অনুবাদ: ড.আবু উসামা মুহাররম
অন্যান্য কবিতায় ইমাম শাফিঈ স্পষ্টভাবে নবি পরিবারের মধ্যস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং আশা করেন যে তারা কিয়ামতের ময়দানে তাঁর জন্য সুপারিশ করবে।
لَئِن کانَ ذَنبِی حُبُّ آلِ محمَّدٍ
فذلِکَ ذَنبٌ لَستُ عَنهُ أتوبُ
هُمُ شُفَعائی یومَ حَشری و مَوقِفی إذا
کثرتنی یوم ذاک ذنوب
‘যদি আমার পাপ হয় মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারকে ভালবাসা
তবে আমি সেই পাপের জন্য অনুতপ্ত হব না।
তারা হাশরের দিনে আমার সুপারিশকারী
যদিও সেদিন আমার গুনাহ অনেক হয়।’ (দিওয়ান আল-ইমাম আল-শাফিই, পৃষ্ঠা ৪৮)
শাফি একটি বৈঠকে ছিলেন, যেখানে আলি (আ.) এবং তাঁর দুই সন্তান এবং তাঁর পবিত্র স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হচ্ছিল। এমন সময় একজন ব্যক্তি যে আহলে বাইতের অন্যতম শত্রু ছিল, সে বলছিল: ছেড়ে দিন, তাদের সম্পর্কে কথা বলা ঠিক নয়, কারণ এটি রাফিজিদের কথা। এই সময়ে শাফিঈ এইভাবে কবিতা বলে উঠেন:
بَرِئتُ إلَی المُهیمِنِ مِن أُناسٍ
یَرَونَ الرَّفضَ حُبَّ الفاطِمیّه
إذا ذکروا عَلیّا أو بَنیه
أفاضوا بالرّوایات الویّه
عَلی آل الرّسُول صلاه رَبی
وَ لَعنتُه لتلکَ الجَاهلیّه
‘আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই লোকদের থেকে
যারা ফাতেমার সন্তানদের ভালবাসাকে পরনিন্দা মনে করে।
কারণ যারা আলি বা তার সন্তানদের কথা বলে,
তারা এমন কথা বলে যেন তা পর্দা ও আবরণের ভিতরের কথা
নবি পরিবারের উপর আল্লাহর রহমত
এবং অভিশাপ সেই অজ্ঞ লোকদের উপর ।’ (দিওয়ান আল-ইমাম আল-শাফিই, পৃষ্ঠা ১৫২)
শাফেঈ আহলে বাইত (আ.)এর ভালোবাসাকে তার রক্তের মাংস বলে মনে করেন এবং এই পরিবারকে তার বৃদ্ধি ও হেদায়েতের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন এবং বলেন:
و سائلی عن حُب أهل البیت هل؟
أُقرّ إعلاناً به أم أجحدُ
هَیهاتَ ممزوجٌ بلحمی و دَمی
حُبُّهم و هو الهُدی و الرشدُ
یا أهل بیتِ المصطفی یا عدتی
وَ مَن علی حبّهُم أعتَمدُ
أنتم إلی اللهِ غَداً وَسیلَتی
و کیف أخشی؟ و بکم اعتضدُ
ولیّکم فی الخُلدِ حَیّ خَالدٌ
و الضدُ فی نارٍ لَظیً مُخلّدُ
‘ওহে যারা আমাকে আহলে বাইতের ভালবাসার কথা জিজ্ঞেস করে,
আমি কি তাদের ভালবাসার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করব নাকি অস্বীকার করব?
আমি কখনই তাদের ভালবাসা এবং স্নেহ অস্বীকার করব না, কারণ এটি আমার রক্ত এবং মাংসের সাথে মিশ্রিত
এবং তাদের ভালবাসাই আমার পরিচালনা এবং বৃদ্ধির মাধ্যম।
হে মুহাম্মাদের পরিবার, হে আমার সবকিছু,
যাদের ভালোবাসার উপর আমি ভরসা করি।
বিচার দিবসে আপনি আল্লাহর কাছে আমার সুপারিশকারী,
সুতরাং আমি কীভাবে ভয় পাব, যখন আপনার উপর আমার আস্থা আছে।
যে তোমাকে ভালোবাসে সে চিরকাল স্বর্গে থাকবে
এবং তোমার শত্রুরা চিরকাল থাকবে নরকের জ্বলন্ত আগুনে।’ (দিওয়ান আল-ইমাম আল-শাফিই, পৃষ্ঠা ২২২-২২৩)
অন্য জায়গায় আহলে বাইতের একটি কবিতায় তিনি নবুওয়াত ও পবিত্রতাকে মুক্তির জাহাজ এবং তাদের প্রেম ও বন্ধুত্বকে ঐশী সুতো বলেছেন:
وَ لَمَّا رَأیتُ النَّاسَ قَد ذَهَبَت بِهِم
مَذَاهِبُهُم فِی أبحُرِ الغَیِّ وَ الجَهلِ
رَکِبتُ عَلَی اسمِ الله فِی سُفُنِ النَّجَا
وَ هُم آل بَیتِ المُصطفَی خَاتَمِ الرُّسُلِ
وَ أمسَکتُ حَبلَ اللهِ وَ هُوَ وَلاءوهُم
کَما قَد أُمِرنَا بالتَمسُّکِ بالحَبلِ
‘যখন দেখলাম মাযহাব ও আইনশাস্ত্রের মতপার্থক্য
যা মানুষকে অজ্ঞতা ও বিপথগামীতার সাগরে টেনে নিয়ে গেছে,
তখন আল্লাহর নামে আমি পরিত্রাণের জাহাজে চড়ে (মোস্তফা (সা.)এর আহলে বাইত)
ঐশ্বরিক রশি ধরলাম, যা তাদের বন্ধুত্ব এবং ভালবাসা,
ঠিক আমাদের পালনকর্তার হুকুমের মত
যিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর রুজ্জুকে শক্ত করে ধরো।’ (দিওয়ান আল-ইমাম আল-শাফিই, পৃষ্ঠা ২৭৮, আরও পড়ার জন্য, আর. কে: প্রবন্ধ, মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস শাফিঈ (ইমাম শাফিঈ) এর কবিতায় আহলে বাইত (আ.)-এর প্রশংসা, করম নিউজ এজেন্সির আইয়ুব শফিপুর; বরফি, মুহাম্মাদ, নিবন্ধ, শিয়া ইমামিয়ার সাথে শাফিঈ ও হানাফী ধর্মের মিলন ও ভিন্নতার কারণ অনুসন্ধান, রেসালাত পত্রিকা, নং ৬৯৪২, তারিখ ১২/২০/৪৮, পৃ. ১৭ (সাংস্কৃতিক); সুয়ুতি শাফিঈ, জালালুদ্দীন আবদুর রহমান, ফাযা্লি আলি (আ.), (মৃত্যু ৯১১ হিজরি) )
শাফিঈর কবিতায় আমরা যা পড়ি তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি তাঁর বিশেষ ভক্তি ছিল। এমনভাবে যেন খোলাখুলি তা প্রকাশ করতে ভয় পাননি তিনি। তিনি স্পষ্টভাবে নবি ও তাঁর পরিবার-পরিজনের অনুসরণের দিকনির্দেশনা ও পরিত্রাণ জানেন এবং এমনকি বিচার দিবসে তাদের মধ্যস্থতা কামনা করেন। কেবলমাত্র বিচার দিবসে সুপারিশই নয়, তাদের অনুকরণের শর্তযুক্ত ইবাদতের সঠিকতাও তিনি বিশ্বাস করেন। যদি কেউ তার নামাযে নবি ও তার পরিবারবর্গের প্রতি সালাম ও দরূদ না পাঠায় তবে তার নামায ও বৈধ নয়।
পরিশেষে, এটা লক্ষণীয় যে, আহলে বাইতের প্রতি ইমাম শাফিঈ (আ.)-এর ভক্তি ও আগ্রহের অন্যতম কারণ ও প্রমাণ হল “আল উম্ম” গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.)-এর হাদীসের বক্তব্য ও উদ্ধৃতি। “