নখ কাটার ফযিলত
এস, এ, এ
রাসুল (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে: নখ কাটা প্রচন্ড ব্যাথ্যাসমূহের প্রতিবন্ধক স্বরূপ এবং রুজি বৃদ্ধি পাই।
ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ.) বলেন: নখ কাটার নির্দেশ এইজন্য দেওয়া হয়েছে কারণ তা বড় হয় এবং তাতে শয়তানের প্রবেশের রাস্তা তৈরি হয় এবং তা বিস্মৃতির কারণ স্বরূপ।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: নখ কাটা হচ্ছে সুন্নাতে মোয়াক্কাদা।
অন্য একাটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে: রাসুল (সা.) একজন ব্যাক্তিকে বলেন যে, নখ গোড়া থেকে কর্তন করবে এবং নারীদেরকে বলতেন: সামান্য বড় রাখার নির্দেশ দেন কারণ তা তোমাদের সৌন্দর্য স্বরূপ।
অন্য একাটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে: কয়েকবার রাসূলের উপর ওহী নাযিল হয়নি? তারা জিজ্ঞাসা করে কেন? তিনি বললেন: কিভাবে ওহী নাযিল হবে যখন তোমরা নখ কাটবেন না এবং তোমাদের আঙ্গুলের ময়লা পরিষ্কার করবেন না?
নখ কাটার উপযুক্ত সময়সমূহ
বর্ণিত হয়েছে যে: রাসুল (সা.) দাঁত দিয়ে নখ কাটতে নিষেধ করেছেন।
ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) হতে হাসান হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: শুক্রবারে নখ কাটলে কুষ্ঠরোগ, অন্ধত্ব এবং চর্মরোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে। যদি খুব প্রয়োজন না হয় তাহলে (و اگر احتیاج به گرفتن نداشته باشی بساي تا از ریزها بریزد)
তিনি আরো কয়েকটি হাদিসে বলেছেন: গোঁফ এবং নখ প্রত্যেক শুক্রবারে কেটে ফেল আর যদি না থাকে তাহলে তা রাঁদা বা অনুরূপ কিছূ দিয়ে তা ছেটে ফেল যেন পাগলামী, কুষ্ঠরোগ এবং চর্মরোগ থেকে মুক্ত থাক।
তিনি আরেকটি হাদিসে বলেছেন: কেউ যদি প্রত্যেক শুক্রবারে নখ এবং গোঁফ কাটে তাহলে সে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অবিরাম পবিত্র থাকবে।
অন্য একটি হাদীসে তিনি বলেছেন: কেউ যদি প্রত্যেক শুক্রবারে নখ এবং গোঁফ কাটে এবং মাথাকে এক জাতীয় গুল্ম (যা লবণাক্ত জলাভুমির ধারে জাত গুল্ম বিশেষ) দ্বারা ধৌত করে তাহলে তার দারিদ্রতা দূর হবে এবং রুজি বৃদ্ধি পাবে।
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে কিছু লোক ইমাম (আ.)কে জিজ্ঞাসা করে: আমরা শুনেছি যে ফজরের নামাজের পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত তাকিবাত করা রুজি বৃদ্ধির জন্য অন্য শহরে সফর করার চেয়ে উত্তম। হযরত বললেন: তুমি কি চাও আমি তোমাকে এমন কিছু শিখাই যা এর চেয়েও বেশি উপকারী হবে? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: প্রতি শুক্রবার তোমার নখ ও গোঁফ কাট, যদিও তা মসৃণ করার জন্য হয়।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ইমাম রেযা (আ.) একজন ব্যোক্তিকে দেখেন যার চোখে সমস্যা ছিল। তিনি বললেন: তুমি কি চাও আমি তোমাকে এমন কিছু শিখাই যা করলে তোমার চোখে কখনো ব্যথা হবে না? সে বলে হ্যাঁ, তিনি বললেনঃ প্রতি বৃহস্পতিবার নখ কাট। সেই ব্যক্তি এমনটি করার ফলে আর কখনো তার চোখে ব্যথা হয়নি।
ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) থেকেও এ হাদিসটি উদ্ধৃত হয়েছে: যে ব্যক্তি এমনটি করবে তার কখনই চোখের ব্যথা হবে না।
একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: নখ কাটার সময় প্রথমে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ কাটা শুরু করতে হবে, তারপর তা ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ কাটার মাধ্যমে শেষ করতে হবে।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: যে ব্যক্তি বুধবারে ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের নখ কাটা শুরু করে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের মাধ্যমে নখ কাটা শেষ করবে, সে চোখের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকবে।
অন্য একটি রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে: কেউ যদি বৃহস্পতিবার প্রথমে ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের নখ কাটা শুরু করে এবং তা মধ্যমা আঙুল পর্যন্ত পৌছায়, তাহলে সে যেন পুণরায় বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ থেকে শুরু করে মধ্যমা আঙুলের নখ কাটে তাহলে সে চোখ ব্যাথা থেকে মুক্ত থাকবে।
এটা খুব বেশি দূরে নয় যে, কেউ যদি বুধবার গ্রহণ নখ কাটতে চায় তবে এক্ষেত্রে প্রথমে বাম হাতের আঙুলের নখ কাটা উত্তম আর যদি কেউ বৃহস্পতিবার নখ কাটতে চায় তবে প্রথমে প্রতিটি হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ কাটা উচিত। শুক্রবার বা অন্যান্য দিনে নখ কাটা হলে প্রথমে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ কাটতে হবে এবং ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ কাটার মাধ্যমে শেষ করতে হবে।
সর্বদা বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের নখ কাটা শুরু করা উত্তম, কেননা আলি বিন বাবেভেই এমনটিই বলেছেন।
অন্য হাদিসে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার নখ কাটবে, শুক্রবারের জন্য কাটার জন্য একটি নখ রেখে দেবে, আল্লাহ তার কষ্ট দূর করে দেবেন।
ইমাম রেজা (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: তোমরা মঙ্গলবার নখ কাট।
একটি সহীহ হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত আছে: যে ব্যক্তি শুক্রবারে তার নখ কাটবে, মহান আল্লাহ তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা বিভিন্ন ব্যথা দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি শনিবার বা বৃহস্পতিবার নখ ও গোঁফ কাটবে, সে দাঁতের ও চোখের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবে।
আমীরুল মুমিনীন (আ.) থেকে বর্ণিত আছে: শুক্রবারে নখ কাটলে ব্যথা দূর হবে এবং বৃহস্পতিবার নখ কাটলে রুজি বৃদ্ধি পাবে।
অন্য হাদিসে উল্লেখ আছে: ইমাম মূসা কাজিম (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো: আমাদের সঙ্গীরা বলে, অবশ্যই জুমার দিনে নখ কাটা উচিত। তিনি বললেন: তুমি যদি শুক্রবারে বা অন্য দিনে নখ কাটতে চাও, অর্থাৎ যদি নখ লম্বা হয় এবং অন্য দিনে কাটার প্রয়োজন হয়, তাহলে তুমি শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করো না, যেমনটি। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, যখনই নখ বড় হবে তখনই তা কর্তন করবে।
হজরত সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত: যে ব্যক্তি জুমার দিনে নখ কাটবে, তার নখের কোণায় শিকড় হবে না।
ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত আছে: যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার তার নখ কাটবে, সে একাধিক সন্তানের জনক হবে এবং তার চোখের ব্যথা হবে না।
যদি কেউ বৃহস্পতি ও শুক্রবার উভয়ের দিনের সওয়াব পেতে চায়, তবে তার উচিত বৃহস্পতিবার নখ কর্তন করা এবং একটি শুক্রবারের জন্য একটি নখ রেখে দেওয়া, অথবা বৃহস্পতিবারে পুরোটাই আল্লাহর নামে কর্তন করা: এবং শুক্রবারে একটি ধাতব রেত দ্বারা নখগুলোকে মসৃণ করা যেন এভাবে নখের কিছু অংশ তা থেকে ঝরে পড়ে। গোঁফ কাটার ক্ষেত্রে যা বর্ণিত হয়েছে তা নখ কাটার সময় বলতে হবে। (وَعَلی سُنَّهِ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ) “মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবারের সুন্নাহ থেকে যা জানা যায় তা হল: ডান হাতের নখ কাটার সময় প্রথমে তর্জনী, তারপর কনিষ্ঠা, তারপর অনামিকা এবং তারপর মধ্যমা আঙুলের নখ কাটা। আর বাম হাতের প্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুল, তারপর মধ্যমা, তারপর কনিষ্ঠা, তারপর শাহাদাত আঙুল। আর আমরা আগে যা উল্লেখ করেছি তা আহলে সুন্নাতের বর্ণনা থেকে এবং এর পূর্বে যা বর্ণনা করেছি তা শিয়াদের হতে বর্ণিত হয়েছে তার উপর আমল করাই উত্তম কাজ।
চুল ও নখ এবং অন্যান্য জিনিসসমূহ যা দাফন করা উচিত
কোরআন কারিমার এই আয়াতের « اَلَمْ نَجْعَلِ الَارْضَ کِفاتاً، اَحْیآءً وَاَمْواتاً » ব্যাখ্যায়, ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারিণীরূপে, জীবিত ও মৃতদেরকে? (সুরা মুরসালাত, আয়াত নং ২৫, ২৬) তিনি বলেন: এখানে জীবিত বলতে নখ এবং চুল দাফন করার ইঙ্গিত বহণ করে।
আমিরুল মুমিনীন (আ.) থেকে একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে: রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে মাটিতে চারটি জিনিস লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন: চুল, নখ, দাঁত এবং রক্ত।
নবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: সাতটি জিনিস রয়েছে যা একজন ব্যক্তির থেকে পৃথক করা হয় এবং সেগুলিকে দাফন করা উচিত: চুল, নখ, রক্ত, মাসিকের রক্ত, শিশুর দাঁত, দাঁত ও শুক্রাণু যা নষ্ট হয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র: হিল্লিয়াতুল মুত্তাক্নিন, আল্লামা মাজলিসি (রহ.), পৃষ্ঠা ১১২৩- ১২৬।