম্মাদ আলী বেহবাহানী—এর নাক্বদুর রেজাল নামক গ্রন্থে এই ঘটনাটি দেখেছেন। মুসাদ্দিস নুরি মুস্তাদরাক আল—ওয়াাসায়েল নামক গ্রন্থে আরও বলেছেন যে, তিনি এই গল্পটি ওয়াহিদ বেহবহানির পুত্র মোহাম্মদ আলী বাহবাহানী (১১৪৪—১১১ ক্বা: হি:) রচিত নাকদ আল—রিজাল গ্রন্থের এক প্রান্তে দেখেছিলেন, যিনি এটিকে মনিস—আল—হাজিন ফি মারেফাতিদ দ্বীন ওয়াল—ইয়াক্বিনের বইটির কথা উল্লেখ করেছেন।
সন্দেহের অবসান:
মুহাদ্দিস নুরি (১২৫৪—১২২০ হিঃ) তাঁর কয়েকটি রচনায় জামকারান মসজিদ নির্মাণের বছরকে ৩৯৩ হিজরী হিসাবে বিবেচনা করেছেন এবং অন্যান্যরা ৩৭৩ সালকে সঠিক বলে মনে করেন। কুমের ইতিহাস বিষয়ক নাসের আল—শরিয়াহ গ্রন্থটির রচিয়তা অনুমান করেন যে, ঘটনাটি একশ বছরের আরো পূর্বে ২৯৩ হিজরিতে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল। মুহাদ্দিস নুরি নাক্বদুর রিজাল গ্রন্থের প্রান্তে একই তারিখটি উল্লেখ করেছেন।
মোহাদ্দেসে নূরী জামকেরান মসজিদের আমলকে ইমাম মাহদী (আ.) হতে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন যে, “জনগন যেন এই স্থানের প্রতি উৎসাহ ও আগ্রহ প্রকাশ করে” কেননা তিনি লিখেছেন যে, কেউ যদি জামকেরান মসজিদে চার রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তাকে কাবা শরীফে নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। শেইখ আব্বাস কুম্মী তার মাফাতিহুল জিনান গ্রন্থে এই আমলটি উস্তাদ মুহাদ্দেসে নূরী থেকে বর্ণনা করেছেন।
আয়াতুল্লাহ মুহাম্মাদ তাক্বি ইয়াযদি বাফোক্বি তিনি মঙ্গলবার বিকালে তার কিছু ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে পায়ে হেঁটে জামকেরান মসজিদে আসতেন। সেখানে তারা মাগরিব ও এশার নামাজ পড়তেন এবং পরেরদিন সকাল পর্যন্ত সেখানে ইবাদত করতেন। নাসিরুশ শারিয়া—এর বর্ণনা মতে কুমবাসীদের মধ্যে অনেকেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জামকেরান মসজিদে আসতেন।