মোঃ তুরাব রসুল
“রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ বা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে যান ; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না – যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর” (সুরা বাক্বারা-১৮৫)
উপরোক্ত আয়াতে করিমা রমজান মাসের মর্যদা ও সম্মানের কথা বর্ণনার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন যে মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক, উজ্জ্বল নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তারপরেই যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম সাধনায় রত হয়। এই বর্ণনা করার পর আল্লাহ অসুস্থ ও মুসাফিরদের জন্য রোজা না রাখার তাগিদ দেন। কারণ আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কষ্ট দিতে চান না যেহেতু অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তির জন্য রোজা পালন করা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার,সেহেতু তারা অন্য সময় তা পূরণ করবে এই অনুমতি দিয়ে বিষয়টা বান্দার জন্য সহজ করেছেন। ব্যতিক্রম কিছু বিষয় ছাড়া যা “আহকাম শিক্ষা” “মুকতাসারুল আহকাম” “আজবেবাতুল ইস্তিফতাআত”এ আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু তারপরও একশ্রেণীর মানুষ কোরআনের এই সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকার পরও অসুস্থ, বিশেষ করে সফরে রোজা রাখার জন্য কোরআন বিরুদ্ধী রেওয়ায়ত পেশ করে পক্ষান্তরে কোরআনের সুরা বাক্বারার ১৮৫নং আয়াত ও আয়াতের সাথে সংহতিপূর্ণ হাদিসের বিরুদ্ধীতা করে।
দ্বীন ইসলামের উসুল বা নীতি হলো কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য না। দ্বীন ইসলাম পালন যেখানে আল্লাহ আমাদেরকে সহজ করে দিয়েছেন যে রোজা অন্য কোন দিন পূরণ করার জন্য সেখানে আমরা যদি বিভিন্ন যুক্তি পেশ করে বা কোরআন বিরুদ্ধী কোন হাদিসের আলোকে সফরে রোজা পালন করি তাহলে কি আল্লাহর হুকুম মানা হবে? এটা কিভাবে সম্ভব যার প্রতি কোরান নাযিল হয়েছে অর্থাৎ নাবী করিম(সা)। তিনি(সা) আমাদেরকে আল্লাহর বাণী পড়ে শুনচ্ছেন যে সফরের রোজা অন্য কোন সময় পূরণ করার কথা আর তিনি(সা) কি না সফরে রোজা পালন করছেন। এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? কখনও না। এটা সরাসরি আল্লাহর বিরুদ্ধীতা ও আল্লাহর রাসুলের(সা) উপর মিথ্যারোপ। আমি এখন কোরআনের আয়াতের সাথে সংহতিপূর্ণ সেই সব হাদিস তুলে ধরা সমুচিত মনে করছি যা বিভিন্ন গ্রন্হে বর্ণিত হয়েছে।
১।হযরত জাবির(র) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সা) একজন লোককে দেখেন যে তাকে ছায়া করা হয়েছে। তিনি(সা) জিজ্ঞেস করলেন;ব্যাপার কি? জনগণ বললেনঃ হে রাসুলুল্লাহ(সা) লোকটা রোজদার। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ সফরে রোজা রাখা পূন্যের কাজ নয়। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
২। এটা স্বরণীয় বিষয় যে, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহর(সা) সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সফরের অবস্থাতেও রোজা ছেড়ে দেওয়া মাকরূহ মনে করে, তার জন্য রোজা ছেড়ে দেওয়া জরুরি ও রোজা রাখা হারাম। (তাফসীরে ইবনে কাসির) অর্থাৎ কেউ যদি সফরকালে মাকরূহ মনে করেও রোজা রাখে তাহলে তা সুন্নাতের বিরুদ্ধাচারণ করা হবে ও তার রোজা রাখা হারাম সাবস্ত হবে।
৩।হযরত জাবির ও হযরত ইবনে ওমর(রা) প্রভৃতি মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর অবকাশকে গ্রহণ করে না, আরাফাতের পর্বত সমান তার পাপ হবে।(মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল) অর্থাৎ সফরে রোজা না রেখে অন্য সময় তা পূরণ তথা পালন করাকে তারা(রা) আল্লাহর দেয়া অবকাশ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
৪। একদল সাহাবী ও তাবেইগণের মতানুসারে সফরে রোজা ভেঙে দেওয়া ওয়াজিব। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
৫। কিছু বর্ণনায় সফরে রোজা ভেঙে দেওয়া উত্তম বলা হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে যে অবকাশ দিয়েছেন তা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।(তাফসিরে ইবনে কাসির) অর্থাৎ সফরে রোজা না রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
৬।হযরত রাসুলুল্লাহ(সা) রমজানুল মুবারক মাসে মক্কা বিজয় অভিযানে রোজার অবস্থায় রওয়ানা হন। ‘কাদীদ’ নামক স্হানে পৌঁছে রোজা ছেড়ে দেন ও সাহাবীগণ(রা) কেও রোজা ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন। ( সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতে সফরে রোজা না রাখার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যা অস্বীকার করার কোন পথ নাই। তাই আসুন মাঝহাবী একগুঁয়েমী ও গোড়ামী ছেড়ে কোরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করি।
সালাম তাদের প্রতি যারা সত্যকে গ্রহণ করে।
মোঃ তুরাব রসুল।
৩০/০৪/২০২০ইং
০৬ই রমজান ১৪৪১হিজরী।

শিয়া ও সফরে রোজা
More from আহকামMore posts in আহকাম »