এস, এ, এ
মহানবী (সা.) বলেছেন: আল্লাহ সপ্তম আসমানে একজন ফেরেশতাকে নির্ধারণ করেছেন যাকে “দায়ী” বলা হয়। রজব মাস আগমণের পরে সেই ফেরেশতা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বলতে থাকে: “সৌভাগ্যবান হচ্ছে যিকিরকারীগণ ও আল্লাহর অনুসরণকারীগণ!” আল্লাহ বলেছেন: যারা আমার সাথে আছে (স্মরণ করে) আমি তাদের সাথে আছি এবং যারা আমার কথা শুনে আমিও তাদের কথাকে শুনি এবং যারা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আমি তাদের ক্ষমা করি। এই মাস আমার মাস, বান্দারা হচ্ছে আমার বান্দা এবং রহমতও হচ্ছে আমার রহমত। সুতরাং যে বান্দা আমাকে স্মরণ করবে আমি তাদের ডাকে সাড়া দিব। কেউ যদি আমার কাছে কিছু চায় আমি তাকে তা দান করবো। কেউ যদি আমারা কাছে পথ নির্দেশনা চায় আমি তাকে পথ দেখাব। এ মাসটি আমার ও বান্দাদের মাঝে সম্পর্ক শক্তিশালী করার একটি মাধ্যম স্বরূপ। এই মাসে যে বান্দা আমার সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়তে চাইবে সে সফলকাম হবে। (ইক্বাবালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭২১, ৭২২)
ইমাম মুসা ইবনে জাফর (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে,সে ব্যাক্তি এক বছর জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যে ব্যক্তি তিনদিন রোজা রাখবে তার ওপর বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেছেন: বেহেশতের একটি ঝর্ণাধারার নাম রজব; যার (পানি) দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। যে ব্যক্তি এ মাসে একদিন রোজা রাখবে সে অবশ্যই এ ঝর্ণাধারা হতে পানি পান করবে।
ইমাম সাদিক্ব (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী (স.) বলেছেন: ‘রজব মাস আমার উম্মতের জন্য ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনার মাস। অতএব, এ মাসে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা কর, কেননা মহান আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু। রজব মাসকে (أصل) বলা হয়, কারণ এ মাসে আমার উম্মতের উপর আল্লাহর অত্যাধিক রহমত বর্ষিত হয়, অতএব, (أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَ أَسْأَلُهُ التَّوْبَةَ) এ যিকরটি বেশী বেশী পাঠ কর। (মাফাতিহুল জিনান, দ্বিতীয় অধ্যায় রজব মাস, পৃষ্ঠা ২২২)
জনাব সালেম হতে ইবনে বাবে ভেই (রহ.) বর্ণনা করেছেন: রজব মাস শেষ হতে কয়েকদিন অবশিষ্ট ছিল, আমি ইমাম সাদিক্ব (আ.) এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য যাই। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন: তুমি কি এ মাসে রোজা রেখেছ? আমি বললাম: না হে রাসুলের সন্তান! তিনি বললেন: তোমার এত বেশী সওয়াব হাতছাড়া হয়েছে যে, যার পরিমাণ মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। নিশ্চয়ই এটা মহান আল্লাহর মাস। মহান আল্লাহ এই মাসকে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন, এ মাসের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছেন এবং এ মাসে রোজাদারদের সম্মানিত করেছেন।
তারপর আমি বললাম: হে রাসুল (সা.) এর সন্তান! আমি যদি এ মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে রোজা রাখি তবে কি ঐ সওয়াবের অধিকারী হতে পারবো? তিনি বললেন: হে সালেম! যে ব্যক্তি এ মাসের শেষ দিনগুলিতে একদিন রোজা রাখবে মহান আল্লাহ্ তাকে মৃত্যুপূর্ব যন্ত্রণা, মৃত্যুর পর ভয় এবং কবরের আযাব হতে নিরাপত্তা দান করবেন। আর যে ব্যক্তি এ মাসের শেষের দিনগুলির দুই দিন রোজা রাখে সে পুলসিরাত সহজেই অতিক্রম করবে। যে ব্যক্তি এ মাসের শেষ দিনগুলির তিনদিন রোজা রাখবে সে কেয়ামতের ভয়ঙ্কর অবস্থা, সেই দিনের তীব্র আতংক থেকে নিরাপদ থাকবে… জেনে রাখো, রজব মাসের রোজার জন্য প্রচুর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি এ মাসে রোজা রাখতে সক্ষম না হয় তবে নিন্মোক্ত তসবিহ যেন পাঠ করে,তাহলে সে এই তসবিহ পাঠের মাধ্যমে রোজার সওয়াব অর্জন করবে।
سُبْحَانَ الْإِلَهِ الْجَلِيلِ سُبْحَانَ مَنْ لا يَنْبَغِي التَّسْبِيحُ إِلا لَهُ سُبْحَانَ الْأَعَزِّ الْأَكْرَمِ سُبْحَانَ مَنْ لَبِسَ الْعِزَّ وَ هُوَ لَهُ أَهْلٌ.
তাই বলে ধনবান মু’মিনদের এহেতিয়াতকে (সতর্কতা) ত্যাগ করা উচিত হবে না। এইজন্য তসবিহ পাঠের সাথে এক মুদ (৭৫০ গ্রাম) খাদ্য বা সাদক্বা দান করা উচিত। (ইক্ববালুল আমাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৪৮, ৭৪৯)