অনুবাদ: মোহাম্মাদ মুনীর হোসাইন খান
প্রশ্ন : শিয়ারা কেন মাসূম ইমামদেরকে নবীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে বিশ্বাস করে?
প্রশ্ন সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ : এ প্রশ্নটি হচ্ছে চিরন্তন ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রশ্নাবলীর অন্তর্ভুক্ত। তবে এই প্রশ্ন উত্থাপন ও এ ধরনের সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির আগেও মহানবী (সা.)-এর হাদীসে এমন সব নিদর্শন পাওয়া যায় যেগুলোর মাধ্যমে এ ধরনের দাবী প্রমাণ করা যেতে পারে। ইবনে আবীল হাদীদ লিখেছেন : ‘তাফযীল অর্থাৎ নবীদের ওপর নিষ্পাপ ইমামদের ফযিলত ও শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস বেশ প্রাচীন একটি বিশ্বাস যা অনেক সাহাবা ও তাবেয়ী পোষণ করতেন। এভাবেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ বিশ্বাস নতুন কোন বিষয় নয় এবং তা মহানবী (সা.)-এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যমান আছে। এ কারণেই শিয়া মাযহাবের প্রখ্যাত আলেমগণ নিষ্পাপ ইমামদের ফাযায়েল বর্ণনা করার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করেন নি। বেশ কিছু সংখ্যক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, যেমন শেখ মুফীদ, শেখ তৃসী, আল্লামা ইউসুফ ইবনে মুতাহ্হার হিল্লী, আল্লামা মাজলিসী এবং সমসাময়িক কালের সম্মানিত ফকীহগণ নিজ নিজ গ্রন্থে ও লেখায় উপরিউক্ত বিশ্বাসের পক্ষে দলিল-প্রমাণাদি উল্লেখ করেছেন। এ প্রবন্ধে কতিপয় দলিল সংক্ষেপে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
কোরআন ভিত্তিক দলিলসমূহ
শিয়া আলেমগণ এবং আহলে সুন্নাতের কতিপয় মাযহাব (দল) মহানবী (সা.) ব্যতীত সকল নবীর ওপর ইমামদের, বিশেষ করে হযরত আলী (আ.)- এর শ্রেষ্ঠত্ব পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াত থেকে প্রমাণ করেছেন। এখন কতিপয় আয়াত উল্লেখ করা হলো :
১. হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ইমামতের আয়াত
পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১২৪ এরশাদ হচ্ছে :
وَإِذِ ابْتَلَ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَنمُهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيق قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
(আর সেই সময়কে স্মরণ করো) যখন মহান আল্লাহ্ ইবরাহীমকে বিভিন্ন বিষয় ও উপকরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করলেন এবং তিনিও এ সব পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হলেন। মহান আল্লাহ তখন তাঁকে বললেন : আমি তোমাকে মানুষের জন্য (ওপর) ইমাম মনোনীত করলাম: সে (ইবরাহীম) বলল (প্রার্থনা করল) : (হে আল্লাহ) আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও (ইমামদেরকে মনোনীত করুন)। তিনি (মহান আল্লাহ) বললেন : আমার এ অঙ্গীকার জালেমদের কাছে পৌঁছবে না (অর্থাৎ এ ঐশী পদ জালেমদের জন্য নয় আর তাই তোমার যে সব বংশধর পবিত্র ও নিষ্পাপ হবে কেবল তারাই এ মাকাম অর্থাৎ ইমামতের যোগ্য হবে)।
এ আয়াতের মাধ্যমে এভাবে যুক্তি পেশ করা হয় যে, এই আয়াতে হযরত ইবরাহীমের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অর্থাৎ বড় বড় ঐশী পরীক্ষা এবং এসব পরীক্ষায় তাঁর উত্তীর্ণ হওয়ার কথা ব্যক্ত হয়েছে। এ সব পরীক্ষায় হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সুমহান ব্যক্তিত্ব ও মাকাম (মর্যাদা) পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশিত এবং তাঁর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়। তিনি যখন এ সব পরীক্ষায় সফল ও উত্তীর্ণ হন তখন মহান আল্লাহ্ তাঁকে পুরস্কৃত করেন এবং বলেন : ‘আমি তোমাকে মানুষের ওপর ইমাম (নেতা) মনোনীত করলাম।’ ইবরাহীম (আ.)-এর পরীক্ষাগুলো ছিল নিলুরূপ
১. নিজ পুত্রসন্তান ইসমাঈল (আ.)-কে মিনার কোরবানী দেয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং তাঁকে কোরবানী করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া। আর ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর আনুগত্য করার নিয়্যতেই নিজ পুত্রসন্তানকে কোরবানী করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন এবং শয়তানের কুপ্ররোচনা তাঁর দৃঢ় ইচ্ছা ও সংকল্পে বিন্দুমাত্র বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে নি।
২. স্ত্রী-পুত্রকে পবিত্র মক্কার জনশূন্য এবং পানি ও গাছপালাহীন শুষ্ক মরুভূমিতে রেখে আসা। ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর আদেশ পালন করার উদ্দেশ্যেই এ কাজ করেছিলেন।
৩. বাবেল (ব্যাবিলন) নগরীর মূর্তিপূজকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও তাদের মূর্তিসমূহ ভাঙা এবং ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠানে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ইবরাহীম (আ.)-এর আত্মপক্ষ সমর্থন।
৪. অগ্নিকুণ্ডের ভিতরে নিক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও শান্ত, স্থির ও অবিচল থাকা এবং স্বীয় ঈমান সংরক্ষণ করা।
প্রকৃতপক্ষে এ সব পরীক্ষার প্রতিটিই ছিল খুব কঠিন ও ভয়ঙ্কর। তিনি ঈমানী শক্তি দ্বারা এ সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং প্রমাণ করেন যে, তিনি ইমামতের যোগ্য।
উপরিউক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সকল ঐশী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ইবরাহীম (আ.) যে ইমামত-এর মাকাম অর্জন করেছিলেন তা নবুওয়াত ও রিসালাতের মাকামের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ছিল। এটাই হচ্ছে সেই মাকাম যা ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম (জনগণের সঠিক নেতা) অবশ্যই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত হবেন। কারণ, প্রথমত ইমামত হচ্ছে এক ধরনের ঐশী প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি। আর এটা সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ অবশ্যই এমন ব্যক্তিকেই মনোনীত করেন যিনি হচ্ছেন এই ঐশী প্রতিজ্ঞা ও চুক্তির এক পক্ষ (আর এ চুক্তির অপর পক্ষ হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ্)।
দ্বিতীয়ত যাদের জীবনে অন্যায় ও জুলুমের সামান্য চিহ্নও বিদ্যমান তা নিজের প্রতি হোক বা অন্যের প্রতি করা হোক, এমনকি যারা এক মুহুর্তের জন্যও জীবনে মূর্তিপূজা ও শিরক করে থাকে তারা ইমামতের জন্য যোগ্য হবে না। অর্থাৎ পারিভাষিক অর্থে ইমাম অবশ্যই পুরো জীবনব্যাপী মাসুম (নিষ্পাপ) হবেন।
একমাত্র মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ কি এ গুণ (সমগ্র জীবনব্যাপী নিষ্পাপ হওয়া) সম্পর্কে অবগত হতে পারবে? তাই এ মাপকাঠির আলোকে আমরা যদি মহানবী (সা.)-এর উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করতে চাই তাহলে হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব ব্যতীত আর কেউ নেই। আলী (আ.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত ও মনোনীত ইমাম। সুতরাং সমগ্র সৃষ্টিকূল যাদের অন্তর্ভুক্ত মহান নবিগণও, তাদের সকলের চেয়ে আলী (আ.) শ্রেষ্ঠ ।
২. মুবাহিলার আয়াত
فَمَنْ حَاجَكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا ندْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
‘এতদপ্রসঙ্গে (হযরত ঈসা মসীহের ব্যাপারে মহান আল পক্ষ থেকে) আপনার কাছে জ্ঞান আসার পর যারা আপনার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে তাদেরকে আপনি বলে দিন এসো, আমরা আমাদের পুত্রসন্তানদেরকে ডাকি এবং তোমরা ডাকো তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে আর আমাদের নারীদেরকে ডাকি আর তোমরা ডাকো তোমাদের নারীদেরকে এবং আমরা ডাকি আমাদের নিজ সত্তাদেরকে, তোমরা ডাকো তোমাদের নিজ সত্তাদেরকে, এরপর আমরা মুবাহিলা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর মহান আল্লাহ লা’নত (অভিশাপ) দেই।” ( সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৬১)
এ আয়াতের ভিত্তিতে যুক্তি প্রদর্শন
“আমাদের নিজ সত্তাদেরকে (أنفسان )- এ বাক্যাংশের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য হচ্ছেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সত্তা এ বাক্যাংশের উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, স্বয়ং মহানবী (সা.) নিজেই ছিলেন মুবাহিলার আহ্বানকারী। সুতরাং এটা সিদ্ধ নয় যে, যে আহ্বানকারী সে নিজেকেই আহ্বান করবে; বরং আহ্বানের অর্থ হচ্ছে, আহ্বানকারী অন্যকে আহ্বান করবে। এর ভিত্তিতে প্রথমত ইমাম আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর নাস (সত্তা)। দ্বিতীয়ত মহানবী (সা.) সকল নবীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ (افضل انبیاء) তৃতীয়ত ইমাম আলী (আ.) সকল নবীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সুতরাং সকল নিষ্পাপ ইমাম, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ব্যতীত সকল নবীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর বিভিন্ন অভিমত বর্ণনা করার সময় স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, মুবাহিলার এ আয়াত কিভাবে মহানবী (সা.) ব্যতীত সকল নবীর ওপর হযরত আলীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। যখন সকল নবীর ওপর হযরত আলীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হবে তখন আপনাআপনি অন্য সকল ইমামের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণিত হবে। অধিকাংশ শিয়া কালামশাস্ত্রবিদ এভাবেই মুবাহিলার আয়াত বিশ্লেষণ করেছেন।
হাদীস ও রেওয়ায়াতভিত্তিক দলিল-প্রমাণাদি
কতিপয় রেওয়ায়াত খলীফাদের ওপর, এমনকি মহানবী (সা.) ব্যতীত অন্য সকল নবীর ওপর হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট। আলেমগণ এ দাবী প্রমাণ করার জন্য এ সব রেওয়ায়াতের মাধ্যমে যুক্তি- প্রমাণ পেশ করেছেন। যেমন মানযিলাতের মহানবী (সা.)-এর কাছে হযরত আলীর মর্যাদা সংক্রান্ত হাদীস, হযরত আলীর বেলায়াতের হাদীস, ওয়াসিয়াতের হাদীস, ভাজা পাখির হাদীস, প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকারের হাদীস ইত্যাদি। এগুলোর মধ্য থেকে মাত্র দুটি হাদীস এখানে নমুনা স্বরূপ উল্লেখ করব:
অন্যদের ওপর আলী (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের দলিল
১. প্রথম হাদীস : মহানবী (সা.) বলেছেন :
من أراد أن ينظر إلى آدم في علمه و إلى نوح في فهمه و إلى إبراهيم في حلمه و إلى يحيى بن زكريا في زهده و إلى موسى بنان عمران في بطشه، فلينظر إلى على بن أبي طالب
“যদি কেউ ইচ্ছা করে আদমকে তাঁর জ্ঞানসহ, নূহকে তাঁর অনুধাবন ক্ষমতাসহ, ইবরাহীমকে তাঁর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা সমেত, ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়াকে তাঁর যুহদ (দুনিয়া উপেক্ষা করে ইবাদতে মনোসংযোগ) সমেত এবং মূসা ইবনে ইমরানকে তাঁর গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্ব সহকারে দেখতে, তাহলে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবকে দেখে।
(তারিখে দিমাশক (দামেস্ক), আলী ইবনে আবি তালিবের জীবনী অধ্যায়, খ, ৩, পৃ. ৬৯)
সুতরাং আলী (আ.)-এর মধ্যে রাসূল (সা.)-এর পূর্ববর্তী নবীদের বৈশিষ্ট্যসমূহের সমন্বয় ঘটেছিল অর্থাৎ তিনি তাদের পরিপূর্ণ রূপ ছিলেন। হাদীসে মানযিলাত থেকেও বোঝা যায় যে, হযরত হারুন (আ.) যেরূপ হযরত মূসা (আ.)-এর উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন তেমনি হযরত আলীও রাসূল (সা.)-এর উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। অন্যদিকে রাসূল (সা.) হযরত আলী, ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে নিজের সত্তা থেকে এবং নিজেকে তাঁদের সত্তা থেকে উৎসারিত বলেছেন। যা প্রমাণ করে যে, রাসূলের মধ্যে অন্য নবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের যেসব উপকরণ রয়েছে তাঁদের মধ্যেও সেসব রয়েছে। সুতরাং তাঁরা রাসূল (সা.)-এর ন্যায় সকল নবীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন।
২. দ্বিতীয় হাদীস: মহানবী (সা.) বলেছেন
“যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, আমি এমন এক বাক্তির হাতে (যুদ্ধের) পতাকা দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালোবাসেন। সে কখনো যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না। মহান আল্লাহ (ইহুদীদের এসব দূর্গ) তার পদানত করবেন অর্থাৎ বিজয় দেবেন।
হযরত আলী (আ.) বলেন :
‘জনৈক ব্যক্তিকে মহানবী (সা.) আমার কাছে পাঠালেন, অথচ তখন আমার চোখে ব্যথা ছিল। (আমি মহানবীর কাছে গেলে) তিনি তাঁর মুখের লালা আমার চোখে মালিশ করে দিয়ে বললেন: ‘হে মহান আল্লাহ্। তাকে ঠাণ্ডা ও গরম হতে রক্ষা করুন। এরপর আমি কোনদিন শীত-গরম অনুভব করিনি (এমনকি আমি কোনদিন চোখের ব্যথায় আক্রান্ত ও হইনি।
(শাইখ তারারসী, ইলামূল ওয়ারা বিআলামিল হুদা, পৃ. ১৮৫। সহীহ বুখারী, বাবু মানাকিবি আলী ইবনে আবি তালিব, কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবা, হাদীস ৩৭০২ এবং কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, হাদীস ২৯৮২ ও ২৯৭৫ (কিছুটা পার্থক্য সহকারে)
কিছু কিছু বর্ণনায় ‘আগামীকাল’ (غدا) শব্দটি এসেছে। অথচ মহানবী (সা.) হযরত আবু বকরের পর হযরত উমরকে খায়বরবাসীদের দুর্গসমূহ জয় করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যখন হযরত উমরও সফল হলেন না এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলেন তখন মহানবী (সা.) এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ইবনে হিশাম হযরত আলী (আ.)-এর ফযিলতে এ হাদীসটি বর্ণনা করে লিখেছেন: ‘সালামাহ্ ইবনে আমর আকওয়া বলেন : (খায়বার অভিযান চলাকালে) মহানবী (সা.) একদিন যুদ্ধের পতাকা হযরত আবু বকরের হাতে অর্পণ করে তাঁকে খায়বারের একটি দুর্গ জয় করার জন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনি কিছু করতে পারলেন না। অবশেষে দুর্গ জয় না করে ফিরে আসলেন। মহানবী (সা.) বললেন :
*আগামীকাল যুদ্ধের পতাকা এমন এক ব্যক্তির হাতে দেব যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং মহান আল্লাহ্ তার হাতে উক্ত দুর্গ বিজিত করবেন এবং সে কখনো শত্রুর মোকাবেলায় পলায়ন করবে না। পরের দিন তিনি আলী (আ.)-কে তলব করেন। সেদিন হযরত আলী
চোখের ব্যথায় আক্রান্ত ছিলেন। অতঃপর মহানবী (সা.) মুখের লালা হযরত আলীর চোখে মালিশ করে দিয়ে বললেন :
“এ পতাকাটি হাতে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে যাও যাতে মহান আল্লাহ তোমার হাতে দুর্গটি বিজিত করেন।
(সীরাতে ইবনে হিশাম, গবেষণা মুস্তাফা আছছাফা, ইবরাহিম আবইয়ারী আব্দুল হাফিজ শালারী, খ. ২, পৃ. ৩৩৪ )
সুতরাং আমরা এ দাবী প্রমাণ করার জন্য এ রেওয়ায়াতের ভিত্তিতে এভাবে যুক্তি পেশ করি যে, ইমাম আলী (আ.) মহান আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে প্রিয় আর মহান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতএব, ইমাম আলী (আ.) সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর যেহেতু সকল ইমাম (আ.) একই নূর হতে সেহেতু পবিত্র ইমামগণ সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
চলবে…..
তথ্যসূত্র:
মোজতামায়ে আমুজেশে আলিয়ে ফেক্বহ্।